Author : Navdeep Suri

Published on Sep 17, 2021 Updated 0 Hours ago

পৃথিবীর যে কোনও দেশেরই বিদেশনীতিতে তার অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রভাব পড়ে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়।

বিদেশনীতি নির্ধারণে রাজনীতিকদের শুনতে হবে ভারতের যুবসমাজের কথা

‘অল পলিটিকস ইজ লোকাল’ — আমেরিকার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধিসভার প্রবাদপ্রতিম স্পিকার টিপ ও’নিল-এর এই বিখ্যাত উক্তি সর্বজনবিদিত। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি আমি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে একজন অপেক্ষাকৃত নবীন কূটনীতিকের ভূমিকায় মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতের বিদেশ নীতি তুলে ধরার কাজে ব্যস্ত, তখন এ কথা একাধিক বার আমার সামনে উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এই উক্তির অর্থ, মার্কিন কংগ্রেসের যে কোনও সদস্যই মূলত সেই সমস্ত সমস্যার কথা শুনতে আগ্রহী হবেন যা তাঁর নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব। রাজনীতির এই স্বতঃসিদ্ধ সত্যের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতনতাই ভারতীয় রাজনৈতিক সমিতি বা ইন্ডিয়ান ককাস গঠনের সূচনা করে। এটি এমন একটি সংগঠন যা বিগত ২৫ বছর ধরে ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক আরও উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তথ্যাভিজ্ঞ ও সক্রিয় ভারতীয় আমেরিকানদের একটি গোষ্ঠী এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পৃথিবীর যে কোনও দেশেরই বিদেশনীতিতে তার অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রভাব পড়ে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। এক জন তর্কপ্রিয় ভারতীয় দেশের প্রায় সমস্ত বিষয় সম্পর্কেই জোরালো মতামত পোষণ করেন। রাজনৈতিক প্রচার দ্বারা কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা না করা হলে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নাগরিক স্বাভাবিক ভাবেই বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত আরও যুক্তিসঙ্গত আলোচনায় উপযুক্ত ভূমিকা নিতে পারেন। যখন আমরা প্রথম ‘এম ই এ ডিস্টিংগুইশড লেকচারস অন ফরেন পলিসি’ নামক প্রকাশ্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করি, সেই সময় থেকেই ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক নীতিগ্রহণের এই সূত্রটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১০ সালে যখন এই উদ্যোগের ঘোষণা করা হয়, তখন পরিকল্পনাটি ছিল খুবই সরল এবং আড়ম্বরহীন। আইআইটি এবং আইআইএম-সহ খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য এবং অধিকর্তাদের কাছে ই-মেলে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে কোনও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানাতে ইচ্ছুক কি না, যিনি সেখানে তাঁদের পছন্দের বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আমাদের মনে হয়েছিল, এর ফলে আমরা এমন এক যুবসমাজ গঠন করতে সক্ষম হব যারা রাজনীতির বাস্তবচিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং বিদেশনীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে এই প্রস্তাবে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে এবং পরবর্তী এক দশকে প্রায় ৩০০টি আলোচনার আয়োজন করা হয়। এই সমস্ত আলোচনায় প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক, বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উঠে আসে। কিন্তু এই উদ্যোগ কি তার লক্ষ্যপূরণে সফল হয়েছে?

এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরের কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের করা একটি অসাধারণ সমীক্ষায়, যার নাম ‘দি ওআরএফ ফরেন পলিসি সার্ভে: ইয়ং ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। ভারতের ১৪টি ছোটবড় শহরের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া নিঃসন্দেহে এক সাহসী উদ্যোগ। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানুষরা নাগরিক জনসংখ্যার ২৭% জুড়ে আছেন। পাশাপাশি ৮টি আলাদা আলাদা ভাষায় ২০৩৭ জন মানুষের মতামত নথিভুক্ত করা এই সমীক্ষাকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক করে তুলেছে। তা হলে দেশের ভবিষ্যতের যারা প্রকৃত অংশীদার, সেই ভোটারদের মনে বিদেশনীতির কোন কোন বিষয় জায়গা করে নিয়েছে ?

