Author : Kanchan Lakshman

Published on May 02, 2025 Updated 0 Hours ago

২০২৫ সালের শুরুতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সফল এসএফ অভিযান ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা গ্রিডকে গতি দেবে

ছত্তিশগড়ের মাওবাদী-বিরোধী অভিযান: মূল সাফল্য এবং তাৎপর্য

ছত্তিশগড়ে নতুন বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএফ) নিরন্তর এবং কার্যকর মাওবাদী বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে ব্যাপক মাওবাদী হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসএফ-এর জন্য একটি বড় সাফল্য হল ১৯ জানুয়ারি ছত্তিশগড়-ওড়িশা সীমান্তে ছত্তিশগড়ের ভালুদিগিতে এক সংঘর্ষে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) (সিপিআই-এম)-‌র ১৪ জন ক্যাডারের মৃত্যু, যার মধ্যে শীর্ষ নেতা রামচন্দ্র রেড্ডিও ছিলেন। এটি ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে মাওবাদীদের জন্য দ্বিতীয় বড় ধাক্কা, এবং তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানের সর্বশেষ ঘটনা। এর আগে, ১৬ জানুয়ারি, বিজাপুর জেলায় আরেকটি সংঘর্ষে তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটির নেতা দামোদর-‌সহ ১৮ জন মাওবাদী নিহত হন।

এসএফ-এর জন্য একটি বড় সাফল্য হল ১৯ জানুয়ারি ছত্তিশগড়-ওড়িশা সীমান্তে ছত্তিশগড়ের ভালুদিগিতে এক সংঘর্ষে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) (সিপিআই-এম)-‌র ১৪ জন ক্যাডারের মৃত্যু, যার মধ্যে শীর্ষ নেতা রামচন্দ্র রেড্ডিও ছিলেন।



এই দুটি সফল এসএফ অভিযান গত বছর শুরু হওয়া একটি প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। ২০২৪ সালে ছত্তিশগড়ে এসএফ-এর ১১৫টি অভিযানে ২১৯ জন মাওবাদীকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল, যেখানে ২০২৩ সালে ৬৮টি অভিযানে ২৬ জন নিহত হয়েছিল। প্রায় ৭৫০ শতাংশের বিস্ময়কর বৃদ্ধির সঙ্গে বামপন্থী চরমপন্থা (এলডব্লিউই) আন্দোলনের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে ২০০ জনেরও বেশি মাওবাদীকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।

পদচিহ্ন সঙ্কুচিত হচ্ছে

এসএফ অভিযানের বিস্তৃতির ফলে শুধু মাওবাদীদের ব্যাপক হতাহত হওয়া এবং তাদের ক্যাডারদের মধ্যে মনোবলের মারাত্মক ক্ষতিই হয়নি, বরং মাওবাদীদের প্রভাবের ভৌগোলিক অঞ্চলও সঙ্কুচিত হয়েছে। সিপিআই-এম-এর মূল সামরিক ক্ষমতা এখন সুকমা-বিজাপুর অক্ষ এবং ছত্তিশগড়ের অবুঝমাড় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। দক্ষিণ ও পশ্চিম বস্তার অঞ্চলে কিছু সশস্ত্র মাওবাদী পরিসরে তীব্র ক্ষয়ক্ষতি দেখা দিয়েছে। কর্মক্ষমতার দিক থেকে, গত বছর থেকে এসএফ সাফল্যের পর চারটি গুরুত্বপূর্ণ সশস্ত্র মাওবাদী পরিসর দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের গডচিরোলি বিভাগীয় কমিটি ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যখন ১২জন মাওবাদীকে নিশ্চিহ্ন করা হয়, যার ফলে
উত্তর গডচিরোলি মূলত মাওবাদীমুক্ত হয়। ছত্তিশগড়ের কাঙ্কেরের ৫ নম্বর কয় ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে একটি সংঘর্ষে ২৯ জন মাওবাদীকে হারিয়েছে, যা পারতাপুর এরিয়া কমিটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। উপরন্তু, ২০২৪ সালের অক্টোবর এপ্রিল মাসে যথাক্রমে কয় নং ৬ এবং কয় নং ২-তেও সংঘর্ষে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।

সিপিআই-এম-এর মূল সামরিক ক্ষমতা এখন সুকমা-বিজাপুর অক্ষ এবং ছত্তিশগড়ের অবুঝমাড় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।



১৯ জানুয়ারি
ওড়িশা-ছত্তিশগড় সীমান্তে সংঘর্ষ ইঙ্গিত দেয় যে সিপিআই (মাওবাদী) কৌশল পরিবর্তন করে তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে বিকেন্দ্রীকৃত করছে এবং নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তর করছে। মাওবাদী নেতৃত্ব মূল্যায়ন করেছে যে, সুকমা-বিজাপুর এবং অবুঝমাড়ে তাদের শক্ত ঘাঁটিগুলি আর নিরাপদ নয়। তারা মধ্য ওড়িশাকে একটি নতুন নিরাপদ স্থান হিসাবে বিবেচনা করছে এবং কন্ধমাল, কালাহান্ডি, বৌধ ও নয়াগড় জেলায় তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। তাছাড়া, তারা ছত্তিশগড় থেকে ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত অঞ্চলগুলিকে ওড়িশার মধ্য দিয়ে সংযুক্ত করার জন্য সম্বলপুর দেওগড়-সুন্দরগড় বিভাগীয় কমিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ওড়িশায় সিএপিএফ মোতায়েনের পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে সুযোগ তৈরি হতে পারে।

