মাইক্রোসফট দ্বারা প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন আরও এক বার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির জন্য চিন এবং উত্তর কোরিয়ার মতো সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রগুলির তরফে সৃষ্ট হুমকির কথা তুলে ধরেছে। উল্লিখিত দুই দেশই রাষ্ট্রীয় নীতির একটি অস্ত্র হিসাবে অপ্রতিসম যুদ্ধের ব্যবহার আয়ত্ত করেছে। সর্বোপরি, যে বিষয়টি অনেককে উদ্বিগ্ন করেছে তা হল, নতুন উদীয়মান প্রযুক্তির সমন্বিতকরণ। যেমন জেনারেটিভ এআই-এর কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক ইনফ্লুয়েন্স অপারেশনস বা প্রভাবশালী কার্যকলাপের (আইও) একটি হাতিয়ার হিসাবে সাইবার প্রযুক্তির ব্যবহার। এই ঘটনাপ্রবাহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির জন্য বিপদের ডঙ্কা বাজিয়েছে এবং নির্বাচনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজনীয়তাকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। ভারত তার পুনরাবৃত্তি এবং ক্রমাগত নির্বাচন চক্রের কারণে এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে দুর্বল। কারণ লোকসভা নির্বাচন বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হয়।
সাইবার অপারেশনে কৌশলগত লক্ষ্য পরিবেশন
২০২৪ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লক্ষ্য নির্ধারণ করে সাইবার কার্যকলাপ চালানোর জন্য নানাবিধ অনুপ্রেরণা অঞ্চল ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। যাই হোক, অঞ্চলগুলির মধ্যেও সাইবার কার্যকলাপ চালানোর জন্য চিনা রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলির নির্দিষ্ট কিছু অনুপ্রেরণা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক স্বার্থ। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন চিনের জন্য একটি অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত প্রেরণা। পাপুয়া নিউ গিনির ক্ষেত্রে, অনুপ্রেরণাটি আবার সম্পূর্ণ রূপে অর্থনৈতিক হতে পারে। কারণ দেশটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে সাইবার কার্যকলাপ চালানোর কারণগুলি আবার একেবারে ভিন্ন হতে পারে।
রাষ্ট্রের সাইবার গণনায় সামরিক স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিনা জাতি-রাষ্ট্রের হয়ে কার্যকলাপ চালানোর জন্য বিখ্যাত গোষ্ঠী রাস্পবেরি টাইফুন একটি বড় বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সামরিক সত্তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ঠিক একই ভাবে ইউএস-ফিলিপিন্সের সামরিক মহড়াকে লক্ষ্য করে আর একটি হুমকি প্রদান করেছে ফ্ল্যাক্স টাইফুনের তরফে করা আক্রমণ। এই সমস্ত সাইবার অপারেশন মূলত হয় সংবেদনশীল তথ্য বা কার্যকলাপের বিবরণ আহরণ বা সহজ কথায় বললে চুরি করার লক্ষ্যে। যাই হোক, প্রভাবশালী কার্যকলাপের অন্য উপায় হল এই যে, এই ধরনের হুমকি সাইবার পরিসরকে কেন্দ্র করে হয়। এই কার্যকলাপগুলি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির নির্বাচনী নিরাপত্তার জন্য হুমকির সম্মুখীন। এই সমস্ত পদক্ষেপগুলি চিনের বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্যের নিরিখে নিজের স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির আখ্যান ও বক্তৃতাকে প্রভাবিত করে।
রাষ্ট্রের সাইবার গণনায় সামরিক স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিনা জাতি-রাষ্ট্রের হয়ে কার্যকলাপ চালানোর জন্য বিখ্যাত গোষ্ঠী রাস্পবেরি টাইফুন একটি বড় বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সামরিক সত্তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
প্রভাবশালী কার্যকলাপ এবং নির্বাচনের নিরাপত্তা
