Author : Rahul Mazumdar

Published on May 25, 2025 Updated 0 Hours ago

রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারতের উচিত আফ্রিকার পেট্রোলিয়াম পণ্য, ওষুধ ও স্মার্টফোনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রতি নজর দেওয়া।

আফ্রিকায় চাহিদা-ভিত্তিক পণ্য রপ্তানি

গত কয়েক বছর ধরে আফ্রিকায় ভারতের সম্পৃক্ততা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত। যদিও আফ্রিকা মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল, তবুও এর সম্ভাব্য সুযোগগুলি অন্বেষণের ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে খুব কম সাড়া পাওয়া গেছে। একই সময়ে, ২০১৫ সালে, শেষবার অনুষ্ঠিত ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলনটি সুপ্ত রয়ে গিয়েছে, এবং এটি পুনরুজ্জীবিত করার কোনও উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। যদিও জি২০-তে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)-এর সাম্প্রতিক অন্তর্ভুক্তি তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি সমাধানের ধারণা দেয়।

তা সত্ত্বেও, বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবসা এবং বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলিকে আলাদাভাবে পুঁজি করা গুরুত্বপূর্ণ।

আফ্রিকার সম্ভাব্য অনুসন্ধান?

২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ভারতের ৪৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-‌এ ছিল। এই বাজারগুলি, যা
সম্মিলিতভাবে দেশের রপ্তানি বাজারের ৪০ শতাংশ গঠন করে, ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) প্রবর্তনের ফলে ইইউ বাজারে ভারতের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

একই কারণে, ভারতীয় সংস্থাগুলির অন্যান্য বাজারের দিকে নজর দেওয়া উচিত, বিশেষ করে আফ্রিকার দিকে। ৫৫টি আফ্রিকী অর্থনীতি বৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি
২০২৪ সালে প্রায় ৩.৭ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৪.৩ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

এছাড়াও, বিশ্বের অন্যান্য অংশের বৃদ্ধি হ্রাস পেলেও আফ্রিকা শীঘ্রই একটি সম্ভাব্য জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ থেকে উপকৃত হবে। এটি এই অঞ্চলটিকে বিশ্বব্যাপী ক্রমহ্রাসমান শ্রম সরবরাহের প্রেক্ষিতে শুধু তার বিশাল শ্রমশক্তি প্রদানের সুযোগই দেবে না, বরং বর্ধিত উপভোগের ধরনও প্রদর্শন করবে, যার কারণে পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলে দ্রুততম বৃদ্ধি প্রত্যাশিত।


পরিবর্তিত ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আফ্রিকার বাজারকে আরও সক্রিয়ভাবে অন্বেষণ করতে পারে এবং দ্বি-অঙ্কের অংশ অর্জন করতে পারে।



বাণিজ্য তথ্য থেকে দেখা যায় যে ভারত থেকে আমদানিতে আফ্রিকার অংশ, যা
২০০৫ সালে ২.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে ৪.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল, ২০২৩ সালে তা ৫.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। পরিবর্তিত ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আফ্রিকার বাজারকে আরও সক্রিয়ভাবে অন্বেষণ করতে পারে এবং দ্বি-অঙ্কের অংশ অর্জন করতে পারে। একই সময়ে, চিন থেকে আমদানিতে আফ্রিকার অংশ ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে এই বাজারটি আরও বিশদভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং আফ্রিকার আমদানি চাহিদা পূরণের জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ করতে হবে।

আফ্রিকার মূল আমদানি পূরণ

একটি দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে আরও বেশি প্রবেশের ফলে মহাদেশে ভারতীয় পণ্যের দৃশ্যমানতা এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে, এবং নির্বাচিত পণ্যের জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য একটি বিনিয়োগ বাজার তৈরি হবে।

গভীর বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে আফ্রিকার শীর্ষ ২০ থেকে  আমদানিকৃত পণ্য ২২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, এবং ভারতের আফ্রিকায় রপ্তানি ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূলত, ভারত আফ্রিকার প্রধান আমদানি চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে।


গভীর বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে আফ্রিকার শীর্ষ ২০ থেকে  আমদানিকৃত পণ্য ২২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, এবং ভারতের আফ্রিকায় রপ্তানি ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূলত, ভারত আফ্রিকার প্রধান আমদানি চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে।



এছাড়াও, বিশ্বে ভারতের একই পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ১৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আফ্রিকার বাজারে ভারতের উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্য আনার সম্ভাবনা তুলে ধরে।

