Published on Aug 09, 2023 Updated 0 Hours ago

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জিনগত প্রকৌশল বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে এই প্রযুক্তিটির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং একে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে।

জিনগত ভাবে প্রস্তুত পতঙ্গ: কৃষিক্ষেত্রের কীটপতঙ্গ থেকে কীটতাত্ত্বিক যুদ্ধ

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডাঃ জিতেন্দ্র সিং পাঞ্জাবের মোহালিতে ন্যাশনাল এগ্রি-ফুড বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউটে (এনএবিআই) ন্যাশনাল জিনোম এডিটিং অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (এনজিইটিসি) উদ্বোধন করেন।

সংস্থাটির সূচনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এনএবিআই, দ্য সেন্টার ফর ইনোভেটিভ অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড বায়োপ্রসেসিং (সিআইএবি) এবং দি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজির সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সিকিউরিটির (আইএফএএনএস) উদ্বোধন করেন, যেটি খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা এবং জিনোমিক এডিটিং নিয়ে আলোচনার জন্য আয়োজিত হয়েছিল।

এনএবিআই-এর মতো সংস্থার বাস্তবায়ন ও বিদ্যমান ন্যাশনাল বায়োটেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজিতে জেনেটিক্স এবং এপিজেনেটিক্সের উপর মনোনিবেশ করার পাশাপাশি ভারত বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এবং জিনোমিক এডিটিং-এর উপর মনোযোগের পুনরুত্থানের সাক্ষী থেকেছে।

এই কর্মসূচিগুলির অধীনে জিনোমিক এডিটিং খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ুর প্রভাব হ্রাস এবং খাদ্য সংক্রান্ত স্থিতিস্থাপকতার জন্য শস্যের রূপান্তর ঘটানো নিয়ে কাজ করে। জিনোমিক এডিটিং-এর একটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব হল কীটপতঙ্গের মতো জীবন্ত প্রাণীর রূপান্তর, যা স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পতঙ্গের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হল গবেষণার এমন একটি ক্ষেত্র, যার আওতায় রয়েছে উদ্ভিদ থেকে প্রাণী অবধি সকল জীবের জিনগত নির্মাণ। এই ইঞ্জিনিয়ারিং ফর্মগুলি জেনেটিক ম্যানিপুলেশনের বা জিনগত পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে থাকতে পারে জিঙ্ক ফিঙ্গার নিউক্লিয়াস (জেডএফএন), ট্রান্সক্রিপশনাল অ্যাক্টিভেটর-লাইক ইফেক্টর নিউক্লিয়াস (টিএএলইএন) এবং সুপরিচিত ক্লাস্টারস অব রেগুলারলি স্পেসড শর্ট প্যালিনড্রোম রিপিটস (সিআরআইএসপিআর)। এগুলি প্রোগ্রামেবল নিউক্লিয়াস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার ফলে জেনেটিক ম্যানিপুলেশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।

এক দশক আগে ইউনাইটেড স্টেটস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (ডিএআরপিএ) ‘সাইবর্গ’ কীটপতঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল, যেগুলিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং নজরদারি ড্রোন হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

সিআরআইএসপিআর-এর উৎপত্তি ব্যাকটেরিয়া অভিযোজিত ইমিউন সিস্টেম সংক্রান্ত গবেষণা থেকে। যাই হোক, এর প্রযোজ্যতা এবং সাফল্যের হারের পাশাপাশি বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপধারাটি কখনও কখনও কীটপতঙ্গের মতো বৃহত্তর জীবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাটি জিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স বা ফলিত বিজ্ঞানেও ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ জিনগত ভাবে পরিবর্তিত কীটপতঙ্গকে পেস্ট কন্ট্রোল বা পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, রোগ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত প্রভাব, এমনকি মানবপ্রভাবের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

