Author : Sohini Bose

Published on Sep 22, 2023 Updated 0 Hours ago

উপসাগরীয় অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান কর্মকাণ্ডের আলোকে ভারতকে তার জলের নিচের নৌ–সক্ষমতা বিকাশ করতে হবে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে হবে, এবং তার জলতলের পরিসর সম্পর্কে সচেতনতা উন্নত করতে হবে

বঙ্গোপসাগরে জলের নিচে চিনের কার্যক্রম: ভারতের অবশ্য বিবেচ্য

এটি ‘‌‌দ্য চায়না ক্রনিকলস’‌ সিরিজের ১৪৯তম নিবন্ধ


গত কয়েক বছরে চিন বঙ্গোপসাগরের বেশ কয়েকটি উপকূলীয় দেশের জলের নিচে নৌ–সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সম্প্রতি এটি চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি বিএনএস শেখ হাসিনা নির্মাণে সহায়তা করেছে, যার উদ্বোধন হয়েছিল এই বছরের মার্চ মাসে। এর একইসঙ্গে ছয়টি সাবমেরিন ও আটটি যুদ্ধজাহাজ ডকে রাখার ক্ষমতা আছে। এটি বাংলাদেশের ‘‌ফোর্সেস গোল ২০৩০’‌–এর অংশ হিসাবে দেশের প্রতিরক্ষা সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে থাকবে ঢাকার দুটি সাবমেরিন বিএনএস নবযাত্রা ও বিএনএস জয়যাত্রা, যেগুলি ছয় বছর আগে ২০১৭ সালে বেজিং থেকে কেনা। ২০২১ সালে চিন অতীতে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (ব্ল্যান) দ্বারা ব্যবহৃত একটি টাইপ ০৩৫ বা মিং ক্লাস ডিজেল–ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন মায়ানমারকে দিয়েছিল।

বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পরে চিনের উপর অত্যধিক নির্ভরতার কারণে তার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রভাব নিয়ে তাই সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্বস্তিও চুক্তিটি ছেঁটে নেওয়ার কারণ হতে পারে।

তাইল্যান্ড ২০১৭ সালে বেজিং থেকে দুটির মূল্যে তিনটি সাবমেরিন কিনতে সম্মত হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাই কর্মীদের জন্য একটি বর্ধিত মানের গ্যারান্টি, যোগাযোগ, যুদ্ধ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। যাই হোক, পরে বরাতটি একটি সাবমেরিনে নামিয়ে আনা হয়েছিল, কারণ তাই সরকার তাই অর্থনীতিতে অতিমারির ক্ষতিকারক প্রভাবের মুখে অত্যধিক প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য বিরোধী দল ও জনগণের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পরে চিনের উপর অত্যধিক নির্ভরতার কারণে তার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রভাব নিয়ে তাই সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্বস্তিও চুক্তিটি ছেঁটে নেওয়ার কারণ হতে পারে। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে জার্মানি চিনে তার প্রতিরক্ষা রপ্তানি সীমিত করেছে, এবং সাবমেরিনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রপালশন সিস্টেম সরবরাহে নিযুক্ত একটি জার্মান কোম্পানি তার অক্ষমতার কথা বলে দিয়েছে। সেই কারণে এখন একটি সাবমেরিনের বরাতটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাই বিরোধী দল প্রস্তাব করেছে যে, চুক্তিটি বাতিল করা দেশের সর্বোত্তম স্বার্থের উপযোগী হবে। প্রকৃতপক্ষে, উপসাগরীয় উপকূলের দেশগুলির সঙ্গে এই সাবমেরিন চুক্তিগুলি এই জলসীমায় বেজিংয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক জল্পনার জন্ম দিয়েছে;‌ বিশেষ করে যেহেতু ভারত, যে এই অঞ্চলকে তার ‘‌আগ্রহের প্রাথমিক ক্ষেত্র’‌গুলির অন্যতম’ বলে মনে করে, এই উপসাগরকে আরও ভালভাবে সুরক্ষিত করার জন্য তার পূর্ব নৌ–কমান্ডের সাবমেরিন সক্ষমতা বিকাশের চেষ্টা করছে।

