Expert Speak Health Express
Published on Feb 09, 2023 Updated 1 Hours ago

বিশ্ব সম্প্রদায় চিনের কাছ থেকে আরও স্পষ্টতা চায়, কারণ দেশটি কোভিড সংক্রমণের সাম্প্রতিক বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেখাচ্ছে

কোভিড বৃদ্ধি নিয়ে চিনের গোপনীয়তা ২০২০–র প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহতা ফিরিয়ে আনছে

২০২০ সালের গোড়ার দিকে চালু করা চিনের কোভিড–১৯ বিধিনিষেধের সাম্প্রতিক শিথিলকরণ, এবং এর ফলে সংক্রমণের বৃদ্ধি আবারও বৃহত্তরভাবে বিশ্বের জন্য একটি নতুন সমস্যা ডেকে এনেছে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় অনেক চিনা দীর্ঘ ব্যবধানের পরে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন, বিশেষ করে চান্দ্র নববর্ষের আগে যা ২২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে পালন করা হল। এটি পারিবারিক পুনর্মিলনের একটি সময়। খোদ চিনেই লক্ষ লক্ষ অভিবাসী তাঁদের নিজ নিজ শহরে চলে গেছেন এবং তা গ্রামীণ  অভ্যন্তরভূমিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভীতিপ্রদ সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ডিসেম্বরে চিন এক সময়ের বহু–অনুশীলিত শি জিনপিংয়ের জিরো–কোভিড নীতি পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এবং সেই সময় থেকে কোভিড–১৯–এর কারণে মাত্র ২২ জনের মৃত্যুর কথা প্রকাশ করেছে।

মানুষের এই অভিবাসনটি এই কারণে জটিল যে চিনে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির  বিশদ সম্পর্কে বিশ্ব মূলত অন্ধকারে রয়েছে। চিন সর্বশেষ তরঙ্গের মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং কোভিড–১৯ এর কারণে মৃত্যুর সংজ্ঞাকেই পাল্টে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ডিসেম্বরে চিন এক সময়ের বহু–অনুশীলিত শি জিনপিংয়ের জিরো–কোভিড নীতি পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এবং সেই সময় থেকে কোভিড–১৯–এর কারণে মাত্র ২২ জনের মৃত্যুর কথা প্রকাশ করেছে। যাই হোক, প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যার কথিত কাহিনি এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জায়গাগুলিতে উপচে–পড়া ভিড় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) দ্বারা পরিস্থিতির উইন্ডো–ড্রেসিংকে স্পষ্টভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। চিনের পুনরায় উন্মুক্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য দেশগুলি দাবি করছে যে বিদেশ ভ্রমণকারী  চিনাদের কোভিড পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে, যা বেজিংয়ে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। সিপিসি অবশ্য ভুক্তভোগী কার্ড এবং তার একঘেয়ে ‘‌পশ্চিমকে দোষারোপ করার’‌ তাস খেলতে শুরু করেছে। এর প্রমাণ সিপিসি–র জার্নাল ‘কিউশি’ (অর্থাৎ সত্যানুসন্ধান)–তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ, যেখানে বলা হয়েছে যে পশ্চিমী মিডিয়া চিনের অতিমারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নীতি ভুলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, এবং তাদের মনোভাব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

