ড্রোন বা আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) প্রযুক্তি সাম্প্রতিক সময়ে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে এবং তাদের ক্রমবর্ধমান দূর-পাল্লার ক্ষমতা, সহনশীলতা ও কার্যকারিতা, তাদেরকে বেসামরিক ও সামরিক উভয় ব্যবহারের জন্যই অপরিহার্য করে তুলেছে। একই সময়ে অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক, মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মতো ভয়ঙ্কর শক্তিগুলি তাদের কার্যকলাপে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে। ভারতের জন্য পশ্চিম সীমান্তে চোরাচালানকারী সিন্ডিকেট এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি দ্বারা ইউএভি-র বর্ধিত ব্যবহার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটিতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে শত্রুতামূলক ড্রোন কার্যকলাপের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা সংস্থা দ্বারা গৃহীত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এ হেন চ্যালেঞ্জ প্রশমিত করতে ও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ভারত যে পদক্ষেপ নিতে পারে, তার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরোপণ: সমীর পাটিল এবং রাজ অরোরা, ‘কাউন্টারিং হস্টাইল ড্রোন অ্যাক্টিভিটি অন দি ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বর্ডার’, ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নং ৬৪০, মে ২০২৩, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
ভূমিকা
রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্স, নজরদারি ও পুনরুদ্ধার এবং সীমিত লক্ষ্যবস্তু আক্রমণে সক্ষম নানা ধরনের পেলোড বহন করার ক্ষমতাবিশিষ্ট ড্রোন সামরিক এবং অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলির জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।(১)(২) ড্রোন বা আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল (ইউএভি) প্রযুক্তির দ্রুত বিবর্তন এবং বিশেষ করে মিনি ও মাইক্রো ড্রোনের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার ফলে দুর্বৃত্ত অ-রাষ্ট্রীয় এবং প্রক্সি শক্তিগুলির মধ্যে দ্রুত তাদের বিস্তার ঘটেছে।(৩) ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ২০১৯ সালে জারি করা ‘ন্যাশনাল কাউন্টার রোগ ড্রোন গাইডলাইনস’-এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা স্থাপনা, আকাশপথে হস্তক্ষেপ, চোরাচালান ও গতিশীল আক্রমণের জন্য নজরদারি এবং পুনঃসংযোগের জন্য ড্রোনের ধ্বংসাত্মক ব্যবহারের কথা তুলে ধরেছে।(৪)
মাদক পাচারের জন্যও ড্রোন একটি পছন্দের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মেক্সিকোয় মাদক পাচারকারীরা মার্কিন সীমান্তে মাদক পরিবহণের জন্য প্রায়শই ড্রোন ব্যবহার করে থাকে।(৫) প্রকৃতপক্ষে, এই কার্টেলগুলি ড্রোনের উপর এতটাই নির্ভরশীল যে, তারা নিজেরাই এখন সেগুলি নির্মাণ করছে।(৬) ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের আবকাইক এবং খুরাইসে সৌদি আরামকো তেল কোম্পানির দু’টি স্থাপনার উপর ড্রোন হামলা বিশ্ব জুড়ে বিপদের ঘণ্টাধ্বনি শুনিয়েছে।(৭) এই হামলায় ১০টির মতো ড্রোন জড়িত, যা সৌদি আরবের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নজরদারি এড়াতে সক্ষম হয়েছিল। এ দিকে ভারতে ২০২১ সালের জুন মাসে লস্কর-ই-তইবার সন্দেহভাজন সদস্যদের জম্মুতে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা প্রথম বারের মতো অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য ড্রোনের ব্যবহারকেই দর্শিয়েছে।(৮) এই দু’টি ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগ চিন্তাভাবনাই সশস্ত্র বা পেলোড বহনকারী ড্রোনের ব্যবহার মোকাবিলার উপায়গুলির উপর মনোনিবেশ করেছে।
আন্তঃসীমান্ত ড্রোন কার্যকলাপের প্রকৃতি
বছরের পর বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কিছু এলাকা মাদকদ্রব্য, নকল ভারতীয় মুদ্রা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ বস্তুর ক্রমবর্ধমান চোরাচালানের জন্য করিডোর হিসেবে কাজ করেছে। এই করিডোরগুলি গত ৩০ বছরে স্থিতিশীল প্রমাণিত হয়েছে(৯) এবং অপরাধী নেটওয়ার্কগুলি ভারতীয় ভূখণ্ডে চোরাচালান করার জন্য একাধিক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ক) সীমান্তবর্তী মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে সীমান্তের বেড়ার উপর দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্যের প্যাকেট নিক্ষেপ করা, যাঁরা আসলে ভূ-সংস্থান এবং স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সুপরিচিত হওয়ার দরুন আদর্শ কুরিয়ারের ভূমিকা পালন করেন; খ) ১০-১২ মিটার দীর্ঘ প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করে বিদ্যুদয়িত বেড়া এড়িয়ে মাদক দ্রব্য (ছোট প্যাকেটে ভরা) সীমান্তের অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া; এবং গ) চাষের যানবাহন এবং যন্ত্রপাতিগুলির ভিতরে ছোট গহ্বর তৈরি করা। কারণ সেগুলিকে কৃষিকাজের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়।
পঞ্জাব, বিশেষ করে ফাজিলকা, ফিরোজপুর, তরন তারন, পাঠানকোট, গুরুদাসপুর এবং অমৃতসরের মতো সীমান্ত পয়েন্ট চোরাচালানমূলক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। এই কার্যকলাপগুলি জম্মু এবং রাজস্থানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই অবৈধ করিডোরগুলিকে টিকিয়ে রাখার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে।(১০) এর মধ্যে রয়েছে হেরোইন উৎপাদনকারী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরান নিয়ে গঠিত তথাকথিত ‘গোল্ডেন ক্রেসেন্ট’ অঞ্চলের সঙ্গে পঞ্জাবের নৈকট্য। ভারতীয় আধিকারিকদের মতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এজেন্সি চোরাচালান সিন্ডিকেটকে মদত দিয়ে আসছে।(১১) চোরাচালানকারীরা ভারতের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে তৈরি মাদকদ্রব্যের মাত্র পাঁচ শতাংশই পাচার করে। তবুও এটি তাদের নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে। কারণ পণ্যটির মূল্য একবার পঞ্জাব হয়ে ভারতে প্রবেশ করলে বহুগুণ বেড়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সংগৃহীত প্রমাণ দর্শায় যে, পাকিস্তানে এক কেজি হেরোইনের মূল্য প্রায় ৬০০০ মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে হয়ে যায় ১২০,৮১১ মার্কিন ডলার এবং সেগুলি দিল্লি বা মুম্বইয়ের মতো শহরে পৌঁছলে তার দাম দাঁড়ায় ৬০৪০৪৩ মার্কিন ডলারে!(১২)