যুদ্ধে কীটপতঙ্গের ব্যবহার

যুদ্ধে এই কীটপতঙ্গ ব্যবহারের সুযোগ মানুষের হস্তক্ষেপের আর একটি সম্ভাব্য ফলাফল। প্রচলিত ভাবে একে বলা হয় এন্টোমোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা কীটতাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং এটি জৈবিক যুদ্ধের বিদ্যমান ধারণার আওতায় পড়ে।

এক দশক আগে ইউনাইটেড স্টেটস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (ডিএআরপিএ) ‘সাইবর্গ’ কীটপতঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল, যেগুলিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং নজরদারি ড্রোন হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। এই প্রকল্পটি বাতিল করা হলেও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত পোকামাকড়ের হাত ধরে কীটতাত্ত্বিক যুদ্ধের সম্ভাবনা থেমে থাকেনি। জিন ম্যানিপুলেশন এখন সম্ভব হওয়ায় রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে রোগ ছড়ানোর জন্য যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে কীটপতঙ্গকে ব্যবহার করার সুযোগ আবারও ফিরে এসেছে।

বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন (বিডব্লিউসি) তালিকাভুক্ত টক্সিনের ব্যবহার বা ব্যবসা এবং তালিকাভুক্ত ভেক্টরের মাধ্যমে সংক্রমণযোগ্য জৈবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করেছে। বিডব্লিউসি-র অধীনে তালিকাভুক্ত টক্সিনের বিস্তৃত ক্ষেত্র কীটপতঙ্গকেও নিজের আওতাভুক্ত করে, যা রোগ ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই নিষেধাজ্ঞাটি কীটপতঙ্গের ইচ্ছাকৃত এবং নজরদারির আওতাভুক্ত প্রভাবের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে। যাই হোক এই ধরনের অস্ত্রের সম্ভাব্য প্রকৃতির কারণে প্রভাবটিকে একটি প্রাকৃতিক ভাবে সংঘটিত প্রাদুর্ভাব হিসাবে  ভুল ভাবে নির্ণয় করা হতে পারে। তাই সেটি এখনও বিবেচনা করা এবং পরিচালনা করা আশু প্রয়োজন।

বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন (বিডব্লিউসি) তালিকাভুক্ত টক্সিনের ব্যবহার বা ব্যবসা এবং তালিকাভুক্ত ভেক্টরের মাধ্যমে সংক্রমণযোগ্য জৈবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করেছে।

এই সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি রোধ করার জন্য গবেষণার নজর বায়োওয়ারফেয়ার থেকে নাগরিক প্রয়োগের পাশাপাশি যুদ্ধের প্রয়োগগুলিতে কীট জীববিজ্ঞান থেকে অনুপ্রেরণার দিকে চালিত হয়েছে। সামরিক প্রয়োগের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কীটপতঙ্গের ব্যবহার নানাবিধ উদ্ভাবনের দরজা খুলে দিয়েছে, যেগুলির নাগরিক প্রয়োগও রয়েছে। এই প্রয়োগগুলি জিনগত পরিবর্ধন বা টক্সিন বিকাশ থেকে জৈবিক অনুপ্রেরণায় চালিত হয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে অন্যতম হল বিটল বা গুবরে পোকা থেকে কিউটিকল আকৃতিকে কাজে লাগিয়ে সামরিক যানগুলিতে সঙ্কর ধাতুর ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে, যা বুলেট প্রতিরোধ করতে পারে; ড্রাগনফ্লাই বা গঙ্গাফড়িং এবং মৌমাছির অনুকরণে মাইক্রোড্রোন তৈরি  করাও নজরদারি অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে একটি নতুন উন্নয়নমূলক উদ্ভাবন। তাদের উদ্ভাবনী এবং অ-ক্ষতিকারক প্রকৃতির কারণে এই উদ্ভাবনগুলি আরও সহজে নিরীক্ষাযোগ্য, ন্যায্য এবং নৈতিক।

