Author : Aleksei Zakharov

Published on Dec 20, 2024 Updated 0 Hours ago

ব্রিকস সামিট ২০২৪ এটা স্পষ্ট করেছে যে যদি সদস্যেরা বাস্তব ফলাফল চায়, তাহলে তাদের অবস্থান সারিবদ্ধ করতে হবে

ব্রিকস একটি 'টক শপ' থেকে একটি 'টক মল' হয়ে গিয়েছে

২২-২৪ অক্টোবর রাশিয়ার কাজান শহরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন পাঁচটি নতুন সদস্য — মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) — প্রথমবারের মতো গ্রুপিংয়ের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের সঙ্গেসঙ্গে ব্রিকসের উন্নয়নে একটি নতুন পর্যায় চিহ্নিত হয়েছে। ব্রিকস আউটরিচ প্রোগ্রামটির কারণে কাজান শীর্ষ সম্মেলনের মহিমাও বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ রাশিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলির প্রধানসহ প্রায় ৪০ টি দেশের কর্মকর্তাদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও, এর অর্থ ব্রিকসের বিবর্তন কিনা, তা এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

এর অস্তিত্ব জুড়ে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রুপিং-‌এর তাৎপর্য সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মতামত তৈরি হয়েছে। একটি দৃষ্টিভঙ্গি হল যে এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের প্রচেষ্টায় অ-পশ্চিমী শক্তিগুলির একটি একত্রিত উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে, যার মধ্যে দুটি—ভারত ও চিন—অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে প্রস্তুত, ব্রিকসকে একটি ফোরাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্রিকসের কার্যকারিতা এখনও পর্যন্ত সীমিত। যদিও পাঁচটি দেশ অসংখ্য ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং এক্সচেঞ্জ মেকানিজম নিয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, এবং তা ছাড়াও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের আলোচনার মূল প্রভাব বরং পরিমিত থেকেছে। একটি সাধারণ কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব, এবং সভার সংখ্যা ও তার ফলাফলের মধ্যে নিম্ন অনুপাতের কারণে, কিছু পর্যবেক্ষক ব্রিকসকে "
টক শপ" এর চেয়ে সামান্য বেশি বলে বর্ণনা করেছেন।


একটি সাধারণ কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব, এবং সভার সংখ্যা ও তার ফলাফলের মধ্যে নিম্ন অনুপাতের কারণে, কিছু পর্যবেক্ষক ব্রিকসকে "টক শপ" এর চেয়ে সামান্য বেশি বলে বর্ণনা করেছেন।



ব্রিকস-‌এর সম্প্রসারণের বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে কাজান শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে অন্য সমস্ত বিষয়কে ছাপিয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম ও ব্রিকস দেশগুলির মিডিয়া ফোরামে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছিল এর ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব, এবং এটি রাশিয়া ও তার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে বিচ্ছিন্ন নয় তার প্রমাণ কিনা, এই বিষয়গুলির উপর।

যদি কেউ উচ্চস্তরের উপস্থিতি ঘিরে প্রচারের রমরমা দিয়ে দেখেন, ফোরামের থেকে উদ্ভূত তিনটি বার্তা চোখে পড়বে। পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলন থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল যে চূড়ান্ত ঘোষণায় রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছিল। এটা সর্বজনবিদিত যে ভারত গত এক দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নথিতে এর উল্লেখ করতে নারাজ ছিল। চিনও, যদিও মস্কোকে বিধিনিষেধ এড়াতে সাহায্য করার জন্য সক্রিয়, ব্রিকস-এ এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা থেকে বিরত থেকেছে। ২০২২ সালের বেজিং ঘোষণায় নিষেধাজ্ঞার কোনও উল্লেখ ছিল না, এবং ২০২৩ সালের জোহানেসবার্গ যৌথ বিবৃতিতে শুধু কৃষি বাণিজ্যে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে,
কাজান ঘোষণাপত্রে "বিশ্ব অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপর অবৈধ নিষেধাজ্ঞা-‌সহ একতরফা জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ" এবং "একতরফা অর্থনৈতিক ও গৌণ নিষেধাজ্ঞা যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী," বলে উল্লেখ এবং এর নিন্দা করে দুটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তার সঙ্গে আছে "এগুলি নির্মূল করার আহ্বান"।

এটি আগেকার সতর্ক ব্রিকস সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি পরিবর্তনের প্রতিফলন হতে পারে, যা বেশ কয়েকটি মূল প্রকল্পে (যেমন, চাবাহার বন্দর) নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের সতর্ক সমালোচনা থেকে এবার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আরও দৃঢ় ঘোষিত অবস্থানে চলে গিয়েছে। গ্রুপিংয়ের নতুন সদস্য হিসাবে ইরান ও বেলারুশ ও কিউবা অংশীদার দেশের মর্যাদা লাভ করার সাথে সাথে, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলির অক্ষ প্রসারিত হচ্ছে এবং ইস্যুটি ব্রিকস প্লাস অ্যাজেন্ডায় বড় হতে থাকবে। যাই হোক, বেশিরভাগ ব্রিকস সদস্য এখনও উচ্চ বিশ্বায়িত এবং পশ্চিমী আর্থিক বাজারে জড়িত, তাই তারা সম্ভবত ব্রিকস-এর বাকি অংশের (প্রাথমিকভাবে, রাশিয়া এবং ইরান) উপর আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলবে। চিন, ভারত, মালয়েশিয়া, তুর্কিয়ে, তাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অন্যান্য দেশের প্রায় ৪০০টি সংস্থা ও ব্যক্তির উপর
নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্ত "এই দেশগুলির সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের জন্যই একটি গুরুতর বার্তা", যার মূলে রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ এড়ানোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কঠোর মনোভাব।


