Published on Feb 05, 2024 Updated 5 Hours ago

২০৩০ সালের অন্তিম সময়সীমা ক্রমশ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক হিংসা নির্মূলের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে

সমান্তরাল ক্ষতির ঊর্ধ্বে: নারীর প্রতি হিংসা থামানোর লড়াই তীব্রতর করা

প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসামূলক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্পষ্ট আহ্বানকে দর্শায়। লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিসংখ্যন-সহ একটি ভয়ঙ্কর অনুস্মারক এই বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে দেয় যে, লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের বিশ্ব প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে।

অবিরাম ঘটে চলা নানাবিধ যুদ্ধের মাঝেই ফের একটি নতুন যুদ্ধের সূচনা ঘটায় এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা জলবায়ু সঙ্কটের কারণে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকে বিধ্বস্ত বলে মনে করা যেতে পারে। অব্যবহিত সঙ্কট লিঙ্গভিত্তিক হিংসাকেউস্কে দেয়, যা নারীর শারীরিক, মানসিক, যৌন অর্থনৈতিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন বা ইউএন কনভেনশন অন দি এলিমিনেশন অব ডিস্ক্রিমিনেশন এগেইনস্ট উইমেন-এর (সিইডিএডব্লিউ) কয়েক দশকব্যাপী সক্রিয় কার্যকলাপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও বাড়তে থাকা হিংসার ঘটনা দর্শায় যে, এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিতান্তই ধীর।

 

নারীদের প্রায়তাঁদের নিজেদের বাড়ি ও পরিবারের মধ্যে লক্ষ্যবস্তু করে তোলা হয় এবং প্রতি ১১ মিনিটে এক জন নারী বা মেয়েকে তাঁর সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা খুন করে।

 

নিচের চিত্রটি এক ঝলকে তুলে ধরেছে যে, নারী মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা সারা বিশ্ব জুড়েই ঘটে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, অন্তরঙ্গ সঙ্গীর তরফে হিংসার পাশাপাশি যৌন হিংসা নারীদের স্বাস্থ্য এবং তাঁদের মানবাধিকারের জন্য একটি বড় হুমকি। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিন নারী ও মেয়ের মধ্যে এক জন তাঁদের জীবনে অন্তত এক বার অন্তরঙ্গ সঙ্গী বা অ-সঙ্গী (নন-পার্টনার, যাঁকে সঙ্গী আওতাভুক্ত করা সম্ভব নয়) দ্বারা কোন না কোন ধরনের শারীরিক বা যৌন হিংসার শিকার হয়েছেনারীদের প্রায়তাঁদের নিজেদের বাড়ি ও পরিবারের মধ্যে লক্ষ্যবস্তু করে তোলা হয় এবং প্রতি ১১ মিনিটে এক জন নারী বা মেয়েকে তাঁর সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা খুন করে। অতিমারির সময়ে লকডাউন চলাকালীন লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ছায়া উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন মানবিক সঙ্কট, সংঘাত জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি বিদ্যমান হিংসার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বলাই বাহুল্য, নারীর প্রতি হিংসা দূর করার প্রতিশ্রুতিগুলিকে কাজে বাস্তবায়িত করার জন্য ২০৩০ অ্যাজেন্ডার উদ্দেশ্যে এগোতে আরও বেশি পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন

 

চিত্র ১: নারীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী হিংসামূলক ঘটনার সম্মিলিত অনুমান, ২০১৮

সূত্র- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০২১

 

২০৩০-এর লক্ষ্যের আধা পথ পেরিয়েও কাজ অনেক বাকি

গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে বিশ্ব স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব গতিশীলতা প্রত্যক্ষ করলেও অগ্রগতির বর্তমান হার যে অত্যন্ত ধীর, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়গুলির অন্যতম হল ইউএন উইমেনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট, যেখানে অনুমান করা হয়েছে যে, লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য আরও ২৮৬ বছর সময় লাগবে।

