Author : Atul Kumar

Published on Feb 27, 2025 Updated 0 Hours ago

চিনের বৃহত্তর রফতানি প্রত্যাখ্যান কৌশল ভারতের অর্থনীতি জাতীয় নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ভারতকে অবশ্যই সর্বাত্মক কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

ভারতের বিরুদ্ধে চিনের রফতানি প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত কৌশল: একটি জাতীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারির একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ্যে আসে যে, চিএ বার চিনা কর্মীদের ভারতে ফক্সকন-এর আইফোন কারখানায় ভ্রমণে নিষেধ করেছে এবং ইতিমধ্যে সেখানে কর্মরত চিনাদের আবার চিনে ফিরিয়ে নিচ্ছে। উপরন্তু, ভারতের জন্য আইফোন তৈরির বিশেষ উত্পাদন সরঞ্জামের চালান বন্ধ করা হয়েছে এবং চিনা কর্তৃপক্ষ সেই সব পণ্যের ফতানি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছে। ভারতে অ্যাপলের সাম্প্রতিকতম আইফোন ১৭ তৈরি ২০২৫ সালে ভারতে সেই ফোন লঞ্চ করার পরিকল্পনাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই চিনা জনশক্তি সরঞ্জাম রফতানির উপর এই বিধিনিষেধগুলি আরোপ করা হয়েছে। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করার মাধ্যমে চিআসলে ধীরে ধীরে অ্যাপলকে ভারতের সমস্ত কার্যকলাপ চিনে স্থানান্তর করার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য চাপ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলি পশ্চিমি বহুজাতিক সংস্থাগুলির জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক  উত্পাদন শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সম্ভাবনা নিয়ে বেজিংয়ের বাড়তে থাকা উদ্বেগকেই দর্শায় এবং একই সঙ্গে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে চিনের বিবর্তিত ফতানি অস্বীকার কৌশলের আভাস দেয়। এই পদক্ষেপগুলি ভারত ও দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আপাত মনোভাবে মধ্যেই চিন এই অস্বীকৃতির কৌশলটি অনুসরণ করেছে এবং ফলে চিনের আসল নৃশংস উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভারতের জন্য আইফোন তৈরির বিশেষ উত্পাদন সরঞ্জামের চালান বন্ধ করা হয়েছে এবং চিনা কর্তৃপক্ষ সেই সব পণ্যের ফতানি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছে

অ্যাপলের আইফোন

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত অ্যাপলের জন্য একটি মূল উৎপাদন ভিত্তি হয়ে উঠেছে এবং ভারত বিশ্বের ১৪ শতাংশ আইফোন তৈরি করে, যা আগামী বছরগুলিতে ২৫-৪০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অ্যাপল ভারতে আইপ্যাড, এয়ারপড এবং অ্যাপল ওয়াচও তৈরি করে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সংস্থাটি ভারত থেকে বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আইফোন রফতানি করেছে। গ্লোবাল কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে এই ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ক্ষেত্রটিতে ভারতের অবস্থানকে সশক্ত করে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করে চিনের উপর অ্যাপলের নির্ভরতা হ্রাস করে।

চিনের আশঙ্কা নেহাতই অমূলক নয়। ২০১৭-১৮ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদনের দরুন ফক্সকন-এর ঝেংঝু কারখানায় ৩৫০০০০ কর্মী নিযুক্ত ছিল। ১৫০টি চিনা সরবরাহকারী ও ২৫৯টি কারখানা সমন্বিত অ্যাপলের সরবরাহ শৃঙ্খলটি ইয়াংজি নদী ব-দ্বীপ, পার্ল নদীর ব-দ্বীপ এবং মধ্য ও পশ্চিম চিন জুড়ে কর্মসংস্থানের ভিত্তি ছিল, যা তৃণমূল স্তরে লক্ষ লক্ষ কর্মীর অন্ন জোগাত। তা সত্ত্বেও ২০২৩ সাল নাগাদ দু’লক্ষেরও বেশি ফক্সকন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছিল এবং ঝেংঝুতে বেশ কয়েকটি উপাদান সরবরাহকারী হয় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বা নতুন ক্ষেত্রে যোগদান করেছে। অ্যাপলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের দরুন অনেক চাকরি ধীরে ধীরে ভারতে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

