অ্যালগরিদম (বা গাণিতিক পরিভাষা) দ্রুত বিষয়বস্তুর সম্প্রসারণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউজার বা ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততার মূল ভিত্তি হয়ে উঠছে। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য এই ব্যবস্থাগুলি পরিকল্পিত হলেও সেগুলি প্রায়শই অনিচ্ছাকৃত ভাবে চরমপন্থার প্রচার করে এবং মেরুকরণের আখ্যানকে ছড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতি সামাজিক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিভ্রান্তি প্রচার করতে পারে এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির প্রভাবকে শক্তিশালী করতে পারে। এটিকে ‘অ্যালগরিদমিক র্যাডিকালাইজেশন’ (অ্যালগরিদমের মৌলবাদকরণ) বলা হয়। এটি আসলে দর্শায় যে, কী ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মঞ্চগুলি ব্যবহারকারীদের উপর মতাদর্শগত আখ্যান চাপিয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট বৈষম্যমূলক বিষয়বস্তুর মডেলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মতামতকেই আকার দেয়।
এই নিবন্ধটিতে অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধনের নেপথ্যের প্রক্রিয়া, চরমপন্থী আখ্যানের প্রভাব এবং চরমপন্থা মোকাবিলায় যে চ্যালেঞ্জগুলি উঠে আসছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে।
অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধনের উপর আলোকপাত
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম হল কম্পিউটার দিয়েই এমন এক ধরনের নিয়ম, যা লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ও টাইমলাইনের মতো ইন্টারেক্টিভ মেট্রিক্স বা সংযোগস্থাপনকারী উপাদানের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীর আচরণ ও অবস্থানকে পরীক্ষা করে। এই অ্যালগরিদম আবার কাস্টমাইজড রেকমেন্ডেশেন (অর্থাৎ কোনও একজন মানুষকে বিশেষ কিছু দেখানোর জন্য প্রস্তাব বা সুপারিশ করা) করতে মেশিন লার্নিং মডেলের ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়াটি একটি পরিবর্ধক হিসাবেও কাজ করে। কারণ সম্পৃক্ততা বা শেয়ার বাড়লে পোস্টগুলি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কখনও কখনও ভাইরাল প্রবণতাও দেখা দেয়। অ্যালগরিদমগুলি আবার বাস্তুতন্ত্র বা ইকো চেম্বারও তৈরি করতে পারে, যদি সেগুলি ব্যবহারকারীদের মঞ্চটিতে নিযুক্ত রাখতে বারবার একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
অ্যালগরিদম ও হ্যাশট্যাগ নির্দিষ্ট শ্রোতাদের লক্ষ্য করে এবং ব্যবহারকারীর আগ্রহ ও আচরণের সঙ্গে সংযুক্ত পোস্টগুলির প্রচার চালিয়ে বিষয়বস্তুকে আরও ছড়িয়ে দেয়।
হ্যাশট্যাগ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নানাবিধ বিষয়বস্তুকে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য কিওয়ার্ড বা নির্দিষ্ট শব্দবন্ধ হিসাবে কাজ করে এই হ্যাশট্যাগ। ফলে একটা হ্যাশট্যাগের মাধ্যমেই সেই বিশেষ শ্রেণির বিষয়বস্তু একসঙ্গে বহু মানুষ খুঁজে পেতে সক্ষম হন। যখন একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়, তখন সেটি একটি পোস্টের বিষয় চিনতে এবং সেই হ্যাশট্যাগ অনুসন্ধান বা অনুসরণকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে অ্যালগরিদমকে সহায়তা করে। প্রবণতা বা নির্দিষ্ট বিশেষ হ্যাশট্যাগ-সহ পোস্টগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং উচ্চ হারের সম্পৃক্ততা এ হেন পোস্টের দৃশ্যমানতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অ্যালগরিদম ও হ্যাশট্যাগ নির্দিষ্ট শ্রোতাদের লক্ষ্য করে এবং ব্যবহারকারীর আগ্রহ ও আচরণের সঙ্গে সংযুক্ত পোস্টগুলির প্রচার চালিয়ে বিষয়বস্তুকে আরও ছড়িয়ে দেয়।