চিত্র ২-এ এসডিজি ৫-এর কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং ২০৩০ সালের অন্তিম সময়সীমার সম্মুখীন কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা - বিশেষ করে লিঙ্গনির্দিষ্ট সূচকের ক্ষেত্রে - তুলে ধরা হয়েছে১৬২টি দেশ গার্হস্থ্য হিংসা রোধ সংক্রান্ত আইন পাস করলেও ৬০০ মিলিয়ন নারী এমন দেশগুলিতে বাস করেন, যেখানে গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে তেমন কোনও সুরক্ষা নেই এবং শুধু মাত্র ১৪৭টি দেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইন লাগু করা হয়েছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্যাপ্ত আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশের আইনই এখনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয় এবং সঠিক ভাবে সেই আইনের প্রয়োগ করা হয়নি। শুধু যে নারীরা ঘন ঘন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে হিংসার শিকার হচ্ছেন, তা নয়। তেমন ৪০ শতাংশেরও কম ভুক্তভোগী নারী পুলিশ বা স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে ঘটা অপব্যবহারের অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসেন। বিশ্বের প্রায় শতাংশ নারী তাঁদের স্বামী বা সঙ্গী ছাড়া অন্যদের তরফ থেকে হওয়া যৌন হিংসার ঘটনার অভিযোগ জানান। অথচ স্বামী বা সঙ্গী বহির্ভূত অন্য কোনও ব্যক্তির তরফে ঘটা এই ধরনেহিংসার সঙ্গে কলঙ্ক জড়িয়ে থাকার কারণে সেই ধরনের হিংসার প্রবণতা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

 

চিত্র ২: এসডিজি এবং নারীর প্রতি হিংসার সঙ্গে যোগসূত্র

 

লিঙ্গ সমতা

নারী ও মেয়েদের তাঁদেসম্পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধির পথে অন্তরায়গুলি নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ২০৩০ অ্যাজেন্ডায়। কিন্তু সামনে উপস্থিত উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলি হল:

 

৫.১ - ১৮টি দেশে স্বামীরা তাঁদের স্ত্রীদের কাজ করার বিষয়ে আইনত বাধা দিতে পারে: ৩৯টি দেশে কন্যা এবং পুত্রদের সমান উত্তরাধিকার নেই; এবং ৪৯টি দেশে নারীদের গার্হস্থ্য হিংসা থেকে রক্ষা করার জন্য আইনের অভাব রয়েছে।

৫.২ - ৫০ বছরের কমবয়সি প্রতি ৫ জনের মধ্যে এক জন নারী এবং মেয়ে গত ১২ মাসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক এবং/অথবা যৌন হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

৫.৩ - বিশ্বব্যাপী ৭৫০ মিলিয়ন নারী এবং মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়েছিল এবং ৩০টি দেশে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন নারী এবং মেয়েরা নারী-যৌনাঙ্গ ছেদনের সম্মুখীন হয়েছেন।

৫.৪ – নারীরা পুরুষদের তুলনায় ২.৬ গুণ অবৈতনিক পরিচর্যা এবং গৃহস্থালির কাজ করে থাকেন

৫.৫ – ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নারীরা সংসদীয় আসনের মাত্র ২৩.৭% জুড়ে ছিলেন। ২০০০ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধি পেলেও এই হার এখনও সমতার নীচে

৫.৬ – ৪৫টি দেশের তথ্যের উপর ভিত্তি করে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ সাব-সাহারান আফ্রিকায় ১৫-৪৯ বছর বয়সি নারীদের মাত্র ৫২% বিবাহ বা সম্মতিমূলক যৌন সম্পর্ক, গর্ভনিরোধকের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিজেরা নেয়।

৫এ - বিশ্বব্যাপী নারীরা মাত্র ১৩% কৃষিজমির মালিক।

৫বি - ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সুবিধা পুরুষদের কাছে নারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে উপলব্ধ, যা নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ও মোবাইল ফোনের মালিকানার নিরিখে অনেকটাই পিছনে ফেলেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মোবাইল ফোনের মালিক হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং তাঁদের ইন্টারনেট ব্যবহার পুরুষদের তুলনায় ৫.৯ শতাংশ পয়েন্ট কম।

৫সি – লিঙ্গ সমতার জন্য বরাদ্দ তহবিলের দেখভালের উদ্দেশ্যে ১০০টিরও বেশি দেশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সূত্র- ইউএন উইমেন, টার্নিং প্রমিসেস ইন অ্যাকশন: জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি ইন দ্য ২০৩০ ফর সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট, ২০১৮

 