অ্যাপলের কার্যক্রম ভারতের স্মার্ট প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে সহায়তা করছে। ভারত ইতিমধ্যেই একটি প্রযুক্তিগত ভিত্তি এবং একটি বৃহৎ প্রকৌশল প্রতিভা ভাণ্ডার পরিচালনা করছে, যা অ্যাপলের সম্প্রসারণমূলক কার্যকলাপগুলি থেকে উপকৃত হওয়ার দরুন দেশটিকে ভাল অবস্থানে রেখেছে। ফক্সকন একাই ভারতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, ৫০ হাজার কর্মী নিয়োগ করেছে। সর্বোপরি, ভারতের আইফোন উৎপাদনে ত্রুটির হার চিনা পর্যায়ে নেমে এসেছে এবং তা সরাসরি প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করেছে।

আসন্ন আইফোন ১৭ ইমেজ অ্যানালিসিস বা ছবি বিশ্লেষণ ভয়েস রিকগনিশন বা কণ্ঠস্বর চেনার কৌশল উন্নত করতে মেশিন লার্নিং এআইকে সমন্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এই সব কিছুই আবার ব্যবহারকারীদের উচ্চতর অভিজ্ঞতা ডেভেলপারদের উদ্ভাবনের জন্য আরও ভাল সুযোগ প্রদান করবে।

আসন্ন আইফোন ১৭ ইমেজ অ্যানালিসিস বা ছবি বিশ্লেষণ ভয়েস রিকগনিশন বা কণ্ঠস্বর চেনার কৌশল উন্নত করতে মেশিন লার্নিং এআইকে সমন্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এই সব কিছুই আবার ব্যবহারকারীদের উচ্চতর অভিজ্ঞতা ডেভেলপারদের উদ্ভাবনের জন্য আরও ভাল সুযোগ প্রদান করবে। চিন বিশেষ করে অ্যাপল-এর নিউ প্রোডাক্ট ইনট্রোডাকশন (এনপিআই) নীতি পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা আগে চিনের জন্য একচেটিয়া ছিল এবং এখন ভারতে আইফোন ১৭-এর জন্য সেই সুযোগের দরজা খুলে গিয়েছে। এই রূপান্তরটি ভারতের সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের একটি ফার্স্ট-মুভার অ্যাডভান্টেজ প্রদান করতে পারে, স্মার্ট ভোক্তা প্রযুক্তিতে চিনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে।

টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)

চিনের আশঙ্কা আইফোনের ঊর্ধ্বে উঠে টানেল বোরিং মেশিন ক্ষেত্রে প্রসারিত, যেখানে অনুরূপ বিধিনিষেধ স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেকের সঙ্গে একটি জনসভায় ভারতে জার্মান টিবিএম-এর উপর চিনের ফতানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। একটি নেতৃস্থানীয় জার্মান সরবরাহকারী হেরেননেঠ এজি ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং সংস্থাটির ৭৫টি মেশিন এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার টানেল বা সুড়ঙ্গের কাজ সম্পূর্ণ করেছে৷

২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারত টিবিএম আমদানির জন্য গুয়াংঝো সাংহাইতে হেরেননেঠ-এর চিনা উত্পাদন কেন্দ্রের উপর উল্লেখযোগ্য রকমের নির্ভর করত। এই নির্ভরতা মেট্রো, রাস্তা রেলওয়ে টানেল এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পর্বত সুড়ঙ্গের জন্য বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। গলওয়ান দ্বন্দ্ব ও তার পরবর্তী স্থবিরতার পর চিন ভারতে টিবিএম রফতানি সীমিত করে ধীরে ধীরে শুল্ক ছাড়পত্রের সময় বৃদ্ধি করেছে। বেজিং বিশ্বাস করে যে, এই মেশিনগুলি এলএসি বরাবর সৈন্য চলাচলের সুবিধার্থে পাহাড়ের সুড়ঙ্গ তৈরি করছে।

