Published on Apr 09, 2025 Updated 0 Hours ago
ভারত-চিন ঘনিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, ‘আখ্যান’-এর আকার দান করছে কে?

ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি সম্প্রতি দুই দিনের সফরে চিনে যান, যেখানে তিনি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিক নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। প্রায় চার বছর ধরে চলা সামরিক অচলাবস্থার পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য উভয় দেশের তরফে উদ্যোগের পর এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল।

নানাবিধ পদক্ষেপ

২০২০ সালে বেজিং একতরফা ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপতর হয়, যার ফলে উভয় পক্ষের সৈন্য নিহত হচিনের সামরিক বলপ্রয়োগ এবং সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে প্রতিক্রিয়া জানায় যে, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সামগ্রিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। এই পদ্ধতির জন্য জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বাণিজ্য, প্রযুক্তি নাগরিক সমাজের মিথস্ক্রিয়ার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

২০২০ সালে বেজিং একতরফা ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপতর হয়, যার ফলে উভয় পক্ষের সৈন্য নিহত হ

ফলস্বরূপ, প্রায় ৩০০টি চিনা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ করা হয়, ভারত ও চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, চিনা নাগরিকদের ভিসার উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে শিক্ষাগত সহযোগিতা পর্যালোচনা করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে উভয় দেশ পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ বিন্দুগুলিতে টহলদারি ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে, যার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে দেখা করেন। শীর্ষ স্তরের সংযোগের এই পুনঃসূচনা ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণের জন্য নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে অনুসৃত হয়েছে।

বাণিজ্য, অর্থনীতি জনগণের উপর মনোযোগ প্রদান

দুই দেশের নিজ নিজ ধারণা অনুসারে সীমান্তের বিচ্ছিন্নতা সম্পন্ন হওয়া এবং টহল পুনরায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের মতো দিকগুলিতে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যে ক্ষেত্রগুলি গভীর ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছিল।

বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা - ২০০৩ সালে একটি চুক্তির অধীনে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সীমান্ত প্রসঙ্গ নিষ্পত্তির উপায়গুলির জন্য যার সূচনা হয় – ছিল একটি স্বাগত পদক্ষেপ। এ ছাড়াও মিসরিসফরের পর ভারতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই বছর তিব্বতের কৈলাস মানস সরোবর তীর্থযাত্রা আবার শুরু হবে। আন্তঃদেশীয় নদীগুলির উপর জলবিদ্যা সংক্রান্ত তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং সহযোগিতা পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে। গণমাধ্যম থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া পুনরায় শুরু হতে চলেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করার পথও উন্মোচিত হচ্ছে। অর্থনীতি বাণিজ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্যও প্রেরণা অনুভূত হয়েছে।

তবে সব কিছুই ইতিবাচক নয়

তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যের ম্পর্কের উপর কালো ছায়া ফেলছে।

প্রথমত, বিচ্ছিন্নতা সম্পন্ন হলেও অচলাবস্থার সময় সীমান্তে জড়ো করা অস্ত্রশস্ত্র এখনও রয়েছে। এর ফলে এই সম্ভাবনা তৈরি হয় যে, বিচ্ছিন্নতা চিনাদের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল। ভারতীয় সেনা দিবসের আগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি স্থিতিশীল অথচ সংবেদনশীল হলেও উভয় দেশের সেনাবাহিনী স্থবিরতার মাত্রার মধ্যে আটকা পড়েছে।

দ্বিতীয়ত, ২০২২ সালের পূর্ববর্তী দফায় নো-প্যাট্রোল জোন বা টহলবিহীন অঞ্চল তৈরির পরে কিছু সময়ের জন্য বিচ্ছিন্নতা অর্জন করা হয়েছিল। এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে চালু করা হলেও উভয় সেনাবাহিনীর জন্য এই টহলবিহীন পরিসর কত দিন অব্যাহত থাকবে, তা স্পষ্ট ন

বেজিং সম্প্রতি জিনজিয়াং প্রদেশের হোতান প্রিফেকচারে লাদাখের একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে দুটি কাউন্টি বিভক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

পরিশেষে, সামরিক উত্তেজনা কমলেও মানচিত্র অঙ্কন সংক্রান্ত যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অস্ত্রায়ণের কৌশল অব্যাহত রয়েছে। বেজিং সম্প্রতি জিনজিয়াং প্রদেশের হোতান প্রিফেকচারে লাদাখের একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে দুটি কাউন্টি বিভক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এটি তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীর উপর (অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশের পর যা ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও নির্মাণ করছে। নয়াদিল্লি কূটনৈতিক শৃঙ্খলের মাধ্যমে এই দুটি ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে তার উদ্বেগ বেজিংকে জানিয়েছে।

আখ্যান সংক্রান্ত চাপানউতোর

ই সব কিছুই আমাদের বিশ্বাস শান্তির মতো বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। আগামিদিনে ভারতের উপর কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য চিনের অপ্রচলিত উপায়ে ব্যবহার একটি মীমাংসার চেষ্টায় পরিস্থিতিকে বিকৃত করার সম্ভাবনা রাখে। নয়াদিল্লিকে বেজিংয়ের কৌশলগত শ্রেণি থেকে উদ্ভূত আখ্যানের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হবে। তাদের ধারণা হল এই যে, ভারত দুর্বলতার অবস্থান থেকে চিনের সঙ্গে সমঝোতা করছে। দ্বিতীয়ত, তারা বিশ্বাস করে যে, চিনা সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ভারতের গড়িমসি ভারতীয় অর্থনীতি আরও ক্ষতি করছে। অর্থ মন্ত্রকের ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় চিনা পুঁজিকে আমন্ত্রণ জানানো এবং চিনের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলে সমন্বিত হওয়ার পক্ষে যুক্তি দেওয়ার পর থেকেই এই মনোভাব আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। পরিশেষে, বেজিংয়ে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, পান্নুন নিজ্জার মামলাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক অচলাবস্থার আলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মধ্যে কিছুটা কৌশলগত অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে এবং এটি নয়াদিল্লিকে চিনের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য করতে পারে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের ব্যাপারে শি-র প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও চিন এ হেন অপ্রচলিত উপায় ব্যবহার করে সংবেদনশীল বিষয়গুলিতে নাক গলানো থেকে বিরত থাকবে না এবং এটি নয়াদিল্লির সাবধানী স্বাভাবিকীকরণকে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.