-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বেজিং ও মস্কোর বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশলগত প্রচেষ্টায় ইইউ সংযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল খনিজ পদার্থে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভূ-রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তনের মাঝেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আঞ্চলিক সংযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানি ক্ষেত্রে পাঁচটি সম্পদ সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেছে। এই ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বকে গতিশীল করার জন্য ২০২৫ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল সমরখন্দে প্রথম ইইউ-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন দের লেইন, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা এবং পাঁচটি মধ্য এশিয়ার দেশের (কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান) নেতারা দ্বিপাক্ষিক ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
ইইউ-র সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলিকে তাদের বৈদেশিক নীতি বৈচিত্র্যময় করার সুযোগ করে দেয়, যা কয়েক দশক ধরে রাশিয়া ও চিনের সহযোগিতামূলক আধিপত্যের অধীনে রয়ে গিয়েছে।
২০২৪ সালে ট্রান্স-কাস্পিয়ান ট্রান্সপোর্ট করিডোরে (টিআইটিআর) ১০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের সময় মধ্য এশিয়ায় ১৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ বর্ধিত আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য ইইউ-তে সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রদান করে, বিশেষ করে জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য। অন্য দিকে, ইইউ-র সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলিকে তাদের বৈদেশিক নীতি বৈচিত্র্যময় করার সুযোগ করে দেয়, যা কয়েক দশক ধরে রাশিয়া ও চিনের সহযোগিতামূলক আধিপত্যের অধীনে রয়ে গিয়েছে।
মধ্য এশিয়ায় ইইউর ক্রমবর্ধমান কৌশলগত আগ্রহ
আজকের গতিশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি - যার উল্লেখযোগ্য ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে – ইইউ-র মৌলিক লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ইইউ-কে তার বৈদেশিক নীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির জন্য নতুন, স্থিতিশীল, বৈচিত্র্যময় সরবরাহ শৃঙ্খল স্থাপন করতে বাধ্য করেছে। ইইউ-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনটি সেই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যখন অন্যান্য প্রধান খেলোয়াড় তাদের কৌশলগত বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করেছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপ, চিনের বাণিজ্য সংঘাত এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষাবাদী নীতির কথা। অঞ্চলের কৌশলগত অবস্থানের প্রশংসা করে ফন দের লেইন সহযোগিতার জন্য চারটি প্রধান ক্ষেত্রের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং সেগুলি হল সংযোগ, কাঁচামাল, দূষণহীন শক্তি ও ডিজিটাল সংযোগ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইইউ-র গ্লোবাল গেটওয়ে কৌশলের অধীনে টিআইটিআর উদ্যোগের মাধ্যমে সংযোগ উভয় অঞ্চলের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। টিআইটিআর দক্ষিণ ককেশাসের মাধ্যমে স্থলবেষ্টিত মধ্য এশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং ২০২৪ সালে ৪.৫ মিলিয়ন টন কন্টেনার পরিবহণের পাশাপাশি ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন টন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। আধুনিকীকরণ ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জের কারণে মধ্য এশিয়া থেকে ইইউ-তে মাত্র ১০০,০০০ কন্টেনার পাঠানো হচ্ছে। শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ সংযোগ বৃদ্ধি ও টিআইটিআর আধুনিকীকরণের জন্য ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে, যার ফলে ইইউ প্রতি বছর প্রায় ৮০০,০০০ কন্টেনার গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ইইউ-কে তার বৈদেশিক নীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির জন্য নতুন, স্থিতিশীল, বৈচিত্র্যময় সরবরাহ শৃঙ্খল স্থাপন করতে বাধ্য করেছে।
ইইউ মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যা এই অঞ্চলের বৈদেশিক বাণিজ্যের ২২.৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম বিনিয়োগকারীও, যা সমস্ত বিনিয়োগের ৪০ শতাংশেরও বেশি। ইইউ মূলত অপরিশোধিত তেল, গ্যাস ও ধাতু আমদানি করে এবং তুর্কমেনিস্তান ছাড়া মধ্য এশিয়ার সকল দেশের সঙ্গে বর্ধিত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (ইপিসিএ) নিয়ে আলোচনা করেছে। সর্বোপরি, মধ্য এশিয়ায় ইউরেনিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের বিশাল মজুত রয়েছে, যার কাছে বিশ্বের ৪০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যেমন লিথিয়াম, গ্রাফাইট ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। কাজাখস্তান একাই ইইউ অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৩৪টি খনিজের মধ্যে ১৯টি উৎপাদন করে। অন্য দিকে, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানে যথাক্রমে ৭১, ১৭ ও ৪৩ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের মজু্ত রয়েছে।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ইইউ তার ৯৪ শতাংশ বিরল খনিজ পদার্থের জন্য চিন, মালয়েশিয়া ও রাশিয়া থেকে আমদানির উপর নির্ভর করত, যা সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইইউ চিন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলির উপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে এবং শীর্ষ সম্মেলনটিতে মধ্য এশিয়ার প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জন্য ৩.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের তাৎপর্যের কথা তুলে ধরে ফন দের লেইন চিনের নাম না করেই বলেছেন যে, অন্যান্য শক্তি ‘কেবল শোষণ ও উত্তোলনে আগ্রহী’। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, স্থানীয় শিল্প ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ করে ইইউ একটি ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে থাকা এই অঞ্চলটি মধ্য এশিয়ায় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্প ও হাইড্রোকার্বন উন্নয়নকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে। ইইউ এই প্রকল্পগুলিতে প্রায় ৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং নেতারা এই বছরের শেষের দিকে সংযোগ, বিশেষ করে টিআইটিআর উন্নয়নের জন্য আর একটি বিনিয়োগকারী শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে সম্মত হয়েছেন।
মধ্য এশিয়া: ভূ-রাজনৈতিক আন্তঃপ্রবাহের মাঝে পথ করে নেওয়া
মধ্য এশিয়ার দেশগুলি স্থায়ী আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব সমাধানে অগ্রগতি অর্জন করেছে। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান সম্প্রতি খুজান্দ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে তাদের সীমানা চূড়ান্ত করেছে। এই সীমান্ত বিরোধগুলি চিরাচরিত ভাবে মধ্য এশিয়ায় সহযোগিতা ও সমন্বিতকরণকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যার ফলে সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলি আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও শিল্প প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য নতুন বাণিজ্য পথ তৈরি করছে। তবে, বৃহত্তর ইউরেশিয়ান অঞ্চলে, বিশেষ করে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া কেন্দ্রিক উত্তেজনা, ইইউ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সংযোগের প্রয়াসকে লঘু করে দিতে পারে। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘাত ২০২৩ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে, যার ফলে হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনীয় আর্মেনিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। টিআইটিআর এবং মধ্য এশিয়া থেকে ইইউ-তে গ্যাস ও তেল সরবরাহের বেশির ভাগ অংশ দক্ষিণ ককেশাসের মধ্য দিয়ে যায়।
চিন মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে অসংখ্য যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ভাবে প্রশিক্ষণ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদান করেছে।
শীর্ষ সম্মেলনের পর রাশিয়া তাজিকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক মহড়া শুরু করে এবং তার সাংস্কৃতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করে। টিআইটিআর-এর ক্রমবর্ধমান তাৎপর্যের সঙ্গে সঙ্গে বেজিং দক্ষিণ ককেশাসে, বিশেষ করে জর্জিয়া ও আজারবাইজানে বিআরআই-কে টিআইটিআর-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করছে। চিন গ্যাস, তেল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং এই অঞ্চল থেকে তার ৩০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে। বেজিং এই অঞ্চলে তার শক্তি জোরদার করার জন্য সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনকেও (এসসিও) কাজে লাগায়। চিন মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে অসংখ্য যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ভাবে প্রশিক্ষণ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদান করেছে।
উপসংহার
কয়েক দশক ধরে চিন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব মধ্য এশিয়ার দেশগুলির আমদানি ও রফতানি ক্ষমতার পাশাপাশি বৈদেশিক নীতির বিকল্পগুলিকেও সীমাবদ্ধ করে তুলেছে। তবুও মধ্য এশিয়ার দেশগুলি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক দৃশ্যপটে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য ইউরোপ ও অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। ইইউ আনুষ্ঠানিক ভাবে রাশিয়া ও চিনকে চ্যালেঞ্জ না করলেও তারা সক্রিয় ভাবে বিকল্প প্রদান এবং উভয় অঞ্চলের জন্য বাণিজ্য, সংযোগ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলনের পাশাপাশি অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন তৈরি করার চেষ্টা করে। এই অঞ্চলের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের প্রতি ইইউ-র ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি আঞ্চলিক সংহতিকে উৎসাহিত করবে এবং দু’টি ক্ষেত্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। তবে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস উভয় ক্ষেত্রেই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিরোধের চেয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহযোগিতা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নেতাদের ক্ষমতার উপরেই কার্যকারিতা নির্ভর করবে।
আয়জাজ ওয়ানি (পিএইচডি) অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Ayjaz Wani (Phd) is a Fellow in the Strategic Studies Programme at ORF. Based out of Mumbai, he tracks China’s relations with Central Asia, Pakistan and ...
Read More +