কোনও কোনও ক্ষেত্রে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের উত্তর এসেছে প্রত্যাশিত পথেই — আমেরিকার উপরে বাড়তে থাকা বিশ্বাস, পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষ এবং চিনের প্রতি আরও বেশি বিতৃষ্ণা প্রকাশ পেয়েছে। আবার কখনও তাঁরা চমকে দেওয়ার মতো কথাও বলেছেন। এখানে সেই সমস্ত মতামতের কিছু উদাহরণ তুলে দেওয়া হল।

১. বিশ্ব জুড়ে অতিমারির তাণ্ডবকে বিদেশনীতি নির্ধারণের সবচেয়ে কঠিন প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করা হয়েছে। মতদাতাদের ৯১% এ ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং ১৭% মতদাতা অতিমারি নিয়ে মোটের উপর চিন্তিত। অধিকাংশ যুবক-যুবতীই চিন অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে অতিমারি নিয়ে বেশি চিন্তিত।

২. অতিমারি মোকাবিলায় ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক স্তরে সমাধান সূত্র তৈরি করা — বেশির ভাগ মতদাতাই (৪৬%) এমনটা মনে করেছেন, যেখানে ৩৪% মানুষ বলছেন জাতীয় স্তরে সমাধান খোঁজার কথা। ১৫% উত্তরদাতা মত দিয়েছেন দুই উদ্যোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে। যদিও এই সমীক্ষাটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে করা হয়েছিল অর্থাৎ অতিমারির সর্বনাশা দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়ার বেশ কিছুটা আগে। ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সমীক্ষায় না পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমীক্ষা থেকে মনে হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত সরকারের অন্যান্য দেশে টিকা রফতানি অর্থাৎ ভ্যাকসিন মৈত্রী উদ্যোগ চালু করা সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। যদিও কিছু দিনের মধ্যেই উদ্যোগটি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়ে যায়।

৩. ৮৩% মতদাতা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে একটি উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সমস্যা বলে মনে করেছেন। প্রায় সমসংখ্যক মানুষ চিন্তিত চিনকে নিয়ে। ৭৫% মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের সমস্যাকেই অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন। যুবসম্প্রদায়ের কাছে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্টের বিষয়টি সীমান্ত বিরোধের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের চার ভাগের তিন ভাগ (৭৬%) আন্তর্জাতিক স্তরে যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক সংস্থানগুলির মাধ্যমে এগোনোর পক্ষে মত দিয়েছেন, যেখানে মাত্র ২৪% মতদাতা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উপরে জোর দিয়েছেন।

৫. ভারতের বিদেশনীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত কোন বিষয়টিকে? এই প্রশ্নের উত্তরে ৮৯% মানুষ বলেছেন যে, ভারতের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তোলা। ৮০% উত্তরদাতা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। এ ছাড়াও কেউ কেউ চিন এবং পাকিস্তান ছাড়া অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির উপরে জোর দিয়েছেন।

বিদেশনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে ভারতের নাগরিক যুব সম্প্রদায়ের একটি সুচিন্তিত ও সুস্পষ্ট মতামত আছে। তাঁরা ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে দেশের অর্থনীতি, অতিমারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সর্বোপরি এই সমীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্য অনেক সময়েই সম্পূর্ণ বাঁধা গতের বাইরে হওয়ার সুবাদে এক গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্দেশিকার কাজ করতে পারে। এবং তা শুধুমাত্র বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞদেরই নয়, পথ দেখাতে পারে সেই সব রাজনীতিবিদকেও, যাঁরা ভারতে নির্বাচন এলেই পাকিস্তানকে আলোচ্য বিষয় করে তুলতে ভালবাসেন। যদি ‘অল পলিটিকস ইজ কাল’ কথাটি সত্যি হয় এবং নির্বাচনে যুব সম্প্রদায়ের মতামতের গুরুত্ব থাকে, তা হলে তাঁদের কথা শোনার জন্য আদর্শ সময় এটাই।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.