-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ব্রাজিলের ধারাবাহিক জি২০, ব্রিকস এবং সিওপি সভাপতিত্ব বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, সবুজ এবং ডিজিটাল শাসনব্যবস্থায় দক্ষিণ-দক্ষিণ নীতি সহযোগিতার জন্য একটি পরিসর তৈরি করে।
জুলাইয়ের প্রথম দিকে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলনটি বেশ কয়েকটি কারণে অভূতপূর্ব। প্রথমত, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কপ৩০-এর সভাপতিত্বের কারণে ব্রাজিলকে এক বছরের কাজ মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সঙ্কুচিত করতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জি২০-র সভাপতিত্বের পরপরই ব্রাজিলের ব্রিকসের সভাপতিত্ব ইতিহাসে একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করে। এটি ব্রাজিলকে স্বাস্থ্য সহযোগিতা এবং বিশ্বব্যাপী শাসন সংস্কারের মতো জি২০ অর্জনগুলিকে পদ্ধতিগত ভাবে এগিয়ে নিতে ব্রিকসের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কপ৩০-এর সভাপতিত্বের কারণে ব্রাজিলকে এক বছরের কাজ মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সঙ্কুচিত করতে হয়েছে।
‘আরও বেশি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল শাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদার করা’… এই প্রতিপাদ্যের অধীনে ব্রাজিল বাকবিতণ্ডায় ডুবে থাকার পরিবর্তে বার্তার উপর নির্ভর করার চেষ্টা করেছে। এটি বৃদ্ধি ও উন্নয়নের উপর তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমনটা সম্ভব হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নির্দিষ্ট প্রসঙ্গভিত্তিক সহযোগিতার কারণেই, যা ব্রিকস-এর মধ্যে বিদ্যমান গভীর ভূ-রাজনৈতিক পার্থক্য সত্ত্বেও খুবই সীমিত অথচ বৈধ সহযোগিতার ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটি যা সম্পূর্ণ ভাবে ‘সাধারণ ঐকমত্য’-এর দ্বারা পরিচালিত এবং যা ব্রিকস-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভিত্তিমূল নীতি।
ভ্রাতৃত্ববোধ এবং প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্র
এখনও পর্যন্ত ব্রিকস তার সদস্যদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার রক্ষক হওয়ার ফাঁদ এড়াতে পেরেছে। এর ফলে গ্লোবাল সাউথ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ব্রিকস কেবল ক্রমবর্ধমান ও সীমিত অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এই বিষয়গুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল বাণিজ্য সুবিধা, যা নেতার ঘোষণায় উল্লেখ করা হতে পারে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সহায়তায় ব্রাজিল বিকল্প অর্থপ্রদান ব্যবস্থার মাধ্যমে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনাকে একটি গঠনমূলক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং এমনটা ঘটেছে ডিজিটাল অর্থপ্রদান এবং স্থানীয় মুদ্রার অর্থপ্রদান সক্ষম করার ক্ষেত্রে। বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে সভাপতির বিবৃতি নিশ্চিত করে যে, আন্তঃসীমান্ত অর্থপ্রদানের জন্য প্ল্যাটফর্ম সক্ষম করার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং অনুমানযোগ্য ভাবে একটি সাধারণ মুদ্রা নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি, যা মহান দেশগুলি দ্বারা তৈরি করা একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। ব্রিকস-এর মধ্যে পরবর্তী কালের অসম্ভবতা দীর্ঘদিন ধরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং জোটের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণের দরুন তা আরও জোরদার হয়েছে।
টিকা সংক্রান্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা ব্রিকসের দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য এবং এই জোটে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা। ব্রাজিল স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার বিষয়টি একের পর এক সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র তৈরি করেছে। জি২০-এর সভাপতিত্বকালে, ব্রাজিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জোট প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিকস-এর সভাপতিত্বের জন্য ব্রাজিল টিকা সহযোগিতা এবং যক্ষ্মা (টিবি), ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের মতো ‘সামাজিক ভাবে নির্ধারিত রোগ নির্মূল’ করার বিষয়টি বেছে নিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল টিবি-র মতো রোগের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি - যা নিয়ে মূলত ব্রিকসের সম্প্রসারণের কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। নতুন সদস্যরা এখনও জনসাধারণের চেতনা থেকে উদ্গত পুরানো রোগগুলি থেকে মুক্তি পেতে লড়াই করছে, তা এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়াও - যেখানে বেশ কয়েকটি ব্রিকস সদস্যের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে - এই বৃহত্তর আলোচনার অংশ। টিকা সংক্রান্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা ব্রিকসের দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য এবং এই জোটে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রিকস সদস্যদের প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট টিকা গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কেন্দ্র রয়েছে যা ২০১৮ সালে এই উদ্যোগ চালু হওয়ার পর থেকে তাদের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য বাধ্যতামূলক।