নিরাপত্তা বাহিনী যখন বিদ্যুদয়িত বেড়া, সেন্সর স্থাপন এবং সীমান্তে ফ্লাডলাইট স্থাপন করে মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে তাদের দমন-পীড়ন জোরদার করছে, তখন অপরাধীরা তাদের তালিকায় ইউএভি বা ড্রোন সংযুক্ত করেছে। এই ড্রোন এমন একটি পদ্ধতি, যা বছরের পর বছর ধরে লাতিন আমেরিকার মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট ব্যবহার করে আসছে।(১৩) এই কার্যকর, কম উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন চালকবিহীন ড্রোন অপরাধী নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ সেগুলির শনাক্ত হওয়ার ভয় থাকে না এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ এড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুব সহজেই নিষিদ্ধ প্যাকেজগুলির নিরাপদ সরবরাহ সুনিশ্চিত করে। যাতে গ্রাহক সহজেই সেই প্যাকেজ নিতে পারেন, তাই এই ধরনের কার্যকলাপ বেশির ভাগ রাতেই করা হয়।(১৪)
বিশ্লেষকরা ২০১৮ সালেই মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তের অনুরূপ ধরনে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানভিত্তিক ড্রাগ সরবরাহের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন।(১৫) যাই হোক, পঞ্জাব সরকারের মতে, অস্ত্র ও গোলাবারুদের প্রথম রেকর্ডকৃত ড্রোন ডেলিভারি হয়েছিল ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে।(১৬) তার পর থেকে এই ধরনের ঝুঁকির পরিমাণ কেবল বৃদ্ধিই পেয়েছে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং ওপেন সোর্সের তথ্য অনুযায়ী, শুধু মাত্র ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড্রোন ব্যবহার করে সীমান্ত পেরিয়ে মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনার ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।(১৭) সারণি ১-এ জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউটি) জম্মু-সহ পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর বিএসএফ দ্বারা শনাক্ত করা ড্রোনের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
সারণি ১: ড্রোন শনাক্তকরণ, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত (২০২০-২০২২)
বছর |
২০২০ |
২০২১ |
২০২২ |
জম্মু |
২০ |
৩০ |
২৫ |
পঞ্জাব |
৪৮ |
৬৫ |
২৬৭ |
রাজস্থান |
১০ |
৮ |
২৩ |
গুজরাত |
২ |
২ |
৮ |
মোট |
৮০ |
১০৫ |
৩২৩ |
উত্স: লেখকের নিজস্ব, নানাবিধ উত্স ব্যবহার করে
দ্রষ্টব্য: বিএসএফ এগুলিকে ড্রোনের অপরাধমূলক ব্যবহার হিসাবে নথিভুক্ত করে।
তথ্য অনুসারে, পঞ্জাব ভারতের তিনটি সীমান্ত রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয়। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত ড্রোন কার্যকলাপ পঞ্জাবে প্রায় চার গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০২২ সালে পঞ্জাবে ২৬৭টি ড্রোন শনাক্ত করা হয়েছে৷ এই পরিসংখ্যান ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রতিবেদিত সমস্ত ড্রোন কার্যকলাপের ৮৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে শুধু শনাক্ত করা হয় এবং কোনও প্রকার বাধা দেওয়া হয় না। এ হেন ঝুঁকির মোকাবিলায় সরকারের বরাদ্দ করা আরও বেশি পরিমাণ সম্পদ থেকেও পঞ্জাবে ড্রোনের ক্রমবর্ধমান শনাক্তকরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে নিরাপত্তা বাহিনী আরও সচেতন হয়েছে এবং ড্রোন শনাক্ত করার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী আরও উল্লেখ করেছে যে, পঞ্জাবে পাল্টা ড্রোন প্রযুক্তি এবং সম্পদের বর্ধিত ব্যবহার চোরাচালান সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে ‘বেলুনিং এফেক্ট’-এর কারণে জম্মু ও রাজস্থানের দিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করেছে। গুরুদাসপুর (জম্মু সীমান্তবর্তী) এবং আভোরের (রাজস্থান সীমান্তবর্তী) মতো অঞ্চলে এখন ড্রোন শনাক্তকরণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিত্র ১: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন কার্যকলাপ
সূত্র: লেখকের নিজস্ব
পাকিস্তানে সদর দফতর বহাল রেখে এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য ড্রোন ব্যবহার করছে। এই তথ্য জম্মুতে ২০২১ সালের জুন মাসের হামলার ঘটনাতেও প্রকাশ্যে উঠে আসে, যেখানে জম্মু এয়ার ফোর্স স্টেশনের প্রযুক্তিগত অঞ্চলে দু’টি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস নিক্ষেপ করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।(১৮) ড্রোন এবং সেগুলির যন্ত্রাংশ বাণিজ্যিক ভাবে উপলব্ধ থাকলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পে-লোড বা ভার বহন করার জন্য ড্রোনগুলির যে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দরকার হয়, তা আসলে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য সম্পৃক্ততাকেই দর্শায়।(১৯) পাকিস্তানি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ভারতের প্রতি ঝুঁকির পরিমাণকে বহুগুণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধপ্রবণতার সংমিশ্রণ থেকে মুনাফা তোলায় ব্রতী হয়েছে।(২০)
ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের আইএসআই-এর মদতপুষ্ট চোরাকারবারিরা পাকিস্তান থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে মাদক, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ পাচার করার জন্য চিনের তৈরি ড্রোন(ক) ব্যবহার করছে। বিএসএফ-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, এই চোরাচালানমূলক কার্যকলাপে ব্যবহৃত ড্রোনগুলির যন্ত্রাংশের অধিকাংশই বাণিজ্যিক ভাবে উপলব্ধ এবং সেগুলি এমন ভাবে তৈরি বা সংস্কার করা হয়েছে, যাতে নাশকতা সৃষ্টিকারী নানাবিধ উপাদান বিদ্যমান।(২১) ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, এই ড্রোনগুলির মধ্যে এমন চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রায়শই অনেক ধরনের কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয়।(২২) বিশেষ ভাবে নির্মিত ড্রোনগুলিও এমন কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে অপরাধী সংস্থাগুলি স্থানীয় ভাবে উপলব্ধ উপাদানগুলি থেকে ড্রোনগুলিকে অ্যাসেম্বল বা সমন্বিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবে এ কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, ড্রোনগুলিরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ড্রোনগুলি প্রায়শই প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং ব্যাটারি সংক্রান্ত ব্যর্থতার কারণে ভেঙে পড়ে। তাই তাদের নির্ধারিত কাজ বা মিশন সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ড্রোন অপারেটরদের ড্রোনের পরিসীমা এবং ক্ষমতা সংক্রান্ত গণনায় ভুল করতে দেখেছে, যার ফলে তাদের কাজের ফলাফল খারাপ হয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতিও ড্রোনের উড়ান এবং ব্যাটারির ক্ষমতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, শীতের মরসুমে নিম্ন তাপমাত্রার কারণে ব্যাটারি দ্রুত ক্ষয় হয়, যা ড্রোনের ক্ষমতাকে বিরূপ ভাবে প্রভাবিত করে।
ড্রোনগুলি সাধারণত ৯০০ মেগাহার্টজ এবং ৫.৮ গিগাহার্টজের মধ্যকার ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাঙ্কে কাজ করে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কম্পাঙ্কটি হল ২.৪ গিগাহার্টজ এবং ৫.৮ গিগাহার্টজ। বেশিরভাগ রিমোট চালিত ড্রোন এই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। এই ড্রোনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন (এনএফসি) ক্ষমতাও রয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের দূরবর্তী অঞ্চল থেকে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ড্রোন থেকে ও ড্রোনের মধ্যে তথ্য পাঠানোর কাজটিকে সহজ করে দেয়। এনএফসি আবার ড্রোনকে ছবি তোলা এবং ভিডিও চালানোর মতো নানাবিধ কাজ করতেও সাহায্য করে। এনএফসি এ ছাড়াও সুরক্ষিত প্রমাণীকরণ এবং অনুমোদন প্রদান করার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নিরাপদে ড্রোন ব্যবহার এবং তার তথ্যকে কাজে লাগানোর সুযোগকে সহজতর করে।
ড্রোনগুলি সঠিক ভাবে চালিত হতে এবং স্বয়ংচালিত ভাবে উড়াল নিতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ব্যবহার করে।(খ) বর্ধিত নির্ভুলতা প্রয়োজন এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য কিছু ড্রোন আবার গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম দিয়ে তৈরি হতে পারে, যা প্রায় নির্ভুল তথ্য প্রদানের জন্য একাধিক উপগ্রহ নক্ষত্রমণ্ডলের সঙ্কেতকে সমন্বিত করতে পারে। (সারণি ২-এ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত ড্রোনগুলির বিশদ বিবরণ।)
সারণি ২: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চিহ্নিত ড্রোনের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
ব্যবহৃত কম্পাঙ্ক |
২.৪ গিগাহার্টজ আইএসএম, ৫.৮ গিগাহার্টজ আইএসএম, ৪৩৩ মেগাহার্টজ এবং ৯১৫ মেগাহার্টজ |
কেমন ধরনের নেভিগেশন সিস্টেম বিদ্যমান |
জিপিএস বা বেইদউ নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম |
কোন উচ্চতায় কার্যকরী |
১০০০ থেকে ৪০০০ ফুট উচ্চতার মধ্যে |
সূত্র: লেখকের নিজস্ব
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে অপরাধমূলক এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ড্রোন ব্যবহারের ঝুঁকি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তান তার অভ্যন্তরীণ ড্রোন দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করছে এবং সম্প্রতি চায়না অ্যাকাডেমি অফ এরোস্পেস এরোডাইনামিকস থেকে তারা সিএইচ-৪বি ড্রোন সংগ্রহ করেছে।(২৩) পাকিস্তানের মনোযোগ মূলত সামরিক ব্যবহারের উপর থাকলেও বেসামরিক ড্রোন শিল্পের বিকাশের জন্য দেশটির নানাবিধ প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা যায় না।(২৪)(২৫)
তা ছাড়াও ড্রোনের বর্তমান ব্যবহার সমতল ভূখণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সহনশীলতা এবং পরিসরের ক্ষেত্রে ড্রোনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হলে, পাকিস্তান ড্রোনগুলিকে সমতল ভূখণ্ডের পাশাপাশি পাহাড়ি এবং সামুদ্রিক অঞ্চলেও ব্যবহার করতে পারে। আবার ড্রোনের বাহিনীর ব্যবহারও বদলে দিতে পারে এই সম্পূর্ণ পরিস্থিতি।(২৬) এর মধ্যে লয়টারিং সিস্টেমও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যার ফলে ড্রোনগুলি বেশ অনেকটা সময় অবধি বাতাসে ভেসে থাকতে সক্ষম হবে। দি ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড বা আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ইতিমধ্যেই মাদক চোরাচালানের জন্য ভারতের উপকূলের আশপাশের সামুদ্রিক পথের ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছে।(২৭) বিভিন্ন ভূখণ্ড ও পরিস্থিতিতে অপরাধী এবং সন্ত্রাসবাদী উপাদানগুলির দ্বারা ড্রোনের প্রয়োগের এই সম্প্রসারণটি তাদের সরবরাহে ব্যয়-কার্যকারিতা দ্বারা উল্লেখযোগ্য ভাবে নির্ধারিত হবে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তরফে পাল্টা প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ড্রোনগুলির তত্পরতা, শনাক্তকরণ এড়ানোর দক্ষতা, পাকিস্তানি সংস্থার তরফে মদত এবং অপরাধ-সন্ত্রাসবাদী ঝুঁকির সংমিশ্রণের ফলে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে ড্রোন কার্যকলাপ ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সম্মুখে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই ড্রোনগুলি শনাক্ত করা এবং সেগুলিকে আটকানোর জন্য এমন কৌশল নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা, নজরদারি বাড়ানো এবং আন্তঃ-এজেন্সি সহযোগিতার সম্প্রসারণ।