জেন্ডার-বেসড ভায়োলেন্স বা লিঙ্গভিত্তিক হিংসার (জিবিভি) সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সুবিশাল কারণ নারীরা বিচ্ছিন্নতা ও তার ফলে কাজ করতে অক্ষম বোধ করেন। এবং তা আখেরে তাঁদের মর্যাদা আত্মবিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

অতিমারি অসমানুপাতিক ভাবে নারীদের উপরেও নানাবিধ উপায়ে আঘাত হেনেছে। দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি এবং স্কুল বন্ধের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে আরও প্রায় ১৩ মিলিয়ন বাল্যবিবাহ ঘটতে পারে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মানব পাচারকারীরা অতিমারি-প্ররোচিত দারিদ্র্যকে পুঁজি করে এবং সম্ভাব্য শিকার খুঁজে নেওয়ার জন্য অনলাইন মাধ্যমটির ব্যবহার করে। নারী ও মেয়েরা মানব পাচারের ঝুঁকির সম্মুখে অরক্ষিত। ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী নাক্ত হওয়া শিকারের মধ্যে চার জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী হলে দুজন মেয়ে।

ক্ষমতার উচ্চ স্তরের নারীরা সমান ভাবে নির্যাতনের প্রেক্ষিতে সংবেদনশীল এবং পাঁচটি অঞ্চলের ৮২ শতাংশ মহিলা সাংসদ ক্ষমতায় থাকাকালীন নারী-বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, অনুপযুক্ত ছবির মতো বেশ কিছু ধরনের মানসিক নির্যাতন এবং বেশির ভাগ সামাজিক গণমাধ্যমের চ্যানেলগুলি থেকে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৬৫ শতাংশ নারী আবার প্রাথমিক ভাবে সংসদে তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের কাছ থেকে আসা যৌনবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।

নারী ও মেয়েরা পরিবহণক্ষেত্র, স্কুল কর্মক্ষেত্র ছাড়াও বিনোদনমূলক পরিসরেও হয়রানির শিকার হ

 

বিশ্বব্যাপী অনলাইনে লিঙ্গ সংক্রান্ত হিংসার ঘটনা অতিমারি চলাকালীন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বেশির ভাগ দেশই একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর অনুপস্থিতির দরুন অনলাইনে নারীদেউপর ঘটা হিংসার ঘটনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে। ইউনেসকোর একটি সমীক্ষা দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী সাংবাদিক লিঙ্গ (৪৯ শতাংশ), রাজনীতি নির্বাচনী সমস্যা (৪৪ শতাংশ), মানবাধিকার সামাজিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে (৩১ শতাংশ) অনলাইনে হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন। ডিপফেক-এর প্রসার মনোযোগ  আকর্ষণ করেছে। কারণ অধিকাংশ নারীই হিংসামূলক শিকারে পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে ডিপফেক-এর বিরুদ্ধে কোন নির্দিষ্ট আইন না থাকলেও তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) আইন ২০০০, ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ১৮৬০ এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ এই ধরনের অন্যায়ের মোকাবিলা করতে পারে। ডিপফেক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তীব্রতা ভারত সরকারকে সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চগুলির জন্য এক কড়া নির্দেশিকা জারি করতে বাধ্য করেছে এবং ব্যবহারকারী দ্বারা অভিযোগ জানানোর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও ভুয়ো তথ্য সরিয়ে ফেলার কাজকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে যে, এই নির্দেশাবলি মেনে না চললে ডিপফেক-এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সেফ হারবার ইমিউনিটি-কেও খারিজ করে দেওয়া হবে। নারী ও মেয়েরা পরিবহণক্ষেত্র, স্কুল কর্মক্ষেত্র ছাড়াও বিনোদনমূলক পরিসরেও হয়রানির শিকার হ

 

এসডিজি-ব্যাপী অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে লিঙ্গভিত্তিক হিংসার পরিমাণ হ্রাস করা

এসডিজি-র মধ্যে আরও নানাবিধ লক্ষ্য রয়েছে, যা নিম্নলিখিত সারণিতে প্রতিফলিত হিংসা প্রতিরোধকারী উপাদানগুলিকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা-সহ সুপ্ত কাঠামোগত বৈষম্য কমাতে কাজ করতে পারে।

 

চিত্র ৩: অন্যান্য লক্ষ্য ও কর্মসূচি, যা লিঙ্গভিত্তিক হিংসা প্রতিরোধের উপর পরোক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলে

 

এসডিজি/লক্ষ্য

 

 

বিশদ তথ্য

এসডিজি ৫

লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন

লক্ষ্য ৫.২

পাচার, যৌন এবং অন্যান্য ধরনের শোষণ-সহ নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে ঘটা সব ধরনের হিংসা দূর করা

লক্ষ্য ৫.৩

শিশু, বাল্য ও জোরপূর্বক বিবাহ এবং নারীদের যৌনাঙ্গ ছেদনের মতো সমস্ত ক্ষতিকারক অভ্যাস দূর করা

এসডিজি ১৬

শিশুদের প্রতি অপব্যবহার, শোষণ, পাচার এবং সকল প্রকার হিংসা ও নির্যাতনের অবসান

লক্ষ্য ১৬.২

স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রচার

লক্ষ্য ১৬.১

একটি শান্তিপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ অর্জনের জন্য সকল প্রকার হিংসা সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর পরিমাণ হ্রাস করা

 

লক্ষ্য এবং কর্মসূচিগুলি পরোক্ষ ভাবে হিংসা প্রতিরোধকে প্রভাবিত করে

 

লক্ষ্য ১.৪

এ কথা সুনিশ্চিত করা যে, সমস্ত পুরুষ ও নারীদের সম্পদ, মৌলিক পরিষেবা, মালিকানা সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রযুক্তি ইত্যাদির উপর সমান অধিকার রয়েছে

লক্ষ্য ১বি

লিঙ্গ-সংবেদনশীল উন্নয়নমূলক কৌশলগুলির উপর ভিত্তি করে নীতি কাঠামো তৈরি করা

লক্ষ্য ২.৩

ভূমি ও অন্যান্য সম্পদে নিরাপদ ও সমান প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরের খাদ্য উৎপাদনকারীদের, বিশেষ করে নারীদের কৃষি উৎপাদনশীলতা/আয় দ্বিগুণ করা

লক্ষ্য ৩.৭

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত পরিষেবাগুলিতে সর্বজনীন অধিকার সুনিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৪.১

এ কথা সুনিশ্চিত করা যে, সমস্ত মেয়ে এবং ছেলে বিনামূল্যে, ন্যায়সঙ্গত এবং গুণমানসম্পন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করবে

লক্ষ্য ৪.২

এ কথা সুনিশ্চিত করা যে, সমস্ত শিশুর গুণমানসম্পন্ন প্রাথমিক শৈশব বিকাশ, যত্ন এবং প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার রয়েছে

লক্ষ্য ৪.৩

সাশ্রয়ী মূল্যের প্রযুক্তিগত, বৃত্তিমূলক এবং উচ্চ স্তর/বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৪.৫

লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং শিক্ষায় সমান প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৫.১

সর্বত্র নারী ও মেয়েদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ৫.৪

নারীদের দ্বারা সম্পাদিত অবৈতনিক পরিচর্যা এবং গার্হস্থ্য কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন

লক্ষ্য ৫.৫

সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ/নেতৃত্ব সুনিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৫.৬

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং প্রজনন অধিকারে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৫এ

নারীদের সমান অধিকার এবং অর্থনৈতিক সম্পদে প্রবেশাধিকার দিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া

লক্ষ্য ৫বি

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন

লক্ষ্য ৫সি

লিঙ্গ সমতা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নীতি গ্রহণ, তার শক্তিশালীকরণ বলবৎযোগ্য আইনের প্রণয়ন করা

লক্ষ্য ১১.২

নিরাপদ, সাশ্রয়ী, প্রবেশাধিকারযোগ্য এবং স্থিতিশীল গণপরিবহণ ব্যবস্থায় সর্বজনীন সুবিধা প্রদান করা

লক্ষ্য ১১.৭

নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রবেশাধিকারযোগ্য জনপরিসরে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার প্রদান করা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য

সূত্র: বাবু এবং কুসুমা, ২০১৬

 

