Author : Nilanjan Ghosh

Published on Jul 05, 2025 Updated 7 Days ago

উদীয়মান বাজারগুলিতে শুল্ক হ্রাস কি প্রবৃদ্ধির জন্য একটি নীরব অনুঘটক হয়ে রয়েছে? যদি তেমনটাই হয়, তা হলে এটি প্রবৃদ্ধির গতিপথ এবং কৌশলগুলি পুনর্বিবেচনার কাজে লাগতে পারে।

উদীয়মান অর্থনীতি এবং শুল্ক হ্রাস: ভারতের পরোক্ষ নেতৃত্ব

ট্রাম্প প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের আগ্রাসী পদক্ষেপের দরুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভূপরিসরে তীব্র অনুরণন সৃষ্টি হয়েছে। এটি কেবল অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার গভীর পশ্চাদপসরণের ইঙ্গিতই দেয় না, বরং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকিরও লক্ষণ বটে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি - যা একসময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে অবাধ নীতি ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে সমাদৃত ছিল - অতীতের উদারীকরণের জোয়ার থেকে নাটকীয় ভাবে বিদায় নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। নানাবিধ দিক থেকে বর্তমানে ট্রাম্পবাদ পুনরুত্থিত সুরক্ষাবাদের অনুরণনের সঙ্গে যুঝতে থাকা বিশ্বের রূপক হয়ে উঠেছে। মার্কিন বাণিজ্য নীতির এই অন্তর্মুখী বাঁকবদল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চিনের প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের বিপরীতে সমান্তরালে উদীয়মান অর্থনীতিগুলি কী ভাবে উদারীকরণের পথে এগোচ্ছে, তার উপর নিবিড় নজর রাখা জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে এই নিবন্ধটিতে তিনটি মূল প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে: (ক) ২০০০ সাল থেকে উদীয়মান অর্থনীতিগুলি উন্নত দেশগুলির তুলনায় আরও আগ্রাসী ভাবে শুল্ক হার কমিয়েছে, ভারত সেই পথ দেখিয়েছে এবং চিনিবিড় ভাবে ভাবে অনুসরণ করেছে; (খ) উদীয়মান বাজারগুলিতে শুল্কের মাত্রা একত্রিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে; (গ) ভারতে শুল্ক উদারীকরণ ভোগকে উৎসাহিত করেছে এবং সম্ভবত ভোগচালিত প্রবৃদ্ধির দিকে পরিবর্তনের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।

গত দুই দশকে উন্নত অর্থনীতিতে কম শুল্ক হ্রাস

ফলে উন্নত বিশ্বের অনেক অর্থনীতি যারা ইতিমধ্যেই কম শুল্ক ব্যবস্থা প্রদর্শন করেছে, তারা ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর থেকে অবাধ বাণিজ্যের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেছে। নিম্ন গড় শুল্ক বজায় রেখে ইউরোপ ক্রমবর্ধমান ভাবে কঠোর পরিবেশগত এবং সুরক্ষা মানদণ্ডের মতো অ-শুল্ক ব্যবস্থা বা নন-ট্যারিফ মেজারস (এনটিএম) ব্যবহার করছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ হল কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম)জাপান শিল্প পণ্যের জন্য কম শুল্ক-সহ একটি স্থিতিশীল শুল্ক কাঠামো (গড় ১.৮ শতাংশ) বজায় রেখেছে, কৃষিক্ষেত্রের কিছু সুরক্ষার বিষয় বিদ্যমান। অ-বাণিজ্য ব্যবস্থা বা নন-ট্রেড মেজারস (এনটিএম) মূলত নিরাপত্তা খাদ্য মানদণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হলে তীব্র ভাবে সুরক্ষাবাদী নয়। বাস্তবে এনটিএম-এর মাঝারি ব্যবহার সত্ত্বেও জাপান মূলত উদার দেশ। বরং বেশির ভাগ উন্নত অর্থনীতিতে কম গড় শুল্ক হার ১ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে পরিবর্তিত হওয়ার কারণে গত দুই দশক ধরে পরিমাণগত শুল্ক হ্রাসের খুব বেশি সুযোগ ছিল না এবং গড় শুল্কের শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস ৩ শতাংশের নীচেই ছিল (চিত্র ১)।

 Emerging Economies And The Tariff Taper India S Subtle Leadership

উৎস: বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য থেকে লেখকের গণনা

উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির এই সহস্রাব্দে শুল্ক হ্রাসের চি

উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলি এই সহস্রাব্দে শুল্ক হ্রাসের ক্ষেত্রে তাদের উন্নত প্রতিপক্ষদের ছাড়িয়ে গিয়েছে (চিত্র ২)অন্য দিকে উন্নয়নশীল অর্থনীতির গড় শুল্ক হারের (চিত্র ৩) ক্রমহ্রাসকৃত মান বিচ্যুতি বা স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশন (এসডি) শুল্ক হারের ক্ষেত্রে এই দেশগুলির জন্য বাণিজ্য উন্মুক্ততার সমন্বিতকরণের দিকে ইঙ্গিত দেয়। ২০০০ সাল থেকে গড় শুল্ক হারে সর্বোচ্চ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাসের দরুন ভারত শীর্ষে রয়েছে। ২০২২ সালে ভারতের গড় শুল্ক হার প্রায় ৪.৬% থেকেছে, যা কিনা ২০০০ সালে ২৩.৪% থেকে প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস। এর পরেই রয়েছে চি, যার গড় শুল্ক ২০০০ সালে প্রায় ১৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ২.৫ শতাংশে তীব্র হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সময় উৎসগুলিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য চিন এমএফএন শুল্কও হ্রাস করেছে। তবে চিন ব্যাপক ভাবে ভর্তুকি স্থানীয় বিষয়বস্তুর নিয়ম ব্যবহার করে এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে সহায়তা প্রদান করেছে। ২০০৮ সালে রাশিয়ার শুল্ক ৮.৬ শতাংশ থেকে কমে ২০১৫ সালে ৩.১ শতাংশে নেমে আসে, ২০১৪-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার ফলে আমদানি নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয়করণমূলক আদেশ এবং রফতানি নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। এর ফলে রাশিয়া ভূ-রাজনীতি নিরাপত্তা নীতি দ্বারা চালিত হয়ে আরও সুরক্ষাবাদী হয়ে ওঠে।

 Emerging Economies And The Tariff Taper India S Subtle Leadership

উৎস: বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য থেকে লেখকের গণনা

ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয় দেশেই বছরের পর বছর ধরে শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে ব্রাজিল এমন একটি শুল্ক আরোপ করেছে, যা এখনও সমকক্ষদের তুলনায় বেশি এবং প্রায়শই প্যারা-ট্যারিফ বা প্যারা-শুল্ক স্থানীয় বিষয়বস্তুর নিয়মাবলি ব্যবহার করে। দক্ষিণ আফ্রিকা সুরক্ষা ব্যবস্থা বাণিজ্য প্রতিকারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত, বিশেষ করে ইস্পাত এবং কৃষি ক্ষেত্রে। তবে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, উদারীকরণ বা সুরক্ষাবাদের জন্য একটি ব্ল্যাঙ্কেট অ্যাপ্রোচ বা সামগ্রিক পদ্ধতি কার্যকর না-ও হতে পারে। পরিবর্তে, একটি কৌশলগত মিশ্রণ যা প্রতিযোগিতামূলকতা বিশ্ব বাজারে সমন্বিতকরণকে উৎসাহিত করে, এমন গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করার বিষয়টি আরও লাভজনক হতে পারে।

 Emerging Economies And The Tariff Taper India S Subtle Leadership

সূত্র: বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য থেকে লেখকের গণনা

এ ছাড়াও, যেমনটি সারণি ১-এ স্পষ্ট অর্থাৎ উন্নয়নশীল বিশ্বে শুল্কের ক্রমাগত হ্রাসের দরুন হার গ্লোবাল নর্থ অর্থনীতির সমান না হলেও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

