Author : Harsh V. Pant

Published on Oct 29, 2024 Updated 0 Hours ago
ইজরায়েল-ইরান সম্মুখ সমরে উঠে আসছে প্রতিরোধের অঙ্ক

এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

 


বিশ্ব কয়েক মাস যাবৎ মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতটির ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার দিন গুনছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা বাস্তব আকার নিয়েছে। রায়েলি প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য এটি এক উল্লেখযোগ্য বাঁকবদলকেই দর্শায়, যিনি দেশের অভ্যন্তরে নজরাধীন এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ছিলেন। ইরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের তরফে ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পরে - যার বেশিরভাগকেই প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছে ইজরায়েল - নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেন যে, ইরান ‘ব্যাপক ভুল করেছে এবং দেশটিকে ‘এর মূল্য চোকাতে হবে’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইরানের তেলকেন্দ্রগুলির উপর ইজরায়েলি হামলার সম্ভাবনার কথা ‘আলোচনা করা হয়েছে এবং ইরানের তরফে হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকিও শোনা গিয়েছে।

কূটনীতির আর প্রশ্নই ওঠে না এবং অতীতের মতোযুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতাগুলি মধ্যপ্রাচ্যের বিরামহীন সংঘাতে প্রধান শক্তিগুলির আচরণকে প্রভাবিত করেছে। এ বার সম্মুখ সমরে নেমেছে জরায়েল ও ইরান। ইরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহ-র পৃষ্ঠপোষক ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তারাও আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের (ইজরায়েলের উপর) হামলা করবে, আমরা প্রতি-হামলা চালাব’ এবং তিনি এ-ও বলেন, ‘ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনও জায়গা নেই, যা ইজরায়েলের নাগালের বাইরে আছে’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেইনি নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, এই মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হবে এবং ইজরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী চালিয়ে যাবে।

ইজরায়েলের লক্ষ্য হল নির্মূল করা

দক্ষিণ লেবাননে সেপ্টেম্বরের শেষে শুরু হওয়া ইরায়েলি হামলা থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং আরও বেশি সংখ্যক লোককে নিজেদের বাড়িঘর খালি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে জানাচ্ছে যে, হামলা অব্যাহত থাকবে। প্রাক্তন প্রাইম মিনিটার নাফতালি বেনেটের মতো ইরায়েলের অনেকেই মনে করেন যে, ‘মধ্যপ্রাচ্যের অবয়ব পরিবর্তন করার জন্য বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সুযোগ’ এবং তিনি এই ইঙ্গিতও দেন যে, জরায়েলের উচিত ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির উপর হামলা চালানো, যাতে ‘সন্ত্রাসবাদী প্রশাসনটিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দেওয়া যায়।’ রায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও সরাসরি ইরানিদের কাছে এই বার্তা দিয়েছেন যে, প্রশাসন পরিবর্তন শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা। নেতানিয়াহু ইরানিদের উদ্দেশে একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন যে, ‘অবশেষে ইরান স্বাধীন হবে এবং সেই মুহূর্তটি মানুষদের ধারণার চাইতেও অনেক আগে ঘটবে এবং সব কিছু বদলে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ইহুদি এবং পারসিরা অবশেষে শান্তিতে থাকবে।

দক্ষিণ লেবাননে সেপ্টেম্বরের শেষে শুরু হওয়া ইরায়েলি হামলা থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং আরও বেশি সংখ্যক লোককে নিজেদের বাড়িঘর খালি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে জানাচ্ছে যে, হামলা অব্যাহত থাকবে।

তবে এই মুহূর্তে কেউ শান্তির পরিকল্পনা করছে না। যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ইরায়েল এ বার ইরানকে নির্মূল করতে আগ্রহী। হিজবুল্লাহ-র শীর্ষ নেতৃত্বের বিনাশ এবং গোষ্ঠীটির অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের মাধ্যমে ইজরায়েল অত্যাশ্চর্য সাফল্যের মুখে দেখেছে। লেবাননে আক্রমণের লক্ষ্য হল হিজবুল্লাহ এবং তার অবশিষ্ট সমর্থকদের নির্মূল করা। ইরানি প্রতিরোধ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ইরান প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে এবং তাই এপ্রিল মাসে রায়েলের উপর চালানো বহুচর্চিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপরীতে হেঁটে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর প্রতিশোধ নেওয়ার অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু ইরায়েল দক্ষিণ লেবাননের মধ্য দিয়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং অন্য দিকে ওয়াশিংটন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আর একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ইরানের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত শুধু নেওয়ার অপেক্ষা। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানের সামগ্রিক আঞ্চলিক কৌশল – যাকে কিছু দিন আগেও বিজয়ী কৌশল বলে মনে হচ্ছিল – সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

ইরানি প্রশাসন ধন্দে পড়েছে এবং পরিস্থিতির বদল ঘটবে না

ঠিক এই কারণেই এই মুহূর্তটি আঞ্চলিক বিবর্তনের জন্য বিপজ্জনক। অনুগত আঞ্চলিক শক্তিগুলির উপর ভিত্তি করে দেশটির প্রতিরোধের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করার জন্য সকল কারণই রয়েছে এবং এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত রূপকে নতুন আকার দেবে। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক মানচিত্র নতুন করে নির্ধারণের বিষয়ে ইজরায়েলের তরফে হওয়া সব আক্রমণের প্রেক্ষিতে ইরানে প্রশাসন পরিবর্তন এক অলীক কল্পনা। ইরানি প্রশাসনে দ্রুত বদল আসবে না, আর ইরানের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিও বদলাবে না। যা বদলাতে পারে, তা হল ইরানের ক্ষমতার আকার।

এই অঞ্চলটি যখন হিংসা বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রায় যুঝছে, তখন এই অঞ্চলে ভারতের উপস্থিতিও চাপের মুখে পড়েছে। ইরায়েল এবং ইরানের সঙ্গে নয়াদিল্লির শক্তিশালী সম্পর্ক ভারতীয় কূটনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করবে। তবে ভারতের মূল অগ্রাধিকারগুলি হল এই অঞ্চলে শক্তি সুরক্ষা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা ভারত সংযম বজায় রাখার অনুরোধ করলেও এই সংঘাতের মূল শক্তিগুলির উপর এই আবেদনের তেমন প্রভাব পড়বে না, যারা দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লাভের জন্য বর্তমান বিরোধকে ব্যবহার করতে চায় কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য এক আশ্চর্য অঞ্চল, যেখানে জয় ও পরাজয় কখনই স্থায়ী হয় না এবং প্রতিটি যুদ্ধের সমাপ্তি আর একটি নতুন যুদ্ধের সূচনা করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +