Author : Angad Singh Brar

Published on Feb 04, 2024 Updated 0 Hours ago

যেহেতু পি২০ ধাঁচের সংসদীয় কূটনীতি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, সামান্য সাংগঠনিক পরিবর্তন পি২০-কে একটি অনুকরণীয় বহুপাক্ষিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তিত করতে পারে

পি২০ কি একটি কম গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক কাঠামোয় গণতন্ত্রের সঞ্চার ঘটাতে পারে?

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সঙ্গে অংশীদারিত্বে ভারতীয় সংসদ দ্বারা ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর আয়োজিত নবম জি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিট (পি২০) সফল ভাবে সমাপ্ত হয়। জি২০-র সংসদীয় মাত্রা হিসাবে পি২০-তে অংশগ্রহণ করেছিলেন জি২০ দেশগুলির সংসদের প্রিজাইডিং অফিসাররা। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাও এই শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সারেন। অন্যান্য কূটনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনের বিপরীতে যেখানে রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানরা আলাপ-আলোচনায় নিযুক্ত হন, সেখানে পি২০ শীর্ষ সম্মেলনে বহুপাক্ষিক কূটনীতির সঙ্গে জড়িত সাংসদদের প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ব জুড়ে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সংসদগুলিকে জনগণের সদিচ্ছার মূর্ত প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এমন এক সন্ধিক্ষণে যেখানে প্রথাগত বহুপাক্ষিক প্রশাসনিক কাঠামো গণতান্ত্রিক বৈধতার সঙ্কটের কারণে সংস্কারের দাবির সম্মুখীন হচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাতীয় সাংসদদের সরাসরি সম্পৃক্ততা বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক কাঠামো গণতন্ত্রের সঞ্চার ঘটানোর একটি সম্ভাব্য দিশা প্রদান করে।

 

অন্যান্য কূটনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনের বিপরীতে যেখানে রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানরা আলাপ-আলোচনায় নিযুক্ত হন, সেখানে পি২০ শীর্ষ সম্মেলনে বহুপাক্ষিক কূটনীতির সঙ্গে জড়িত সাংসদদের প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

 

সংসদীয় কূটনীতিকে দুভাবে বোঝা যায়। প্রথমত, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সংসদীয় অঙ্গগুলির মধ্যে কূটনীতি পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) সাধারণ পরিষদের মধ্যে ঐকমত্য অর্জনের জন্য যে কূটনৈতিক আলোচনা চালানো হয়, সেটিকে সংসদীয় কূটনীতি হিসাবে দেখা যেতে পারে। একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি কূটনীতিকদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয় এবং সংসদীয় কূটনীতি হিসাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ে জাতীয় সাংসদদের সরাসরি সম্পৃক্ততার উপর মনোনিবেশ করতে বাধ্য করে। পি২০ শীর্ষ সম্মেলন এ হেন সমঝোতার জন্য উপযুক্ত মঞ্চ, যেখানে জাতীয় সাংসদরা জি২০ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হয়ে ওঠেজি২০-র মতো পি২০-ও একটি অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান এবং এর কোন স্থায়ী সদর দফতর বা কর্মী নেই। ফলে পি২০ একটি ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন বা আন্তর্জাতিক সংসদীয় সমিতি (আইপিএ) হয়ে ওঠে। পি২০-সমিতিভিত্তিক কাঠামোটি প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গ জাতীয় কাঠামোর বিপরীত, যা সংসদীয় মঞ্চগুলিতে দেখা যায় এবং যা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মতো বহুপাক্ষিক আন্তঃসরকারি সংস্থার অংশও বটে। যেহেতু পি২০ একটি আইপিএ হিসাবে কাজ করে, তাই এর বিবৃতি সিদ্ধান্তগুলি জাতীয় সংসদগুলির মতো একটি বাধ্যতামূলক সংবিধিবদ্ধ ক্ষমতা নেই, যারা এই শীর্ষ সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধি পাঠায়। পি২০ প্রক্রিয়ার নেপথ্যের যৌক্তিকতা বাধ্যতামূলক বনাম বাধ্যবাধকতাহীনতা সংক্রান্ত আইনি বিতর্কের চেয়ে অনেক গভীরে প্রোথিত।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাতীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদের তরফে দেওয়া স্পষ্ট স্বীকৃতি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলি স্থানীয় নির্বাচনী পরিসরেও বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলি প্রকৃতির আন্তঃসীমান্ত স্থানীয় সংসদীয় নির্বাচনী এলাকাগুলিকেও প্রভাবিত করে বৃহত্তর আলাপ-আলোচনা এই নির্বাচনী এলাকার সাংসদদের সম্পৃক্ততা প্রত্যক্ষ আলোচনা প্রক্রিয়ায় উক্ত সমস্যা দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বকে প্রভাবিত করে পি২০ এই উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল সে সময়ে তার পরিধি আজকের মতো বিস্তৃত ছিল না। ২০১৬ সাল থেকে জি২০ একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ থেকে নিজের পরিধিকে আরও প্রসারিত করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে। পরিধির এই সম্প্রসারণ পি২০ শীর্ষ সম্মেলনেও প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে সমস্ত পি২০ শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিগুলি জি২০-র সাথে সমসাময়িক পরিধির সম্প্রসারণ দর্শিয়েছে।

 

