সম্প্রতি পেশ করা চলতি আর্থিক বর্ষের সম্পূর্ণ বাজেট - যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেটও বটে - ভারতীয় বিদেশনীতির গতিপথের কিছু মূল প্রবণতাকে তুলে ধরে। এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে, ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও, বিদেশমন্ত্রকের (এমইএ) জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট সামগ্রিক বাজেটের ১%-এর নীচে। যাই হোক, গত বছরের তুলনায় আনুমানিক বাজেটে ২৩% বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে। এই বাজেটে এমইএ-এর জন্য এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক অর্থাৎ ২২,১৫৫ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। বিশেষ কূটনৈতিক ব্যয়, গ্যারান্টি রিডেম্পশন তহবিল, দূতাবাস ও মিশন এবং প্রতিবেশীদের সহায়তার উপর উল্লেখযোগ্য মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এই বাজেট ভারতের বিদেশনীতিকে সঠিক পথে চালিত করবে। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়ে গিয়েছে।
এমইএ বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অন্যান্য কেন্দ্রীয় খাতের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এই বিভাগটিতে বরাদ্দ গত বছরের ৫২৫৬ কোটি টাকার তুলনায় বেড়ে এ বছর ১০০৪৬ কোটি টাকা হয়েছে। বিশেষ কূটনৈতিক ব্যয় বা বিবেচনামূলক ব্যয়ের হিসাব (৪৬৫৯ কোটি টাকা) এবং গ্যারান্টি রিডেম্পশন ফান্ডস অ্যাকাউন্টস (৪৩৮৩ কোটি টাকা) মোট বরাদ্দের বেশির ভাগ জুড়ে রয়েছে। বিবেচনামূলক ব্যয়ের জন্য এই উচ্চ বরাদ্দ ভারতকে তার প্রভাব, জনসাধারণের উপলব্ধি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যখন চিন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যবস্থা অপ্রত্যাশিত উপায়ে বিকশিত হচ্ছে।
একই ভাবে, গ্যারান্টি রিডেম্পশন ফান্ডগুলি সন্দেহজনক ঋণগুলির জন্য কেন্দ্র কর্তৃক এক্সিম ব্যাঙ্ককে দেওয়া গ্যারান্টিগুলিকে বোঝায়। গ্লোবাল সাউথ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য এই ধরনের গ্যারান্টি প্রয়োজন এবং এই গোষ্ঠীর মধ্যে অনেক জোটই সাম্প্রতিক বহুমুখী সঙ্কটের সঙ্গে যুঝছে। নিজের স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে এমইএ রাষ্ট্রপুঞ্জ, সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন এবং কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলিতেও বাজেট বরাদ্দ করেছে। ভারত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি এবং নালন্দা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত এবং অ-স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলিকে অর্থায়নের মাধ্যমে তার সক্ষমতা এবং শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করার কাজটি অব্যাহত রেখেছে।
বাজেটের দ্বিতীয় প্রধান উপাদান হল কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ব্যয়, যা ৬৯৪৫ কোটি থেকে ৬৪৪১ কোটি টাকায় হ্রাস পেয়েছে। সচিবালয়, দূতাবাস/মিশন, পাসপোর্ট এবং অভিবাসন, নারীদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং জনকূটনীতি, উচ্ছেদ প্রকল্প, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আতিথেয়তা ও উচ্চ পর্যায়ের সফরের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকেরও বেশি (৩৮৬৮ কোটি টাকা) দূতাবাস এবং মিশনের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে, যা গত বছরের ৩৫২৯ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বরাদ্দ বিদেশে তার অভিযানগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং তার বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি ও কূটনৈতিক কার্যকলাপকে আরও জোরদার করার জন্য ভারতের সদিচ্ছার উপর জোর দেয়।
বাজেটের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত উপাদান হল ৫৬৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ-সহ স্কিম এবং প্রকল্প, যার মধ্যে দেশগুলিতে সহায়তা, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সাংস্কৃতিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সহায়তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতের প্রতিবেশীর জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে, যা সরকারের প্রতিবেশ প্রথম নীতি এবং এই অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও বৃদ্ধির (সাগর) দৃষ্টিভঙ্গিকেই দর্শায়। ভারত নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য ক্ষমতাকে কাজে লাগতে এবং এই অঞ্চলে চিনের একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছরের ২৪০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ভুটানের জন্য ২০৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ভুটানই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রাপক। নেপাল (৭০০ কোটি), শ্রীলঙ্কা (২৪৫ কোটি) এবং সেশেলসের (৪০ কোটি) জন্য বরাদ্দ বাজেট পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তার প্রকল্পগুলির দ্রুত বাস্তবায়নের উপর ভারতের মনোযোগকে দর্শায়। মলদ্বীপ এবং আফগানিস্তানে বরাদ্দ গত বছরের আনুমানিক বাজেটের মতোই রয়েছে। অবশেষে, মরিশাস (৩৭০ কোটি), মায়ানমার (২৫০ কোটি) এবং বাংলাদেশের (১২০ কোটি) জন্য বরাদ্দ টাকা গত বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এই সব কিছুই কাবুল এবং নেপিদউ-এর প্রশাসনব্যবস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালানোর অন্তর্নিহিত জটিলতা, ঢাকাকে বাণিজ্যিক সহায়তার অগ্রাধিকার, মলদ্বীপে প্রকল্পগুলির ধীরগতির বাস্তবায়ন এবং মরিশাসের সঙ্গে নতুন প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।
প্রতিবেশের ঊর্ধ্বে উঠে ভারত আফ্রিকান এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে তার সহায়তা বাড়িয়েছে। চাবাহার (১০০ কোটি) ও ইউরেশিয়ার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি একই রয়ে গিয়েছে, যা এই অঞ্চলগুলিতে নয়াদিল্লির অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করেছে। যাই হোক, লাতিন আমেরিকা ও দুর্যোগ ত্রাণের ক্ষেত্রে সহায়তায় হ্রাস ঘটেছে, যা সম্ভাব্য ভাবে প্রথম প্রতিক্রিয়াকারী হিসাবে ভারতের ভূমিকাকে প্রভাবিত করবে।
বরাদ্দকৃত তহবিলের আংশিক ব্যবহার, প্রকল্পের ধীরগতি বাস্তবায়ন এবং স্বল্প কর্মী নিয়োগের মতো কাঠামোগত সমস্যাগুলি বাজেটের সফল বাস্তবায়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতপক্ষে, ৪৫০০ জন কর্মী-সহ – যাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০০ আইএফএস অফিসার - ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এমইএ-র এখনও উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.