চিনা প্রভাব সংক্রান্ত কার্যকলাপগুলি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে বিশেষ করে সেই আখ্যানগুলি পরিচালনা করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ বাক্স্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদপত্রের মতো মৌলিক অধিকারগুলি উপভোগ করে থাকেন। এই প্রেক্ষিতে চিন কার্যকর ভাবে চিরাচরিত এবং ডপলগ্যাঙ্গারের মতো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত ইনফ্লুয়েন্স অপারেশন নেটওয়ার্ক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন গণমাধ্যম ব্যবহার করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আইও ব্যবহারে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে একটি বিন্যাস আবির্ভূত হয়েছে। মেটার প্রতিবেদন ম্যানিপুলেটিভ ডেটা বা প্রভাব ফেলতে পারে এমন তথ্যের দু’টি বৃহত্তম উৎসের মধ্যে একটি হিসাবে কার্যকলাপের চেষ্টাকারী চিনভিত্তিক স্প্যামোফ্লাজকে চিহ্নিত করেছে। টুইটার (বর্তমানে এক্স) এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক গণমাধ্যমের সংস্থাগুলি রাষ্ট্র-সমর্থিত বা রাষ্ট্র-অধিভুক্ত একাধিক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। তবে চিনা কার্যকলাপের প্রমাণ এখনও পিন্টারেস্ট, কোরা, ভিমিয়ো, রেডিট এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিতে পাওয়া যাবে।
তাইওয়ানে পর্যবেক্ষিত চিনের বেশির ভাগ সাইবার প্রযুক্তির ধরন হল গ্রে জোন ট্যাকটিক্স বা ধূসরাঞ্চল কৌশল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২৪ সালে তাইওয়ানের নির্বাচনের সময় দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাইবার-আক্রমণ ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহের জন্য সোভিয়েত যুগের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত বেজিংয়ের ‘মো হেই’ অনুশীলনের অংশ বলা চলে। এই অনুশীলনটির উল্লেখ ২০২৪ সালের ইউএস ইন্টেলিজেন্স অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টেও পাওয়া যায়, যা মস্কোর প্লেবুক দ্বারা প্রভাবিত বলে বেজিংয়ের প্রভাবশালী কার্যকলাপকে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক বিভাজন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বদনাম করা, পাবলিক ডিসকোর্স বা জন-আখ্যানকে একেবারে বদলে দেওয়া এবং মার্কিন নেতৃত্ব সম্পর্কে সন্দেহের বীজ বপন করার বিষয়ে বেজিংয়ের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখলে এই কৌশলগুলির বেশির ভাগই ক্ষতিকারক বলে মনে হয় না। তবে চিনের বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে এই অভিযোগগুলিকে সংযুক্ত করলে, সেগুলি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির জন্য বেশ উদ্বেগজনক বটেই।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত আর একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকেও চিনের হুমকির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এমনটা ফুকুশিমার বর্জ্য জল নিষ্কাশনের বিষয়ে জাপানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জনগণের ধারণাকে প্রভাবিত করার জন্য করা হয়েছিল। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় চিনা তৎপরতা এই প্রথম বার নয়। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া অভিযোগ করেছিল যে, দু’টি চিনা জনসংযোগ সংস্থা ৩৮টি নকল কোরীয় ভাষার সংবাদ ওয়েবসাইট (বা মক নিউজ সাইট) চালাচ্ছে, যা চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জনমতকে চালিত করার চেষ্টা করছে। এ হেন সাইবার প্রভাবগুলি ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া চিন দ্বারা পরিচালিত সিওল এবং জেজু দ্বীপের পুলিশ স্টেশনগুলিকেও চিহ্নিত করেছে। এই পুলিশ স্টেশনগুলিকে ‘দেশীয় নীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য বা জনমতকে বদলে দেওয়ার জন্য’ এবং ‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।’ দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বিশৃঙ্খলার পর সেখানকার সরকার এই ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত আর একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকেও চিনের হুমকির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এমনটা ফুকুশিমার বর্জ্য জল নিষ্কাশনের বিষয়ে জাপানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জনগণের ধারণাকে প্রভাবিত করার জন্য করা হয়েছিল। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় চিনা তৎপরতা এই প্রথম বার নয়।
ভারতের ক্ষেত্রেও চিন চিরাচরিত ভাবে বিভিন্ন উপায়ে আইও-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তা সাংবাদিকদের ও শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে হোক বা মূলধারার সংবাদপত্রকে তার রাজনৈতিক আখ্যান উপস্থাপনের জন্য অর্থ প্রদানের মাধ্যমেই হোক না কেন। যাই হোক, একটি প্রযুক্তি-প্রধান বিশ্বে পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় চিনের এ হেন প্রয়াস ভারতীয় সামাজিক গণমাধ্যমের আখ্যানে খুব বেশি সম্প্রসারণ করতে পারেনি। আর এমনটা হয়েছে মূলত চিনের কার্যকলাপের উপর নজরদারি বৃদ্ধি এবং চিনা সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ অ্যাপ্লিকেশন বা সামাজিক গণমাধ্যম স্বরূপ সংবাদমূলক অ্যাপগুলিকে নিষিদ্ধ করার কারণে। কিন্তু শোষণের সুযোগ কমে যাওয়ায় চিন এখন বিদ্যমান সোশ্যাল মিডিয়া ইকোসিস্টেম অর্থাৎ সামাজিক গণমাধ্যমের বাস্তুতন্ত্রকে এক্স এবং ইউটিউব-এর মতো আইও-র জন্য ব্যবহার করতে চাইছে। বর্তমানে আইও-র মাধ্যমে চিনা নির্বাচনী হস্তক্ষেপের মাত্রা এবং সুযোগ ভারতে গবেষণার অধীন রয়েছে। তবে এটি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র বলেছেন, ‘সাইবার আক্রমণ এবং তথ্য প্রভাবিত করার কার্যক্রম নির্বাচনী অবকাঠামো ও নির্বাচনী অখণ্ডতার উপলব্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি তৈরি করছে।’ ফলে আশঙ্কা করা যেতেই পারে যে, হুমকি দেওয়ার জন্য এই ধরনের শক্তিগুলি বিদ্যমান রাজনৈতিক বিচ্যুতিরেখাকে কাজে লাগাবে। নির্বাচনী ভোটিং মেশিন সম্পর্কিত রাজনৈতিক মতবিরোধের উপস্থিতিও এমন একটি বিষয়, যা হুমকি প্রদানের উদ্দেশ্যে শক্তিগুলি সহজেই কাজে লাগাতে পারে।
এআই-সক্ষম আইও এবং নির্বাচন
আইও সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল নিজের পরিসরের উন্নতি ঘটাতে এবং ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এআই-এর ব্যবহার। জনপ্রিয় মঞ্চগুলিতে এই অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে অনেকগুলিই এই ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করে উচ্চ স্তরের সম্পৃক্ততা অর্জন করেছে। এই আইওগুলি জেনারেটিভ এআই-এর মতোই এআই ব্যবহারের দরুন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কারণ এর দৃশ্যমান আকর্ষক বিষয়বস্তু তৈরি করার ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে উন্নত হয়েছে। এর ফলে হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে প্রচারের কাজ চালানো অনেক বেশি সহজ হয়েছে। হুমকি প্রদানকারী শক্তিগুলি এখন ‘সারা বছর জুড়ে আকার এবং পৌনঃপুনিকতা’ অর্জন করতে পারে, যেমনটা আগে ছিল না। ফলে এ ভাবেই জেনজি-র (নব্য প্রজন্ম) মধ্যে এই ধরনের কার্যকারিতা আরও বেশি করে লক্ষ করা যায়। এই ধরনের এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক অ্যাপের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়েছিল, যে