উপসাগরে চিনের আগ্রহ

চিন–ভারত প্রতিযোগিতা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত পুনরুত্থানের একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য, কারণ ভারত এই অঞ্চলে চিনের গভীরতর পদচিহ্নের মুখে একটি আবাসিক শক্তি হিসাবে তার বিশিষ্টতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। শক্তির অনিশ্চয়তায় ভরা ভবিষ্যতে বেজিংয়ের জন্য উপসাগরের প্রলোভন অনস্বীকার্য, কারণ এটি শুধু হাইড্রোকার্বনের বিশাল ভান্ডারের সামুদ্রিক  ক্ষেত্রই নয়, এখান দিয়ে গিয়েছে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সমুদ্রপথও (‌সি লেনস অফ কমিউনিকেশনস)‌, যা মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইস্ট–ওয়েস্ট শিপিং রুট, যা মালাক্কা প্রণালীর চোকপয়েন্টে প্রবেশ করার আগে উপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আট নটিক্যাল মাইল দূর দিয়ে যায়, এবং ইউরোপ ও আফ্রিকাকে এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে। মালাক্কা প্রণালীর সঙ্গে উপসাগরের নৈকট্য এই সামুদ্রিক পরিসরটিতে চিনের আগ্রহের অন্যতম মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যেহেতু এটি ‘‌মালাক্কা উভয়সঙ্কট ’‌–এ ভুগছে। এই শব্দবন্ধটি এই সংকীর্ণ চোকপয়েন্টে যে কোনও বাধা সম্পর্কে বেজিংয়ের আশঙ্কাকে বোঝায়, যা এর প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানিতে বাধা দেবে এবং দেশটিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। ফলস্বরূপ, চিন উপসাগরে এমন শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রাখতে চায় যাতে তার শক্তি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে এবং সেই সুবাদে তার বৃদ্ধিও নিরবচ্ছিন্ন থাকে। সেই অনুসারে, চিন উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী, যার একটি প্রকাশ হল সাবমেরিন চুক্তি।

মালাক্কা প্রণালীর সঙ্গে উপসাগরের নৈকট্য এই সামুদ্রিক পরিসরটিতে চিনের আগ্রহের অন্যতম মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যেহেতু এটি ‘মালাক্কা দ্বিধা’‌য় ভুগছে।

উপসাগরের উপকূলবর্তী সমুদ্রতলের উন্নয়ন — বেজিংয়ের জন্য বাইলাইনটি কী?

প্রকৃতপক্ষে, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রসারিত করতে আগ্রহী, এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের কারণে তারা চিনা নৌ–সাজসরঞ্জাম ক্রয় করতে আকৃষ্ট হয়। সাবমেরিনগুলি কেনার ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিশেষ করে একটি ‘‌ত্রিমাত্রিক বাহিনী’‌ হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে, যেহেতু এটি তার পূর্ব–বিদ্যমান সারফেস–লেভেল অপারেশন ও নেভাল এভিয়েশন উইংয়ের সঙ্গে আন্ডার–সি লেগ যুক্ত করল। ঢাকার অ্যাজেন্ডা শুধুমাত্র তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্বনির্ভর হওয়াই নয়, এর বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। একভাবে, এটি বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রচেষ্টার পরিপূরক হবে, কারণ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বিত টহলের ভাগীদার, এবং বাংলাদেশ ভারতের বহুপাক্ষিক নৌ–মহড়া ‘‌মিলন’‌এও অংশগ্রহণ করে, যা এই সামুদ্রিক পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। যাই হোক, ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণও রয়েছে, কারণ চিনা নাবিকদের দ্বারা বাংলাদেশের সাবমেরিনের সম্ভাব্য অপারেশন তাদের উপসাগরে ভারতের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন (ইইজেড)–এর কাছাকাছি নিয়ে আসবে, যার ফলে বেজিং চিনা সাবমেরিন অপারেশনের জন্য আরও তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাবে

কোকো দ্বীপপুঞ্জ ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছিও অবস্থিত, যেখানে ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী একত্র হয়ে দেশের ফার ইস্টার্ন ট্রাই–কমান্ড হিসাবে কাজ করে।

এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে শ্রীলঙ্কায় সাবমেরিন ডক করার জন্য চিনের অনুরোধ ২০১৭ সালে দ্বীপরাষ্ট্রটি প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ দেশটি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর সরকারি সফরে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হচ্ছিল। প্রত্যাখ্যানটি ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সংহতির একটি প্রতীক হিসাবে এসেছিল, বিশেষ করে ২০১৪ সালে কলম্বোর একটি চিনা সাবমেরিনকে নোঙর ফেলতে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ভারতের তরফ থেকে তীব্র বিরোধিতার পর। এই বিরোধিতার কারণ ছিল ভারতের আগ্রহের ক্ষেত্রটিতে চিনের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপের আশঙ্কা। যাই হোক, শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলিতে সাবমেরিন টেন্ডার জাহাজের ডকিংয়ের বৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি সমুদ্রে প্ল্যান (‌পিএলএ’‌র নেভি)‌ সাবমেরিনের উপস্থিতিরই ইঙ্গিত দেয়, বিশেষত হাইড্রোলজিক্যাল ও বাথমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ এবং সাবমেরিন ক্রুদের প্রশিক্ষণের জন্য। ২০১৯ সাল থেকে আরও ভাল সাবমেরিন অপারেশনের জন্য প্ল্যান জরিপ জাহাজ, যেমন জিয়াং ইয়াং হং ০৩, বঙ্গোপসাগরের গভীর জল জরিপ করেছে। একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারতীয় মিডিয়া এমনও রিপোর্ট করেছে যে চিন কথিতভাবে মায়ানমারের উপসাগরের কোকো দ্বীপপুঞ্জে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি সুবিধা তৈরি করছে, যেখান থেকে তারা যেমন ওডিশার বালাসোর টেস্ট রেঞ্জে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ট্র্যাক করতে পারে, তেমনই দেশের পূর্ব সমুদ্র তীরে বিশাখাপত্তনমের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে রামবিলি নৌ–ঘাঁটিতে অবস্থানরত ভারতের প্রথম পারমাণবিক সাবমেরিনের গতিবিধিও। কোকো দ্বীপপুঞ্জ ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছিও অবস্থিত, যেখানে ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী একত্র হয়ে দেশের ফার ইস্টার্ন ট্রাই–কমান্ড হিসাবে কাজ করে। তবে মায়ানমার সামরিক সরকার কোকো দ্বীপপুঞ্জে চিনের জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করেছে, এবং ভারতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতের জন্য সতর্কতা

দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের সক্রিয় উপস্থিতি নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে, বিশেষ করে যেহেতু এর জলের নিচের নৌ–সক্ষমতা এখনো উন্নত নয়। পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন যে ভারতীয় ও চিনা নৌবাহিনীর মধ্যে ঘাটতি সমুদ্রের তলদেশে ব্যতিক্রমীভাবে প্রকট, কারণ দুই দেশের বাজেট ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষমতার মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। নৌবাহিনীর ২০১২–২৭ সামুদ্রিক সক্ষমতা পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচটি স্করপিন (কালভারি) শ্রেণির সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করা সত্ত্বেও ভারতীয় নৌবাহিনী ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্ধারিত ২৪টি জাহাজের থেকে আটটি কম থেকে যাবে। পুরনো কিলো ও এইচডিডব্লিউ/শিশুমার শ্রেণির জাহাজগুলি এখনও তাদের নিষ্ক্রিয়করণের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারত যাতে বঙ্গোপসাগরে চিনা কার্যকলাপ সম্পর্কে সত্যিই অবগত হতে পারে সেজন্য সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলের নিচের পরিসরে সচেতনতার প্রয়োজন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৯ সালে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ রিপোর্ট করে, একটি চিনা সামুদ্রিক গবেষণা ও জরিপ জাহাজকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ভারতের ইইজেড–এ অনুমতি ছাড়াই গবেষণা কার্যক্রম চালাতে দেখা গিয়েছে। সম্ভাব্যভাবে, জাহাজটি এই ‘‌অঞ্চলে অবস্থানরত ভারতীয় নৌবাহিনীর সমস্ত জলের নিচের ও পৃষ্ঠতলের জাহাজগুলিকে পর্যবেক্ষণ করতে’‌ ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে৷ এটি শুধু ভারতের আইনের (অ্যাক্ট নং ৮০/১৯৭৬) লঙ্ঘন নয়, যা অনুসারে ‘‌বিদেশী সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক নৌযানগুলির কার্যক্রম শুরু করার আগে লাইসেন্স চাইতে হবে’‌;‌ সেইসঙ্গে ১৯৮২ সালের সাগরের আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন (ইউএনক্লস)–এরও লঙ্ঘন, যা দেশগুলিকে সেই উপকূলীয় রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা প্রয়োজনীয় করে তোলে ইইজেডটি যার অন্তর্গত (পার্ট ৫, আর্টিকেল ৫৮)৷ ইউএনক্লস বিদেশী সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ জাহাজগুলিকে প্রয়োজনীয় উপকূলীয় রাষ্ট্রের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনও গবেষণা বা জরিপ করার জন্য এমন কোনও প্রণালীর মধ্য দিয়ে ট্রানজিট প্যাসেজ নিষিদ্ধ করে যা একটি ইইজেড–এর এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের মধ্যে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয় (ধারা ২, অনুচ্ছেদ ৪০)। এটি সেই সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিবৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল:‌ ‘‌‘‌আপনাকে যদি আমাদের ইইজেড–এ কিছু করতে হয়, তাহলে আপনাকে আমাদের জানাতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে।’‌’ নিজের সপক্ষে চিন এই অবস্থান বজায় রেখেছিল যে তারা শুধু ভারতীয় ইইজেড–এর মধ্য দিয়ে নির্দোষ প্যাসেজ নিয়েছিল, যা ইউএনক্লস অনুমোদিত।

ভারত যাতে বঙ্গোপসাগরে চিনা কার্যকলাপ সম্পর্কে সত্যিই অবগত হতে পারে সেজন্য সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলের নিচের পরিসরে সচেতনতার প্রয়োজনও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।

যদিও বেজিং দাবি করে যে তার সমীক্ষাগুলি বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বার্থে, কিন্তু এ সবের উদ্দেশ্য হতেই পারে তার সাবমেরিন কার্যকলাপের জন্য অভিযানগত অবস্থার পরিমাপ করা বা অ্যান্টি–সাবমেরিন যুদ্ধাস্ত্র শনাক্ত করা। ভারতের জন্য এই সময়ের প্রয়োজন তাই তিন ধরনের; প্রথমত, এর জলের নিচে নৌ–সক্ষমতার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা; দ্বিতীয়ত, অন্যান্য উপসাগরীয় উপকূলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়িয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যে তাদের সম্পদ বা অঞ্চলগুলি ভারতের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকারক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না; এবং সবশেষে, জলের নিচের ক্ষেত্রটিতে সচেতনতা উন্নত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন মালাক্কা প্রণালীর সামনে অবস্থিত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নজরদারি ক্ষমতার উন্নয়ন। এটি বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে যাওয়া চিনা সাবমেরিনগুলিকে শনাক্ত করতে সহায়তা করবে, কারণ চোকপয়েন্টের অগভীরতার কারণে সেগুলিকে নিরাপদ নৌচলাচলের জন্য জলের উপরিতলে উঠে আসতে হবে। আশাব্যঞ্জক ঘটনা হল ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ডিজেল–ইলেকট্রিক সাবমেরিন সংগ্রহের একটি সামরিক অধিগ্রহণ উদ্যোগ প্রকল্প ৭৫–আই ডিজাইন করেছে, এবং ‘‌পারমাণবিক আক্রমণ–সক্ষম সাবমেরিনের দেশীয় নির্মাণের জন্য একটি পরিকল্পনা’‌ তৈরি করছে। এই প্রয়াসগুলির দ্রুত ও আগ্রহের সঙ্গে বাস্তবায়ন প্রয়োজন।


সোহিনী বোস অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.