স্বাস্থ্য পরিষেবায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

সম্ভাব্য যুদ্ধে ব্যবহার ছাড়াও কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, জৈবপ্রযুক্তি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ওষুধ থেকে শুরু করে গবেষণার একাধিক ক্ষেত্রে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি রেশম উৎপাদনে অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য মথ এবং প্রজাপতি-সহ কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তিকে ক্রমবর্ধমান ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি অক্ষতিকারক কীটপতঙ্গকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত না করে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটপতঙ্গের জিনোমগুলিকেও কাজে লাগানো হয়েছে। বিশেষ করে মশাকে কীটপতঙ্গবাহিত রোগ  মোকাবিলার ক্ষমতা বৃদ্ধি করানোর জন্য তাদের জিনগত ভাবে উন্নত করার কাজ হচ্ছে।

একটি গবেষণা সংস্থা অক্সিটেক মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মশার সংখ্যা কমাতে মশা ব্যবহার করার সফল পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে। জিনগত ভাবে মশার এমন রূপান্তর করা হয়, যাতে পুরুষ মশাগুলি কার্যকর শুক্রাণু তৈরি করতে অক্ষম হয় এবং এইভাবে ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে রোগাক্রান্ত মশার সংখ্যা হ্রাস করে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে পরীক্ষা করার পরে এই জিনোমিক এডিটিং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে। এই সাফল্যের পরে ভারতে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়ার চিকিত্সার জন্য কীটপতঙ্গ ব্যবহারের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে।

ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রাম অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, কিরিবাতি, লাওস, মেক্সিকো, নিউ ক্যালেডোনিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভানুয়াতু এবং ভিয়েতনামেও তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করেছে এবং পীত জ্বরকে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রোগের তালিকাভুক্ত করেছে।

যদিও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং ওষুধে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড কীটপতঙ্গের সাফল্যের হার সত্ত্বেও জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড জীবের ব্যবহার এখনও বিতর্কিত। জিনগত ভাবে পরিবর্তিত কীটপতঙ্গের কিছু সুবিধাও রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের অন্যান্য ধরনের হস্তক্ষেপ, যেমন প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বা কীটনাশকগুলির তুলনায় ফলাফলের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পেতে সাহায্য করে। কারণ সেগুলি একক ধরনের কীটপতঙ্গকে লক্ষ্যবস্তু করার সুযোগ দেয় এবং বাস্তুসংস্থানের পরিপূরক কীটপতঙ্গগুলিকে এর বহির্ভূত রাখে। দ্বিতীয়ত, কীটপতঙ্গের প্রজননের হার বেশি হওয়ায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজননের অনিয়ন্ত্রিত হার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে পারে। তৃতীয়ত, জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড কীটপতঙ্গ কীটনাশকগুলির উপর নির্ভরতা কমায়, যা জল সরবরাহ, গাছপালা এবং অন্যান্য মূল্যবান কীটপতঙ্গ ও প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত। সর্বোপরি, রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য যখন জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড পোকামাকড় ব্যবহার করা হয়, তখন ওষুধের আর্থ-সামাজিক বাধা(১) দূর হয়।

এই সুবিধাগুলি জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারে আশার সঞ্চার ঘটালেও একই ভাবে যে কোনও উদ্ভাবনের দ্বৈত-ব্যবহারের দ্বিধা অন্তর্ভুক্ত করে এবং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এই অসুবিধাগুলির অন্যতম হল অনুভূমিক স্থানান্তরের মাধ্যমে পরিবেশগত প্রভাব(২) বা নেতিবাচক বাহ্যিকতা হিসাবে অন্যান্য প্রজাতির উপর অপ্রত্যাশিত প্রভাব। এই স্থানান্তরটি একটি অনিচ্ছাকৃত পরিবেশগত প্রভাবের জন্ম দিতে পারে, যা বিভিন্ন উপায়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং তা নির্ভর করে কোন জীবে এটি স্থানান্তরিত হয়েছে, তার উপর। এর একটি উদাহরণ হল কীটনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতার অনুভূমিক লম্ফ (হরাইজন্টাল জাম্প), যা জিনগত ভাবে পরিবর্তিত কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে, রেশম-উৎপাদনকারী পতঙ্গ হয়ে উদ্ভিদভোজী শুঁয়োপোকার মতো কীটনাশকের উদ্দেশ্যমূলক লক্ষ্যে স্থানান্তর করতে সক্ষম।

