৮ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে হাসিনা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য বেজিংকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থেকেছে। এটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলির অন্যতম। কারণ এই অঞ্চলের উপর দিয়ে বড় নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং অঞ্চলটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও তিনি বলেন, ‘আওয়ামি লিগ ছাড়া কোনও সরকারই এই এলাকার উন্নয়নে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান সংযোগ প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণের কাজ ২০২২ সালে সম্পন্ন হয়েছে এবং সেতুটি এই অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। হাসিনার অনুরোধের জবাবে চিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রস্তাব চেয়েছে। যাই হোক, বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পরিবেশগত দুর্বলতার মোকাবিলা করতে এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করলেও চিনের বর্ধিত সম্পৃক্ততা বঙ্গোপসাগরের ভূ-রাজনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
অর্থনীতি ও বাস্তুশাস্ত্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা
খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশের অর্ধেকই হল বাংলার ব-দ্বীপের মুখ। দেশের প্রধান দু’টি নদী অর্থাৎ পদ্মা ও যমুনা বঙ্গোপসাগরে মিশে হওয়ার আগে নিম্ন বাংলাদেশের মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়, যা বিশ্বের বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপ তৈরি করে। সমস্ত ব-দ্বীপীয় অঞ্চল জোয়ার-ভাটার খাল ও মোহনাগুলি মিলিয়ে বাংলাদেশের উপকূলরেখার সমগ্র দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩২০ কিলোমিটার বলে অনুমান করা হয়। যাই হোক, এই উপকূলরেখার ভূসংস্থান অঞ্চলটিকে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং নদীর তীরের ক্ষয়প্রবণ করে তোলে। সর্বোপরি, উত্তাল বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান দেশটির উপকূলরেখাকে ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং যার কম্পাঙ্ক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নোনা জলের অনুপ্রবেশের মতো সমস্যাও উল্লেখযোগ্য। কারণ বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চলই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের ১ মিটার বৃদ্ধি লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভও সমুদ্রপৃষ্ঠের মাত্র এক মিটার বৃদ্ধি ঘটলেই হারিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই, বাংলাদেশের উপকূলরেখায় ক্ষয় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কুতুবদিয়া ও সন্দ্বীপের মতো কিছু দ্বীপের অঞ্চল বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
উত্তাল বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান দেশটির উপকূলরেখাকে ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং যার কম্পাঙ্ক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভৌত দুর্বলতা দেশের অর্থনীতির উপরেও প্রভাব ফেলে। কারণ এর ২০ শতাংশ ভূখণ্ড উপকূলরেখা এবং ৩০ শতাংশ ভূখণ্ড আবাদযোগ্য জমি। কৃষিই দেশের প্রধান পেশা এবং বাংলাদেশের জিডিপি-র প্রায় ১১.৫০ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ। বদ্বীপটি ইলিশ মাছ ধরার জন্যও উপযোগী। কারণ এই সামুদ্রিক মাছগুলি প্রজনন মরসুমে নদীপথ বরাবর চলাচল করে। কৃষি ছাড়াও মাছ ধরা দেশের অন্যান্য প্রাথমিক পেশা, যা জাতীয় জিডিপি-র ৩.৫০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এবং যার মধ্যে শুধু মাত্র ইলিশ মাছ ধরাই প্রায় ১ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, উভয় পেশার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সহ দেশের জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ উপকূলরেখা বরাবর বাস করে। এটি এই অঞ্চলের দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবিত হয়, যার ফলে বড় আকারের বাস্তুচ্যুতি ঘটে এবং জীবিকার সঙ্গে আপস করতে হয়। এ ভাবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দুর্যোগ-প্রতিরোধী অবকাঠামো এবং উন্নততর সংযোগ শৃঙ্খল গড়ে তোলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে, যা ব-দ্বীপের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার আহ্বানকে ব্যাখ্যা করে।
ব-দ্বীপের উন্নয়ন
২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০ প্রকাশ করেছে, যা উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে এবং দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রিক ও আন্তঃক্ষেত্রীয় কার্যকারিতার রূপরেখা-সহ একটি সর্বাত্মক উন্নয়ন কৌশল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। অন্যথায় কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং অভিবাসনের ঘটনাও বাড়বে, যা আখেরে নগরায়ণের চাপ বৃদ্ধি করবে এবং শেষ পর্যন্ত দেশের জিডিপি-তে পতন ঘটাবে। এটি ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা হারিয়ে পরম দারিদ্র্যের অবসান, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে দারিদ্র্য দূর করার পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিনের বর্ধিত সম্পৃক্ততা চিনকে বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি নিয়ে আসবে, যা ভারতের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
যাই হোক, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিডিপি-র বিনিয়োগের আনুমানিক মূল্য হল ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উত্স থেকে সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের প্রয়োজন। বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য বিদেশি সহায়তার উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। চিন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী হিসাবে স্বাভাবিকভাবেই একটি সম্ভাব্য উৎস হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিনের বর্ধিত সম্পৃক্ততা চিনকে বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি নিয়ে আসবে, যা ভারতের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
বঙ্গোপসাগরে বেজিং
বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চিনের ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের উপস্থিতি বজায় রাখা এবং চলাচল বৃদ্ধি করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর হাইড্রোকার্বনের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ও জ্বালানি বাণিজ্যের জন্য শিপিং রুটগুলি (জাহাজ চলাচলের পথ) গুরুত্বপূর্ণ। ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং রুট নিকটবর্তী মালাক্কা প্রণালীতে প্রবাহিত হওয়ার আগে উপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণতম বিন্দুর ৮ নটিক্যাল মাইল বরাবর প্রবাহিত হয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব এবং সুদূর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে তেল আমদানি বহনকারী জ্বালানি বাণিজ্যের প্রাথমিক পথ। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, চিনের জ্বালানি বাণিজ্যের ৭০ শতাংশেরও বেশি এবং সমগ্র বাণিজ্য প্রবাহের ৬০ শতাংশ মালাক্কা চোকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা এটিকে চিনা অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট করে তুলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই, ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হলে এই প্রণালীটির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা বেজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং রুট নিকটবর্তী মালাক্কা প্রণালীতে প্রবাহিত হওয়ার আগে উপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণতম বিন্দুর ৮ নটিক্যাল মাইল বরাবর প্রবাহিত হয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব এবং সুদূর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে তেল আমদানি বহনকারী জ্বালানি বাণিজ্যের প্রাথমিক পথ।
যাই হোক, দেশটির উপসাগরে উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য যেহেতু কোনও অন্তর্নিহিত আইনি দাবি নেই, তাই চিন উপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে নিজের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বেজিং নয়াদিল্লির সঙ্গে আস্থার ঘাটতির সম্মুখীন, মায়ানমার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দুর্বল, তাই এই অঞ্চলে উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশই চিনের সেরা বাজি হতে চলেছে। উপসাগরের শিখরে অবস্থিত দেশটি কেবল শিপিং রুটগুলির উপর নজরদারি চালাতে সক্ষম এমন অনন্য ভূ-কৌশলগত অবস্থানেই অবস্থিত নয়, বরং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত একটি উন্নয়নমূলক কর্মসূচি দ্বারাও চালিত। সেই অনুসারে, চিন বাংলাদেশের নৌ-প্রতিরক্ষার উন্নতির পাশাপাশি বাংলাদেশের সামুদ্রিক যোগাযোগ অবকাঠামোয় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।
ঢাকাকে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তকারী পদ্মা সেতু নির্মাণের নেপথ্যে ছিল চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ। বেজিং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নেও জড়িত। এই সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি ঘটে থাকে এবং এটি বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ব্যস্ততম বন্দর। চিন সরকারি অনুদানমূলক ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে মংলা সমুদ্র বন্দর উন্নয়নেও সাহায্য করেছে। যেহেতু চিনা পোশাক নির্মাতারা চিনে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ এবং অ-চিনা সরবরাহকারীদের ব্র্যান্ডের চাহিদার কারণে নিজেদের উৎপাদন ঘাঁটি বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে চাইছে, তাই মংলা চিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ এটি ঢাকার কাছাকাছি এমন এক অঞ্চল, যেখানে ক্রমবর্ধমান রেডিমেড-গার্মেন্ট (আরএমজি) শিল্প বিকশিত হয়ে চলেছে, এই শিল্পের কার্যালয় রয়েছে এবং পোশাক ব্যবসার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক সংযোগ ব্যবস্থাও বিদ্যমান।
বেসামরিক উদ্যোগের পাশাপাশি চিন চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার উপকূলে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি বিএনএস শেখ হাসিনা নির্মাণ করেছে এবং সম্ভবত চিনা সাবমেরিনগুলি অস্বস্তিকর ভাবে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এটি উপসাগরে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদ্ঘাটিত ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় জটিলতার আর একটি স্তর যুক্ত করেছে। বঙ্গোপসাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ চিন এই সামুদ্রিক স্থানটিকে তার আগ্রহের প্রাথমিক ক্ষেত্র বলে মনে করে। চিন তার অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক স্বার্থ এবং বৈদেশিক নীতি আকাঙ্ক্ষার জন্য উপসাগরের উপর তীব্র ভাবে নির্ভরশীল। দক্ষিণ বাংলাদেশে চিনের বর্ধিত বিনিয়োগের সম্ভাবনার দরুন চিন ভারতের নৌ-সম্পদ এবং উপসাগরে সামুদ্রিক স্বার্থের কাছাকাছি আসায় ভারতের আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোপরি, বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, যেটি অভিন্ন সাধারণ সম্পদ ভাগ করে নেয় এবং যে দেশটি তার স্থল-অবরুদ্ধ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশগুলিতে সমুদ্র সংযোগ প্রদানের জন্য এবং ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট ও নেবারহুড ফার্স্ট নীতিগুলি উপলব্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিন-ভারত প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মতো বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। যাই হোক, বাংলাদেশে চিনের বর্ধিত বিনিয়োগ বাংলাদেশকে ভারত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে, যেমনটা মলদ্বীপেও ঘটেছে।
দক্ষিণ বাংলাদেশে চিনের বর্ধিত বিনিয়োগের সম্ভাবনার দরুন চিন ভারতের নৌ-সম্পদ এবং উপসাগরে সামুদ্রিক স্বার্থের কাছাকাছি আসায় ভারতের আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ হেন পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকার যখন নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে, তখন ভারতকেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত সমস্যা যেমন তিস্তার জল বণ্টন সমস্যার সমাধান করা জরুরি। ভারতও বাংলাদেশকে বিডিপি উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এই দু’টি দেশ বেঙ্গল ডেল্টা বা বাংলার ব-দ্বীপ ভাগ করে নেয় এবং এর ফলে দুই দেশই বাস্তুতন্ত্র ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অভিন্ন সাধারণ উদ্বেগ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করার অবস্থানে রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নয়াদিল্লির প্রশংসা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের পারদর্শিতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি তার সচেতনতা এই অংশীদারিত্বকে আরও উন্নত করতে পারে।
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.