শুরুতেই পণ্যের উপর মনোযোগ প্রয়োজন

উপরে যেমন আলোচনা করা হয়েছে,  আফ্রিকায় একাধিক পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা  সর্বদাই থাকলেও তিনটি পণ্য বিভাগের উপর মনোযোগ (টেবল ১ দেখুন) ভারতকে মহাদেশে তার রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ২০২৩ সালের হিসাবে, আফ্রিকায় ভারতের মোট রপ্তানি ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে, আফ্রিকায় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে যে তিনটি সম্ভাব্য পণ্য বিভাগের সহায়তায়, বিশ্বে ভারতের সেগুলির রপ্তানি ৫৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৃদ্ধির সুযোগ দেখায়।

টেবল ১: আফ্রিকায় ভারতের মনোযোগ দেওয়ার জন্য শীর্ষ তিনটি পণ্য (২০২৩ সালের হিসাবে, বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

 

পণ্য   

বিশ্ব থেকে আফ্রিকার আমদানি

ভারত বিশ্বে রপ্তানি করে

আফ্রিকায় ভারতের রপ্তানি

মোট (বিলিয়নে)  

৭১৪.৯

৪৩১.৪

৪৬.৫

তিনটি সম্ভাব্য পণ্য 

 ৭৭.৪

৫৫.৭

৬.৩

পেট্রোলিয়াম পণ্য 

৬২.৯

২৫.৪

৩.৭

ঔষধ  

১০.১

১৬.০

২.৪

ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের জন্য স্মার্টফোন 

৪.৪

১৪.৩

০.২

সূত্র: ইউএনসিটিএডি; লেখকের হিসাব

 

পেট্রোলিয়াম পণ্য (হালকা তেল এবং পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি প্রস্তুতি) হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ভারত আফ্রিকায় তার রপ্তানি আরও জোরদার করতে পারে। বর্তমানে আফ্রিকার পেট্রোলিয়াম আমদানিতে ভারত মাত্র ৬ শতাংশ অবদান রাখে, যা সর্বোচ্চ আমদানিকৃত পণ্যও। মোট আমদানিতে আফ্রিকার অংশ প্রায় ৯ শতাংশ।


ভারতের উচিত সাশ্রয়ী মূল্যের সরবরাহের মাধ্যমে আফ্রিকার এই বাজার দখল করার দিকে নজর দেওয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো এবং মালিতে, যেখানে আমদানি বেশি।



ভারতকে তার রপ্তানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করার সম্ভাবনা রয়েছে এমন আরেকটি পণ্য হল ওষুধ (থেরাপিউটিক বা প্রোফিল্যাকটিক ওষুধ)। আফ্রিকার ওষুধ আমদানি গত ১০ বছরে চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হারে ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, থেরাপিউটিক বা প্রোফিল্যাকটিক ওষুধের আমদানি চাহিদা আফ্রিকায় সর্বাধিক রয়ে গেছে। ভারতের উচিত উত্তর আমেরিকা এবং ইইউ২৮, যা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের জন্য কেন্দ্রীভূত বাজার, থেকে দূরে আফ্রিকার দিকে বৈচিত্র্য আনা, যেখানে চাহিদা অন্যত্রের মতো কোনও নীতিগত বাধা ছাড়াই অব্যাহত থাকবে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আশাব্যঞ্জক বিভাগ হল স্মার্টফোন। যদিও ভারতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, আফ্রিকা ২০২৩ সালে ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আমদানি করেছে। তবে, আফ্রিকার স্মার্টফোন আমদানিতে ভারতের অংশ মাত্র ৪.৫ শতাংশ। আগামী দিনে, চাহিদা বৃদ্ধির একটি নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করে। ভারতের উচিত সাশ্রয়ী মূল্যের সরবরাহের মাধ্যমে আফ্রিকার এই বাজার দখল করার দিকে নজর দেওয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো ও মালিতে, যেখানে আমদানি বেশি।

আফ্রিকার সম্ভাব্য বাজারের জন্য যেসব পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলি হল নিয়মিত চাহিদাসম্পন্ন পণ্য, যা ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ করে দেয়।



রাহুল মজুমদার এক্সপোর্ট-‌ইমপোর্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’‌র অর্থনীতিবিদ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Rahul Mazumdar

Rahul Mazumdar

Rahul has been associated with India EXIM Bank since 2007. He has been working on issues related to international economics public policy and sustainability: and ...

Read More +