Published on Jul 04, 2025 Updated 0 Hours ago
ইউরেশীয় সংযোগ এবং ভারত

ভূমিকা

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর থেকে গত ৩৪ বছরে বিশ্বব্যাপী ভূ-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ১৯৯০ সালের পরবর্তী অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি বয়ে এনেছিল। ১৯৯০-এর দশকে দ্রুত বিশ্বায়নের সময় থেকে ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের সমাপ্তি পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অভিসৃতি বৈশ্বিক সমন্বিতকরণ পরিলক্ষিত হয়েছিল। তবে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক ছিল অর্থনৈতিক উত্থানের সময়ের একটি লক্ষণ মাত্র, যেখানে শুল্ক যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, ক্রমবর্ধমান সুরক্ষাবাদী ব্যবস্থা সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। একই দশকে বিদ্যমান করিডোরগুলির কাজ শেষ করা ও পরিচালনা ত্বরান্বিত করা এবং নতুন করিডোর তৈরির উপর আরও বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, গ্লোবাল সাউথ থেকে উঠে আসা সংযোগ প্রকল্পগুলি গ্লোবাল নর্থ দেশগুলির প্রকল্পগুলিকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ ছিল তিনটি: প্রথমত, গ্লোবাল সাউথ ও উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্রমবর্ধমান চাহিদা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পদ্ধতির মধ্যে মধ্যম ও আঞ্চলিক শক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার খণ্ডিতকরণ আসলে বহুমেরুকৃত বিশ্বের পথ প্রশস্ত করেছে। এর ফলে সংযোগের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রেরণা তৈরি হয়েছে, যা ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর, এশিয়া-আফ্রিকা গ্রোথ  করিডোর, ইস্টার্ন মেরিটাইম করিডোর এবং নর্দার্ন সি রুটের মতো ক্রমবর্ধমান বহুপাক্ষিক বহুমাত্রিক সংযোগ প্রকল্প এবং বাণিজ্যিক করিডোরে প্রতিফলিত হতে পারে। এর পাশাপাশিই এই করিডোরগুলি বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার মূল ধমনী এবং যুক্তিসঙ্গত ভাবে বিশ্বের জন্য একটি সহায়ক পুনঃবিশ্বায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।(১)

ইউরেশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমন্বয় ঘটলে সহযোগিতার অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলিও আরও শক্ত হবে

একই ভাবে ইউরেশীয় অঞ্চল ১৯৯০-এর দশক থেকে এই প্রবণতা প্রত্যক্ষ করেছে; ১৯৯০-এর দশকে এশীয় অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়েছে, ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আসিয়ান উপসাগরীয় দেশগুলির পাশাপাশি ভারত ও চিনের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মধ্য এশিয়া, ককেশাস দক্ষিণ এশিয়ায় একই রকম ঘটনা লক্ষ করা গিয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে; সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি এশিয়ার অভিমুখে পুনর্নির্মিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্রই এ বার পূর্ব-অভিমুখী হচ্ছে। এর অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল বহুমেরুকৃত বিশ্ব ব্যবস্থার অভিমুখে স্থানান্তর। নিম্নলিখিত নিবন্ধটিতে একবিংশ শতাব্দীর ইউরেশীয় সংযোগের বিবর্তন এবং ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে গ্লোবাল সাউথে, বিশেষ করে এশিয়া নতুন করিডোরের সূচনা হয়েছে। এই নতুন করিডোরের মাধ্যমে সংযোগ ব্যবস্থা আঞ্চলিক দেশগুলির জন্য একটি মহাসঞ্জীবনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যাদের সুপ্ত শক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, ইউরেশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমন্বয় ঘটলে সহযোগিতার অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলিও আরও শক্ত হবে

ইউরেশীয় সংযোগ

ইউরেশিয়া শব্দটির একাধিক ব্যাখ্যা আছেকারণ স্থান সময়ভেদে এর ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হয়। তবে এই প্রবন্ধে নিকোলাই ড্যানিলেভস্কির তৈরি ইউরেশিয়ার চিরাচরিত ধারণা থেকে সরে এসে একবিংশ শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরেশিয়াকে বোঝার চেষ্টা করা হবে। এই অঞ্চলটিকে মূলত সংযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে – অর্থাৎ রাশিয়ার বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারিত্ব - যা ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-ইস্ট ট্রান্সপোর্ট করিডোরের (আইএনএসটিসি) মতো প্রকল্পগুলিকে সংযুক্ত করে ইউরেশীয় সংযোগের সমন্বয় সাধনের উপর জোর দেয়।

ইউরেশিয়ার ক্ষেত্রে সংযোগ ব্যবস্থা পশ্চিম নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতির আলোকে বিকশিত হয়েছে, যার প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা ছিল এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের চাহিদার স্বার্থের অনুকূল ছিল না। প্রথম প্রধান সংযোগ প্রকল্পটি ছিল আইএনএসটিসি, যা ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট করিডোর এই করিডোরটি ভারতের মুম্বই বন্দরকে ইরান ও আজারবাইজানের মাধ্যমে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। এই করিডোরের লক্ষ্য ছিল হরমুজ প্রণালী সুয়েজ খাল এড়িয়ে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা হ্রাস করা এবং একই সঙ্গে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। এই করিডোরের লক্ষ্য হল পরিবহণের সময় ৪০% এবং খরচ ৩০% হ্রাস করাআইএনএসটিসি হল ভারতের ইউরেশীয় বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার এবং ভারতের মধ্য এশিয়া সংযোগ কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।(২) আইএনএসটিসি-র সাফল্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রভাবও রয়েছে; আইএনএসটিসি-সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে, বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারে এবং উগ্রপন্থাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করতে পারে।