জিনগত ভাবে পরিবর্তিত কীটপতঙ্গের কিছু সুবিধাও রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের অন্যান্য ধরনের হস্তক্ষেপ, যেমন প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বা কীটনাশকগুলির তুলনায় ফলাফলের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পেতে সাহায্য করে। কারণ সেগুলি একক ধরনের কীটপতঙ্গকে লক্ষ্যবস্তু করার সুযোগ দেয় এবং বাস্তুসংস্থানের পরিপূরক কীটপতঙ্গগুলিকে এর বহির্ভূত রাখে।

এই অসুবিধাগুলি দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও অর্থাৎ পদ্ধতিটির বিপরীতমুখিতার ক্ষেত্রেও প্রসারিত। একবার তাকে মুক্ত করে দিলে প্রভাবের সুযোগ এবং হস্তক্ষেপের প্রত্যাহার সম্ভব নয়, বিশেষ করে জীবন্ত জীবের ক্ষেত্রে, যেগুলি কীটপতঙ্গের মতো ক্ষুদ্র অথচ উচ্চ হারে পুনরুত্পাদন করতে সক্ষম এবং যেগুলি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয় ও বহু দূর অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি একটি নমুনার আকার এবং অবস্থানের ক্ষেত্রকে সীমাবদ্ধ করার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। এর পাশাপাশি, প্রথাগত স্বাস্থ্যপরিষেবা থেকে এটি  ভিন্ন, জীবন্ত প্রাণীদের প্রত্যাহার করা যায় না, যেখানে ডোজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রত্যেকের রেকর্ড নথিভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ভেক্টর হিসাবে কীটপতঙ্গের প্রত্যাহার এবং সঠিক সংখ্যায় তাদের প্রভাবের উপর নজরদারি চালানোও অসম্ভব।

পূর্বে উল্লিখিত অসুবিধাগুলিকে নেতিবাচক বাহ্যিকতা হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা গেলেও আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। পরবর্তী ক্ষেত্রে কীটতাত্ত্বিক যুদ্ধ ও অন্য যে কোনও ফলাফল যা নিয়ন্ত্রিত হয়নি, তা বিদ্যমান জৈবপ্রযুক্তি বিধিগুলির অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার, আর সেজন্য বিধিগুলির সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

জিনোমিক এডিটিং-এ ভারতের পন্থা

কীটতাত্ত্বিক যুদ্ধের উদ্বেগের পাশাপাশি ভারত বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার কনভেনশন এবং কার্তাজেনা প্রোটোকল অন বায়ো সেফটিতে স্বাক্ষর করেছে।

এর পাশাপাশি, কীতপতঙ্গ-সহ জিনগত ভাবে পরিবর্তিত জীবের জাতীয় দায়বদ্ধতার প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, পরিবেশ (সুরক্ষা) আইনের অধীনে এমন নিয়ম তৈরি করেছে, যা জিনগত পরিবর্তিত জীবের সৃষ্টি, ব্যবহার, বাণিজ্য এবং গবেষণার উপর নজর রাখে। এই নিয়মগুলির মধ্যে উপদেষ্টা, পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য ছ’টি কমিটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরডিএনএ অ্যাডভাইজরি কমিটি (আরডিএসি) একটি উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে কাজ করে। নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনার দিকটি ইনস্টিটিউশনাল বায়োসেফটি কমিটি (আইবিএসসি), রিভিউ কমিটি অন জেনেটিক ম্যানিপুলেশন (আরসিজিএম) এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাপ্রেজাল কমিটি (জিইএসি) দ্বারা পরিচালিত হয়। এর পাশাপাশি, স্টেট বায়োটেকনোলজি কোঅর্ডিনেশন কমিটি (এসবিসিসি) এবং জেলা স্তরের কমিটিও (ডিএলসি) নজরদারিতে সাহায্য করে৷

