Published on Oct 16, 2025 Updated 0 Hours ago

টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও কার্যকর ভাবে এগিয়ে চলেছে।

ভারত ও যুক্তরাজ্য: অস্থির বিশ্বে সম্পর্ক গড়ে তোলা

জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাজ্য সফরের পর ৮-৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের প্রাইম মিনিস্টার কের স্টারমার তাঁর প্রথম ভারত সফর করেন। দ্বিপাক্ষিক ভারত-যুক্তরাজ্য অংশীদারিত্ব জোরদার করার লক্ষ্যে চারটি মূল ক্ষেত্র অর্থাৎ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্য-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা সিইটিএ) সমাপ্তির পর যা দরুন  বর্তমান ৪২ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে - স্টারমারের ভারত সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। তিনি উপযুক্ত ভাবে ভারতের ব্যবসায়িক ও আর্থিক রাজধানী মুম্বই শহরকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি নিজে সঙ্গে সিইও, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক নেতাদের মিলিয়ে ১২৫ জনের একটি বিশাল প্রতিনিধিদলকেও নিয়ে এসেছিলেন।

২০১৮ সালে প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার থেরেসা মে-র চিন সফরের পর এটি যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম সরকারি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল ছিল, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মৃত ভারতীয় অর্থনীতির ইঙ্গিত সত্ত্বেও ব্রিটেন ভারতকে ব্যবসা করার জায়গা বলেই মনে করে। সিইটিএ-র অনুমোদন - যা শুল্ক কমাবে এবং বাজারে প্রবেশাধিকার ও বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি করবে - পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে ব্রিটিশ সরকারের মতে, বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা সত্ত্বেও চুক্তিটি ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যে ১ বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ ,০০০ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।

সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলিকে সামুদ্রিক বৈদ্যুতিক চালনা ব্যবস্থা দিয়ে শক্তি প্রদানের চুক্তির পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগের (আইপিওআই) অধীনে একটি নতুন ভারত-যুক্তরাজ্য আঞ্চলিক সমুদ্র সুরক্ষা কেন্দ্রের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা - যা গত দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা উপকরণ কেনার মাত্র ৩% ছিল ঐতিহ্যগত ভাবে পিছনের সারিতেই ছিল তবে তা এখন অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভারত ভিশন ২০৩৫ নথিতে এটি জোর দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যখন ভারত রাশিয়ার উপর থেকে অস্ত্র নির্ভরতা বহুমুখীকরণ তার সক্ষমতা আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং ব্রিটেন তার প্রতিরক্ষা খাত ফতানি বৃদ্ধি করছে। এই প্রেক্ষাপটে, উভয় পক্ষ ভারতে হালকা ওজনের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন  পাউন্ডের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

স্টারমারের সফরের পাশাপাশিই দুই দেশ পশ্চিম ভারত মহাসাগরে তাদের দ্বিপাক্ষিক কোঙ্কন নৌ মহড়া পরিচালনা করেছে এই মহড়া দর্শায় যে, ইউক্রেন যুদ্ধের উপর যুক্তরাজ্যের আরও আসন্ন মনোযোগ সত্ত্বেও টোরিদের দ্বারা ধারণা করা ইন্দো-প্যাসিফিক ঝোঁক এখন অব্যাহতই থাকবে বলে মনে হচ্ছে। সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলিকে সামুদ্রিক বৈদ্যুতিক চালনা ব্যবস্থা দিয়ে শক্তি প্রদানের চুক্তির পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগের (আইপিওআই) অধীনে একটি নতুন ভারত-যুক্তরাজ্য আঞ্চলিক সমুদ্র সুরক্ষা কেন্দ্রের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

টেকনোলজি সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের আওতায়, দুই দেশ জলবায়ু প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ তহবিল, এআই-এর জন্য একটি যৌথ কেন্দ্র সরবরাহ শৃঙ্খল এবং সবুজ প্রযুক্তি বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ শিল্প গিল্ড সহ বিভিন্ন উদ্যোগ উন্মোচন করেছে। ইতিমধ্যে নয়টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় বিধানগুলি কাজে লাগিয়ে এবং দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করে ভারতে ক্যাম্পাস স্থাপন করবে। ভারতে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সম্প্রসারণ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের উন্নতি ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে (এখনও যুক্তরাজ্যে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের তুলনায় অনেক কম) এবং একই সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করবে। (অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ কোটি আসনের প্রয়োজন হবে)।

যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতা তথ্য ভাগাভাগির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে এবং এপ্রিল মাসে ঘটা পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দিয়ে স্টারমার সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে মনে হচ্ছে। এর পাশাপাশি, দ্রুতই যুক্তরাজ্যে তিনটি বলিউড চলচ্চিত্র চিত্রায়িত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে

ভারতের সঙ্গে নিবিড় অর্থনৈতিক সহযোগিতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ জ্বালানির দাম আনুমানিক ৩০-৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেটের ঘাটতির সঙ্গে যুঝতে থাকা মন্থর ব্রিটিশ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা আশু প্রয়োজন

ভারত সফর ঘিরে এত জাঁকজমকের মধ্যেও স্টারমারের অভ্যন্তরীণ চাপানউতোর এখনও অব্যাহত এবং রিফর্ম ইউকে-র নাইজেল ফ্যারাজের কাছ থেকে তিনি গুরুতর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনভারতের সঙ্গে নিবিড় অর্থনৈতিক সহযোগিতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ জ্বালানির দাম আনুমানিক ৩০-৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেটের ঘাটতির সঙ্গে যুঝতে থাকা মন্থর ব্রিটিশ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা আশু প্রয়োজন সেপ্টেম্বর মাসে অতি-দক্ষিণপন্থী কর্মী টমি রবিনসনের সমাবেশে স্পষ্ট ভাবে প্রদর্শিত তীব্র অভিবাসন-বিরোধী মনোভাবের প্রেক্ষিতে, যুক্তরাজ্য কী ভাবে বিদেশ থেকে কর্মীদের সীমাবদ্ধ করে শ্রমিক ঘাটতি মোকাবিলা করবে, তা সময়ই বলবে।

যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে তোষামোদ অন্যান্য কৌশলের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক তুলনামূলক ভাবে ভাল ভাবে পরিচালনা করলেও ট্রাম্পের ভারতীয় আমদানির উপর ৫০% শুল্ক আরোপের কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখনও টানাপড়েনপূর্ণ, যা আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার জন্য আরও বেশি উৎসাহ যোগায়। তবুও দুটি দেশকে স্বাভাবিক অংশীদার বলে প্রচারণা চালানো সত্ত্বেও ভারত-যুক্তরাজ্য অংশীদারিত্ব প্রতিবন্ধকতাহীন নয়।

স্টারমার স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি ভারতীয় কর্মীদের জন্য ভিসা নিয়ম শিথিল করার ইচ্ছা পোষণ করেন না, বরং বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে অনির্দিষ্ট কালের জন্য থাকার ছুটি দাবি করার জন্য প্রয়োজনীয় বছরের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। ইউক্রেনকে যুক্তরাজ্যের সক্রিয় সমর্থন সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য রকমের দ্বন্দ্বের কারণ হয়নি তবে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল ক্রয় ইদানীং পশ্চিমি দেশগুলিতে আরও বেশি তদন্তের অধীনে রয়েছে। ইতিমধ্যে, খালিস্তান কাশ্মীর সমস্যাগুলি বারবার প্রকাশ্যে উঠে আসছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত সমস্যা উৎপত্তির নিয়মের মতো বাণিজ্য বাধাগুলি এখনও মনোযোগের প্রয়োজন এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি এবং আরও ভাল বিরোধ নিষ্পত্তি এখনও আলোচনার অধীনে রয়েছে। যুক্তরাজ্যের কার্বন সীমান্ত সমন্বয় ব্যবস্থার বিষয়েও দুই দেশের পার্থক্য সমাধান করতে হবে, যা ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে কার্যকর হতে চলেছে এবং কার্বন-নিবিড় ভারতীয় আমদানিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত সমস্যা উৎপত্তির নিয়মের মতো বাণিজ্য বাধাগুলি এখনও মনোযোগের প্রয়োজন এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি এবং আরও ভাল বিরোধ নিষ্পত্তি এখনও আলোচনার অধীনে রয়েছে।

এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও এ কথা আশাব্যঞ্জক যে, সম্পর্কটি এখন আরও কার্যকর ভাবে এগিয়ে চলেছে এবং অতীতে যে উদ্বেগগুলি সম্পর্কটিকে প্রতিকূল করে রেখেছিল, তা থেকে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার পক্ষে বিকশিত হচ্ছে। স্টারমার ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের বিশিত ভারত অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার বিষয়ে তাঁর দেশের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বের চতুর্থ ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সহযোগিতা কি অস্থিতিশীলতার যুগে স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে কাজ করতে পারে? পরিশেষে, সমস্ত প্রতিশ্রুতির জন্য ভারত-যুক্তরাজ্য অংশীদারিত্বের সাফল্য লন্ডন দিল্লির বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস-এ।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Shairee Malhotra

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra is Deputy Director - Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation.  Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on ...

Read More +