Author : Soumya Bhowmick

Published on Aug 10, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতের তরুণ জনসংখ্যার প্রোফাইল ইতিবাচকভাবে বিশ্ব শ্রম বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে যদি কৌশলগত প্রচেষ্টা যুক্ত করা হয়

বৈশ্বিক কর্মশক্তি ব্যবধান হ্রাস: একটি ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিত

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসাবে চিনকে ছাড়িয়ে ভারতের জনসংখ্যাগত মাইলফলকটি অনেক উন্নত দেশে শ্রমের ঘাটতি মোকাবিলার জন্য অনন্য অবস্থানে রয়েছে৷ জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ কর্মক্ষম (১৫-৬৪ বছর) এবং ২৭ শতাংশেরও বেশির বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। ভারতের এই তরুণ জনসংখ্যার প্রোফাইল বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা উপস্থাপন করে।

ভারতের চাকরির বাজার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কারণ এটি কোভিড-১৯-এর পরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ। এই দ্রুত অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, যা শক্তিশালী বেসরকারি উপভোগ ও সরকারি বিনিয়োগ দ্বারা চালিত, ভারতকে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
সাম্প্রতিক ওআরএফ রিপোর্ট থেকে কর্মসংস্থানের স্থিতিস্থাপকতার অনুমানগুলি ক্ষেত্র, অঞ্চল ও লিঙ্গভিত্তিক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য প্রকাশ করে। পরিষেবা ক্ষেত্রটি সর্বাধিক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের স্থিতিস্থাপকতা দেখায়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় (০.৫৩) এবং মহিলাদের মধ্যে (০.৩১)।


ভারতের চাকরির বাজার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কারণ এটি কোভিড-১৯-এর পরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ।



অন্যদিকে, অনেক উচ্চ-আয়ের দেশ দ্রুত জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে যা বয়স্ক জনসংখ্যার আধিক্য এবং হ্রাসপ্রাপ্ত জন্মহার দ্বারা চিহ্নিত।
২০৫০ সালের মধ্যে এই দেশগুলিতে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা ৯২ মিলিয়নের বেশি সঙ্কুচিত হবে, যখন তাদের বয়স্ক জনসংখ্যা (৬৫ এবং তার বেশি) ১০০ মিলিয়নেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই পরিবর্তন একটি গুরুতর ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে: বয়স্ক প্রজন্মকে সমর্থন করার জন্য পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অবদান রাখতে কর্মক্ষম ব্যক্তিরা অপরিহার্য, এবং এইভাবে আর্থিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

বর্তমান অনুপাত রক্ষা করার জন্য, উন্নত দেশগুলির আগামী ৩০ বছরে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি নতুন শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এটি এমন একটি প্রয়োজন যা ঘরোয়া কর্মীদের সংঘবদ্ধকরণ পূরণ করতে পারে না। এটি দেখায় যে কীভাবে ভারত কৌশলগতভাবে তার শ্রম সরবরাহকে উন্নত অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে সারিবদ্ধ করতে পারে, এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও একীকরণ নিশ্চিত করতে পারে। ভারতের জনসংখ্যা তরুণ এবং ক্রমবর্ধমান, যখন অনেক উন্নত অর্থনীতি সঙ্কুচিত কর্মশক্তির সম্মুখীন। উদাহরণস্বরূপ, ২০৫০ সাল নাগাদ জার্মানিতে কর্মজীবী জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন হ্রাস পাবে, আর বয়স্ক জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। জাপান, ইতালি ও অন্য উন্নত দেশগুলিতে অনুরূপ প্রবণতা লক্ষিত হয়।

চিত্র ১: নির্বাচিত ওইসিডি দেশগুলিতে কর্মক্ষম বয়স জনসংখ্যার (২০-৬৪ বছর বয়সী) অনুমিত হ্রাস

‌সূত্র:
ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরাম

শ্রম গতিশীলতা এই সম্ভাব্য অভিবাসীদের নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে, এবং বিশ্বব্যাপী ন্যয্যতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। যেমন, ধনী দেশে চলে যাওয়া শ্রমিকেরা তাদের আয়
৬ থেকে ১৫ গুণ বৃদ্ধির আশা করতে পারে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র্য দূর করে। ভারতের জনসংখ্যাগত সুবিধা যথেষ্ট সম্ভাবনাময় কর্মশক্তি তৈরি করে। হিসাবগুলি অনুমান করে যে ভারতসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে ২০৫০ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন নতুন কর্মক্ষম ব্যক্তি এসে যাবে৷ এই উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি উন্নত দেশগুলিতে শ্রম চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করার একটি সুযোগ এনে দেয়৷

শ্রম গতিশীলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা

শ্রম গতিশীলতার ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তি অভিবাসীদের বাইরেও প্রসারিত। অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স তাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০২২ সালে ভারত
১১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে, এবং প্রথম দেশ হিসেবে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ভারতের পরে ছিল মেক্সিকো, চিন, ফিলিপিনস ও ফ্রান্স। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার উপর জোর দেয়, যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রাপকদের মধ্যে রয়েছে। এই তহবিলগুলি দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। যাই হোক, অতিমারি অভিবাসী শ্রমিকদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে যারা স্বল্প-দক্ষ চাকরিতে রয়েছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য চাকরি হারানোর ঘটনা ঘটেছে এবং ঋণ হয়েছে।