এ ভাবে এগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রবিধানগুলিকে মিউটেশন বহনকারী পোকামাকড়ের স্ক্রিনিং ও শনাক্তকরণ পর্যন্ত নকশা, মূল্যায়ন এবং বিতরণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রত্যাহারের সমস্যা এবং অনিয়ন্ত্রিত ফলাফলের বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট অসুবিধাগুলির মোকাবিলা করতে হবে।

জিনগত ভাবে পরিবর্তিত জীব সম্পর্কিত ভারতের বিধিগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরাধিকারযোগ্য এবং অ-উত্তরাধিকারযোগ্য পরিবর্তন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির প্রবিধানকে অতিক্রম করেছে। ভারতের ন্যাশনাল বায়োটেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০২৫ এ ছাড়াও নতুন এবং উদীয়মান জিন এডিটিং প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জিন এডিটিং প্রবিধানকে আন্তর্জাতিক গুণমানের সঙ্গে উন্নত ও সমন্বিত করার কথা উল্লেখ করে। এখনও অবধি প্রকাশিত নিয়মগুলি মূলত উদ্ভিদের জিন সম্পাদনা বা প্ল্যান্ট জিন এডিটিং-এর উপরেই মনোনিবেশ করে এবং অন্যান্য জীবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

যেহেতু সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রভাবের আরও নানাবিধ উপায় খুঁজে নিচ্ছে, তাই প্রযুক্তিটিকে সংস্কার করার জন্য এবং এর বর্তমান সীমাবদ্ধগুলিকে অতিক্রম করার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীটপতঙ্গের জিনোমের সফল সম্পাদনার জন্য সতর্ক মনোযোগের প্রয়োজন। এ ভাবে এগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রবিধানগুলিকে মিউটেশন বহনকারী পোকামাকড়ের স্ক্রিনিং ও শনাক্তকরণ পর্যন্ত নকশা, মূল্যায়ন এবং বিতরণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রত্যাহারের সমস্যা এবং অনিয়ন্ত্রিত ফলাফলের বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট অসুবিধাগুলির মোকাবিলা করতে হবে।

এই ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য পরবর্তী সময়ে জেনেটিক মিউটেশন এবং বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিস্তারিত সংজ্ঞার প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত হস্তক্ষেপ, পরিবেশগত প্রভাব এবং নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত। পরিশেষে সর্বশেষ বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত জীব কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তার পুনর্মূল্যায়ন পরিবেশে সিআরআইএসপিআর-সম্পাদিত কীটপতঙ্গের ভবিষ্যৎ মুক্তির সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে।

সংস্কারকৃত এবং বর্তমান প্রবিধানের অধীনে সিআরআইএসপিআর এবং অন্যান্য জৈবপ্রযুক্তির মতো উদ্ভাবনের মাধ্যমে কীটতাত্ত্বিক বর্ধিতকরণ একাধিক প্রভাবশালী এলাকায় একটি বিশাল নতুন অর্থনীতির জন্ম দিয়েছে, যার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার একটি পরিবেশগত সমাধানের জন্য আরও বেশি আশার সঞ্চার করে।


১) যেহেতু কীটপতঙ্গ একটি এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং নির্বিচারে সেগুলি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, তাই কার চিকিৎসার সামর্থ্য রয়েছে, সেটি তার উপর নির্ভর করে না।

২) কীটপতঙ্গের মধ্যে তৈরি করা নতুন জিনের প্রকৌশল অন্য প্রজাতিতে ‘সঞ্চারিত’ হতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.