২০ জুন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর তাঁর পুনর্নিযুক্তির পর প্রথম সরকারি সফরে শ্রীলঙ্কা যান। সফরের লক্ষ্য ছিল মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (এমআরসিসি), যেটি ভারত থেকে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের সাহায্যে নির্মিত হচ্ছে। কলম্বোয় প্রধান কেন্দ্র, হাম্বানটোটায় একটি শাখা কেন্দ্র এবং সারা দেশে একাধিক স্থাপনা-সহ এই সহায়তাকে শ্রীলঙ্কা স্বাগত জানিয়েছে এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে আস্থা প্রকাশ করেছে। এই স্বাগত দৃষ্টিভঙ্গি শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সমীকরণে একটি ক্রমবর্ধমান দ্বিধাকেও দর্শায়, যেখানে দ্বীপদেশটি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (আইওআর) ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করছে এবং নিরাপত্তামূলক লক্ষ্য এবং স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে নিজের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগাচ্ছে। তাই এ কথা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, কী ভাবে বিবর্তিত সামুদ্রিক ভূগোল শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভাবনাকে আকার দেয়।
পুরনো ভূগোল, নতুন জটিলতা
আইওআর-এর একটি ছোট দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা অনাদি কাল থেকেই নিজের ভৌগোলিক পরিসর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে দ্বীপদেশটির অবস্থান (দ্রষ্টব্য মানচিত্র ১) শুধুমাত্র এর অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকেই প্রভাবিত করেনি, বরং অঞ্চল-বহির্ভূত শক্তিগুলিকে দেশের প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্ররোচিত করেছে। চোল এবং পান্ড্যদের অভিযান থেকে শুরু করে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ এবং ব্রিটিশ উপনিবেশ পর্যন্ত… প্রধান শক্তিগুলি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তুলেছে এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থান এই ভাবে তার রাজনীতি, নিরাপত্তা সমীকরণ এবং বিদেশনীতিকে রূপ দিয়েছে।
আইওআর-এর একটি ছোট দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা অনাদি কাল থেকেই নিজের ভৌগোলিক পরিসর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে দ্বীপদেশটির অবস্থান শুধুমাত্র এর অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকেই প্রভাবিত করেনি, বরং অঞ্চল-বহির্ভূত শক্তিগুলিকে দেশের প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্ররোচিত করেছে।
এর ফলস্বরূপ, স্বাধীনতা পরবর্তী কালে শ্রীলঙ্কা একটি নীতি বজায় রেখেছে, যে দেশটি সামরিক জোট এড়িয়ে চলে, আইওআর-এ সংঘাত থেকে বিরত থাকে এবং এই অঞ্চলটিকে ‘শান্তি অঞ্চল’ হিসাবে প্রচার করে। এটি তার অ-সংযুক্তিহীন বৈদেশিক নীতির দ্বারাও গঠিত, যা দ্বীপরাষ্ট্রকে শক্তি জোটে টেনে আনা থেকে বিরত রাখে, ক্ষমতার অনুশীলন করার নমনীয়তা প্রদান করে, দ্বীপদেশটির স্বার্থকে আরও এগিয়ে রাখে এবং এর নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখে।
যাই হোক, যেহেতু বিশ্বব্যবস্থা পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং চিন ও ভারতের মতো অর্থনীতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই আইওআর ভূ-রাজনৈতিক মন্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব শ্রীলঙ্কাকে একটি উল্লেখযোগ্য মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। মালাক্কা প্রণালি, হরমুজ প্রণালি এবং বাব-এল-মান্দেব প্রণালির মধ্যে কৌশলগত ভাবে অবস্থিত, দেশগুলি নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক শৃঙ্খলগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য দ্বীপরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
মানচিত্র ১. শ্রীলঙ্কার অবস্থান
সূত্র: গুগল ম্যাপস
আঞ্চলিক নিরাপত্তা: যে দেশগুলি বিশিষ্ট হয়ে উঠছে
চিনের ভূ-রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে আইওআর-এ তার উপস্থিতি বাড়িয়েছে। এটি ইলম যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতা এবং যুদ্ধোত্তর উন্নয়নের জন্য নতুন অংশীদারদের সন্ধানের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। চিনের জন্য শ্রীলঙ্কা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া বেশ কয়েকটি মেগা-অবকাঠামো এবং সংযোগ প্রকল্পে দেশকে সহায়তা করেছে। ২০০৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত চিনা এফডিআই ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং ২০০৬ সালে ০.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৯ সালে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত অর্থায়ন (ঋণ) বেড়েছে। আয়ের কম সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ঋণ গ্রহণ শ্রীলঙ্কাকে কৌশলগত হাম্বানটোটা বন্দর এবং কলম্বো পোর্ট সিটি (সিপিসি) প্রকল্প চিনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজে দিতে বাধ্য করেছে (দ্রষ্টব্য মানচিত্র ২)। এই অর্থনৈতিক সুবিধা এই অঞ্চলে চিনা উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে এবং পরবর্তী সরকারগুলিকে এর স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংবেদনশীল হতে বাধ্য করেছে। দেশটিতে চিনা ডুবোজাহাজ এবং গুপ্তচর জাহাজ নোঙরের একাধিক পর্ব দর্শায় যে, কী ভাবে বেজিং তার বিনিয়োগ ও ঋণ পুনর্গঠন আলোচনাকে আইওআর-এর সামরিকীকরণের জন্য ব্যবহার করেছে। আজও বেজিংয়ের শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে, যা সমস্ত দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ।
