Published on Jun 27, 2023 Updated 0 Hours ago

ভাইব্র‌্যান্ট ভিলেজেস প্রোগ্রামের অধীনে ৩,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারাত- চিনসীমান্ত বরাবর নির্বাচিত প্রায় ৩,০০০ গ্রাম উন্নত পরিকাঠামো্র সুবিধা পেতে চলেছে

সীমান্তের গ্রামগুলো চিনা তৎপরতা মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে

ভারত–চিন সীমান্তের গ্রামগুলিতে বসবাসকারী ‘‌প্রথম নাগরিকদের’‌ কাছে পৌঁছনোর জন্য ভারত প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে‌। ‘‌ভাইব্র‌্যান্ট ভিলেজেস প্রোগ্রাম’‌–এর অধীনে ৩,৪০০ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর নির্বাচিত প্রায় ৩,০০০ গ্রাম উন্নত পরিকাঠামো্র সুবিধা পেতে চলেছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে রাস্তা নির্মাণের জন্য ২,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে, এবং ইন্ডো–টিবেটান বর্ডার পুলিশ কর্মীদের সুবিধাস্থলগুলি উন্নততর করা হবে৷ টেলিকম সংস্থাগুলিকে অরুণাচলের তাওয়াং জেলায়, যেখানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় ও চিনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানে মোবাইল সংযোগ উন্নত করতে বলা হয়েছে। সীমান্ত বরাবর এই বিশাল আকারের পরিকাঠামো পুনর্গঠন শুরু হয়েছে অরুণাচলের অঞ্চলগুলির নাম পরিবর্তন করার জন্য চিনের উদ্যোগের পরেপরেই। চিন অরুণাচলকে তিব্বতের একটি অংশ বলে দাবি করে। ভারতের প্রয়াসের লক্ষ্য হল এই অঞ্চলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, সেখানকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকতে উৎসাহিত করা এবং জীবিকার সুযোগের সন্ধানে শহরগুলিতে তাদের অভিবাসন রোধ করা। এই পদক্ষেপগুলির ফলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়বে।

সমুদ্র ও স্থল- এই দু ক্ষেত্রেই চিনের সম্প্রসারণের মূল উপাদান হল পরিকাঠামো নির্মাণ ও বেসামরিক–সামরিক সংমিশ্রণের মাধ্যমে ভূখণ্ডগত দাবির সম্প্রসারণ। এই বছর চিন ঘোষণা করেছে যে জিনজিয়াং ও তিব্বতকে সংযুক্ত করার জন্য একটি নতুন রেলপথ নির্মাণ শুরু করা হবে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) কাছাকাছি চলে আসবে এবং আকসাই চিন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে। ভারত দাবি করে চিনের দখলে থাকা আকসাই চিন তাদের। একইভাবে, ২০২১ সালে উন্মোচিত একটি পরিবহণ পরিকল্পনার অধীনে বেজিং একটি এক্সপ্রেসওয়ে এবং তাইওয়ানের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করার জন্য একটি সুপারফাস্ট রেলপথের কথা ঘোষণা করেছে। এ সবই চিনের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের অভিপ্রায় প্রদর্শনের উদাহরণ।

এই বছর চিন ঘোষণা করেছে যে জিনজিয়াং ও তিব্বতকে সংযুক্ত করার জন্য একটি নতুন রেলপথ নির্মাণ শুরু হবে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) কাছাকাছি চলে আসবে এবং আকসাই চিন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে।