অনেক উচ্চ আয়ের দেশে অভিবাসী-‌বিরোধী মনোভাব এবং সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতি সম্ভাব্য অভিবাসীদের জন্য বাধা সৃষ্টি করে।



এই সুস্পষ্ট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শ্রম গতিশীলতা সমর্থনকারী বর্তমান ব্যবস্থাগুলি প্রয়োজনীয় আয়তন পরিচালনা করার জন্য অপ্রতুল, এবং প্রায়শই জনসাধারণের নেতিবাচক ধারণা দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক উচ্চ আয়ের দেশে অভিবাসী-‌বিরোধী মনোভাব এবং সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতি সম্ভাব্য অভিবাসীদের জন্য বাধা সৃষ্টি করে। এই সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলি প্রায়ই এমন নীতির দিকে চালিত করে যা অভিবাসীদের সংখ্যা সীমিত করে এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। তার উপর আবার অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত আইনি ও আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলি ভয়ঙ্কর হতে পারে। অনেক দেশে জটিল অভিবাসন প্রক্রিয়া রয়েছে যা সম্ভাব্য অভিবাসীদের আটকাতে পারে। উপরন্তু, অভিবাসীদের তাদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং সমাজের উৎপাদনশীল সদস্য হতে সাহায্য করার জন্য প্রায়ই ব্যাপক একীকরণ কর্মসূচির অভাব থাকে।

এই চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করতে একটি কৌশলগত এবং সু-সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। একটি সম্ভাব্য সমাধান হল শ্রমের গতিশীলতার সুবিধার্থে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলিকে উন্নত করা। অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করা, অভিবাসন সুযোগ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রদান, এবং অভিবাসীদের জন্য সহায়তা পরিষেবা প্রদান এই প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজসাধ্য ও দক্ষ করে তুলতে পারে। তা ছাড়া জনসচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে জনসাধারণের নেতিবাচক ধারণাগুলিকে মোকাবিলা করা এবং অভিবাসীদের ইতিবাচক অবদানগুলিকে তুলে ধরা শ্রম গতিশীলতার জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

ভারতীয় শ্রমের কৌশলগত একীকরণ

ভারতের লক্ষ্য সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সুবিধার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে "বিশ্ব গুরু" (বিশ্ব শিক্ষক) থেকে "বিশ্ববন্ধু" (বৈশ্বিক অংশীদার) হয়ে ওঠা। বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারের চাহিদা কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য এই পরিবর্তন অপরিহার্য। এই পরিবর্তনের সুবিধার্থে ভারতকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা দিয়ে তার কর্মীবাহিনীকে সজ্জিত করার জন্য দক্ষতা তৈরির উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে হবে।


অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করা, অভিবাসন সুযোগ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রদান, এবং অভিবাসীদের জন্য সহায়তা পরিষেবা প্রদান এই প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজসাধ্য ও দক্ষ করে তুলতে পারে।



আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় কর্মীদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য দক্ষতার উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগগুলির উচ্চ চাহিদার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত, যেমন প্রযুক্তি ক্ষেত্র, উন্নত দেশগুলিতে নির্দিষ্ট ঘাটতি পূরণের জন্য পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণ, এবং যোগাযোগ দক্ষতা ও সাংস্কৃতিক অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ। উপরন্তু, ভারতীয় শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ এমন একটি শক্তিশালী দক্ষতার বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে যা বৈশ্বিক মান পূরণ করে।

উন্নত অর্থনীতিতে ভারতীয় শ্রমের কৌশলগত একীকরণের জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ জড়িত। প্রথমত, উন্নত দেশগুলির তীব্র শ্রম ঘাটতির মুখোমুখি উচ্চ-চাহিদা ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা প্রয়োজন, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা ও ম্যানুফ্যাকচারিং। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা এবং সামগ্রিক বৈশ্বিক আর্থিক প্রভাবের মূল্যায়ন-‌সহ শ্রমবাজার কাঠামো ব্যবহার করে এই খাতে ভারতীয় শ্রমকে একীভূত করার অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, ভারত থেকে বৈশ্বিক শ্রম অভিবাসনের জন্য সক্ষম শর্ত চিহ্নিত করে শ্রম গতিশীলতা বাড়ানোর মধ্যে পড়ে শ্রম গতিশীলতা লেনদেনের খরচ কমানো এবং ভারতীয় শ্রম বাজারে ফিরে আসা শ্রমিকদের মসৃণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

উপসংহারে, বিশ্বব্যাপী চাহিদার সঙ্গে ভারতের শ্রমশক্তির প্রাচুর্য্য কার্যকরভাবে সারিবদ্ধ করার জন্য লক্ষ্যসমন্বিত দক্ষতার উদ্যোগ, উন্নত শ্রম গতিশীলতা কাঠামো, এবং অভিবাসী কর্মীদের জন্য শক্তিশালী সহায়তা ব্যবস্থা-‌সহ বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। এই ধরনের কৌশলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত বিশ্বব্যাপী শ্রমশক্তির ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।



সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.