মাওবাদীদের প্রতিশোধমূলক কৌশল

সিপিআই (মাওবাদী)-‌এর জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক, এবং প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনও বিকল্প নেই। সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর তারা এখন ছত্তিশগড়ে দুর্বল লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করছে। মাওবাদীরা সন্দেহভাজন পুলিশ তথ্যদাতাদের উপর আক্রমণ বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ বস্তারে। ২০২৪ সালে তারা ৮০ জনের মতো বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে, যা ২০২৩ সালে ৬৮ জন ছিল। মাওবাদীরা এসএফ-‌এর বিরুদ্ধে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), স্পাইক এবং বুবি ট্র্যাপ ব্যবহার করতে পছন্দ করে;‌ তবে দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে এরিয়া ওয়েপনস তৈরির চেষ্টাও করছে। সম্প্রতি, তারা ৩০০-৪০০ মিটার দূর থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্যাম্পগুলিতে অশোধিত ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার ব্যবহার করেছে, যা খুব বেশি ক্ষতি করেনি, মূলত উপদ্রব হিসেবে কাজ করছে। তারা তাদের ফরোয়ার্ড অপারেটিং বেসগুলিতে (এফওবি) আক্রমণ সহ এসএফ-এর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার লক্ষ্যও তৈরি করছে। সম্প্রতি ৬ জানুয়ারি বিজাপুর জেলার কুট্রুতে মাওবাদীদের একটি
আইইডি বিস্ফোরণে আট জওয়ান নিহত হন। এসএফ-এর উপস্থিতি বৃদ্ধির পর আরও আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা তাদের বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ "ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যাম্পেন"-এর সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।


মাওবাদীরা এসএফ-‌এর বিরুদ্ধে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), স্পাইক এবং বুবি ট্র্যাপ ব্যবহার করতে পছন্দ করে;‌ তবে দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে এরিয়া ওয়েপনস তৈরির চেষ্টাও করছে।



ছত্তিশগড়ে সাম্প্রতিক এসএফ সাফল্যের বিশাল প্রভাব পড়বে, কারণ তারা ইতিমধ্যেই এফওবি নেটওয়ার্ককে সুকমা-বিজাপুর অক্ষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে এবং অবুঝমাড়ের প্রান্তে প্রসারিত করেছে, যা সংগঠনের একটি সত্যিকারের 'ঘাঁটি এলাকা' হিসাবে বিবেচিত হয় এবং যেখানে এর বেশিরভাগ সিনিয়র নেতারা থাকেন। দক্ষিণ ও পশ্চিম বস্তারের পর এখন অবুঝমাড় বা ‘‌অজানা পাহাড়’‌ হল সেই অঞ্চল যেখানে এলডব্লিউই-এর শেষ খেলাটি সংগঠিত হচ্ছে। ‘ঘাঁটি এলাকায়’ অনুপ্রবেশ শুধু মাওবাদীদের অবাধ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করবে না বা ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে গতি দেবে না, বরং অবুঝমাড় দুর্ভেদ্য এই ধারণাকেও দূর করবে। অবুঝমাড়-‌সহ বাকি মূল এলাকাগুলি নিকট ভবিষ্যতে এসএফ-এর নজরদারিতে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিদ্রোহের ভবিষ্যৎ

সামগ্রিকভাবে, ভৌগোলিক প্রভাব, হিংস্রতা ও ক্ষমতার দিক থেকে এলডব্লিউই-এর সঙ্কোচন ঘটেছে, যার কারণ মূলত সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক এসএফ অভিযানের সাফল্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এসএফ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দুর্গম ঘাঁটিগুলি থেকে সিপিআই (মাওবাদী) ক্যাডারদের বিতাড়িত করা। তারা দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের মাওবাদী শক্ত ঘাঁটি এবং তেলেঙ্গানার সীমান্তবর্তী জেলাগুলি, গড়চিরোলি (মহারাষ্ট্র), মালকানগিরি ও কোরাপুট (ওড়িশা)-‌এও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। মধ্যপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র-ছত্তিশগড় এবং কেরল-কর্ণাটক-তামিলনাড়ুর বনাঞ্চলীয় ত্রি-সংযোগস্থলে তাদের উপস্থিতি সীমিত, এবং ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।


সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এসএফ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দুর্গম ঘাঁটিগুলি থেকে সিপিআই (মাওবাদী) ক্যাডারদের বিতাড়িত করা।



নতুন বছরের শুরুতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সফল এসএফ অভিযান বর্ধিত নিরাপত্তা গ্রিডকে গতিশীল করবে, যা সম্প্রতি চমৎকার অপারেশনাল সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিপিআই (মাওবাদী) বর্তমানে দুর্বলতম পর্যায়ে রয়েছে বলে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে এসএফ কর্তৃক আরও এফওবি স্থাপনের প্রস্তাব, গত বছর থেকে এসএফ অভিযানের গতিপথ, এবং মাওবাদী ক্যাডারদের তীব্র ক্ষয়ক্ষতি ও ক্যাডারদের মধ্যে মনোবলের ক্ষতি বিবেচনা করে এমন মূল্যায়ন করা হচ্ছে যে সিপিআই (মাওবাদী) আগামী মাসগুলিতে আরও চাপের মুখে পড়বে, যার মধ্যে রয়েছে তাদের এতদিনের দুর্ভেদ্য স্নায়ুকেন্দ্র অবুঝমাড়। তবে, এসএফগুলিকে সংগঠনের প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে আইইডির মাধ্যমে, যা এখনও উদ্বেগের একটি বড় কারণ।



কাঞ্চন লক্ষ্মণ দিল্লি-ভিত্তিক একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তাঁর বিশেষজ্ঞতার ক্ষেত্র হল সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ, বামপন্থী চরমপন্থা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Kanchan Lakshman

Kanchan Lakshman

Kanchan Lakshman is a Delhi-based security analyst. His area of specialisation includes terrorism, radicalisation, Left Wing Extremism & internal security. ...

Read More +