প্রথম প্রধান সংযোগ প্রকল্পটি ছিল আইএনএসটিসি, যা ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট করিডোর এই করিডোরটি ভারতের মুম্বই বন্দরকে ইরান ও আজারবাইজানের মাধ্যমে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল।

আইএনএসটিসি-র পাশাপাশি ইস্টার্ন মেরিটাইম করিডোর ভ্লাদিভোস্টক বন্দরকে পূর্ব ভারতের চেন্নাই, পারাদ্বীপ এবং বিশাখাপত্তনম বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। উভয় দেশই সোভিয়েত যুগের বাণিজ্য পথটি পুনরায় চালু করেছে। রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহের আলোকে এমনটা ঘটেছে। রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যে বিনিয়োগের জন্য নয়াদিল্লি ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি - বিশেষ করে ওষুধ খাতে - সুদূর প্রাচ্যে শিল্প স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশিই অন্যতম প্রধান ভারতীয় সংস্থা অয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) সাখালিন প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এশিয়া-প্যাসিফিকে নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা কৌশলগত নমনীয়তাকেও দর্শায়, যেখানে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে তার মূল স্বার্থ বজায় রাখে এবং নিজে কোয়াড-এর মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলিরও একটি অংশ। সুতরাং, সংযোগ প্রকল্পগুলি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।

ইউরেশীয় পরিবহণমূলক বাণিজ্য এবং লজিস্টিকসে উদীয়মান প্রবণতা

সিআইএস দেশগুলিতে সংযোগ উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত হয়েছে, নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার ফলে মধ্য এশীয় দেশগুলি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং জটিল আন্তঃনির্ভরতার ফলে রাষ্ট্রগুলি দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমস্যাগুলি সমাধান করেছে। সম্প্রতি কিরঘিজস্তান তাজিকিস্তান সীমান্ত এবং আন্তর্দেশীয় নদীর জলের এক্তিয়ার সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য তাদের সীমান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আমু সির দরিয়া নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রক্রিয়া অতীতের তুলনায় আরও ভাল হয়েছে, যার ফলে অর্থনৈতিক উদ্বেগগুলি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। চিন-কিরঘিজস্তান-উজবেকিস্তান রেললাইন নির্মাণ, উজবেকিস্তান থেকে ইরান পর্যন্ত ট্রান্স-ইরান করিডোর, ট্রান্স-কাজাখস্তান রেলওয়ে এবং খোরগোস লজিস্টিক হাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি আঞ্চলিক সংযোগ বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। সর্বোপরি, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট টোকায়েভ ইউরেশীয় লজিস্টিকসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট হাব হিসেবে নিজের দেশের অবস্থান শক্তিশালী করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

দ্রুত অ-ডলারিকরণের দরুন রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য বিনিময় ডলারের বদলে রুপি, দিরহাম, ইউয়ান এবং অন্যান্য অ-পশ্চিমী মুদ্রায় হয়েছে

এই পরিবর্তনের কারণে, সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছেকারণ ইউরেশিয়ার দেশগুলি সহযোগিতা প্রকল্পগুলিতে বাস্তববাদের উপর নির্ভর করে। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে স্পষ্ট, যার ভিত্তি ছিল দুই দেশের সামরিক-কারিগরি অংশীদারিত্ব।(৩) তবে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত হয়েছিল। ইউক্রেনের সংঘাতের শুরুতে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন শক্তি স্তম্ভ তৈরি হয়েছিল। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের জন্য একটি প্রধান বাহক হয়ে ওঠে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২১ সালে ১২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। নিষেধাজ্ঞার পরিমাণ বৃদ্ধির পরেও উভয় দেশই বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে। রাশিয়ার বৃহৎ বিমা সংস্থা ইঙ্গোস্ট্রাক আলফাস্ট্রাকহোভানি রাশিয়া থেকে ভারতীয় অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য বিমা প্রদান করে। আশ্চর্যের বিষয় হল, দ্রুত অ-ডলারিকরণের দরুন রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য বিনিময় ডলারের বদলে রুপি, দিরহাম, ইউয়ান এবং অন্যান্য অ-পশ্চিমী মুদ্রায় হয়েছে। সুতরাং, সরবরাহ, বিকল্প ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং মুদ্রার  ডিজিটালকরণের পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের কারণে ইউরেশিয়ান বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছেএ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি বিকল্প বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরির জন্য আলোচনা ক্ষেত্রে ব্রিকস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নীলনকশা তৈরির জন্য সমস্ত অংশীদারের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে এবং এখানে বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা রয়ে গিয়েছে