সেতু নির্মাণ
ব্রিকস সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে সংযোগ ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা। অতিমারি ও পশ্চিম এশীয় সঙ্কটের ধাক্কা বিকল্প বাণিজ্য পথের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। এগুলি আন্তঃ-আফ্রিকান সংযোগের গুরুত্বও পুনর্ব্যক্ত করেছে। কারণ মহাদেশটি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পরবর্তী সীমানা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আফ্রিকার স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে। কারণ চিনের মতো নব্য দশকের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রগুলি ধীর হতে শুরু করেছে।
শক্তিশালী অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং সেগুলিকে শক্তিশালী করার উপায়গুলি সম্ভবত নেতাদের জন্য আলোচনার বিষয়। এটি এমন একটি বিষয় হতে পারে, যা জোটটি এগিয়ে নিতে পারে।
‘প্রয়োজনীয়’ বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তনের পরেও প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রয়োজনীয়তা সকল ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির ক্ষেত্রেই অনুভূত হয় এবং ব্রিকস অর্থনীতিও এর ব্যতিক্রম নয়। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো নতুন সদস্য এবং অংশীদাররা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সরবরাহ শৃঙ্খলের পরিবর্তনের উপর ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অংশ। ব্রিকস ২০৩০ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব কৌশল স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত করে যে, তারা ‘ডিজিটাল প্রশাসন’ এবং ব্লকের মধ্যে বাণিজ্য খরচ কমানোর উপর জোর দেওয়ার মতো নতুন বাণিজ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করে। কৌশলটিতে জ্বালানি নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বন্দর সংযোগ উন্নত করার বিষয়েও নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে।
ব্রিকস ২০৩০ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব কৌশল স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত করে যে, তারা ‘ডিজিটাল প্রশাসন’ এবং ব্লকের মধ্যে বাণিজ্য খরচ কমানোর উপর জোর দেওয়ার মতো নতুন বাণিজ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করে।
পরিশেষে, ডিজিটাল অর্থনীতি ও ডিজিটাল রূপান্তরকে কেন্দ্র করে উঠে আসা আলোচনা আধুনিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি মূল উপাদান। এটি অভ্যন্তরীণ শিল্পায়ন, স্বল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) সমর্থন এবং উন্নত উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলিকে জড়িত করে। কারণ ব্রিকস-এর নতুন ও পুরনো সদস্যরাও তাদের মূল্য শৃঙ্খলে অংশগ্রহণে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
উদ্দেশ্য এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা
ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ব্রিকস একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মঞ্চ। কারণ এটি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিষয়গুলিতে কম উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেও বিস্তৃত ঐকমত্য তৈরি করতে পারে। এটি পশ্চিমের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের অংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্ব থেকে পিছু না হঠে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের চ্যালেঞ্জগুলিকে বৈধতা দেয়। একটি মুক্ত ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি এবং ব্রিকসের মধ্যেও পুরনো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য অব্যাহত আহ্বানই এর প্রমাণ। এটি ব্রিকস-এর অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও সত্য - যাদের মধ্যে নতুন সদস্য দেশও রয়েছে - যারা ব্লকের অ-বাধ্যতামূলক কিন্তু ঐকমত্য-নির্মাণ ক্ষমতা দ্বারা সম্ভাব্য ভাবে আকৃষ্ট বোধ করে।
জাহ্নবী ত্রিপাঠী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Jhanvi Tripathi is an Associate Fellow with the Observer Research Foundation’s (ORF) Geoeconomics Programme. She served as the coordinator for the Think20 India secretariat during ...
Read More +