পি২০ সম্মেলনের ক্ষমতা

একটি বর্ধিত পরিধি থাকা সত্ত্বেও পি২০-র সংসদীয় কূটনীতির প্রভাবকে মাত্রাতিরিক্ত বলা যাবে না। পি২০-র গঠন সমিতিভিত্তিক হওয়ার একটি সমস্যা হল এই যে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাসমাবেশগুলি নিয়মিত ছিল না ২০১০ সাল থেকে জি২০ ১৩ বার আয়োজিত হয়েছে, যেখানে পি২০-র সম্মেলনের সংখ্যা মাত্র আটএমনকি পি২০ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত পি২০ আসলে জি২০ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দিল্লি পি২০ ছিল প্রধান জি২০ সম্মেলনের ফলো-আপ মাত্রফলে পি২০ শীর্ষ সম্মেলন একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসের মধ্যে কাজ করে, যেখানে এটিকে সংসদীয় আলোচনার কেন্দ্র হিসাবে উপস্থাপন করা হয় না, যেগুলি রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানদের কাছে প্রতিক্রিয়া প্রেরণ করে। এই বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসের সীমাবদ্ধতা থাকলেও পি২০ পাশাপাশি ঘটতে থাকা দ্বিপাক্ষিকতার একটি বিন্যাসকে সহজতর করে, যা সাংসদদের কূটনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

 

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত পি২০ আসলে জি২০ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দিল্লি পি২০ ছিল প্রধান জি২০ সম্মেলনের ফলো-আপ মাত্র

 

এটি অবশ্যই উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে এই ধরনের আন্তঃসংসদীয় কূটনীতি দেখা যায় না, যেহেতু এটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনও সংস্থা নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে সংসদীয় প্রতিনিধিত্বের অভাব মোকাবিলা করার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপুঞ্জে পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি গড়ার সুপারিশ করেছিল, যেখানে প্রতিনিধিরা সরাসরি সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা নির্বাচিত হবেন। একটি নতুন সংসদীয় সংস্থা তৈরির এই ধারণাটির যথেষ্ট অ্যাকাডেমিক গুরুত্ব থাকলেও এর বাস্তবায়ন নিছক স্বপ্ন বলেই মনে হয়। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জ সাংগঠনিক সংস্কারের দাবিগুলির প্রতি অনমনীয় রয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলে পি২০ শীর্ষ সম্মেলন নিজেকে একটি উর্বর সংসদীয় মঞ্চ হিসাবে উপস্থাপন করে, যা নির্বাহীদের দ্বারা পরিচালিত বহুপাক্ষিক কাঠামোয় গণতান্ত্রিক বৈধতা প্রসারিত করার ক্ষমতা রাখে।

 

একটি সম্ভাব্য পথনির্দেশিকা

রাষ্ট্রপুঞ্জের সংসদীয় পরিষদ গঠনের জন্য প্রচারাভিযান এই পরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য  সম্ভাব্য পথনির্দেশিকা হিসাবে একটি তিন পর্যায়ের ধারাবাহিক পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। প্রথম পর্যায়ে, সংসদীয় পরিষদ কোন চুক্তির সমর্থন ছাড়াই শুধু মাত্র একটি পরামর্শ প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এই পর্যায়ে সংস্থাটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান সাধারণ পরিষদের কাজকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ধীরে ধীরে সংস্থাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্রাথমিক অঙ্গ হিসাবে আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি লাভ করবে। প্রকল্পটি এখনও শুরু না হলেও পি২০-কে ইতিমধ্যেই এই প্রথম পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে কারণ এটি জাতীয় আইনসভা থেকে সংসদীয় প্রতিনিধিত্বকে যুক্ত করে জি২০ প্রক্রিয়ার বহুপাক্ষিকতাকে সমর্থন জোগায়

 

পি২০-র বিদ্যমান বিন্যাসে পরিবর্তন আনা আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যে পরিবর্তন ঘটানোর চেয়ে সহজ।

 

পি২০-গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে জি২০-তে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি। এর ফলে গোষ্ঠীটি বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এর পাশাপাশি পি২০-সমিতিভিত্তিক কাঠামো এই মঞ্চের সম্ভাবনাগুলিকেও বৃদ্ধি করে কারণ এটি জি২০ নেতৃত্বের পাশাপাশি যথেষ্ট নীতিগত পরিসর প্রদান করে। পি২০ সমষ্টিকে একটি বিস্তৃত ভূমিকা দেওয়ার জন্য সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে, এমন কোনও আইনি উপকরণ অবশ্য নেই। সুতরাং, পি২০-র বিদ্যমান বিন্যাসে পরিবর্তন আনা আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যে পরিবর্তন ঘটানোর চেয়ে সহজ। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হল পি২০ শীর্ষ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা - তা হয় প্রধান জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ববর্তী পরামর্শমূলক অনুশীলন হিসাবে অথবা জি২০-র পরে সংসদীয় আলোচনা হিসাবে। কোনটা আগে, কোনটা পরে এই বিভ্রান্তির নিষ্পত্তি করার জন্য নির্বাহী নেতৃত্বাধীন জি২০ ও পি২০-তে সংসদীয় অংশগ্রহণের মধ্যে পরামর্শমূলক সম্পর্ককে তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে। আর কটি মৌলিক পদক্ষেপ হল পি২০-র বার্ষিক ধারাবাহিকতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যেহেতু সংসদীয় কূটনীতির এই পথটি ইতিমধ্যেই গ্রহণযোগ্যতা দর্শিয়েছে - যা কিনা ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে দৃশ্যমান - তাই সামান্য সাংগঠনিক পরিবর্তনগুলি পি২০-কে একটি অনুকরণীয় বহুপাক্ষিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি রাখে।

 


অঙ্গদ সিং ব্রার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.