Author : Shoba Suri

Published on Mar 12, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতে পুষ্টির মাত্রা উদ্বেগের বিষয়। সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির খাদ্য বৈচিত্র্যে নজর দেওয়া প্রয়োজন

এটা সুপরিচিত যে খাদ্যের ঝুড়িতে পুষ্টি–নিবিড় খাদ্যের প্রাপ্যতা ব্যাপক অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায় ৩টির মধ্যে ১টি শিশু বৃদ্ধির অভাবে (‌স্টান্টেড)‌ ভোগে এবং কম ওজনের হয়। খাদ্যবৈচিত্র্য মানুষের পুষ্টির অবস্থার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে দুর্বল মহিলা ও শিশুদের উপর। ফল, শাকসবজি, ডালের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার খাদ্যসূচিতে রাখা অপরিহার্য, কারণ তা ভিটামিন, খনিজ ও ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলির সরবরাহ বাড়াতে পারে। এইভাবে অপুষ্টির কারণ হতে পারে এমন ঘাটতিগুলি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

ভারতে প্রতিদিন ৪৭ গ্রাম প্রোটিনের গড় ব্যবহার এশিয়া এবং উন্নত দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম৷ ডাল, শিম, দুধ ও চর্বিহীন মাংসের মতো প্রোটিন উৎসগুলি অন্তর্ভুক্ত করা প্রোটিন গ্রহণের গুণমানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি দিয়ে খাদ্যের শক্তিশালীকরণ গর্ভবতী মহিলা এবং ছোট শিশুদের মতো দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য উপকারী।

খাদ্য–বৈচিত্র্য বৃদ্ধির অভাব, শারীরিক দুর্বলতা (‌ওয়েস্টিং)‌ এবং অন্যান্য ধরনের অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পুষ্টির চাহিদাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।



খাদ্য–বৈচিত্র্যের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা পুষ্টির ফলাফলের বাইরে চলে যায়, কারণ এটি খাদ্য–সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের জন্য জনসম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। আয়রন, ভিটামিন এ এবং জিঙ্কের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট দিয়ে খাদ্যের রেশনকে শক্তিশালী করা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে  নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতি মোকাবিলা করতে পারে। যাই হোক, এই পদ্ধতিতে আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক খাদ্যতালিকাগত পছন্দগুলিকে বিবেচনায় রাখলে তা খাদ্য রেশন পরিকল্পনার গ্রহণযোগ্যতা এবং মান্যতা বৃদ্ধি করতে পারে। খাদ্য–বৈচিত্র্য বৃদ্ধির অভাব, শারীরিক দুর্বলতা (‌ওয়েস্টিং)‌ এবং অন্যান্য ধরনের অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পুষ্টির চাহিদাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। ভারতের খাদ্য সরবরাহে খাদ্য–বৈচিত্র্যের মধ্যে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য খাদ্যের পরিসরের প্রসার ঘটানো উচিত।


পিডিএস সঠিক করা

ভারতে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিডিএস) সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে গম ও চাল সরবরাহ করে। কিছু রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ডাল, ভোজ্য তেল, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদির মতো অতিরিক্ত পণ্য সরবরাহ করে। এনএফএসএ আইন ২০১৩ অনুসারে, এই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য পরিবারের অধিকার গ্রামীণ জনসংখ্যার পঁচাত্তর শতাংশ পর্যন্ত এবং শহরের পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত প্রসারিত হবে। এটি খাদ্য বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজরার মতো পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের গ্রহণ প্রসারের একটি প্ল্যাটফর্ম। ভারত সরকার পিডিএস–এ বাজরা চালু করেছে এবং এর উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে বাজরার জৈব চাষের প্রসার ঘটাচ্ছে। আইসিডিএস কর্মসূচির সম্পূরক পুষ্টি প্রকল্প তাদের গরম রান্না করা খাবারে বাজরাকে সংযুক্ত করেছে। যাই হোক, যে রাজ্যগুলিতে চাল ও গম পছন্দ করা হয় সেখানে পিডিএস–এ বাজরা গ্রহণের অভাবের কারণে বিভিন্ন রাজ্যে এর প্রয়োগ অভিন্ন নয়। এছাড়াও সংগ্রহে বিলম্ব, বাজরার উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, এবং কম সংরক্ষণ–যোগ্যতার কারণে বাজরার গ্রহণযোগ্যতা কম হয়েছে।

