Published on Mar 20, 2023 Updated 0 Hours ago

সুপ্রিম কোর্টে নোটবন্দির সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় কি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনকেই খর্ব করে?

নোটবন্দি রায়ের বিশ্লেষণ

রিট পিটিশন বিবেক নারায়ণ শর্মা বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলা, যা সাধারণভাবে ডিমনিটাইজেশন কেস বা নোটবন্দি মামলা নামে পরিচিত,  তাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাগরত্ন-র ভিন্নমত ও সংখ্যালঘু রায় – – আরবিআই তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসিত এবং স্থিতিস্থাপক কি না, সেই জটিল সমস্যাটিকে আবার নতুন করে তুলে এনেছে৷

যতদিন না বেসরকারিকরণের ধারা স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রকদের প্রয়োজনীয়তা সূচিত করেছে, ততদিন অর্থাৎ ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত এমনকি ইউরোপেও স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রক বিরল ছিল এবং এর পরবর্তী সময় এই গোত্রের প্রসার হয়। ভারতে ১৯৯১ সালের উদারীকরণের পরে স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি বহুগুণে ফুলেফেঁপে উঠেছে, যা সিকিউরিটিজ মার্কেট (সেবি ১৯৯২), টেলিকম (ট্রাই ১৯৯৭), প্রধান বন্দরগুলি (ট্যাম্প ১৯৯৭), বিদ্যুৎ (সিইআরসি ১৯৯৯), বিমা (আইআরডিএ ২০০০) এবং পেনশন-এর (পিএফআরডিএ ২০১৩) জন্য স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রকদের জন্ম দিয়েছে।

আরবিআই আইন ১৯৩৪-এর অধীনে গঠিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) অন্য সব বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রকের মধ্যে প্রথম। এর সিদ্ধান্তের প্রভাব অর্থনীতিব্যাপী বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি এটির দীর্ঘ আয়ু এবং স্থিতিস্থাপকতা তার কাজের সংবেদনশীলতা ও উচ্চ প্রযুক্তিগত প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেগুলি এটির নির্ধারিত দায়িত্ব  বা স্বায়ত্তশাসনের কোনওটিতেই  প্রায়শই পরিবর্তনের পৌনঃপুনিকতাকে খর্ব করে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতার মধ্যে যথাযথ ভারসাম্যের মাধ্যমে এটি তার স্বায়ত্তশাসনও অর্জন করেছে।

এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয় যে, ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং নিম্ন-মধ্য স্তরে মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে তুলনাকারী অর্থনীতির পরিসরে সর্বোচ্চ। ভারতীয় বন্ডগুলি স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়োরস (এসঅ্যান্ডপি) দ্বারা মেক্সিকো, পানামা, উরুগুয়ে, রোমানিয়া এবং সাইপ্রাসের মতো মাথাপিছু উচ্চ আয়ের অর্থনীতির সমতুল্য বিবিবি (স্থিতিশীল) ক্রমাঙ্কিত। মুডি’স-এর ক্রমানুসারে ভারত ইতালি, পর্তুগাল এবং রোমানিয়ার সঙ্গে বিএএ৩-এ স্থান করে নিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আরবিআই-এর স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করা শুধুমাত্র প্রগতিশীল গণতন্ত্র হিসাবে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য ভাল নয়, বরং এটি ভারতের নিম্ন ঋণ ঝুঁকি সংক্রান্ত যোগ্যতা প্রদর্শনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হঠাৎ করেই বাস্তবায়িত ডিমনিটাইজেশন বা নোটবন্দির ঘোষণা হয়। এটিতে উচ্চ মূল্যসম্পন্ন নোটগুলি – যা বাজারে চালু টাকার ৮৬ শতাংশের সমান – প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং এর ফলে প্রত্যাশিত ভাবে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সমস্যার সূচনা হয় যা আরবিআই দ্বারা কয়েক মাস পরে অর্থনীতিতে পুনরায় অর্থায়িত করা অবধি বহাল ছিল।

