-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
উত্তর দিকের প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য ভুটানের প্রচেষ্টা দেশটির ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাবে।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের গত ৩-১০ নভেম্বর ভারতে আট দিনের সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্ভবত চিনের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য সীমান্ত চুক্তির প্রাক্কালে ভারতকে শান্ত করা। গত বছরের এপ্রিল মাসেও ভুটানের রাজা নয়াদিল্লি সফরে এসেছিলেন। নয়াদিল্লি সফরকালে ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ভারত সরকার ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘দৃষ্টান্তমূলক দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব’ বলে অভিহিত করেছে এবং সফরের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে দু’পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে সফরের সময়কাল থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সফরটি চিন ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও সরকারি পর্যায়ে সেই বিষয়টি যে আলোচনায় উঠে এসেছে, এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
ভুটানের রাজার সফরের পরে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। এই সফরগুলির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠ ভারত-ভুটান সম্পর্ককে আরও ত্বরান্বিত করার কথা ছিল এবং দুই দেশেরই মনোযোগ ছিল দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার একাধিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রাথমিক ভাবে জলবিদ্যুৎ এবং সংযোগের উপর। যাই হোক, দেশটি ভুটান হলেও এক বছরে রাষ্ট্রপ্রধানদের দু’টি সফর বেশ কিছুটা অস্বাভাবিক বটেই এবং সম্ভবত তা ভুটান-চিন সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
‘থ্রি স্টেপ রোডম্যাপ’-এর আলোচনার মূল বিষয় হল ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে চিনের কুনমিং-এ দশম দফার এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং (ইজিএম) চলাকালীন চিন এবং ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতাপত্র (মউ), যেটিতে একটি তিন পর্যায়ের প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মানচিত্রে সীমান্তের সীমা নির্ধারণ ও তার পরবর্তী যৌথ সমীক্ষা, যা শেষপর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ৪৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের প্রকৃত সীমারেখা নির্ধারণ করবে। সেই সময়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল এই যে, ভারত এই মউ স্বাক্ষর করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয় এবং জানায় ভুটানের মতোই ‘ভারত একই ভাবে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে আসছে।’
সেই সময়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল এই যে, ভারত এই মউ স্বাক্ষর করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয় এবং জানায় ভুটানের মতোই ‘ভারত একই ভাবে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে আসছে।’
অক্টোবর মাসে চিন ও ভুটান বেজিংয়ে তাদের ২৫তম দফার সীমান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। ২৪তম দফার আলোচনাটি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভুটানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ভুটানের বিদেশমন্ত্রী লিয়নপো তান্দি দোরজি এবং চিনের তরফে নেতৃত্বে ছিলেন চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী সান উই ডং। সান আগে ভারতে চিনের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। ভারতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভি নামগেল (অবসরপ্রাপ্ত) এবং ভুটানের বিদেশসচিব পেমা চোডেন ভুটানি প্রতিনিধিদলে ছিলেন।
গত বছর জানুয়ারি মাসে শুরু হলেও এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং-এর দ্রুত ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করা যায়, যা তাদের সীমান্ত আলোচনার ২৫তম দফায় গিয়ে শেষ হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কুনমিং-এ ১১তম দফার এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মে মাসে ১২তম দফার এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই পক্ষই জানিয়েছিল যে, সীমান্ত সমস্যা সংক্রান্ত ‘থ্রি স্টেপ রোডম্যাপ’ সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি ঘটেছে। অগস্ট মাসে দুই দেশ বেজিংয়ে ১৩তম এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং-এর আয়োজন করে। এর ঠিক পরপরই অক্টোবর মাসে বেজিংয়ে ২৫তম দফার আলোচনাটি সংঘটিত হয়। ২৫তম দফার আলোচনা চলাকালীন উভয় পক্ষ ১৩তম এক্সপার্ট গ্রুপের মিটিং-এ সম্মত হওয়া ভুটান-চিন সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়ে যৌথ প্রযুক্তিগত দলের বিশদ কার্যকারিতা-সহ একটি সহযোগিতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
দোরজি তাঁর চিনা সমকক্ষ ওয়াং ই-র সঙ্গে দেখা করেন এবং উভয় পক্ষই ইঙ্গিত দেয় যে, তারা দ্রুত সীমান্ত নিষ্পত্তি চায়। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতি অনুসারে, ওয়াং বলেছেন যে, ‘সীমান্ত আলোচনার সমাপ্তি এবং চিন ও ভুটানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন’ উভয় দেশের মৌলিক স্বার্থের অনুকূলে কাজ করবে। এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের কোনও স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক নেই।
চিনা বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতি অনুসারে, ওয়াং বলেছেন যে, ‘সীমান্ত আলোচনার সমাপ্তি এবং চিন ও ভুটানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন’ উভয় দেশের মৌলিক স্বার্থের অনুকূলে কাজ করবে।
অক্টোবর মাসে ‘দ্য হিন্দু’র একটি সাক্ষাত্কারে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং - যাঁর মেয়াদ গত নভেম্বর মাসে শেষ হয়েছে - বলেছিলেন যে, তিনি বিষয়টির অগ্রগতির আশা রাখেন। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, চিন ও ভুটান তাদের থ্রি স্টেপ রোডম্যাপ সম্পন্ন করার পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে এবং উভয় পক্ষই এখনও পর্যন্ত ‘দুটি থেকে তিনটি বৈঠক করতে সমর্থ হয়েছে।’ শেরিং আরও বলেন, ‘আমরা থ্রি স্টেপ রোডম্যাপ সম্পূর্ণ করার দিকে এগোচ্ছি।’ এর পাশাপাশি আলোচনায় ডোকলাম সংক্রান্ত চিনা দাবি এবং উত্তর ভুটানের মধ্যে একটি সম্ভাব্য আদানপ্রদানও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চিন এবং ভুটানের মধ্যে বিরোধের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম সীমান্তে ২৬৯ বর্গ কিমি এবং জাকারলুং ও পাসামলুং উপত্যকার ৪৯৫ বর্গ কিমি আয়তনের দু’টি উত্তরের এলাকা সংক্রান্ত। ২০২০ সাল থেকে চিনারা পূর্ব ভুটান অঞ্চলে অতিরিক্ত দাবি জানিয়ে এসেছে। ভারত, চিন এবং ভুটানকে অন্তর্ভুক্তকারী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাই-জাংশন পয়েন্ট বা ত্রিসন্ধি-বিন্দু রয়েছে। পশ্চিমের অংশটি ডোকলামকেন্দ্রিক এবং পূর্বের অংশটি হল ম্যাকমেহন লাইনের ইস্টার্ন টার্মিনাস, যা এই অঞ্চলে চিন-ভারত সীমান্ত নির্ধারণ করে। ২০১৭ সালেও ডোকলাম ছিল ভারত-চিন সংঘর্ষের কেন্দ্র। এটি সেই এলাকা, যেখানে ভারত-চিন-ভুটান সীমান্ত মিলিত হয়। কিন্তু ভারত ডোকলামকে ভুটানের ভূখণ্ড বলে মনে করে এবং এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, সীমান্ত বন্দোবস্ত প্রক্রিয়ায় ডোকলামকে চিনের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। এমনটা ঘটলে তা চিনকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে সংযোগকারী সংবেদনশীল শিলিগুড়ি করিডোরের উপর নজরদারি করার সুযোগ করে দেবে।
এপ্রিলে মাসে বিদেশসচিব ভি এম কাটরা এই সফরের বিষয়ে গণমাধ্যমকে সংক্ষেপে জানিয়েছিলেন। চিন-ভুটান সীমান্ত আলোচনা, বিশেষ করে ডোকলাম সংক্রান্ত কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত সরাসরি প্রশ্নের উত্তরে কাটরা উল্লেখ করেন যে, ভারত ও ভুটানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং ভারতের জাতীয় ও নিরাপত্তা স্বার্থ সম্পর্কিত ‘ঘনিষ্ঠ সমন্বয়’ বিদ্যমান। ডোকলাম প্রসঙ্গে তিনি মন্ত্রকের তরফে দেওয়া পূর্ববর্তী বিবৃতির উল্লেখ করেছেন, যা ‘ত্রিসন্ধি সীমান্ত বিন্দু নির্ধারণের বিষয়ে আমাদের (ভারতের) অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে।’
তিনি ২০১৭ সালে ডোকলাম সঙ্কটের শুরুতে বিদেশমন্ত্রকের (এমইএ) বিবৃতির উল্লেখ করেন, যা কী ভাবে সঙ্কটটি উন্মোচিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেছিল। এটিতে আরও বলা হয়েছিল যে, ২০১২ সালে ভারত ও চিন ‘এই চুক্তিতে সহমত হয় যে, ভারত, চিন এবং অন্য তৃতীয় দেশের মধ্যে ত্রিসন্ধি সীমান্ত বিন্দুগুলি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত করা হবে।’ এর পাশাপাশি বলা হয় যে, ‘একতরফা ভাবে ত্রিসন্ধি বিন্দু নির্ধারণের’ যে কোনও প্রচেষ্টা ‘এই বোঝাপড়াকে লঙ্ঘন করে।’
২০১২ সালে ভারত ও চিন ‘এই চুক্তিতে সহমত হয় যে, ভারত, চিন এবং অন্য তৃতীয় দেশের মধ্যে ত্রিসন্ধি সীমান্ত বিন্দুগুলি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত করা হবে।’
মার্চ মাসে বেলজিয়ামের একটি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকারে শেরিং ভারতীয় অবস্থানকে কমবেশি সমর্থন করে উল্লেখ করেন যে, ‘ডোকলাম ভারত, চিন এবং ভুটানের মধ্যে একটি সংযোগস্থল। সমস্যা সমাধান করার বিষয়টি ভুটানের একার ব্যাপার নয়। আমরা তিনটি দেশ আছি... অন্য দু’টি দেশ প্রস্তুত হলেই আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।’
সীমান্ত সমস্যার সমাধান – তা সে যখন এবং যেখানেই হোক না কেন - ভুটানের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তবে বর্তমানে ভুটানিরা আলোচনায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। তাদের সমস্যা হল নিজেদের সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব ও নিজেদের দাবি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃত ও ক্রমাগত চিনা চাপ।
মনোজ জোশি ওআরএফ-এর ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Manoj Joshi is a Distinguished Fellow at the ORF. He has been a journalist specialising on national and international politics and is a commentator and ...
Read More +