গ্রুপিংয়ের নতুন সদস্য হিসাবে ইরান ও বেলারুশ ও কিউবা অংশীদার দেশের মর্যাদা লাভ করার সাথে সাথে, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলির অক্ষ প্রসারিত হচ্ছে এবং ইস্যুটি ব্রিকস প্লাস অ্যাজেন্ডায় বড় হতে থাকবে।



দ্বিতীয় বার্তা হল, ব্রিকস দেশগুলি ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের অবস্থান সারিবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম করছে। ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব এবং লোহিত সাগরে হুথি হামলার মতো বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিটিই ছিল যৌথ বিবৃতিতে প্রধান নিরাপত্তা-সম্পর্কিত বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, ইজরায়েলের কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ভারত সহ সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের অবস্থানকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না। বিপরীতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত করে যে আয়োজক হিসাবে মস্কো মতামতের ব্যবধান কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে।

রাশিয়া ব্রিকস এজেন্ডা নিয়ে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিশ্র সংকেত পাঠাচ্ছে। ব্রিকস একটি পশ্চিম-‌বিরোধী ক্লাব হওয়া উচিত নয় বলে কিছু অংশীদারদের অনুভূতির প্রতিধ্বনি করার পাশাপাশি মস্কো কিন্তু পশ্চিম ও গ্লোবাল সাউথের মধ্যে ফাটল কাজে লাগানোর জন্য এবং পশ্চিমী রাজধানীগুলিকে "অস্পষ্ট সুরক্ষাবাদ, মুদ্রার  ও স্টক মার্কেটের কারসাজি […] এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের অ্যাজেন্ডা বাবহার করে প্রভাব বিস্তার" করার জন্য
অভিযুক্ত করতে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। কাগজে কলমে, এই বিষয়গুলির মধ্যে কিছু ভারতসহ তার অংশীদারদের মধ্যে অনুরণিত হতে পারে;‌ কিন্তু বাস্তবে, যেহেতু এখন রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রয়েছে, তাই তার বাগ্মীতা অন্য ব্রিকস সদস্যদের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে যায় (এর সঙ্গে ইরান সম্ভাব্য ব্যতিক্রম)।


ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব এবং লোহিত সাগরে হুথি হামলার মতো বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিটিই ছিল যৌথ বিবৃতিতে প্রধান নিরাপত্তা-সম্পর্কিত বিষয়।



শীর্ষ সম্মেলন থেকে তৃতীয় বার্তাটি হল, যখন আন্তঃব্যাঙ্ক সহযোগিতা গতি পাচ্ছে, সেই সময় মস্কোর মূল অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলির বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগবে। ব্রিকস ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (বিসিবিপিআই) — একটি এমন নতুন বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা যা একটি
আর্থিক প্রেরণ উপাদান অন্তর্ভুক্ত করবে এবং জাতীয় বা ডিজিটাল মুদ্রার দ্বারা সমর্থিত টোকেনগুলির মাধ্যমে দাম মেটানোর সুযোগ দেবে — এখনও অন্য সদস্যদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়নি। এই নতুন সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে রাশিয়ার অংশীদারদের অনিচ্ছার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ছিল মস্কোতে ব্রিকস অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের বৈঠকে জুনিয়র কর্মকর্তাদের পাঠানো। দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য সুস্পষ্ট। যদিও রাশিয়া একটি বিকল্প অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা তৈরি করাকে সময়ের প্রয়োজন হিসাবে মনে করে, অন্য সদস্যরা মার্কিন ডলার এবং সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রশ্নে অনেক বেশি সতর্ক। একটি শৃঙ্খলের সংযোগগুলির মতো, ব্রিকস গ্রেন এক্সচেঞ্জের বিকাশ বা অন্য পণ্যগুলির জন্য একটি বৃহত্তর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, এ সবই একটি দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে যা মুদ্রা নিষ্পত্তি এবং বিমা বিষয়গুলিতে একমত হওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।

ব্রিকস-‌এর সামনে চ্যালেঞ্জগুলো স্পষ্ট। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আগে অবশ্যই তাদের অবস্থানগুলি সারিবদ্ধ করতে হবে, যা এমন একটি কাজ যা নতুন দেশগুলি যোগ দেওয়ার পর আরও কঠিন হয়ে ওঠে। যেহেতু ব্রিকস আকার ও উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বেড়েছে, এবং বিভিন্ন অ্যাজেন্ডা ও পরিচয়সহ আরও অংশীদার দেশ গ্রহণ করার পথে রয়েছে, এর কথাকে কাজে রূপান্তর করা ব্রিকসের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। কাজান শীর্ষ সম্মেলন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ব্রিকসকে একটি নতুন 'টক মল'-‌এ রূপান্তরিত করা হচ্ছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিনিধি বিনিময় যে বাস্তব সিদ্ধান্তে  রূপান্তরিত হবেই, এমন নয়।



আলেক্সেই জাখারভ ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অন ওয়র্ল্ড অর্ডার স্টাডিজ অ্যান্ড দ্য নিউ রিজিয়নালিজম ফ্যাকাল্টি অফ ওয়র্ল্ড ইকনমি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হায়ার স্কুল অফ ইকনমিক্স রাশিয়া-র একজন রিসার্চ ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.