ভারতে নতুন নোটের বিনিময়ে পুরনো নোটের সর্বস্তরীয় প্রত্যাহার ২০১৬ সালেই প্রথম দেখা যায়নি। ১৯৪৬ এবং ১৯৭৮ সালেও একই ধরনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দর্শিয়েছে যে, উভয় ক্ষেত্রেই আরবিআই এই ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করেনি। তবু তৎকালীন ভারতীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং ভারতের সংবিধানের কেন্দ্রীয় তালিকার ৩৬তম অর্থাৎ ‘মুদ্রা, মুদ্রানির্মাণ, আইনি দরপত্র ও বৈদেশিক লেনদেন’-এর অন্তর্ভুক্তির পূর্ণ অধীনে ক্ষমতা ব্যবহার করে আইনি দরপত্র প্রত্যাহার করার আইন প্রণয়ন করেছিল।

২০১৬ সালে অস্বাভাবিক ভাবে আরবিআই আইনের ধারা ২৬(২)-এর অধীনে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডিমনিটাইজেশন বা নোটবন্দি কার্যকর করা হয়। সহজ ভাবে বললে, এই বিধানটি আরবিআইকে ‘যে কোনও’ ক্রমের এবং ‘যে কোনও’ মূল্যের মুদ্রা প্রত্যাহার ‘সুপারিশ’ করার ক্ষমতা দেয়, যা সরকারকে পুরনো বা মিশ্রিত (নকলের দরুন) মুদ্রার সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য একটি নির্ণায়ক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। এমনকি এই ধরনের নিয়মের বিষয়ে আরবিআই-এর উচ্চ প্রযুক্তিগত অবস্থা সত্ত্বেও সকল মুদ্রার মূল্যের জামিনদার হিসেবে সরকারের বক্তব্যই চূড়ান্ত হওয়ায় সরকার তার উপদেশ মানতে বাধ্য নয়।

আরবিআই অবশ্য একটি সুপারিশ জমা দেওয়ার গতিকে কর্তব্যপরায়ণ ভাবে অনুসরণ করেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক সরকারি চিঠির জবাবে, যেখানে উচ্চ মূল্যের নোটের সমস্ত ক্রম প্রত্যাহার করা এবং তার বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়৷ জানা গিয়েছে, চিঠিটি লেখার আগে ছয় মাস ধরে এ নিয়ে আলোচনা চলেছিল।

কালো টাকার হ্রাস ঘটানোর জন্য পছন্দের পন্থা হিসাবে উচ্চ মূল্যসম্পন্ন নোটের সর্বস্তরীয় নোটবন্দিকরণের সিদ্ধান্ত আরবিআই-এর পক্ষে স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রযুক্তিগতভাবে এই সুরাহা অস্থায়ী হলেও — যা শুধু বর্তমান কালো টাকার মালিকদের জন্য এককালীন ধাক্কা মাত্র —এটি তার পদ্ধতিগত চাহিদাকে অক্ষত রাখে। এ ছাড়াও ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দর্শিয়েছে যে, আরবিআই ২০০০ টাকার নোট জারি করতে প্রস্তুত ছিল যা ইতিমধ্যেই মুদ্রিত হয়েছে, সেটি একটি যুক্তিযুক্ত, দক্ষতাবর্ধক ব্যবস্থা, যা স্থান সংরক্ষণ এবং পরিবহণে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও তা নগদভিত্তিক কালো টাকার অর্থনীতিকেই সহায়তা জোগায়। এই ঘটনার এক মাস পরে আরবিআই-এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান গ্রহণের ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।

কালো টাকার হ্রাস ঘটানোর জন্য পছন্দের পন্থা হিসাবে উচ্চ মূল্যসম্পন্ন নোটের সর্বস্তরীয় নোটবন্দিকরণের সিদ্ধান্ত আরবিআই-এর পক্ষে স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা কম।

চার প্রবীণ বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকার সমস্ত বিদ্যমান নোট প্রত্যাহার এবং আইনি দরপত্র হিসাবে তাদের মর্যাদার ইতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরবিআই এবং সরকার উভয়ের পদক্ষেপকেই সমর্থন করেছে। সুপারিশের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আইনি আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করা হয়েছিল। ৭ নভেম্বর সরকারের চিঠির পরে ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ ৮ নভেম্বর আরবিআই-এর কেন্দ্রীয় বোর্ডের একটি সভা ডাকা হয়েছিল। চার পরিচালকের আবশ্যিক প্রয়োজনীয়তাকেও – যার মধ্যে কমপক্ষে তিন জনকে অবশ্যই সংযুক্ত অফিসার ব্যতীত শিল্প, অরাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং স্থানীয় বোর্ড থেকে নিযুক্ত আধিকারিক হতে হবে – মেনে নেওয়া হয়। বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গেজেট নোটিশ জারি করে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়টিতে প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত দিকের উপর মনোনিবেশ করা হয় এবং তা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, পদক্ষেপটি আইনত সঠিক ছিল। নিয়ম পালনে কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি। এ কথাকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি যে এর আগে কখনও উচ্চ মূল্যসম্পন্ন নোটের সর্বস্তরীয় প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ধারা ২৬(২) ব্যবহার করা হয়নি। যুক্তি দেওয়া হয়, যেহেতু ধারা ২৬(২) আরবিআইকে শুধুমাত্র সরকারকে সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করে, তাই প্রস্তাবটি আরবিআই বা সরকার কার পক্ষ থেকে এসেছে তার গুরুত্ব খুবই নগণ্য।

‘হিস্টরি অব দ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’র তৃতীয় খণ্ড থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে নোটবন্দিকরণের সময় কীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, যখন মোরারজি দেশাই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং হিরুভাই প্যাটেল – পূর্বতন সিভিল সার্ভিস অফিসার – অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১৪ জানুয়ারি আরবিআইয়ের একজন অভিজ্ঞ আধিকারিককে অপ্রকাশ্য জরুরি কাজের জন্য দিল্লিতে তলব করা হয়। তিনি পৌঁছনোর পর তাঁকে উচ্চ মূল্যের মুদ্রার আইনি দরপত্র প্রত্যাহারের জন্য একটি খসড়া অর্ডিন্যান্স তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তিনি এমনটা আগে কখনও করেননি এবং সে সময়ে বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে ১৯৪৬ সালের অর্ডিন্যান্সের প্রতিলিপি চেয়ে পাঠান এবং সেটিকে  ১৯৭৮ সালের অর্ডিন্যান্সের খসড়া বানানোর টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করেন। পরের দিনের প্রথমার্ধেই রাষ্ট্রপতি দ্বারা তা অনুমোদিত হয় এবং একই দিনে কার্যকরও হয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় সরকার এবং আরবিআই-এর মধ্যে কোনও সমস্যা অনুভব করেনি। তারা এক দল হিসাবে কাজ করে – আরবিআই প্রযুক্তিগত বিষয়ে পরামর্শ দেয় যখন সরকার বৃহত্তর রাজনৈতিক, বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলি মোকাবিলা করে।

সংখ্যালঘু রায় আরবিআই আইনের একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। নোটবন্দির চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত, সে কথার সঙ্গে এই রায় সহমত পোষণ করে। এই কারণেই আরবিআই-এর নথি থেকে সেই দায়বদ্ধতা নির্মূল করার আগে এবং কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা এর গ্যারান্টি প্রত্যাহার করার আগে শুধুমাত্র সরকার তার পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে একটি অর্ডিন্যান্স (সংসদ অধিবেশনে না থাকাকালীন গতি ও গোপনীয়তার স্বার্থে) বা আইন জারি করে মুদ্রা থেকে আইনি দরপত্রের মর্যাদা প্রত্যাহার করতে পারে।

