Published on Dec 27, 2021 Updated 0 Hours ago

ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি সংরক্ষণের মাধ্যমে দমনমূলক ঔপনিবেশিক মতাদর্শের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সামাজিক পরিবর্তনের কণ্ঠরোধ করছে।

উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা বর্ণবৈষম্যবাদী শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে উপনিবেশমুক্ত করা: গ্লোবাল সাউথের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ

ভূমিকা

জাতিগত ও শ্রেণিভিত্তিক আধুনিকতাবাদী নগর পরিকল্পনা আজকের সময়ের উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলির গড়ে ওঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় প্রশাসন বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে তাদের শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা জাহির করার কাজে ব্যবহার করছে। বৃহত্তর আঙ্গিকে হেরিটেজ শব্দটির অর্থ বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অতীতকে ব্যবহার করা এবং ক্ষমতার এমন এক ভরকেন্দ্র নির্মাণ করা যেটিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের ক্ষমতাশালী অংশ সমসাময়িক লক্ষ্য পূরণে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত তুলে ধরে ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাবে। এক দিকে যখন ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে একাধিক কৌতূহলপ্রদ অথচ অস্বস্তিকর উপায়ে ক্ষমতা প্রদর্শনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন অন্য দিকে শহর পরিকল্পনাকারীরা দ্বিধার মুখে পড়ছেন। এক দিকে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে এমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যাঁরা অতীতের ঔপনিবেশিকতার অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে ফেলতে চান, আবার অন্য দিকে এই রাজনীতিবিদরাই অর্থনৈতিক লাভের স্বার্থে ঔপনিবেশিকতার প্রতীকগুলিকে ব্যবহার করতে পিছপা হন না। এই ঘটনাপ্রবাহকে কলোনিয়াল অ্যামনেশিয়া বা ঔপনিবেশিক স্মৃতিভ্রংশতা বলা হয় যেখানে শহরগুলির উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের নামে ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির পুনর্নামকরণ, সেগুলি ভেঙে ফেলা বা অবহেলায় ধ্বংস হতে দেওয়ার পাশাপাশি ঔপনিবেশিক অতীতের অত্যাচারের কালো ইতিহাসের চিহ্নগুলিকে সংরক্ষণ করা হয়। এবং এগুলিকে উপনিবেশ-পরবর্তী সময়ের নতুন নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তি রূপে ব্যবহার করা হয়।

এক দিকে যখন ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে একাধিক কৌতূহলপ্রদ অথচ অস্বস্তিকর উপায়ে ক্ষমতা প্রদর্শনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন অন্য দিকে শহর পরিকল্পনাকারীরা দ্বিধার মুখে পড়ছেন। এক দিকে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে এমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যাঁরা অতীতের ঔপনিবেশিকতার অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে ফেলতে চান, আবার অন্য দিকে এই রাজনীতিবিদরাই অর্থনৈতিক লাভের স্বার্থে ঔপনিবেশিকতার প্রতীকগুলিকে ব্যবহার করতে পিছপা হন না।

উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির ক্ষেত্রে ক্ষমতা কী ভাবে কাজ করে তা এখানে তুলে ধরা হল এই আশা নিয়ে যে একটি নির্দিষ্ট স্তরের সংবেদনশীলতাই পারে ক্ষমতাকে সেই ভাবে ব্যবহার করতে যাতে উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলিতে কার্যকর এবং গঠনমূলক সামাজিক পরিবর্তন আনা যায় এবং শহরগুলিকে নিপীড়নমুক্ত করা যায়। ফুকো এবং ফ্যাননের প্রতর্কের বিশ্লেষণ থেকে একটি পোক্ত সমালোচনামূলক কাঠামো মেলে যেটির মাধ্যমে উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা বর্ণবৈষম্যমূলক ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিতে ক্ষমতার সম্পর্ক অন্বেষণ করা সম্ভব। সর্বোপরি বিশ্লেষণটি অর্থনৈতিক বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রেরিত এবং এ ক্ষেত্রে মূল যুক্তিটি হল ঔপনিবেশিক তথা বর্ণবৈষম্যজনিত স্থানিক ভূদৃশ্যের উত্তরাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সাল থেকে স্থায়ী হয়েছে এবং দেশটি অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে আরও সুতীব্র চাপ এবং স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে।

উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা বৈষম্যমূলক শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে উপনিবেশমুক্ত করা: অর্থনৈতিক বৈষম্যবাদের অভিজ্ঞতা

ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার কারণ ও প্রভাব এবং এর ক্ষমতাকে উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা বর্ণবৈষম্যবাদের প্রেক্ষিতে আমরা যে ভাবে দেখি, তা তুলে ধরার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়িগুলি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে দুটি ঘটনাই সমান গুরুত্বপূর্ণ যে হেতু তারা ঔপনিবেশিক তথা বর্ণবৈষম্যমূলক ঐতিহ্যের উপস্থিতি এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে এর অনুপ্রবেশপ্রবণতাকে তুলে ধরে।

প্রথম ঘটনা: সোয়েটোর ভিলাকাজি স্ট্রিটে ম্যান্ডেলার বাড়ি

ম্যান্ডেলা ১৯৯৮ সালে সোয়েটোর একটি অলাভজনক হেরিটেজ কোম্পানির কাছে নিজের বাড়ি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল সোয়েটো ও তার চারপাশে একটি সাংস্কৃতিক পরিসর গড়ে তোলা যার ফলে অব্যবহিত পরেই তাঁর বাড়িটি সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত হয়। এই ঘটনা থেকে যদি আমরা ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে চলে আসি, তা হলে দেখতে পাব যে, ম্যান্ডেলা মিউজিয়ামটি দুর্দশাগ্রস্ত এবং একাধিক লিকুইডেটরের হাতে রয়েছে

দ্বিতীয় ঘটনা: জোহানেসবার্গের হাউটনে ম্যান্ডেলার বাড়ি

২০২১ সালের মার্চ মাসে জোহানেসবার্গের সমৃদ্ধ শহরতলি হাউটনে — যেখানে নেলসন ম্যান্ডেলা থাকতেন — তাঁর বাড়ির চৌহদ্দি প্রায় জঙ্গলে রূপান্তরিত হয়েছিল, জমে থাকা ইউটিলিটি বিলের পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছিল এবং বাড়িটি প্রায় ভূতের বাড়িতে পর্যবসিত হয়েছিল। মাত্র কয়েক মাস পরে ২০২১ সালের জুন মাসে, একটি ঘোষণায় বলা হয় যে, ম্যান্ডেলার বাড়িটিকে স্যাংচুয়ারি ম্যান্ডেলা নামে একটি বুটিক হোটেলে পরিণত করা হয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক ২০২১ সালের ১ আগস্ট হোটেলটির উদ্বোধন করা হয়। এই হোটেলে ন’টি ঘর রয়েছে, যাতে ১৮ জন পর্যন্ত অতিথি থাকতে পারেন। এ ছাড়া আছে আত্ম-অনুসন্ধান এবং মাদিবার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সঙ্গে আত্ম-সংযোগ গড়ে তোলার জন্য রিট্রিট স্পেস। ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সেলো হাতাং-এর কথায়, “এই জায়গাটি অতিথিদের সাহায্য করবে মাদিবার ঐতিহ্য এবং তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতে, আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সকলের সুবিধার্থে একজোট হয়ে কমিউন গড়ে তুলতে এবং তাঁর মতো এক জন বিশ্বনেতার অতিথিপরায়ণতা ও মানুষের সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার মনোভাব দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে।” যদিও ম্যান্ডেলার ইচ্ছা ছিল যে, তাঁর হাউটনের বাড়িটিতে তাঁর তিন নাতি-নাতনি থাকবেন এবং বাড়িটি নেলসন ম্যান্ডেলা ট্রাস্টের অধীনে থাকবে, আর ‘‘বাড়িটি তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পরেও পরিবারের মানুষদের একত্র হওয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’’ ম্যান্ডেলার উইলে এ সব কথা বলা থাকা সত্ত্বেও পূর্বোল্লিখিত হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে।

ঔপনিবেশিক ইতিহাসসমৃদ্ধ শহরগুলিতে নগরোন্নয়ন পরিকল্পনার প্রভাব

আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, ম্যান্ডেলার বাড়িগুলি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে, কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে এটির মধ্যে অর্থনৈতিক বর্ণবৈষম্যের আকারে ঔপনিবেশিক দখলদারির ক্ষমতা প্রদর্শন সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। মোদ্দা কথা, সোয়েটোয় বসবাসকারী মানুষের কাছে তাঁর ভিলাকাজি হাউসের অর্থকরী হয়ে ওঠা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের একত্র হওয়ার জায়গা হিসেবে হাউটনের বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত ম্যান্ডেলার ইচ্ছে ফলপ্রসূ হয়নি। এই দুটি বাড়ি সম্পর্কিত ম্যান্ডেলার সমস্ত সিদ্ধান্ত তাঁর মৃত্যুর পরে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক শক্তিগুলি আর্থিক লাভের জন্য ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি বেসরকারিকরণ করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