সীমান্তে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বিভিন্ন কাউন্টার-ইউএভি ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। এই ব্যবস্থা আসলে ছোট হাইব্রিড ইউএভি, মাইক্রো ইউএভি/মাল্টিরোটার এবং ন্যানো ইউএভি-সহ বিভিন্ন ধরনের ড্রোন শনাক্ত করা ও চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলির কাজ করার ক্ষমতাকে বিলোপ করে দিতে পারে। একটি সাধারণ কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম নিম্নলিখিত উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত:
- ড্রোনের শনাক্তকরণ এবং ট্র্যাকিং রাডার
- ড্রোনের লক্ষ্যবস্তুর শনাক্তকরণ এবং নজরদারি চালানোর জন্য লেজার ক্ষমতাবিশিষ্ট এমন ক্যামেরার ব্যবহার, যা দিন ও রাতে কাজ করতে সক্ষম
- সংযোগ শৃঙ্খলকে শনাক্ত করার ক্ষমতা এবং জ্যামিং সিস্টেম (সফট কিল বা কৌশলী বাধা)
- জিপিএস জ্যামিং/স্পুফিং সিস্টেম (সফট কিল বা কৌশলী বাধা)
- লেজারচালিত শক্তি অস্ত্র ব্যবস্থা (হার্ড কিল বা প্রত্যক্ষ বাধা)
ড্রোনগুলিকে শনাক্ত করা এবং সেগুলির উড়ালকে ব্যাহত করার জন্য বিএসএফ এমন শনাক্তকারী ব্যবস্থা (রাডার, ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর ব্যবহার) ও জ্যামিং ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, যা ড্রোন এবং সেগুলির অপারেটর বা নিয়ন্ত্রকদের মধ্যকার যোগাযোগকে ব্যাহত করে। ড্রোনের অডিও সিগনেচার বা কণ্ঠস্বর শনাক্ত করা কঠিন হলেও সরেজমিনে উঠে আসা নানাবিধ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, নিরাপত্তা কর্মীরা শনাক্তকরণের জন্য এই অডিও সিগনেচারের উপরই নির্ভর করে।(২৮) সীমান্তের প্রায় ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় বিএসএফ দিনরাত অবিরাম টহলদারি চালাচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলের উপর নজরদারি চালানোর জন্য এবং ড্রোন থেকে ফেলা অবৈধ চালান সংক্রান্ত কোনও কনসাইনমেন্ট বা পণ্যের প্যাকেট যাতে স্থানীয় মানুষজনের হাতে না পড়ে, সেই কারণেই এই ‘ডেপথ এরিয়া প্যাট্রোলিং’ বা ‘গভীর এলাকার টহল’ দেওয়া হয়।
বিএসএফ স্থানীয় পুলিশ সংস্থাগুলির সঙ্গেও কাজ করছে। পঞ্জাবে রাজ্য পুলিশ টহল দেওয়ার জন্য প্রায় ৩০০ জন কর্মীকে মোতায়েন করেছে(২৯), এবং সন্দেহজনক গতিবিধি নিরীক্ষণের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী চেক পোস্ট বসিয়েছে।(৩০) ড্রোন দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং ঝুঁকিময় ড্রোনের কার্যকলাপ সংক্রান্ত রিপোর্টিংকে উৎসাহ জোগাতে পুলিশ কর্মীরা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমান্তে হ্যান্ডহেল্ড বা হাতে ধরা যায় এমন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) জ্যামার সিস্টেম মোতায়েন করেছে, যাতে ড্রোনের উড়ালকে বাধা দেওয়া যায়। একটি স্ট্যাটিক বা স্থির, মোবাইল বা ভ্রাম্যমান অথবা হাতে ধরার যোগ্য যন্ত্র হিসেবে আরএফ জ্যামার ড্রোনের প্রতি প্রচুর পরিমাণে আরএফ শক্তি প্রেরণ করে এবং যে ড্রোনটিকে চালনা করছে সেই ব্যক্তির সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। এর ফলে উড়তে থাকা ড্রোনটি হয় তার বর্তমান অবস্থানে নিয়ন্ত্রিত অবতরণ করে কিংবা ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোম লোকেশনে (অর্থাৎ যেখান থেকে ড্রোনটি চালু করা হয়েছিল) ফিরে যায় বা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মাটিতে পড়ে যায় অথবা এলোমেলো অনিয়ন্ত্রিত কোনও অবস্থানের দিকে ধাবিত হয়।(৩১)
এ ছাড়াও, বিএসএফ ড্রোনকে আটক করতে প্রশিক্ষিত কর্মী এবং জাল ব্যবহার করার মতো শারীরিক বাধা সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলির বিকাশ ও মোতায়েন করছে। এমনকি বিএসএফ অনুপ্রবেশকারী ড্রোনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য প্রজেক্টাইলের বিরুদ্ধে নির্দেশিত শক্তি ব্যবহার করে বা প্রজেক্টাইল চালু করার নানাবিধ উপায়ের পরীক্ষা করেছে। তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সেগুলির কার্যকারিতা এখনও সুনিশ্চিত করা যায়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিএসএফ-এর তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল বা মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং উল্লেখ করে বলেন যে, দৃষ্টিগোচরে আসা সকল ড্রোনের মধ্যে বিএসএফ বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্তে ২০২১ সালে মাত্র একটি ড্রোনকে গুলি করে নামালেও ২০২২ সালে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬-তে।(৩২)
যে ড্রোনগুলিকে গুলি করে নামিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেগুলিকে বিএসএফ দ্বারা ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে স্থাপিত নয়াদিল্লির একটি ফরেনসিক পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।(৩৩) ফরেনসিক পরীক্ষাগারটি উদ্ধারকৃত ড্রোনগুলির যান্ত্রিক এবং নেভিগেশনাল উপাদানগুলির উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে সেগুলির ক্ষমতা এবং উড়ালপথ নির্ধারণের বিশ্লেষণে বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।(৩৪) এর পাশাপাশি, বিএসএফ ড্রোন কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে তার কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ওয়েস্টার্ন কমান্ডের অধীনে একটি নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করেছে। প্রশিক্ষণ মডিউলটিতে কর্মীদের ‘ম্যানুয়ালি বা অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থার মাধ্যমে এবং সমস্যাজনক ড্রোনগুলিকে নির্মূল করার ব্যবস্থার মাধ্যমে’ ড্রোন শনাক্ত করার নির্দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷(৩৫)