গলওয়ান দ্বন্দ্ব ও তার পরবর্তী স্থবিরতার পর চিন ভারতে টিবিএম রফতানি সীমিত করে ধীরে ধীরে শুল্ক ছাড়পত্রের সময় বৃদ্ধি করেছে।

আসন্ন হাই-স্পিড রেল মেট্রো প্রকল্পের কারণে টিবিএম-এর ব্যাপারে ভারতের চাহিদা বাড়তে থাকায় চিন নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরতা একটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে। একটি ইতিবাচক মোড় হল, হেরেননেঠ ভারতীয় বাজারের জন্য চেন্নাইতে টিবিএম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আশীর্বাদ বলে প্রমাণিত হতে পারে

গুরুত্বপূর্ণ খনিজ

আর কটি যে ক্ষেত্রে চিন ভারতে রফতানি সীমিত করেছে, তা হল ক্রিটিক্যাল মিনারেলস বা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। ২০২৩ সাল থেকে চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত অন্যান্য দেশে জার্মেনিয়াম (জিই) এবং গ্যালিয়াম (জিএ) সরবরাহের উপর কৌশলগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই খনিজগুলি অর্ধপরিবাহী এবং সৌর প্যানেল অন্যান্য কৌশলগত পণ্য তৈরির জন্য অপরিহার্য। হেন নিষেধাজ্ঞাগুলি এই চিনা যুক্তিকেই সশক্ত করেছে যে, যদি এই ধরনের খনিজের ফতানি উন্নত চিপগুলির সুবিধার্থে তার ব্যবহার বন্ধ করা হয়, তা হলে বিশ্ব বাণিজ্য মসৃণ ভাবে এগোতে পারবে না।

ভারতের জন্য অবশ্য গ্যালিয়াম কোনও বড় উদ্বেগের বিষয় নয়কারণ এটি বক্সাইট আকরিকের বিশাল ভাণ্ডার থেকে নিষ্কাশন করা যেতে পারে। যাই হোক, জার্মেনিয়াম আমদানির উপর নয়াদিল্লির নির্ভরতা ব্যাপক। চিনা বিধিনিষেধ এড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দুবাইয়ের মাধ্যমে আমদানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যাই হোক, এতে প্রায়শই ১০-১৫ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পায়। তার সঙ্গেই উৎপাদনের সময় বেড়ে যায় এবং খনিজ সংগ্রহের বিষয়টিও জটিল হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীদের অবশ্যই অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে হবে এবং সরবরাহ, গুদামজাতকরণ অর্থায়নের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। আবার খুচরো যন্ত্রাংশের জন্যও পথ বদল করতে হয়, যা খরচ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রক্রিয়াটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

জটিলতা

গলওয়ান দ্বন্দ্বের আগে চিন ভারতীয় আমদানিতে বাধা দেওয়ার জন্য একটি পছন্দের হাতিয়ার হিসাবে ধারাবাহিক ভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস, বাসমতি চাল এবং গরুর মাংস-সহ একাধিক খাতের উপর নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা (এনটিবি) নিযুক্ত করেছিলভারতীয় সংস্থাগুলিকে চিনা বাজারে প্রবেশে বাধা দিতে অন্যতম কৌশল হল চিনা ব্যবসায়ীদের কার্টেলাইজেশন (অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার মধ্যে বিশেষ চুক্তি, যার ফলে প্রতিযোগিতার মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। এর ফলে অর্থনীতি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়)। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চিন শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়াকে পর্যাপ্ত বলে মনে করেনি; বরং চিন সক্রিয় ভাবে বহুজাতিক ও চিনা সংস্থাগুলিকে ভারতে স্থানান্তরিত হতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর ফলে নয়াদিল্লির উপর ক্রমবর্ধমান ভাবে দৃশ্যমান সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

