Published on May 13, 2025 Updated 0 Hours ago
ভারত-পাকিস্তান কি এখন ‘তীব্রতা বৃদ্ধি’র চক্রে আটকে পড়েছে?

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) কর্তৃক ২৬ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনাটি ছিল অন্তত বৃহৎ আকারের পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধমূলক ব্যর্থতা। শেষ বার ভারত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ব্যাপক আত্মঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়েছিল, যখন ৪০ জন আধাসামরিক সৈন্য নিহত হয়েছিলেন এবং যার জবাবে নয়াদিল্লি বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছিল।

অযৌক্তিক হওয়ার যৌক্তিকতা'

পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে একাধিক বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার ভারতের সিদ্ধান্ত লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন এবং পরিসরের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকেই দর্শায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসবাদী আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত কমপক্ষে নটি ঘাঁটিতে আঘাত হানার মাধ্যমে নয়াদিল্লি তাৎক্ষণিক সঙ্কটের ক্ষেত্রে তার প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারত পাকিস্তানের তরফে সন্ত্রাসবাদকে মদত জোগানোর বিষয়টি সহ্য করবে না। ভারতের প্রতিশোধকে অযৌক্তিক হওয়ার যৌক্তিকতা’ বলা যেতে পারে। পহেলগামে গেস্টাপো ধাঁচে পর্যটকদের হত্যার প্রতি ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) নিরাপদ দূরত্ব থেকে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে হামলা ছিল গভীর এবং প্রকৃত জাতীয় ক্ষোভের ফসল। এটি একটি অযৌক্তিক আবেগ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা একটি যুক্তিসঙ্গত প্রয়োজনীয়তাকে দর্শায় এবং সেটি হল ব্যাপক হতাহতের সঙ্গে জড়িত ভবিষ্যতের পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যদি প্রতিরোধমূলক ব্যর্থতার কারণে প্রকৃত প্রতিশোধ বাস্তবে কার্যকর করা হয়, তা হলে অযৌক্তিকতার প্রাসঙ্গিকতার উপর ভিত্তি করে প্রতিরোধ অযৌক্তিক হবেকারণ প্রতিশোধ গ্রহণকারী রাষ্ট্রের জন্য প্রকৃত লাভের চেয়ে ক্রমবর্ধমান বা মোট ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে। কিন্তু অপারেশন সিঁদু’ - যা ভারতের তরফে প্রতিক্রিয়া আনুষ্ঠানিক মান - এই শর্তকে অস্বীকার করে।

পহেলগামে গেস্টাপো ধাঁচে পর্যটকদের হত্যার প্রতি ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) নিরাপদ দূরত্ব থেকে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে হামলা ছিল গভীর এবং প্রকৃত জাতীয় ক্ষোভের ফসল।

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তান বারবার ভারতের তরফে আসন্ন আক্রমণের সতর্কবার্তা দিয়ে ভারতের প্রতিশোধের সম্ভাবনা এড়াতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। ৭ মে ভারতীয় বিমান হামলার আগে ধারণাটি ছিল সম্ভবত ভারতের উপর প্রতিক্রিয়া না দেখানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা।

পাকিস্তান কেন পিছু হঠতে পারে না

ফলস্বরূপ, ভারতের বিমান হামলার পরিমাণ সাফল্যের কারণে পাকিস্তান এখন সংযম বজায় রাখতে পারছে না। ভারতীয় প্রচলিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানের তীব্র গোলাবারুদ হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানি ঘটেছে। এই হামলাগুলির পরপর ভারতীয় পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীরের পাশাপাশি রাজস্থানে পাকিস্তানি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল।

এই হামলার ফলে ভারতের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি, ভারতীয় যুদ্ধবিমান মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আসলে কিছু কৌশলগত বিজয় পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি করেছিল। এটি আবার রাওয়ালপিন্ডিকে উত্তেজনা কমানোর সুযোগ করে দেয়তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্পষ্ট করে বলেছেন, যেহেতু পাকিস্তান অস্তিত্বগত হুমকিসম্মুখীন, তাই তীব্রতা বৃদ্ধির একটি বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে, যা এমনকি পারমাণবিক সীমাও অতিক্রম করতে পারে।

পারমাণবিক হুমকির বিষয়টি অতিরঞ্জিত বলে মনে হতে পারে, যার লক্ষ্য হল ভারতের তরফে প্রচলিত তীব্রতা বৃদ্ধির ইচ্ছাকে দমিয়ে দেওয়া। কিন্তু বর্তমান সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঝুঁকির কথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যাই হোক, ভারত ৭ মে পাকিস্তানের ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক ড্রোন হামলার মাধ্যমে লাহোরে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আংশিক ভাবে অক্ষম করার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে তীব্রতর করেছে। এটিও তীব্রতা হ্রাসের মুহূর্ত হতে পারত। কিন্তু বেসামরিকদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানের হামলা এবং অভিন্ন সাধারণ সীমান্ত জুড়ে আক্রমণ চালানোর ঘটনায় এই মুহূর্তে এ কথা উল্লেখ্য যে, যুদ্ধাবস্থা থেকে পারস্পরিক প্রস্থান কেমন হবে, তা স্পষ্ট নয়।

উভয় পক্ষই তীব্রতা বৃদ্ধির পথে

পাক অধিকৃত কাশ্মীর পাকিস্তানের পাঞ্জাবে সফল বিমান হামলা সত্ত্বেও পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) বা পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি ভারতীয় জেটকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে, এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে ভারত সরকার কোনও উত্তর দেয়নি। দুর্ভাগ্যবশত, রাওয়ালপিন্ডি ভারতের ইঙ্গিত গ্রহণ করেনি, যা বিমান হামলার পরপরই মোদী সরকারের প্রকাশিত বিবৃতি থেকে স্পষ্ট। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, ভারতের প্রতিক্রিয়া নুত্তেজক এবং ভারত যে কোনো রকম সহিংসতা বন্ধের পথে হাঁটাকেই শ্রেয় বলে মনে করে। তবে পরবর্তী কালে প্রতিশোধ এবং পাল্টা প্রতিশোধের ফলে উভয় পক্ষই তীব্রতা বৃদ্ধির পথে  হাঁটার জন্য আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, রাওয়ালপিন্ডি ভারতের ইঙ্গিত গ্রহণ করেনি, যা বিমান হামলার পরপরই মোদী সরকারের প্রকাশিত বিবৃতি থেকে স্পষ্ট।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভঙ্গুরকিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতির হাতিয়ার হিসেবে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা অর্জনের জন্য গতিশীল হামলার চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে, যেমনটা আমরা গত কয়েক দিন ধরে প্রত্যক্ষ করেছি এবং অদূর ভবিষ্যতেও দেখতে পাব। তাৎক্ষণিক ভাবে গতিশীলতার মাধ্যমে তীব্রতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত পদক্ষেপের পাশাপাশি সিন্ধু জল চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার মতো দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ এবং যথাসময়ে পাকিস্তানকে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স-এর (এফএটিএফ) কালো তালিকায় ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান চাপ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ। এবং পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান তাঁর বেসামরিক  সরকারের জন্য যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে দুর্বল ব্যবস্থাগুলির অন্যতম - প্রতিরোধমূলক হিসেব-নিকেশ কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti is a Senior Fellow with the Strategic Studies Programme. Kartik specialises in space military issues and his research is primarily centred on the ...

Read More +