বিচারপতি নাগরত্ন যুক্তি দিয়ে বলেছেন, কেন আরবিআই-এর ধারা ২৬(২)-এর অধীনে একমাত্র উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এটি আরবিআই-এর জন্য একচেটিয়াভাবে সুপারিশ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে প্রযুক্তিগত বিষয়ে আরবিআই-এর স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি বিকল্প হিসাবে কাজ করে। এ ছাড়াও প্রশাসনিক আইনের একটি মৌলিক নীতি হল যে একবার আইন দ্বারা কোনও প্রক্রিয়া স্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত হলে সেটি অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। এর আর একটি ব্যবহারিক কারণ হতে পারে আরবিআই-এর উপর একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করলে অর্পিত ক্ষমতার উপর তত্ত্বাবধানের জন্য কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তার একটি ‘অডিট ট্রেইল’ সংরক্ষণ করা।

২০১৬ সালে সরকার কর্তৃক গৃহীত ‘উদ্ভাবনী’ পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার অধীনে দায়িত্ব সরকার এবং আরবিআই দু’পক্ষেই ন্যস্ত হয়। এটি সম্ভাব্যভাবে আরবিআই-এর প্রযুক্তিগত মনোনিবেশ এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখার সংকল্পকে দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে নিকৃষ্ট পদক্ষেপের বিরুদ্ধে, যা ‘আনুপাতিকতার নীতি’ অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য চতুর্থ পরীক্ষা দ্বারা বৈধতাপ্রাপ্ত নয় যে সর্বনিম্ন খরচ এবং সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প ব্যবহার করা আবশ্যক। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কালো টাকা, নোট জাল বা সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভিন্নমত নথিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াগুলির অবলুপ্তি ঘটলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নীতিগত বিরোধিতার অভ্যাসও হ্রাস পাবে।

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট আইনি ব্যক্তিত্ব অরুণ জেটলি কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশ্রী (এবং আত্মনিন্দিত) কাঠামোকে শুধুমাত্র একটি সরকারি অনুরোধে সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আরবিআইকে ব্যাপারটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে অক্ষম ছিলেন? আরবিআই-এর গভর্নর উর্জিত প্যাটেল কি স্বেচ্ছায় সমর্থন করতে অসম্মত ছিলেন, যেমনটা তাঁর পূর্বসূরি সি ডি দেশমুখ ১৯৪৬ সালে এবং আই জি প্যাটেল ১৯৫৮ সালে করেছিলেন? এর উত্তর শুধুমাত্র সময় এবং ‘পূর্ব ঘটনার নথি’র স্মৃতিচারণ থেকেই পাওয়া সম্ভব।

সম্ভবত একটি নতুন পণ্য ও পরিষেবা কর আইনের জন্য বিদ্যমান আলোচনা থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি, ২০১৬ লোকসভায় বিজেপির ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (এনডিএ মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত না করে) এবং রাজ্যসভায় বিরোধীদের আধিপত্যের সঙ্গে মিলিত হয়ে এনডিএ মিত্রদের নোটবন্দিকরণ প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার পথে বাধার সৃষ্টি করেছিল। অর্ডিন্যান্সের পন্থা অনুসরণ করতে গেলে এর প্রয়োজন হত। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক পথ আরও পরিচ্ছন্ন এবং গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য জরুরি বলেই হয়তো মনে করা হয়েছিল।

অভিজ্ঞতা দর্শায় যে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অনমনীয়তা ভাল ফলাফল সুনিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের লভ্যতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠান নির্মাণও করা যায় না। মানুষের দুর্বলতার বিরুদ্ধে সর্বোত্তম সুরক্ষা হল একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, যা ক্ষমতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়, তবে সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য এর অনুমতিযোগ্য অনুশীলনকে সংকুচিত করে রাখে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.