প্রচার এবং চরমপন্থার অ্যালগরিদমিক প্রতিধ্বনি
ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুক, এক্স (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) এবং ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের মূলে রয়েছে অ্যালগরিদম এবং সেগুলি ডিজিটাল মিথস্ক্রিয়া, আচরণ, পছন্দ ও সম্পৃক্ততা অনুসারে ব্যবহারকারীদের কাছে কেমন ধরনের পোস্ট প্রদর্শন করবে, তা পরিবর্তন করতে পারে। অ্যালগরিদমগুলি সাধারণত লাইক ও শেয়ারের মতো উপাদানের উপর মনোযোগ দেয় এবং ফিডব্যাক লুপ বা প্রতিক্রিয়ার চক্র তৈরি করে, যা মেরুকরণের আখ্যানকে ছড়িয়ে দিয়ে আবেগগত ভাবে উত্তেজক বা বিতর্কিত উপাদানের প্রচার করে। নিজের এক গবেষণায় শিক্ষাবিদ জো বার্টন বলেছেন যে, এই ধরনের অ্যালগরিদমিক পক্ষপাতিত্ব, ভয়, রাগ বা ক্ষোভের মাধ্যমে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে পারে, অসাবধানতাবশত চরমপন্থী মতাদর্শের জন্ম দেয় এবং ব্যবহারকারীদের মৌলবাদী বিষয়বস্তুর প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
যে দু’টি চরমপন্থী গোষ্ঠী এই মঞ্চগুলিকে কার্যকর ভাবে নিজেদের আখ্যানের প্রচার ও সদস্য নিয়োগের জন্য ব্যবহার করেছে, তারা হল ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদা। উদাহরণ স্বরূপ, আইএস নিজের অনুসারীদের মধ্যে একত্রিত হওয়ার অনুভূতি জাগানোর জন্য এক্স ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করে এবং প্রায়শই মানুষকে উগ্রবাদী করে তোলার লক্ষ্যে আবেগপ্রবণ উত্তেজক বিষয়বস্তু প্রকাশ করে। আর অন্য দিকে আল-কায়েদা নিজেদের ভিডিয়োতে এনক্রিপ্ট করা লিঙ্ক-সহ বক্তৃতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইউটিউবের ব্যবহার করে। আবার অতি দক্ষিণপন্থীরা টিকটক পরিসর ব্যবহার করে নিজেদের বিষয়বস্তু প্রচার করে। টিকটক-এর ‘ফর ইউ’ অংশটিতে প্রায়শই ব্যবহারকারীদের কাছে অতি দক্ষিণপন্থী উপাদানের সুপারিশ করা হয় এবং ব্যবহারকারীদের অ্যালগরিদমিক র্যাবিট হোল বা অ্যালগরিদমভিত্তিক ফাঁদে টেনে আনতে সাহায্য করে, যা আবার চরমপন্থার মতাদর্শের প্রচার চালায়।
অ্যালগরিদমগুলি সাধারণত লাইক ও শেয়ারের মতো উপাদানের উপর মনোযোগ দেয় এবং ফিডব্যাক লুপ বা প্রতিক্রিয়ার চক্র তৈরি করে, যা মেরুকরণের আখ্যানকে ছড়িয়ে দিয়ে আবেগগত ভাবে উত্তেজক বা বিতর্কিত উপাদানের প্রচার করে।
অ্যালগরিদমিক শোষণ শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান নয়। নির্বাচনের সময় ভুল তথ্য প্রচার করার জন্যও অ্যালগরিদমকে ব্যবহার করা হয় এবং কখনও কখনও এর ফলে হিংসা ও মেরুকরণের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের উদাহরণগুলি দর্শায় যে, কী ভাবে অ্যালগরিদম আসলে নির্ভুলতার চাইতেও সম্পৃক্ততাকে প্রাধান্য দিয়ে বিভ্রান্তি, মেরুকরণ ও চরমপন্থী আখ্যানের বিস্তারকে সহজতর করে এবং আধুনিক সাইবার ও আদর্শগত যুদ্ধে সেগুলিকে প্রধান হাতিয়ার করে তোলে। চরমপন্থী কৌশলগুলির আওতায় প্রায়শই কী ভাবে অ্যালগরিদমগুলি এমন বিষয়বস্তু ব্যবহারকারীদের ফিডব্যাকে এনে দেয়, যা আবেগকে উস্কে দেয় ও মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে। ‘ফিল্টার বাবল’ তৈরি করার মাধ্যমে অ্যালগরিদম আসলে ব্যবহারকারীদের তাদের পক্ষপাতের সঙ্গে মিলে যাওয়া মতাদর্শকে তুলে ধরে এবং চরমপন্থী বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে তোলে।
ঝুঁকি কমানো: প্রযুক্তিগত সমাধান ও নীতি পদক্ষেপ