চিনে অসন্তোষের ধিকিধিকি আগুন

২০২২ সালের অক্টোবরে ২০তম পার্টি কংগ্রেসে শি জিনপিংয়ের রিপোর্ট প্রমাণ করে যে চিনে সিপিসি–র ভেতরে বিপদের একটি জোরালো অনুভূতি রয়েছে, এবং সেই কারণে এ কথা বলে সতর্ক করা হয়েছিল যে বহিরাগত শক্তিগুলি চিনকে নিয়ন্ত্রণ, অবরোধ ও ব্ল্যাকমেল করা এবং চাপের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। শি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই তাঁর জিরো–কোভিড নীতির বিরুদ্ধে চিনের বিভিন্ন শহরজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ইস্যুতে চিনে বিক্ষোভ অনন্য না–হলেও ২০২২ সালের বিক্ষোভগুলি পার্টিকে বিচলিত করেছিল, কারণ ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়ারের বিক্ষোভের পর এই প্রথম চিনা জনগণ সিপিসি–র  রাজনৈতিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। চিনের এলিটরাও এই ধিকিধিকি অসন্তোষের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। জাতির উদ্দেশে তাঁর প্রথাগত নববর্ষের প্রাক্কালের ভাষণে শি একটি সমঝোতামূলক সুর গেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে একটি বৃহৎ জাতি হওয়ায় মানুষের মধ্যে পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, যা সংলাপের মাধ্যমে দূর করা যেতে পারে। যাই হোক, সাম্প্রতিক বিক্ষোভ এবং জিরো–কোভিড নীতিতে চিনের উলটো পথ নেওয়ার কারণে সৃষ্ট অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে সিপিসি–র মূল্যায়ন বেশ আশঙ্কাজনক। এই মনোভাব আইন প্রয়োগকারী পদক্ষেপগুলির তত্ত্বাবধানের জন্য সিপিসি–র সংস্থা সেন্ট্রাল পলিটিক্যাল অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিশন (সিপিএলএসি)–এর একটি সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে কিছু শক্তি গুজব ছড়ানো এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে অতিমারিকে ব্যবহার করতে পারে, এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা নিরাপত্তা শাখাগুলির সর্বোত্তম দায়িত্ব। শি নিজেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘‌কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি একটি নতুন পর্যায়’‌ হিসাবে অভিহিত করেছেন। তবে এখনও সিপিএলএসি–র মূল্যায়ন (এবং বৃহত্তরভাবে সিপিসি–র দৃষ্টিভঙ্গি) হল জিরো–কোভিড নীতি এবং এখনকার ইউ–টার্ন নীতি ‘‌দুটোই সঠিক’‌। সিপিসি এত দিন ক্ষমতায় টিকে আছে কারণ এটি তথ্যপ্রবাহ ও বর্ণনার উপর একচেটিয়া অধিকার বজায় রেখেছে। সুতরাং, এইরকম একটি সংবেদনশীল সময়ে শাসক এলিটদের পক্ষ থেকে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যার যে কোনও স্বীকারোক্তি উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ প্রভাব ফেলবে।

শি নিজেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘‌কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি একটি নতুন পর্যায়’‌ হিসাবে অভিহিত করেছেন। তবে এখনও সিপিএলএসি–র মূল্যায়ন (এবং বৃহত্তরভাবে সিপিসি–র দৃষ্টিভঙ্গি) হল জিরো–কোভিড নীতি এবং এখনকার ইউ–টার্ন নীতি ‘‌দুটোই সঠিক’‌।

বাঁশের পর্দার ওপারে

কমিউনিস্ট চিনে প্রথমেই বলি দেওয়া হয়েছে সত্যকে। সংক্রমণ এবং তার সঙ্গে উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি–র সম্পর্ক সংক্রান্ত তত্ত্বগুলি ভালভাবেই জিইয়ে আছে। এই  ইনস্টিটিউট–এর সংলগ্ন বাজারটি সংক্রমণের গ্রাউন্ড জিরো হিসাবে চিহ্নিত। ইনস্টিটিউট–এর শিথিল সুরক্ষা বিধি থেকে শুরু করে জৈবিক যুদ্ধের আরও গুরুতর অভিযোগ নিয়েও জল্পনা রয়েছে। তবুও আমরা করোনাভাইরাস কীভাবে আবির্ভূত হয়েছিল সে সম্পর্কে সত্য খুঁজে পাওয়ার কাছাকাছি কোথাও নেই, কারণ চিন বারবার এর উৎস সম্পর্কে কোনও অর্থপূর্ণ তদন্তের পথ অবরুদ্ধ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, করোনভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে একটি স্বাধীন তদন্ত চাওয়ার পরেই অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির বিরুদ্ধে চিন অর্থনৈতিক জবরদস্তি অবলম্বন করে,  এবং অস্ট্রেলিয়ান ওয়াইন, কয়লা ও সামুদ্রিক খাবারের আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করে। দেশের ভেতরে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ পার্টিকে ডাঃ লি ওয়েনলিয়াংকে নিন্দা করতে চালিত করেছিল, যিনি ২০২০ সালের প্রথম দিকেই কোভিড–১৯ সংক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। আমরা যেন ভুলে না–যাই যে শি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেই ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনে গেলেও সিপিসি সংক্রমণের বিস্তাররোধে কাজ শুরু করে প্রায় এক পক্ষকাল পরে তিনি মায়ানমারে রাষ্ট্রীয় সফর সেরে ফিরে আসার পরে, আর এই বিলম্বের ফলে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। চিন ২০২০ সালে তার কর্তব্যপালনে ব্যর্থতা থেকে কোনও শিক্ষা নেয়নি, তবে বিশ্ব সম্প্রদায় নিজেদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য সিপিসি–র  কাছ থেকে স্বচ্ছতা চাওয়ার দাবি তুলে সঠিক কাজ করছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.