ভারত সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ মিশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএসএফ দেশীয় কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তি বিকাশের জন্য ভারতীয় স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বিএসএফ বাহিনী ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের (এমইআইটিওয়াই) স্টার্টআপ কেন্দ্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন করে সীমান্তের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান প্রদানের জন্য নতুন প্রযুক্তির অন্বেষণ এবং সোর্সিং ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের জন্য বিএইচইউএমআই চ্যালেঞ্জ (বিএসএফ হাই-টেক আন্ডারটেকিং ফর ম্যাক্সিমাইজিং ইনোভেশন) চালু করেছে।(৩৬) এই উদ্যোগের একটি উল্লেখ্য ফলাফল হল দেশীয় কাউন্টার-ড্রোন বন্দুক সমাধানের বিকাশ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) বম্বের সহায়তায় পুনেভিত্তিক একটি স্টার্টআপ গুরুত্ব সিস্টেমস দ্বারা তৈরি করা এই ধরনের সরঞ্জামগুলি ২০২২ সালের জুন মাসে বিএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।(৩৭)
বিএসএফ দেশীয় সমাধান বিকাশের জন্য ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এবং ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মতো সংস্থাগুলির সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) কাউন্টার-ড্রোন শনাক্তকরণ এবং নিরপেক্ষকরণ প্রযুক্তি গবেষণা ও বিকাশের জন্য স্কাইলার্ক ল্যাবস ইন্ডিয়ার মতো স্টার্টআপগুলির সঙ্গে কাজ করেছে।(৩৮) এই এআইভিত্তিক ব্যবস্থাগুলি ঝুঁকিসম্পন্ন ড্রোন ও মেশিন লার্নিং (এমএল) শনাক্ত করার কাজে রাডার ও আলোর পাশাপাশি রেঞ্জিংয়ের মতো সেন্সর ও ক্যামেরা ব্যবহার করে। এটি অনুমোদিত ড্রোনগুলিকে অননুমোদিত ড্রোনগুলি থেকে পৃথক করা ক্ষমতা রাখে এবং জ্যামিং, জিপিএস ব্যাঘাত বা ভৌত পদক্ষেপ ব্যবহার করে ঝুঁকি আটকাতে পারে। এটি রিয়েল-টাইম সতর্কতা প্রদান করার পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও সংযুক্ত করে।(৩৯) এর মধ্যে কয়েকটির পরীক্ষা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নয়াদিল্লির লালকেল্লায় ২০২২ সালে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের সময় কর্তৃপক্ষ ডিআরডিও-তে তৈরি অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করেছিল। সেই ব্যবস্থার পরিসীমা ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বলে দাবি করা হয়।(৪০)
এই ব্যবস্থাগুলি বাস্তবায়িত হলেও নাশকতাকারী উপাদানগুলিও এ হেন পরিস্থিতির সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যে সব নিরাপত্তা সংস্থা গভীর এলাকায় টহল দেয় এবং ড্রোন বিরোধী সরঞ্জাম মোতায়েন করে, সেই সব সংস্থার নজরদারি এড়াতে মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি অন্যান্য ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকায় নিজেদের মনোযোগ স্থানান্তরিত করেছে।
এ হেন প্রচেষ্টা অবশ্য ভারতের জন্য নতুন কিছু নয়। বিশ্বের অন্যান্য অংশে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির দ্বারা ড্রোন ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোল গত কয়েক বছর ধরে ড্রোনের উপর একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সম্মেলনের আয়োজন করার পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য ড্রোন ব্যবহার করার মাধ্যমে সৃষ্ট হুমকিগুলির মোকাবিলা করতে সাহায্য করে এবং আইন প্রয়োগের জন্য ড্রোন ব্যবহার করার বিষয়ে নানাবিধ পাঠও প্রদান করে।(৪১) ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্টারপোল নরওয়েতে কাউন্টার-ইউএএস সিস্টেমের জন্য তাদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে একটি পরীক্ষামূলক অনুশীলন পরিচালনা করে।(৪২) ২০২২ সালে সংঘটিত ড্রোন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের সম্মেলন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা বা সিস্টেম ক্রয় করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং সেই কারণে কাউন্টার-ইউএএস সিস্টেমের ক্ষমতাগুলিকে চিত্রিত করার জন্য আরও শক্তিশালী শিল্পগত গুণমানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে।(৪৩) সংস্থাটি অপরাধমূলক তদন্তের উদ্দেশ্যে উদ্ধারকৃত ড্রোনগুলির ফরেনসিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার উপরেও জোর দিয়েছে।(৪৪)
ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল’স কাউন্টার-টেররিজম কমিটি (ইউএনসিটিসি) নতুন এবং উদীয়মান প্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান হুমকির উপর বৃহত্তর মনোনিবেশের অংশ হিসাবে ড্রোন প্রযুক্তির অপব্যবহারের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। ইউএনসিটিসি বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি দ্বারা উদীয়মান প্রযুক্তির অপব্যবহার মোকাবিলায় সদস্য রাষ্ট্রগুলি থেকে সর্বোত্তম অনুশীলন সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে।(৪৫) ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সংঘটিত দিল্লি ডিক্লেয়ারেশন ড্রোন দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অ-বান্ধব পরিচালক নীতিগুলির একটি সেট তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে।(৪৬)
ড্রোনের বিরুদ্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা
সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে অবশ্যই পূর্বাভাস দিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে এবং অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য ড্রোন ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট হুমকির চেয়ে এগিয়ে থাকার উদ্দেশ্যে তাদের কৌশলগুলিকে মানিয়ে নিতে হবে। আন্তঃসীমান্ত ড্রোনের বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করা কঠিন হলেও ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সমস্যাজনক ড্রোন থেকে দেশের সীমান্তকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