কয়েক দশকের বৈষম্য আমাদের সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো জুড়ে নারীদের সুবিধাবঞ্চিত অবস্থানেই ঠেলে দিয়েছে এবং তাঁদের লড়াই করা হিংসামূলক ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। ভূমি অধিকার, সম্পত্তি এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের মালিকানায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের উল্লেখযোগ্য রকমের কম অধিকার রয়েছে। বিশ্বের মাত্র ১২.৮ শতাংশ কৃষিজমির মালিক নারী। তাঁরা শালীন কাজের অধিকারে ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হন, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব করেন, অবৈতনিক পরিচর্যামূলক কাজের দায়িত্ব বহন করে এবং পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পান। বৈষম্যমূলক অভ্যাস নারীর বিরুদ্ধে হিংসা সংক্রান্ত ঘটনা যথেষ্ট সুপরিচিত হলেও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নারীরা অপরিসীম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেনবিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,  ২.৭ মিলিয়নেরও বেশি নারী পুরুষদের মতো একই চাকরিতে আইনত সীমাবদ্ধ। ২০১৮ সালে মূল্যায়ন করা ১৮০টি অর্থনীতির মধ্যে ১০৪টিতে এখনও এমন আইন রয়েছে, যা নারীদের নির্দিষ্ট পেশাগত পছন্দ বেছে নেওয়া থেকে বাধা দেয় এবং ১৮টি দেশে এমন আইন রয়েছে, যেখানে স্ত্রীদের কাজ করতে বাধা দেওয়ার অধিকার রয়েছে স্বামীদের হাতে। নারীদের সামাজিক সুরক্ষা মাতৃত্বের সুবিধারও অভাব রয়েছে প্রায়শই মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চতর ঝুঁকি রয়েছেবিশ্বের সবচেয়ে নিরক্ষর ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নারীরাই, এসটিইএম-এ লিঙ্গ ব্যবধান উল্লেখযোগ্য এবং ইন্টারনেটে নারীদের সীমিত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি অব্যাহত রয়েছেসাম্প্রতিক অনুমানগুলিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, নারীদের জন্য দারিদ্র্যের পরিমাণ গভীরতর হচ্ছে এবং তাঁদের যৌন শোষণ ও হিংসার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের লিঙ্গগত প্রভাব বিদ্যমান। দীর্ঘ সময়ব্যাপী খরার ফলে মেয়েদেরকে গবাদি পশুর বিনিময়ে বাল্যবিবাহে বাধ্য করা বা বিক্রি করা হয়েছেমেয়েদের মধ্যে ড্রপআউটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তারা জল আনতে বেশি সময় ব্যয় করেছে এবং হিংসার নিরিখে আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। নারী এবং মেয়েরা খাবার জল পাওয়ার জন্য ঘন ঘন দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করতে বাধ্য হওয়ায় এই হার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ভূমি অধিকার, সম্পত্তি এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের মালিকানায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের উল্লেখযোগ্য রকমের কম অধিকার রয়েছে। বিশ্বের মাত্র ১২.৮ শতাংশ কৃষিজমির মালিক নারী।

 

এই ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নারী ও মেয়েদের প্রতি হিংসা প্রতিরোধে বিনিয়োগের বিষয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা প্রতিরোধে বিনিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ইউনাইট ক্যাম্পেনের নেপথ্যের প্রধান ভাবনা। হিংসা দুষ্ট চক্রটিকে শুধুমাত্র পদক্ষেপযোগ্য প্রচেষ্টা গতি আনার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য গবেষণা হিংসার পরিসর বোঝার জন্য বিগ পিকচার’ বা ‘সামগ্রিক চিত্র’কেই তুলে ধরে। নারীদের প্রতি হিংসা দূরীকরণের লক্ষ্যে জেন্ডার বাজেটিং বা লিঙ্গ সংক্রান্ত বাজেট এবং পাবলিক ফাইন্যান্সিং বা জন অর্থায়নের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ানো দরকারগুলি এখনও পর্যন্ত সমস্যার মাত্রার নিরিখে প্রতুল এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। বর্তমান মানসিকতা বিভিন্ন অংশীদারদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে নারীর প্রতি হিংসার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব হলে তবেই ২০৩০ সালের চূড়ান্ত সময়সীমার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া যাবে এবং মানসিকতা বদলের সময় এখনই।

 


অরুন্ধতী বিশ্বাস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Arundhatie Biswas

Arundhatie Biswas

Arundhatie Biswas, Ph.D is Senior Fellow at ORF. Her research traverses through multi-disciplinary research in international development with strong emphasis on the transformative approaches to ...

Read More +