অ্যাপটিকে উভয় পক্ষের মার্কিন রাজনীতিবিদদের লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছিল। এ ছাড়াও চিনের এপিটিগুলি ফিশিংয়ের (আড়ালে থেকে নজরদারি) মাধ্যমে বাইডেনের প্রচারাভিযান চালানোয় ব্যস্ত কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে। একই ভাবে তাইওয়ানের নির্বাচনের সময় স্টর্ম ১৩৭৬-এর মতো হুমকি প্রদানকারী শক্তি – যা কিনা স্প্যামোফ্লাজ বা ড্রাগনব্রিজ নামেও পরিচিত – এআই-এর ব্যবহার করেছিল। তবে বিদেশি নির্বাচনগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য রাষ্ট্র-সমর্থিত শক্তির তরফে এ হেন কার্যকলাপ এই প্রথম। মেটা চিহ্নিত করেছে যে, এই কার্যকলাপগুলি স্পষ্টতই চিনা আইন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত।
এআই-সক্ষম ডিপফেক হল এমন আর একটি চ্যালেঞ্জ, যা আইও-তে আবির্ভূত হয়েছে এবং যেটি নকল করার কাজটিকে আরও সহজ করে তোলে। এ ছাড়াও এআই-সক্ষম মিম (মজার বিষয়বস্তু), এআই-জেনারেটেড অ্যাঙ্কর এবং এআই দ্বারা উন্নত ভিডিয়োগুলিও চিনা আইও কৌশলগুলিতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। তাইওয়ানের নির্বাচনে স্টর্ম ১৩৭৬-এর মতো শক্তি বা সত্তা এআই-সক্ষম অডিয়ো ব্যবহার করেছে। আর এমনটা যেমন এক দিকে নির্বাচনের দিনে টেরি গো-র ক্ষেত্রে ভোটের বিকল্পগুলি হেরফের ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, ঠিক তেমনই অন্য দিকে অন্য প্রার্থীকে মিথ্যা ভাবে সমর্থন জোগানোর জন্যও করা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে, মিথ্যা গুজব ছড়ানোর জন্য লাই চিং-তে-র বিরুদ্ধে একটি ডিপফেক ভিডিয়ো ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তাঁর সুনামকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল।
এআই-সক্ষম ডিপফেক হল এমন আর একটি চ্যালেঞ্জ, যা আইও-তে আবির্ভূত হয়েছে এবং যেটি নকল করার কাজটিকে আরও সহজ করে তোলে। এ ছাড়াও এআই-সক্ষম মিম (মজার বিষয়বস্তু), এআই-জেনারেটেড অ্যাঙ্কর এবং এআই দ্বারা উন্নত ভিডিয়োগুলিও চিনা আইও কৌশলগুলিতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।
সামনের পথ
নির্বাচনী বাস্তুতন্ত্রের সংবেদনশীলতার কারণে নির্বাচনগুলি প্রায়শই হুমকি প্রদানকারী শক্তিদের তরফে লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছে, যা এই ক্ষতিকারক হস্তক্ষেপগুলির নিরিখে প্রায় নতুন বলা চলে। দক্ষ কর্মীদের অভাব, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং বাজেটের সীমাবদ্ধতা নির্বাচনকে সাইবার-আক্রমণ এবং আইও-র জন্য আরও দুর্বল করে দিয়েছে। যাই হোক, ডিজিটাল মিডিয়া সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামোয় পর্যাপ্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি মোকাবিলা করা যেতে পারে। এটি সরকারি ও বেসরকারি খাতে একাধিক অংশীদারদের অংশগ্রহণ দ্বারা চালিত হতে পারে। যদিও এ কথা প্রত্যাশিত যে, আগামিদিনে চিন এবং উত্তর কোরিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপের আরও প্রচেষ্টা চালাবে। তবে সমমনস্ক দেশগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য হুমকি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নির্বাচনের জন্য সাইবার নিরাপত্তা সমাধানের প্রতি আরও বেশি মনোযোগের দাবি রাখে। আর তার জন্য আমাদের নির্বাচনী ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি; বিগ টেক (বৃহৎ প্রযুক্তি) ও নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে মিথস্ক্রিয়াকে নতুন করে কল্পনা করা; বিগ টেক, নিয়ন্ত্রক এবং সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরি।
অভিষেক শর্মা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.