১. সমন্বিত সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা: সমস্যাজনক ড্রোনের কার্যকলাপ মোকাবিলা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তার সামগ্রিক সশক্তকরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে সীমান্ত নিরাপত্তাকে শুধুমাত্র একটি ‘রক্ষী ও সীমানা’ জাতীয় মানসিকতা থেকে বেরিয়ে পদ্ধতিটির এমন পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যা প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্থান এবং দক্ষ কর্মীদের নিয়ে একটি সমন্বিত পদ্ধতি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য নিবেদিত ড্রোন ব্যাটালিয়ন বাড়ানোর ধারণাটি গ্রহণ করতে পারে, যেটিকে সন্দেহজনক ড্রোনের কার্যকলাপ শনাক্ত ও চিহ্নিত করার মাধ্যমে সীমান্ত নজরদারির মতো বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের নজরদারিকে সর্বক্ষণের হতে পারে। কারণ ড্রোনগুলি দিন এবং রাতে নানা সময়ে কার্যকর হতে পারে। মূলত রাতে এ হেন কাজ বেশি হওয়ায় সর্বক্ষণের নজরদারি বিশেষ ভাবে কাজে আসবে। আকাশসীমা বা জিওফেন্সিংকে সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে অনৈতিক কাজে যুক্ত ড্রোনের ব্যবহারকে সীমিত করা সম্ভব হবে। যাই হোক সীমান্তের নানা ক্ষেত্রে এ হেন ড্রোনগুলিকে নিকেশ করার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
২. প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ: সীমান্ত সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং যুদ্ধের পরিবর্তনের প্রকৃতির মধ্যে আধুনিক গ্যাজেটগুলির সর্বোত্তম ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পাঠ্যক্রমে সব ধরনের প্রোগ্রাম এবং কোর্সের একটি বাধ্যতামূলক উপাদান হিসাবে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলি একে অপরের কাছ থেকে সর্বোত্তম অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করতে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টিকে কাজে লাগাতে পারে।
৩. কাউন্টার-ড্রোন দক্ষতা বিকাশ করা: বিএসএফ সমস্যাজনক ড্রোনগুলির বিরুদ্ধে আরএফ জ্যামিং করায় অপরাধী সিন্ডিকেটগুলি স্বয়ংচালিত ড্রোনগুলির বৈশিষ্ট্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এই ড্রোনগুলিকে জ্যাম এবং নিষ্ক্রিয় করার জন্য ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) দক্ষতা স্থাপনের দিকটিও খতিয়ে দেখতে পারে। বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে, যেখানে রুশ সামরিক বাহিনী ছোট ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলির বিরুদ্ধে পথ পরিচালনা এবং সংযোগের বিষয়টিকে বাধা দিয়ে নিজেদের ইডব্লিউ ক্ষমতাকে সুচারু ভাবে কাজে লাগিয়েছে।(৪৭) অত্যাবশ্যক স্থাপনাগুলিকে স্বতন্ত্র বা ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোনবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভারতকে অবশ্যই এই ধরনের ইডব্লিউ দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে।
৪. ভারতে পরিচালিত ড্রোনগুলির একটি ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডারের প্রয়োজনীয়তা: ভারতে অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলি দ্বারা ব্যবহৃত বেশির ভাগ ড্রোনই চিনে তৈরি এবং সেগুলি বাণিজ্যিক ভাবে উপলব্ধ ও পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয়। তাই ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানি করা বা বিক্রি করা মাইক্রো এবং ছোট আকারের ড্রোনগুলি সম্পর্কে ভারতের একটি নির্দিষ্ট ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা জরুরি। যেমন প্রতিটি আমদানি করা মোবাইল ফোনের জন্য নির্ধারিত আইএমইআই নম্বর (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) থাকে, ঠিক সে ভাবেই প্রতিটি ড্রোনে এমন কিছু নম্বর বা সংখ্যা বরাদ্দ করা যেতে পারে, যা আমদানি করা বা অভ্যন্তরীণ ভাবে বিক্রি করার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হবে। এই ধরনের ব্যবস্থা নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে এই ধরনের ড্রোনগুলিকে চিহ্নিত করতে এবং অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহারে ইচ্ছুক নাশকতাকারী শক্তিগুলিকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে৷
৫. আরঅ্যান্ডডি-এর জন্য একটি মিশ্র পরিবেশ সৃষ্টি করা: এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে আগে আলোচিত বিএইচইউএমআই চ্যালেঞ্জের আংশিক সাফল্যের কথা মাথায় রেখে সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলির জন্য এই একই ধরনের প্রক্রিয়া ও সমর্থনকে প্রসারিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলা উচিত। দেশীয় কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করার জন্য একটি নিবেদিত মিশ্র মঞ্চ তৈরি করে তেমনটা করা সম্ভব হতে পারে। উপযুক্ত আর্থিক সহায়তার অভাব উদ্ভাবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, এমনটা কাম্য নয়।
৬. আন্তঃ-এজেন্সি সমন্বয়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ: সমস্যাজনক ড্রোনের কার্যকলাপ বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের স্থলসীমান্তে কেন্দ্রীভূত। যাই হোক, মাদক চোরাচালান নেটওয়ার্ক এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিবেচনা করে এ কথাই বোঝা যায় যে, সম্ভবত এ হেন কার্যকলাপ অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রসীমা পর্যন্ত প্রসারিত হবে। সমস্যাজনক ড্রোনের কার্যকলাপের একটি বিস্তৃত চিত্র পেতে এবং তথ্য পাওয়ার পর চটজলদি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার ফর কাউন্টার-টেররিজম কোঅর্ডিনেশন, নারকো কো-অর্ডিনেশন সেন্টার ফর ড্রাগ স্মাগলিং এবং ফেক ইন্ডিয়ান কারেন্সি নোটস কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের মতো আন্তঃ-এজেন্সি সমন্বয়কে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলা উচিত। এই আন্তঃ-এজেন্সি সংস্থাটিকে অবশ্যই কোস্ট গার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৭. ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মিশনকে উৎসাহ জোগানোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আন্তর্জাতিক অংশীদাররা ড্রোন-প্রতিরোধী প্রযুক্তির বিকাশে ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রচেষ্টাকে সমর্থন জোগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রথমত, এই দেশগুলির উন্নয়নশীল ড্রোন শিল্প ভারতীয় ড্রোন শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে এবং ড্রোন কাউন্টার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে পারে। এটি নতুন এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে, যা ভারতকে কার্যকর ভাবে ড্রোন সংক্রান্ত হুমকি মোকাবিলায় সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, এই দেশগুলি ভারতের সঙ্গে ড্রোন কাউন্টার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা এবং জ্ঞান ভাগ করে নিতে পারে। এটি ভারতীয় সংস্থা ও গবেষকদের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে এবং তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় সেই শ্রেষ্ঠ অনুশীলনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে সাহায্য করবে। তৃতীয়ত, এই দেশগুলি ভারতকে কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য একটি মঞ্চ সরবরাহ করতে পারে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাব্য সুযোগ প্রদান করতে পারে।
উপসংহার
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোনের ধ্বংসাত্মক ব্যবহার অসম যুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তির নিরিখে বর্ধিত ব্যবহারের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রবণতাকেই দর্শায়। বিএসএফ-সহ নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সক্রিয় ভাবে এ হেন হুমকি মোকাবিলায় নানাবিধ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করছে। ড্রোন প্রযুক্তি যেহেতু ক্রমশ সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হয়ে উঠছে, তাই হুমকির পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধিই পাবে, এ কথা সহজেই অনুমেয়। তাই ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে অতিরিক্ত পাল্টা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই হুমকির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভারতকে অবশ্যই অন্য সমমনস্ক অংশীদারদের কাছ থেকে নীতিগত প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এই কাউন্টার-ড্রোন দক্ষতার বিকাশ ভারতের জাতীয় ড্রোন শিল্প গড়ে তোলার প্রচেষ্টার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়ে সমান্তরাল বরাবর এগিয়ে যাবে।
সমীর পাটিল অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, মুম্বইয়ের সিনিয়র ফেলো।
গবেষক রাজ অরোরা আইআইটি দিল্লির অধ্যাপক (ভিজিটিং) এবং প্রায় তিন দশক ব্যাপী তিনি ভারত ও দেশের সীমানার বাইরে নানাবিধ অঞ্চল সংক্রান্ত সীমান্ত নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, অভ্যুত্থান বিরোধিতা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
পাদটিকা
[ক] এগুলি হয় হেক্সাকপ্টার (ছয়টি রোটার-সহ ইউএভি) বা কোয়াডকপ্টার (চারটি রোটার-সহ ইউএভি)।
[খ] জিপিএস হল স্যাটেলাইটভিত্তিক এমন একটি নেভিগেশন সিস্টেম যা ব্যবহারকারীকে অবস্থান ও সময়ের তথ্য প্রদান করে তাদের অবস্থান, বেগ এবং দিক নির্ণয় করতে সক্ষম করে। এই ব্যবস্থাটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী ২৪টি স্যাটেলাইটপুঞ্জ নিয়ে গঠিত এবং ড্রোন-সহ বিভিন্ন ডিভাইস দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
১) রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন এবং রাহুল কৃষ্ণ, ‘ড্রোনস: গাইডলাইন্স, রেগুলেশনস, অ্যান্ড পলিসি গ্যাপস ইন ইন্ডিয়া’, ওআরএফ অকেশনাল পেপার নং ১৪৫, মার্চ ২০১৮, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
২) অন্তরা ভাটস, ‘ফাস্ট-ট্র্যাকিং দ্য ফ্লাইট অফ ইন্ডিয়া’জ ড্রোন ইন্ডাস্ট্রি’, ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নং ৫৬৫, জুলাই ২০২২, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
৩) জঁ পল ইয়াকুব, হাসান নুরা, ওলা সলমন এবং আলি চেহাব, ‘সিকিউরিটি অ্যানালিসিস অব ড্রোনস সিস্টেমস: অ্যাটাকস, মিলিটেশনস অ্যান্ড রেকমেন্ডেশনস’, ইন্টারনেট অব থিংস ১১ (২০২০): ১-৩৯
৪) মিনিস্ট্রি অব সিভিল এভিয়েশন, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, ‘ন্যাশনাল কাউন্টার রোগ ড্রোন গাইডলাইনস’, ২০১৯
৫) জিনা হারকিন্স, ‘ইললিসিট ড্রোন ফ্লাইটস সার্জ অ্যালং ইউএস-মেক্সিকো বর্ডার অ্যাজ স্মাগলারস হান্ট ফর সফট স্পটস’, দি ওয়াশিংটন পোস্ট, জুন ২৪, ২০১৮
৬) ব্রেন্ডা ফিয়েগেল, ‘নারকো-ড্রোনস: আ নিউ ওয়ে টু ট্রান্সপোর্ট ড্রাগস’, স্মল ওয়ার্স জার্নাল, মে ৭, ২০১৭
৭) ‘হুতি ড্রোন অ্যাটাকস অন টু সৌদি আরামকো অয়েল ফেসিলিটিস স্পার্ক ফায়ারস’, আল জাজিরা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
৮) নীরজ চৌহান, ‘ইউজ অব ড্রোনস বাই টেররিস্টস পোজেস চ্যালেঞ্জেস: বিএসএফ চিফ’, দ্য হিন্দুস্থান টাইমস, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
৯) সমীর পাটিল, ‘পঞ্জাব’স আনশেকেবল ড্রাগ স্মাগলিং নেটওয়ার্কস’, গেটওয়ে হাউস, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
১০) পাটিল, ‘পঞ্জাব’স আনশেকেবল ড্রাগ স্মাগলিং নেটওয়ার্কস’
১১) কে সি ভার্মা, ‘ড্রাগস: দি ইনসিডিয়াস এনিমি’, অনন্ত আসপেন সেন্টার পলিসি ব্রিফ ০১
১২) বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত লেখকদের নিজস্ব তথ্য
১৩) পাটিল, ‘পঞ্জাব’স আনশেকেবল ড্রাগ স্মাগলিং নেটওয়ার্কস’