এ হেন অস্বচ্ছতার পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমগুলি নানাবিধ চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে এবং চরমপন্থী বিষয়বস্তু মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। অনেক সময় অ্যালগরিদমগুলি ‘ব্ল্যাক বক্স’ হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ সেখানে এমনকি ডেভেলপার বা নির্মাতারাও বিশেষ ধরনের বিষয়বস্তু সুপারিশ করার অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া বুঝতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, টিকটক-এর ‘ফর ইউ’ অংশটিতে চাঞ্চল্যকর ও চরমপন্থী উপাদানের প্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু তার অপারেশনাল মেকানিক্স বা কার্যকরী ব্যবস্থা অ্যালগরিদমিক পক্ষপাতের প্রশমনকে সীমিত করছে। আর চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি এই ব্যবস্থাটিকে কাজে লাগায়। অর্থাৎ শনাক্তকরণ ব্যবস্থাগুলিকে এড়িয়ে যেতে নিজেদের বিষয়বস্তুকে ইউফেমিজম বা প্রতীকে পরিবর্তন করে। সর্বোপরি, স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অভিযোজন ছাড়াই অ্যালগরিদমের বৈশ্বিক স্বভাব সমস্যাটিকে খারাপতর করে তোলে।
বাক্স্বাধীনতা ও কার্যকর বিষয়বস্তুকে নরমপন্থার মোড়কে প্রকাশ করা আসলে সত্যিই এক জটিল সমস্যা। জার্মানির নেটজ ল-এর মতো নীতি - যার লক্ষ্য হল অনলাইন পরিসরে ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরিমাণ হ্রাস করা - মঞ্চগুলিকে কঠোর সময়সীমার মধ্যে ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু সরিয়ে দিতে বা মুছে ফেলতে বাধ্য করে। তাই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি আইনি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই এমন ভারসাম্যের সঙ্গে নিজেদের বিষয়বস্তু তৈরি করে, যাতে সেগুলি কোনও মতেই আইনি সীমা অতিক্রম করে না, অথচ নিজেদের বিভাজনমূলক মতাদর্শের প্রচার চালিয়ে যেতে পারে।
ইউটিউব-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত (এআই) মঞ্চে ২০২৩ সালের মেশিন-লার্নিং মডেলের মাধ্যমে চরমপন্থার অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধন হ্রাস করা হয়েছে, যা বিপদসঙ্কেত প্রদানকারী চরমপন্থী ভিডিয়োর পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। তা সত্ত্বেও, প্রধানত আইএস এবং আল-কায়েদা শনাক্তকরণ এড়াতে কোডেড বা প্রতীকী ভাষা ও বক্রোক্তির আশ্রয় নিয়েছে। কাউন্টার-ন্যারেটিভ কৌশল, যেমন ইনস্টাগ্রাম আবার অনুসন্ধানের পরিবর্তে সহনশীল সামগ্রী প্রদর্শন করে গঠনমূলক বিকল্প প্রদান করে।
ইউটিউব-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত (এআই) মঞ্চে ২০২৩ সালের মেশিন-লার্নিং মডেলের মাধ্যমে চরমপন্থার অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধন হ্রাস করা হয়েছে, যা বিপদসঙ্কেত প্রদানকারী চরমপন্থী ভিডিয়োর পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমিয়েছে।
ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের উদ্যোগে (এমইআইটিওয়াই) ক্ষতিকারক সামগ্রী প্রদর্শন করে, এমন ৯,৮৪৫টিরও বেশি ইউআরএল ফ্ল্যাগ করেছে বা বাতিল করেছে। ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের অধীনে ভারত সরকার (জিওআই) সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল নিউজ এবং ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) মঞ্চগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়মগুলির দরুন ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়বস্তুর প্রথম অরিজিনেটরকে (অর্থাৎ যে ব্যক্তি অনলাইনে প্রথম বিষয়টি পোস্ট করেছিল) চিহ্নিত করতে এবং ফ্ল্যাগড বা অনিরাপদ সামগ্রী অপসারণ করতে সক্ষম হয়। তাই চরমপন্থাকে কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য অব্যাহত উদ্ভাবন ও সহযোগিতা অপরিহার্য।
অ্যালগরিদমিক মৌলবাদের মোকাবিলা করা
উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলি ছাড়াও, অ্যালগরিদমিক স্বচ্ছতার সুবিধার্থে এবং চরমপন্থী বিষয়বস্তুর বিস্তার পরীক্ষা করার জন্য আরও কিছু করা যেতে পারে:
- স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অ্যালগরিদম অডিট বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২০২৩ সালের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট-এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি নিজেদের অ্যালগরিদমগুলি কী ভাবে কাজ করে তা প্রকাশ করতে এবং স্বাধীন গবেষকদের ব্যবহারকারীদের উপর তাদের প্রভাব মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে।
- নীতিনির্ধারকদের অ্যালগরিদমিক দায়বদ্ধতার নিয়মগুলি স্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত, যার মধ্যে এমন মঞ্চগুলির জন্য জরিমানা রয়েছে, যা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুর পরিবর্ধনকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। জার্মানির নেটজ আইন - যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ সামগ্রী অপসারণ না করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে জরিমানা করে থাকে - ইউরোপ জুড়ে অনুরূপ আইনগুলিকে অনুপ্রাণিত করেছে।
- স্থানীয় প্রেক্ষাপটে অ্যালগরিদম সামঞ্জস্যের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে সংযমের প্রয়োজন রয়েছে। চরমপন্থী বিষয়বস্তু প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট রাজ্য বা দেশে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্তঃপ্রবাহ থেকে জন্ম নেয় এবং অ্যালগরিদমিক কাঠামোতে কাজ করার সময় এই সূক্ষ্মতাগুলি প্রতিফলিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রকরা ইতিমধ্যেই সামাজিক গণমাধ্যমে সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে, যাতে সংস্থাগুলি দেশের অভ্যন্তরে কথিত বিভিন্ন উপভাষাগুলি বিবেচনা করে চরমপন্থী বিষয়বস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং এ হেন বিষয়বস্তুর পরিমাণ পরিমিত করতে পারে।
ব্যবহারকারীদের প্রচার শনাক্ত করতে ও চরমপন্থী বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এড়াতে সরকারকে অবশ্যই জনসচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
উপসংহার
প্রচার ও চরমপন্থী আখ্যানের অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধন ডিজিটাল যুগে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে এবং সামাজিক সংহতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত একটি বহুমুখী পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুক নিজেদের অ্যালগরিদমগুলির পরিমার্জন করলেও এ হেন প্রচেষ্টাগুলি স্বচ্ছতা, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা, সংযম ও বাক্স্বাধীনতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এই ভারসাম্য অর্জনের জন্য সরকার, প্রযুক্তি সংস্থা, সুশীল সমাজ ও ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। ব্যবহারকারীদের প্রচার শনাক্ত করতে ও চরমপন্থী বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এড়াতে সরকারকে অবশ্যই জনসচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সেফটি বিলে অনলাইন মিডিয়া সাক্ষরতার উন্নতির জন্য জনশিক্ষার উদ্যোগের বিধান দেওয়া হয়েছে।
অতএব, এ কথা বলাই বাহুল্য যে, চরমপন্থার অ্যালগরিদমিক বিস্তারের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলিকে একমাত্র সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রশমিত করা যেতে পারে।
সৌম্য অবস্থি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজি-র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.