চিমূলত তিনটি উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ করেছে। প্রথমত, চিন নিজের দেশ থেকে ভারতে উচ্চ-প্রযুক্তি ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স শিল্পের স্থানান্তর রোধ করতে চায়কারণ ভারত সস্তা শ্রম, দক্ষ প্রকৌশলী এবং  সরকারি সহায়তা তুলনামূলক বেশি পণ্য সরবরাহ করে। সর্বোপরি, চিনে বেকারত্ব উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং চিনা সরকার সরকারি পরিসংখ্যা প্রকাশ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পগুলি যথেষ্ট কর্মসংস্থান প্রদান করে, চিনের মূল্য সৃষ্টিতে অবদান রাখে এবং এই সব কিছুকেই অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ভারতে  বিশেষ করে উদীয়মান ক্ষেত্রে নানা ব্যবসার স্থানান্তরকে চিনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি বলে দেখা হয়। স্থানান্তরের বিষয়ে চিনা আখ্যানে এই যুক্তিই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এই ধরনের ক্ষেত্রগুলির প্রতি নিরুৎসাহ বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে তা যখন ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত।

গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুরূপ বিধিনিষেধ চিনের বৃহত্তর রফতানি অস্বীকার কৌশলকে তুলে ধরেছে, যা সরাসরি ভারতের অর্থনীতি জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

দ্বিতীয়ত, গলওয়ান দ্বন্দ্বের পর ভারত চিনা সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা, স্থানীয় ফার্মে চিনা বিনিয়োগ সীমিত করা এবং দেশে বিদ্যমান চিনা সংস্থাগুলির অবৈধ কার্যকলাপের তদন্ত করা। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে চিনের উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আপেক্ষিক শিথিলতা চিনের মনে এই আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে যে, ভারত চিনকে তার অর্থনীতিতে পুনঃআমন্ত্রণ জানাতে এই পদক্ষেপগুলি তুলে নিতে পারে। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। বিচ্ছিন্নকরণের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ধীরে ধীরে এগোলেও বড় সমস্যাগুলির বিষয়ে এখনও স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। ফলস্বরূপ, এই ক্রমবর্ধমান চিনা নিষেধাজ্ঞাগুলির নেপথ্যে প্রধান উদ্দেশ্যে হল নানাবিধ প্রসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে আলোচনায় সুযোগ বজায় রাখা।

অবশেষে, চিনের উদীয়মান রফতানি অস্বীকার কৌশলগুলি আংশিক ভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি বুঝতেও গৃহীত হয়েছে। চিনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অতীতে সীমিত প্রভাব ফেলেছিল এবং ২০১০ সালে নৌ-বিরোধের পরে জাপানের বিরুদ্ধে তাদের রেয়ার আর্থ খনিজ ফতানি নিষেধাজ্ঞা সুযোগের চাইতেও অনেক বেশি পরিমাণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে চিনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ভাবে চালিত করার জন্য সমমনস্ক রাষ্ট্রগুলির একটি শক্তিশালী জোটের অভাব রয়েছে। ফলস্বরূপ, ভারতের প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত প্রক্রিয়া স্থিতিস্থাপকতা মূল্যায়নের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি ফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

উপসংহার

ভারতে আইফোন নির্মাণকারী সংস্থা ফক্সকন-এর কারখানায় জনশক্তি সরঞ্জাম রফতানির উপর চিনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা ভারতের উচ্চ প্রযুক্তির ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বৃদ্ধিকে বাধা দেওয়ার জন্যও আরোপ করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার মাঝেই আরোপিত এই পদক্ষেপগুলি ভারতের সঙ্গে চাপানউতোর পরিচালনার জন্য চিনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকেই দর্শায়। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুরূপ বিধিনিষেধ চিনের বৃহত্তর রফতানি অস্বীকার কৌশলকে তুলে ধরেছে, যা সরাসরি ভারতের অর্থনীতি জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। চিনের তরফে এই চাপ কমাতে এবং নিজের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে ভারতকে অবশ্যই সর্বাত্মক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

 


অতুল কুমার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.