সারণি ১: শুল্কের গড় হার হ্রাস

বর্ষ

নির্বাচিত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গড় শুল্ক হার

নির্বাচিত গ্লোবাল নর্থের দেশগুলিতে গড় শুল্ক হার

২০০০

১১.৭১

২.৫৪

২০১৩

৫.০৫

১.৪৬

২০২২

৪.৫১

১.৩৭

উৎস: বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য থেকে লেখকের গণনা

শুল্ক উদারীকরণ ভারতের জন্য লাভজনক

ভারতীয় অর্থনীতিতে শুল্ক উদারীকরণের প্রভাব সম্পর্কে গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলে কিছু আকর্ষ ফলাফল পাওয়া যায়। চিত্র ৪ দেখায় যে, ভারতে গড় শুল্ক হার হ্রাস পেলেও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্ভরযোগ্য চলরাশি হিসেবে মাথাপিছু খরচ এবং ব্যাখ্যামূলক চলরাশি হিসেবে গড় শুল্ক হারকে ধরা হয়েছে (মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে) এমন একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, শুল্কের ক্রমহ্রাসমান গড় হার বছরের পর বছর ধরে মাথাপিছু খরচ বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে। অতএব, ভারত উল্লেখযোগ্য শুল্ক হ্রাস, উচ্চ বাণিজ্য উন্মুক্ততা বৃদ্ধি (এই সময়ের মধ্যে দেশের বাণিজ্য-জিডিপি-র অনুপাতে ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি-সহ) এবং মাথাপিছু খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে একটি সুষম সংস্কারক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে কথাও তুলে ধরা দরকার যে, গত দুই দশক ধরে গড় শুল্ক হার হ্রাসের ক্ষেত্রে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির নেতৃত্ব দেওয়া সত্ত্বেও ভারত একটি অবাধ শুল্ক উদারীকরণের পথ অনুসরণ করেনি। বরং ২০১৪-পরবর্তী পরিবর্তন একটি পুনর্নির্মিত পদ্ধতিকেই দর্শায়: মেক ইন ইন্ডিয়া’ তকমার অধীনে দেশটি নির্বাচিত সুরক্ষার দিকে এগিয়ে গিয়েছে - ২০১৭ সাল থেকে বৈদ্যুতিন, যন্ত্রপাতি এবং অটো যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেভরযুক্ত গড় শুল্ক ২০১৭ সালে ৫.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৬.৬ শতাংশে উন্নীত হয়, যা একটি কৌশলগত বিরতির ইঙ্গিত দেয়। তবুও এটি কোনও সামগ্রিক সুরক্ষাবাদ ছিল না। ভারত ডাম্পিং-বিরোধী ব্যবস্থার সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম দেশ হয়ে ওঠে - ২০২৩ সালে ১৩৩টি সক্রিয় মামলা-সহ ৪০০টিরও বেশি পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে - এবং খেলনা, রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিনের মতো বিভাগগুলিতে বাধ্যতামূলক বিআইএস সার্টিফিকেশন বা শংসাপত্রের ব্যবস্থার বিষয়টিকে প্রসারিত করেছে। একই সময়ে উৎপাদন বাধা দূর করতে বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে সমন্বিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ মধ্যবর্তী পণ্যের উপর শুল্ক কমানো হয়েছিল - বিশেষ করে ইভি, অর্ধপরিবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিকের ক্ষেত্রে। উদীয়মান খাতগুলিকে রক্ষা করার পাশাপাশি কৌশলগত মূল্য শৃঙ্খলগুলি উন্মুক্ত করার এই দ্বৈত কৌশল ভারতের ক্যালিব্রেটেড লিবারালাইজেশন বা ‘পরিমিত উদারীকরণ’-এর মডেলকে সংজ্ঞায়িত করে।

কিন্তু আসল প্রশ্নটি আরও গভীরে নিহিত। ১৯৯১ সাল থেকে ভারতের প্রবৃদ্ধি মূলত ভোগের উপর নির্ভরশীলএই প্রবন্ধটিতে একটি চিত্তাকর্ষকের যোগসূত্রের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: শুল্ক উদারীকরণ আমদানিকে সস্তা আরও সহজলভ্য করে মাথাপিছু ভোগের পরিমাণ বাড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। চিনও একই ধরনের পথ অনুসরণ করেছে বলে মনে হচ্ছে। এটি একটি বৃহত্তর, পরীক্ষামূলক অনুমানের জন্য পরিসর তৈরি করে: শুল্ক হ্রাস কি উদীয়মান বাজারগুলিতে প্রবৃদ্ধির জন্য একটি নীরব অনুঘটক? যদি তেমনটাই হয়, তবে এটি কেবল বিকশিত ভারতকে চালনা করার জন্য একটি ভারত-নির্দিষ্ট অন্তর্দৃষ্টি নয়; বরং এটি অন্যান্য উদারীকরণকারী উদীয়মান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতিপথ এবং কৌশলগুলি পুনর্বিবেচনার আহ্বানও বটে

 


নীলাঞ্জন ঘোষ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ডিরেক্টর এবং তিনি সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির (সিএনইডি) ও ওআরএফ-এর কলকাতা শাখার প্রধান।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.