Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 28, 2022 Updated 0 Hours ago

২০২১ এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আমেরিকা-চিন কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিছকই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাপ্রসূত নয়।

বৃহৎ ক্ষমতার রাজনীতির চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন

কোভিড-১৯ অতিমারি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে একটি রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলেছে, সে কথা আর নতুন কিছু নয়। প্রকৃত পক্ষে, একটি স্বাস্থ্য সমস্যার পক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনীতির টানাপড়েনের কেন্দ্র হয়ে ওঠা বিরল ঘটনা। যদিও অতীতে অতিমারি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিশ্বব্যাপী শক্তি সমীকরণের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে নিরাপত্তার পরিবর্তিত প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে সব বিতর্কের মধ্যে কোভিড-১৯-এর কশাঘাত পৃথিবীকে বুঝিয়েছে যে, তথাকথিত অপ্রথাগত নিরাপত্তা সমস্যাগুলি আসলে ঐতিহ্যবাহী। এবং সারা বিশ্ব যখন এমন একটি স্বাস্থ্য সংকটের সঙ্গে লড়ছে যা ক্রমাগত একটি অর্থনৈতিক সংকটে পরিবর্তিত হচ্ছে, তখন নীতিনির্ধারকদের তাঁদের অনুমানগুলিকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও নিজস্ব একটা যুক্তি আছে। অতিমারি থাক বা না-থাক, ১৯৪৫ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থার পায়ের তলার জমি আলগা হতে শুরু করেছিল। একাধিক ভাবে কোভিড-১৯ অতিমারি সেই ধারাকেই ত্বরান্বিত করেছে মাত্র, যা ২০২০-তে উহানে বিপর্যয় শুরুর পূর্বেই দৃশ্যমান ছিল। বৃহৎ শক্তির রাজনীতির নিজেকে উন্মোচন করার জন্য বাস্তবে কোনও অতিমারির প্রয়োজন নেই। চিনের উত্থান বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রবল নাড়া দিয়েছে। একুশ শতকের তৃতীয় দশকে একটি শক্তির উত্থানের ফলে বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থার যে বহুবিধ প্রেক্ষিত প্রভাবিত হয়েছে, অতিমারির শুরু থেকেই সেগুলি প্রকাশ পাচ্ছে। এই নতুন শক্তি সত্যিই স্থিতাবস্থাকে আমূল নাড়া দিতে চায়।

এই মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এখন ধোঁয়াশাময়। ফলে বিপুল উত্থান-পতনের এক পর্বের জন্য মঞ্চ তৈরি হয়েছে।

শি জিনপিংয়ের অধীনে চিন আর তার শক্তিকে লুকিয়ে রাখতে চায় না, কালক্ষেপও করতে চায় না। সম্রাট শি ঘোষণা করেছেন যে, চিনের শ্রেষ্ঠত্বের সময় আগত এবং সারা বিশ্বকে তা মানতে হবে। বর্তমানের চিন হিটলারের জার্মানির মতো হোক বা না হোক, তবে তার আচরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপীয় পটভূমিতে শক্তি প্রতিযোগিতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থার মূল ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে যাকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এত দিন চিরস্থায়ী বলে ধরে নিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এখন ধোঁয়াশাময়। ফলে বিপুল উত্থান-পতনের এক পর্বের জন্য মঞ্চ তৈরি হয়েছে।

২০২১ এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আমেরিকা-চিন কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিছকই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাপ্রসূত নয়। তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেন নিজের বক্তব্য আরও শানিয়েছেন এবং দুই পক্ষের মধ্যে হতে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একাধিক সমস্যার পরিসরকে প্রসারিত করেছেন। মানবাধিকার থেকে প্রযুক্তি, সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে প্রতিরক্ষা… এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন লক্ষ করা যাচ্ছে সমস্ত ক্ষেত্র জুড়েই। এর ফলে বন্ধু এবং শত্রু উভয় পক্ষের দেশগুলির উপরেই চাপ বাড়ছে। এবং পাশাপাশি বিশ্ব ব্যবস্থার বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেও এর প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এর প্রভাব অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় সর্বাধিক যেখানে এক দিকে নতুন শক্তিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এবং অন্য দিকে প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলি আচরণের নতুন বিধি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনও উল্লেখযোগ্য অঞ্চলব্যাপী প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো না থাকায় এই সামুদ্রিক অঞ্চলটি কোয়াড এবং অউকাসের মতো ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। ইচ্ছুক শক্তিগুলি দ্রুত জোটবদ্ধ হওয়ায় এখানে পরিবর্তনশীল সমীকরণ ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকা-চিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই অঞ্চলের রূপরেখা নির্ণয়ে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করলেও, মধ্য শক্তির দেশগুলি চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এবং আদর্শগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলিকে আকার দেওয়ার মাধ্যমে ক্রমশ নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করছে। আমেরিকার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত থাকা অপর পক্ষে মধ্য শক্তির দেশগুলিকে আরও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে। যদিও তারা কী ভাবে এই শক্তি কাজে লাগাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

আমেরিকার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত থাকা অপর পক্ষে মধ্য শক্তির দেশগুলিকে আরও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে। যদিও তারা কী ভাবে এই শক্তি কাজে লাগাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

গণতন্ত্র এবং কর্তৃত্ববাদী মডেলের মধ্যে বিভাজন রেখা আরও গভীর হতে শুরু করে ২০২১-এই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন’-এর লক্ষ্য শুধু মাত্র সমমনস্ক গণতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে বৃহত্তর সংহতি তৈরি করাই নয়, বরং চিন ও রাশিয়ার মতো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি আর পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়ার মধ্যে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সশক্তিকরণে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে একজোট হওয়ার এক সুতীব্র দাবিও। যে হেতু ওয়াশিংটনের সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন চিনের সৃষ্ট রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা, তারা সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক অংশীদারদেরও নিজেদের পক্ষাবলম্বনের পথে হাঁটতে বলছে। আমেরিকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, শক্তি এবং পরিবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জোস ডব্লিউ ফার্নান্ডেজ আমেরিকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে মার্কিন-চিন কৌশলগত দ্বৈরথে নিছক দর্শক হয়ে না থাকতে আবেদন জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘মনে রাখবেন কী ভাবে আপনাদের কার্যকলাপ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের মূল্যবান মৌলিক মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।’ রাজনীতিকে অর্থনৈতিক স্বার্থের অধীনস্থ হিসেবে দেখা থেকে সরে আসা এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল, যেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহৎ শক্তির রাজনীতি আরও এক বার বিশ্ব ব্যবস্থার সব ধারাকে রূপ দিচ্ছে, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন, পরিকাঠামো এবং সংযোগ ব্যবস্থা, বাণিজ্য অংশীদারিত্বের সঞ্চারপথ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। ভারতীয় বিদেশ এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতিগুলিকেও অন্যান্য দেশের মতোই এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু আমরা যদি এই সময়ে এই সুযোগকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং আমাদের প্রচলিত তাত্ত্বিক বাগবিস্তারকে ত্যাগ করতে পারি, তা হলে বিশ্ব রাজনীতির এই সন্ধিক্ষণ নয়াদিল্লির সামনে প্রকৃত অর্থে একটি ‘নেতৃস্থানীয় শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ করে দেবে।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.