এফএসএসএআই দ্বারা সংজ্ঞায়িত ‘‌ফোর্টিফিকেশন‘‌ বা সশক্তকরণ হল ‘‌ইচ্ছাকৃতভাবে একটি খাদ্যে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সামগ্রী বৃদ্ধি করা, যাতে খাদ্যের পুষ্টির গুণমান উন্নত করা যায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ন্যূনতম ঝুঁকির মধ্যে জনস্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করা যায়’‌। যাই হোক, এটি প্রধান খাবারে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ভারত সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পিডিএস, আইসিডিএস, পিএম পোষণ/মিড ডে মিল ও অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে চালের সশক্তকরণ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে।


আইসিডিএস কর্মসূচির সম্পূরক পুষ্টি প্রকল্প তাদের গরম রান্না করা খাবারে বাজরাকে সংযুক্ত করেছে। 


মসুর ও ছোলার মতো ডাল এবং শস্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হলে তা প্রোটিন, ফাইবার ও প্রয়োজনীয় খনিজগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস সরবরাহ করবে, যা খাদ্যের বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখে। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ আন্না যোজনার অধীনে সরকার অতিমারি চলাকালীন পিডিএসের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছিল। ৮০ কোটি দরিদ্র মানুষ প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৫ কেজি গম বা চাল এবং ১ কেজি ডাল পেয়েছেন।

প্রকল্পটি ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ ৭৪ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্য ক্রয় করতে অক্ষম। তাজা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যবৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি পরিমাপযোগ্য মডেল হিসাবে পুষ্টি/জনসম্প্রদায়িক বাগানের প্রসার প্রয়োজন। পুষ্টির বাগানগুলি পরিবারের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজির ক্রমাগত সরবরাহের মাধ্যমে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে খাদ্যের বৈচিত্র্যকে উন্নত করে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলগুলিতে কমিউনিটি গার্ডেন শিশু ও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের মধ্যে শাকসবজি ও ফল খাওয়ার উৎসাহ দিতে সহায়তা করতে পারে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুষ্টিকর খাদ্য পছন্দ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল (পুষ্টি) রান্নাঘরের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছে। ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও কর্ণাটকের সরকারি স্কুলগুলিতে উদ্যানপালন বিভাগের সঙ্গে একত্র করে কিচেন গার্ডেন তৈরি করা হয়েছে। উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলি নির্দিষ্ট পুষ্টিতে সমৃদ্ধ স্থানীয় ও দেশীয় খাবার উৎপাদন ও গ্রহণ করে, এবং এইভাবে খাদ্যের বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখে।


বৈচিত্র্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন


খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টি অর্জনের জন্য উৎপাদন ও উপভোগ উভয় ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রমাণ রয়েছে যে কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায়ের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য কৃষিতে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি অপরিহার্য। ফসলের বিস্তৃত পরিসরের চাষ উৎসাহিত করা স্থিতিশীলতার অনুসারী কৃষি অনুশীলনকে সমর্থন করে, আর মনোকালচার বা একক ফসলের চাষ মাটির স্বাস্থ্যক্ষয় এবং কীটপতঙ্গ ও রোগের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।


প্রমাণ রয়েছে যে কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায়ের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য কৃষিতে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি অপরিহার্য।

যাই হোক, শুধুমাত্র সশক্তকরণ ও পরিপূরকগুলির উপর খুব বেশি নির্ভর করা ক্ষতিকারক হতে পারে। খাদ্যের উপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকাগত বৈচিত্র্যের একটি দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয়তার আরও ভাল পথ হতে পারে। প্রমাণগুলি সুপারিশ করে যে, খাদ্যের গুণমান পরিবর্তন করার জন্য খাদ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকর। খাদ্য ঝুড়িতে বৈচিত্র্যময় খাদ্য প্রবর্তনের পদ্ধতি যাই হোক না কেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বৈচিত্র্যময় ও সুষম খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

বর্ধিত সচেতনতা খাদ্যাভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এবং জনস্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে। সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের তাজা পণ্যের সরাসরি বিক্রয়ের জন্য কৃষকদের বাজার স্থাপনের মাধ্যমে বাজারের হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার কেনার সুযোগ পেতে এবং সেগুলি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত করে। যে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচিগুলি শস্য বৈচিত্র্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তা আরও বৈচিত্র্যময় খাদ্য সরবরাহে অবদান রাখে, এবং বৈচিত্র্যময় পুষ্টির প্রোফাইল–সহ বিস্তৃত শস্যের চাষের প্রচার ঘটায়।

ভারতে খাদ্যের রেশনে খাদ্য বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এর জনসংখ্যার পুষ্টির অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যাই হোক, এর জন্য এমন একটি বিস্তৃত পদ্ধতির প্রয়োজন যা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক পছন্দ এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট পুষ্টির চাহিদা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের জন্য কৃষি বৈচিত্র্যের পরিকল্পনা করে।



এই ভাষ্যটি প্রথম আউটলুকে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.