প্রকৃত পক্ষে ঔপনিবেশিকতা সেই সব জিনিসকে মূল্যবান করে তোলে যেগুলি উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রেক্ষিতে নিজেদের আশানুরূপ ভাবে গড়ে তোলে — সাধারণত ধনী এবং সাদা চামড়ার মানুষদের জন্য।

এই পদক্ষেপগুলির ফলে উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলিতে প্রতীকী হিংসা এবং নিরাপত্তাহীনতার ঔপনিবেশিক পরিকাঠামো পুনরায় গড়ে উঠছে। যা ছিল, যা আছে এবং সম্ভাব্য যা হবে, সে কথা মাথায় রাখলে বাস্তবিক ভাবে এবং মননে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ছেয়ে আসে। এই শহরগুলি বর্তমানে দরিদ্র মানুষ দ্বারা অধ্যুষিত হলেও বাস্তবিক ভাবে এগুলি ধনী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষদের কথা মাথায় রেখে নির্মিত, যারা ‘অন্যদের’ বা ‘পরিত্যাজ্য গরিব মানুষদের’কে তাঁদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধে থেকে বঞ্চিত করে নিজেরা লাভবান হচ্ছে।

বাস্তবিক দৈনন্দিন সংঘর্ষের যে জমি থেকে প্রতীকী হিংসা এবং নিরাপত্তাহীনতার দিকগুলি উঠে আসে, সেই বাস্তব পরিস্থিতি থেকে ক্ষমতাশীল শক্তিগুলি বিচ্ছিন্ন। প্রকৃত পক্ষে ঔপনিবেশিকতা সেই সব জিনিসকে মূল্যবান করে তোলে যেগুলি উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রেক্ষিতে নিজেদের আশানুরূপ ভাবে গড়ে তোলে — সাধারণত ধনী এবং সাদা চামড়ার মানুষদের জন্য। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সোয়েটো এবং হাউটনে ম্যান্ডেলার বাড়ি, যেগুলি বর্তমানে ঔপনিবেশিকতার প্রতীক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী স্থান হয়ে উঠেছে।

উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে উপনিবেশমুক্ত করা: পরামর্শ

আমরা যদি উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা অর্থনৈতিক বিদ্বেষপূর্ণ শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে উপনিবেশমুক্ত করতে চাই, তা হলে আমাদের নিম্নলিখিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মেনে চলতে হবে:

১. যত দিন পর্যন্ত আমরা উত্তর-ঔপনিবেশিক শহরগুলির ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে সংরক্ষণের জন্য আধুনিকতাবাদী নগর উন্নয়নের পদ্ধতিগুলিকে প্রত্যাখ্যান এবং প্রতিস্থাপন করতে না পারছি, তত দিন সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে এমন কোনও নতুন মতাদর্শই উঠে আসবে না। কারণ ‘‘নতুন মোড়কে পুরনো মতবাদ’’-এর প্রচার চলতে থাকবে।

২. ঐতিহ্যবাহী স্থান সংরক্ষণের নামে অধিকারচ্যুতি — উত্তর ঔপনিবেশিক শহরগুলিতে ঔপনিবেশিকতার অনুপ্রবেশপ্রবণ ধারাকেই বজায় রাখে, যা নগর উন্নয়নের পরিকল্পনায় সামাজিক ন্যায়বিচারের আঙ্গিকটির অন্তর্ভুক্তিকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

৩. ঔপনিবেশিক ইতিহাসযুক্ত শহরগুলিতে সামাজিক ন্যায়বিচারের আঙ্গিকটি কার্যকর করার জটিলতাগুলি বুঝতে আমাদের নগরোন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদদের টপ-ডাউন পদ্ধতির ঊর্ধ্বে উঠে ভাবতে হবে।

৪. নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য আমলাতান্ত্রিক-রাজনৈতিক ক্ষমতার সম্পর্ক, পরিকাঠামোর উন্নয়ন, স্থানিক পরিকল্পনা নীতি এবং আইনিকরণকে অবশ্যই যাচাই করে দেখা উচিত। আধুনিকতাবাদী নগর পরিকল্পনার আঙ্গিকগুলি খুব খারাপ ভাবে ব্যর্থ হওয়ার জন্য এগুলিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে যাতে পূর্বে এবং বর্তমানে পৃথকীকৃত স্থানগুলির রূপান্তর ঘটানো সম্ভব হয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.