চিন যখন থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র আধুনিকীকরণ শুরু করেছে, তখন থেকেই তার সম্প্রসারণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রমাণ হল দক্ষিণ চিন সাগরে প্রাকৃতিক প্রাচীর ও দ্বীপ পুনরুদ্ধার। এর পরে সামরিক স্থাপনা ও অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। চিনা বেসামরিক মাছ ধরার জাহাজগুলিকে রক্ষা করার অজুহাতে গণপ্রজাতন্ত্রটি ফিলিপিনসের দাবি করা স্কারবোরো শোলের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ পেতে সক্ষম হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন থেকে চিন যে শিক্ষা নিয়েছিল তার মধ্যে একটি হল পশ্চিমাঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য তাকে পরিধি সুরক্ষিত করতে হবে। তিব্বত দখল করার ৭০ বছরের বেশি সময় পরেও চিন এখনও দলাই লামার আধ্যাত্মিক প্রভাবকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেনি, এবং তিব্বত ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক চিনের জন্য উদ্বেগের কারণ। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিব্বতের সীমান্ত সুরক্ষিত করার প্রয়োজনের উপর জোর দিয়েছেন, যার ফলে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত  অঞ্চলে (টিএআর) সীমান্তে গ্রাম নির্মাণ করা হচ্ছে এবং সেখানে একটি অনুগত জনগোষ্ঠীর বসতি স্থাপন করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চিনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে এলাকাটিকে জিজাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করতে শুরু করে, যা স্থানীয় জনসংখ্যার ‘‌চৈনিকীকরণ’‌ করার জন্য জমানাটির ক্রমবর্ধমান উদ্যোগের ছবি তুলে ধরে। ২০২২ সালে চিনে স্থলসীমান্ত আইন কার্যকর হয়, যাতে বলা হয়েছে যে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং চিনা পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সকে সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনটি এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি যে গণপ্রজাতন্ত্রের জনগণ সীমান্ত সুরক্ষার চাবিকাঠি, এবং বলা হয়েছে নাগরিকদের দায়িত্ব সীমান্ত পরিকাঠামো সুরক্ষিত করা। এটি জনসংখ্যা পুনর্বাসন এবং সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছে। আইনটি চিন দেশের প্রতি আনুগত্য ও সম্প্রদায়গত বোধকে একীভূত করার জন্য রাজনৈতিক শিক্ষার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেছে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে যে পিএলএ অরুণাচলের কাছে ভারত–চিন সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত নিংচির মতো জায়গায় বাসিন্দাদের মধ্যে সামরিক শিক্ষা প্রচার করছে। এই প্রচেষ্টার মধ্যে একটি শক্তিশালী কৌশল রয়েছে যা চিনের সাম্রাজ্যবাদী রাজবংশ এবং তার আধুনিক সময়ের কমিউনিস্ট সম্রাটদের যুক্ত করে। সম্রাটশাসিত চিন ‘‌কৃষক–সৈনিক উপনিবেশ’‌ তৈরিতে এবং অনুগত পদাতিক সৈনিকদের অর্থের পরিবর্তে চাষের জন্য জমি দিয়ে পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা দেখেছিল। এই ধরনের সৈনিক–কৃষকদের যখনই প্রয়োজন তখনই রাষ্ট্রের সেবায় ফিরে আসার জন্য ডাকা যেত।

আইনটি এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি যে গণপ্রজাতন্ত্রের জনগণ সীমান্ত সুরক্ষার চাবিকাঠি, এবং বলা হয়েছে নাগরিকদের দায়িত্ব সীমান্ত পরিকাঠামো সুরক্ষিত করা।

২০২০ সালের মে মাস থেকে লাদাখে ভারত–চিন সীমান্তে যে উত্তেজনাপূর্ণ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, ধারাবাহিক সীমান্ত-আলোচনা সত্ত্বেও এখনও তার উন্নতির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদিও কিছু এলাকায় আংশিকভাবে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনাদের সরানো সম্ভব হয়েছে, চিন অরুণাচল অঞ্চলের নতুন নামকরণ এবং সীমান্ত গ্রাম তৈরি করে একটি নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। যাই হোক, ‘‌ভাইব্র‌্যান্ট ভিলেজেস প্রোগ্রাম’‌–এর মাধ্যমে চিনের সীমান্ত কৌশল মোকাবিলায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি উল্লেখযোগ্য দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে। এই মাসের গোড়ার দিকে উদ্যোগের সূচনাকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে ভারত তার ভূখণ্ডের এক ইঞ্চিও দখল করতে দেবে না। এই অবস্থান অতীতের মত থেকে অনেক দূরে যখন চিনের দখলকৃত এলাকাকে মূল্যহীন বলে মনে করা হয়েছিল কারণ ‘‌সেখানে একটি ঘাসও জন্মায় না’‌‌। এটি চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের এক নতুন আস্থার প্রতিফলক, কারণ অতীতে ভারত সীমান্তে ন্যূনতম পরিকাঠামোকেই আগ্রাসনের ক্ষেত্রে চিনা সৈন্যদের অনুপ্রবেশ দুর্বল করার জন্য যথেষ্ট হিসাবে দেখত। ভারতের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার ইস্যুতে একটি বিচক্ষণ পদ্ধতিও গ্রহণ করা হয়েছে, যার শুরু চিন ও পাকিস্তানের সমালোচনা সত্ত্বেও ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা থেকে। গত মাসে তার জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে ভারত অরুণাচলে গোষ্ঠীটির একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল, এবং মে মাসে শ্রীনগরে আরেকটি বৈঠক হয়েছে।

‘‌হোয়াই জিওগ্রাফি ম্যাটারস’‌ বইয়ে ভূগোলবিদ হার্ম ডি ব্লিজ লিখেছেন যে ১৯৯০ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের ঠিক আগে ইরাক একটি সরকারি মানচিত্র প্রকাশ করে কুয়েতকে তার সীমানার মধ্যে দেখালেও ঘটনাটি বিশ্ব উপেক্ষা করেছিল। স্বাধীনতার মূল্য হল চিরন্তন সতর্কতা। আমাদের চিনের ম্যাপ–ফেয়ারকে আরও বেশি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে, কারণ ‘‌ম্যাপ’‌ [图]-এর ম্যান্ডারিন অক্ষরটি ‘‌টু স্কিম’‌ ক্রিয়াপদকেও বোঝায় ।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Kalpit A Mankikar

Kalpit A Mankikar

Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...

Read More +