১৪) বিজয় মোহন, ‘ড্রোনস অ্যাক্টিভিটি অ্যালং ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার ইন পঞ্জাব ইনক্রিসড নিয়ারলি ফোর টাইমস ওভার লাস্ট ইয়ার, রিভিলস বিএসএফ ডেটা’, দ্য ট্রিবিউন, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
১৫) আর কে অরোরা এবং বিনয় কউরা, ‘টাইম টু ইমপ্লিমেন্ট ওমনিডিরেকশনাল বর্ডার সিকিউরিটি’, দি ইকোনমিক টাইমস, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
১৬) বিজয়েতা সিং, ‘১৩৩ ড্রোনস সাইটেড অ্যালং পাক বর্ডার ইন টু ইয়ার্স, পঞ্জাব টেলস হাউস প্যানেল’, দ্য হিন্দু, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
১৭) ‘ড্রোনস ফ্রম অ্যাক্রস বর্ডার মোর দ্যান ডাবলড ইন দিস ইয়ার: বিএসএফ ডিজি’, দ্য হিন্দুস্থান টাইমস, নভেম্বর ১৪, ২০২২
১৮) চৌহান, ‘ইউজ অব ড্রোনস বাই টেররিস্টস পোজেস চ্যালেঞ্জেস: বিএসএফ চিফ’
১৯) বিষ্ণু সোম, ‘ড্রোনস নট মেড অন রোড’: টপ আর্মি অফিসার স্ল্যামস পাক অন জম্মু অ্যাটাক’, এনডিটিভি, জুন ৩০, ২০২১
২০) আর কে অরোরা এবং বিনয় কউরা, ‘টাইম টু ইমপ্লিমেন্ট ওমনিডিরেকশনাল বর্ডার সিকিউরিটি’, দি ইকোনমিক টাইমস, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
২১) যুদ্ধবীর রানা, ‘পাকিস্তান সেন্ডস হাই-এন্ড ড্রোন টু এয়ারড্রপ ড্রাগস ইন পঞ্জাব ড্রোনস; ইট ইজ কেপেবল অব স্পাইয়িং টু’, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
২২) যুদ্ধবীর রানা, ‘পাকিস্তান স্মাগলারস ইউজিং অ্যাসেম্বলড ড্রোনস টু কাট লসেস, ক্লেমস বিএসএফ’, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডিসেম্বর ১, ২০২২
২৩) গ্যাব্রিয়াল ডোমিনগেজ, ‘পাকিস্তান রিসিভস ফাইভ সিএইচ-৪ ইউভিজ ফ্রম চায়না’, জেনস, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
২৪) ওমর কুরেশি, ইয়াসরা সালিম এবং নাবিল তাহিরা, ‘পাকিস্তান’স সাইলেন্ট ড্রোন রেভোলিউশন’, দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, নভেম্বর ২৮, ২০২১
২৫) গজালা ইয়াসমিন জলিল, ‘পাকিস্তান’স শাহপুর-টু ড্রোন: আ স্টেপ টুওয়ার্ডস ইনডিজেনাইজেশন’, ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ, ইস্যু ব্রিফ, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
২৬) জাকারি ক্যালেনবর্ন, ‘মিট দ্য ফিউচার ওয়েপন অব মাস ডেস্ট্রাকশন, দ্য ড্রোন সোয়ার্ম’, বুলেটিন অব দি অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস, এপ্রিল ৫, ২০২১
২৭) ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড, ‘রিপোর্ট ২০২২’, মার্চ ৯, ২০২৩
২৮) মোহন, ‘ড্রোনস অ্যাক্টিভিটি অ্যালং ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার ইন পঞ্জাব ইনক্রিসড নিয়ারলি ফোর টাইমস ওভার লাস্ট ইয়ার, রিভিলস বিএসএফ ডেটা’
২৯) ভারতী জৈন, ‘বিএসএফ ট্রাইজ টু ট্র্যাক ডাউনড ড্রোনস’ ওরিজিনস’, দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডিসেম্বর ১, ২০২২
৩০) পি কে জয়স্বর, ‘ড্রোন সর্টিজ টু পুশ ড্রাগস, আর্মস ইনটু পঞ্জাব আ চ্যালেঞ্জ ফর বিএসএফ, স্টেট পুলিশ’, দ্য ট্রিবিউন, জানুয়ারি ৩, ২০২৩
৩১) হরপ্রীত বাজওয়া, ‘বিএসএফ টু ডিপ্লয় অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম অ্যালং পাকিস্তান বর্ডার’, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
৩৩) ‘১৬ ড্রোনস শট ডাউন অ্যালং পাকিস্তান বর্ডার ইন ২০২২: বিএসএফ’, দ্য হিন্দু, নভেম্বর ৩০, ২০২২
৩৩) ‘ড্রোনস ফ্রম অ্যাক্রস বর্ডার মোর দ্যান ডাবলড ইন দিস ইয়ার: বিএসএফ ডিজি’
৩৪) মোহন, ‘ড্রোনস অ্যাক্টিভিটি অ্যালং ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার ইন পঞ্জাব ইনক্রিসড নিয়ারলি ফোর টাইমস ওভার লাস্ট ইয়ার, রিভিলস বিএসএফ ডেটা’
৩৫) মোহন, ‘ড্রোনস অ্যাক্টিভিটি অ্যালং ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার ইন পঞ্জাব ইনক্রিসড নিয়ারলি ফোর টাইমস ওভার লাস্ট ইয়ার, রিভিলস বিএসএফ ডেটা’
৩৬) ‘ভূমি – বিএসএফ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ’
৩৭) এমইআইটিওয়াই স্টার্টআপ হাব (@এমএসএইচ_এমইআইটিওয়াই), ‘#সাকসেসস্টোরি উই আর ডিলাইটেড টু অ্যানাউন্স @গুরুত্ব অ্যাপ উইনার অফ ‘অ্যান্টি-ড্রোন টেকনোলজি’ আন্ডার দ্য ভূমি চ্যালেঞ্জ অর্গানাইজড বাই @এমএসএইচ_এমইআইটিওয়াই ইন কোল্যাবরেশন উইথ দ্য @বিএসএফ_ইন্ডিয়ায় @জিওআই_এমইআইটিওয়াই @অশ্বিনীবৈষ্ণব @বাজীব_জিওআই’, টুইটার টুইট, অক্টোবর ২৫, ২০২২
৩৮) জসপ্রীত কউর, ‘আইজ ইন দ্য স্কাই: ২৫ ইন্ডিয়ান ড্রোন স্টার্টআপস লুকিং ফর আ মেজর পাই’, আইএসসি৪২, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
৩৯) চৌহান, ‘ইউজ অব ড্রোনস বাই টেররিস্টস পোজেস চ্যালেঞ্জেস: বিএসএফ চিফ’
৪০) ‘অ্যাহেড অফ আই-ডে, ডিআরডিও ডিপ্লয়স ইটস কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম নিয়ার দিল্লি’স রেড ফোর্ট এরিয়া’, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, অগস্ট ১৪, ২০২২
৪১) ইন্টারপোল, ‘ইন্টারপোল কনভেনস গ্লোবাল সামিট অন দি ইউজ অব ড্রোনস’, জুন ২৪, ২০২২
৪২) ইন্টারপোল, ‘ইন্টারপোল ক্যারিজ আউট ফুল-স্কেল ড্রোন কাউন্টারমেজার এক্সারসাইজ’, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
৪৩) মেরি-লউ স্মালডারস, ‘থ্রি টেকওয়ে ফ্রম আইডিইএস: কাউন্টার-ইউএএস অন দ্য রাইজ অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব অ্যান্ড মোর’, ডেড্রন, জুন ২৯, ২০২২
৪৪) ইন্টারপোল, ‘ইন্টারপোল কনভেনস গ্লোবাল সামিট অন দি ইউজ অব ড্রোনস’
৪৫) ইউনাইটেড নেশনস অফিস অব কাউন্টার-টেররিজম, ‘প্রোটেক্টিং ভালনারেবল টার্গেটস ফ্রম টেররিস্ট অ্যাটাকস ইনভলভিং আনম্যানড এয়ারক্র্যাফট সিস্টেমস (ইউএএস)’, ২০২২
৪৬) ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল কাউন্টার-টেররিজম কমিটি, ‘দিল্লি ডিক্লেয়ারেশন অন কাউন্টারইং দি ইউজ অব নিউ ইমার্জিং টেকনোলজিস ফর টেররিস্ট পারপাসেস’, অক্টোবর ২০২২
৪৭) ডেভিড অ্যাক্স, ‘রাশিয়া’জ ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার ট্রুপস নকড আউট ৯০ পার্সেন্ট অফ ইউক্রেন’স ড্রোনস’, ফোর্বস, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.