প্রতিবন্ধকতা

ইউরেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ বাধা হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে, যা সংযোগ প্রকল্পগুলিকে বাধা দেয়চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক উদ্বেগ সীমান্ত সম্পর্কে ঐকমত্যের অভাব সম্পর্কে টানাপড়েনে সূচনা করেছেআর ঠিক এই কারণেই নয়াদিল্লি এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম, যারা বিআরআই-তে যোগ দেয়নি। আর কটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বলা যেতে পারে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের কথা। এই করিডোর বিআরআই-এর অংশ, যা ভারতের দাবিকৃত বিতর্কিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। বেজিং ইসলামাবাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির উদ্বেগের ফলে দীর্ঘমেয়াদি  অর্থনৈতিক সহযোগিতার অভাব দেখা দিয়েছে। সর্বোপরি, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল সংযোগ রয়েছে। পর্যটন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ব্যবসায়িক আগ্রহ কম রয়েছে। ইউরেশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতা, নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাত এবং আফগানিস্তানের সংঘর্ষ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। উপরন্তু, আইএনএসটিসি-র ক্ষেত্রে উৎসাহ থাকা সত্ত্বেও ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এই কাজের প্রাথমিক সূচনা করতে ২৩ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এ ছাড়াও, ইস্টার্ন মেরিটাইম করিডোরে (ইএমসি) কার্যক্রমের পরিধি কম এবং সংস্থাগুলি মুম্বই-সেন্ট পিটার্সবার্গ সি রুট ব্যবহার করে চলেছে।

একটি নতুন অর্থপ্রদান ব্যবস্থা তৈরি করা সহজ নয় এবং এটির বিবর্তন দরকার, দেশগুলিকে মানদণ্ডের বিষয়ে সহমত পোষণ করতে হবে, যা স্বল্পমেয়াদে সহজ হবে না।

দ্বিতীয়ত, পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে বাহ্যিক ভাবে একটি বিকল্প ভূ-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে বাধা রয়েছে। ইউরেশিয়া জুড়ে জাতীয় মুদ্রা ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিকল্প অর্থপ্রদান ব্যবস্থা তৈরি সত্ত্বেও দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার হুমকি একটি গুরুতর বাধা হিসেবে কাজ করে। একটি নতুন অর্থপ্রদান ব্যবস্থা তৈরি করা সহজ নয় এবং এটির বিবর্তন দরকার, দেশগুলিকে মানদণ্ডের বিষয়ে সহমত পোষণ করতে হবে, যা স্বল্পমেয়াদে সহজ হবে না। তৃতীয়ত, লজিস্টিক্যাল উদ্বেগগুলির কথাও বলা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, নর্থ সি রুটের (এনএসআর) ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকরী হয়নি। শিপিং কন্টেনারের আগমন ঘাটতির মতো অন্যান্য সমস্যা মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট করিডোরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সুতরাং, এই উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করার জন্য অংশীদারদের মধ্যে দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছা ক্ষমতা প্রয়োজন, যার ক্ষেত্রবিশেষে অভাব রয়েছে।

ভবিষ্যতের পথ

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউরেশিয়ায় সংযোগ বিশ্বব্যাপী ভূ-অর্থনীতিতে যথেষ্ট আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্র এশিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরেশিয়ায় একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে কারণ দেশগুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করছে। বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারিত্বের অধীনে এনএসআর এবং ইস্টার্ন মেরিটাইম করিডোরের মতো করিডোরগুলির পাশাপাশি আইএনএসটিসি-র মতো উদ্যোগগুলি সমন্বিতকরণকে শক্তিশালী করেছে এবং পশ্চিম নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেতবে নানাবিধ অগ্রগতি সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, সীমান্ত বিরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা-সহ চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গিয়েছে। সুতরাং একটি বিকল্প ভূ-অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরির জন্য আর্থিক রাজনৈতিক সমন্বয় প্রয়োজন। তবে সংযোগের জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা এর কৌশলগত গুরুত্বকেই দর্শায়। সহযোগিতা বাস্তববাদী কূটনীতির মাধ্যমে ইউরেশিয়া ক্রমবর্ধমান বহুমেরুকৃত বিশ্বে আরও স্থিতিস্থাপক আন্তঃসংযুক্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল-এ। 


১) ব্রুনো মাকায়েস, ‘দ্য ডন অফ ইউরেশিয়া – অন দ্য ট্রেইল অফ দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’, পেঙ্গুইন, লন্ডন, ২০১৮

২) উমা পুরুষোত্তম এবং নন্দন উন্নিকৃষ্ণন, ‘আ টেল অফ মেনি রোডস – ইন্ডিয়া’জ অ্যাপ্রোচ টু কানেক্টিভিটি প্রোজেক্টস ইন ইউরেশিয়া’, ইন্ডিয়া কোয়ার্টার্লি, ৭৫(১)  ৬৯-৮৬, ২০১৯

৩) নন্দন উন্নিকৃষ্ণন এবং নিবেদিতা কপূর, ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড মেজর পাওয়ার – রাশিয়া’, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, অগস্ট ০৭, ২০১৯

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...

Read More +