চিনের ভূ-রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে আইওআর-এ তার উপস্থিতি বাড়িয়েছে। এটি ইলম যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতা এবং যুদ্ধোত্তর উন্নয়নের জন্য নতুন অংশীদারদের সন্ধানের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে।
অন্য দিকে, এই অঞ্চলের চিরাচরিত শক্তি ভারতও শ্রীলঙ্কায় নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। গত দুই দশকে চিনের অর্থনৈতিক প্রভাব, রাজনৈতিক শৃঙ্খল এবং বিনিয়োগ ভারতকে খানিক হলেও পিছিয়ে যেতে বাধ্য করেছে এবং শ্রীলঙ্কার সরকার ভারতীয় সংবেদনশীলতাকে তেমন সম্মান করেনি। এটি রাজাপক্ষে ভ্রাতাদের (২০০৫-২০১৫; ২০১৯-২০২২) অভ্যন্তরীণ এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে চিনের সঙ্গে কাজ করতেও উদ্বুদ্ধ করেছিল। যাই হোক, ২০২১ সালের শেষের দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের সূত্রপাত দেখে ভারত শ্রীলঙ্কাকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করে। এটি শ্রীলঙ্কায় ভারতের উপস্থিতি, প্রভাব এবং সংযোগ বাড়ানোর সুযোগ বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ভারত সিপিসি সংলগ্ন কলম্বো বন্দরের পশ্চিম কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে, হাম্বানটোটায় একটি বিমানবন্দর পরিচালনা করবে এবং সম্ভবত আরও তিনটি বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত কৌশলগত শহর ত্রিনকোমালিতে তেলের ট্যাঙ্ক তৈরি করছে এবং এটিকে একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো অন্যান্য দেশও বিবর্তিত বৃহৎ ক্ষমতার রাজনীতিতে অংশীদারিত্বের জন্য দেশে নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। ভারতকে ওয়েস্ট কন্টেনার টার্মিনালের উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাবও দিয়েছে।
মানচিত্র ২. শ্রীলঙ্কার আর একটি মানচিত্র
সূত্র: গুগল ম্যাপস
এই অঞ্চলে অন্যান্য দেশের উপস্থিতি শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা এবং কৌশলগত সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলছে। তাই দ্বীপদেশটির অসাযুজ্যপূর্ণ ও চিরাচরিত নিরাপত্তা সমীকরণ উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে রয়েছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কট শ্রীলঙ্কাকে বাধ্য করেছে তার নিরাপত্তা ভাবনার পুনর্নির্মাণ করতে। সঙ্কটের সূত্রপাত সম্পদের সুবিবেচনামূলক ব্যবহার এবং অপ্রচলিত হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। তাই সরকারকে প্রবৃদ্ধি উন্নত করতে, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখতে, যোগাযোগের নিরাপদ সমুদ্র শৃঙ্খল এবং একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাচার ও অবৈধ মাছ ধরার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাধ্য করেছে (দ্রষ্টব্য মানচিত্র ৩)। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কা এমনকি একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিককে উন্নত করতে, সমুদ্রের তলদেশে কেবল তারগুলিকে রক্ষা করতে, অবৈধ মাছ ধরা এবং পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, পরিবেশগত সমস্যাগুলির সমাধান করতে এবং দুর্যোগে ত্রাণ প্রদানের জন্য আইওআর-এর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিল। এটি দেশটিকে আইওআর-এ ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করতে এবং লোহিত সাগরে তার টহল জাহাজ মোতায়েন করতে অনুপ্রাণিত করেছে, যাতে বাণিজ্যিক বিঘ্ন এবং স্ফীতিজনিত চাপ এড়াতে মার্কিন অপারেশন ‘প্রসপারিটি গার্ডিয়ান’-এ সহায়তা করা যায়।
মানচিত্র ৩. শ্রীলঙ্কা এবং ইইজেড
সূত্র: রিসার্চগেট
কৌশলগত দ্বিধা
সামুদ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কা তার সামরিক সক্ষমতা উন্নত করছে। আশা করা যায় যে, এই উন্নয়নটি দেশটিকে তার অঞ্চলগুলিকে সুরক্ষিত করতে এবং আইওআর-এ অতিরিক্ত উপস্থিতি ছাড়াই এর সংস্থানগুলি অন্বেষণ করতে সহায়তা করবে। বর্তমানে, শ্রীলঙ্কা সরকার দুর্বলবাহিনী এবং বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা করার জন্য প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের জন্য জোর দিচ্ছে। সরকার সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে এ বছর ২০০,৭৮৩ থেকে ১,৩৫,০০০ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১,০০,০০০-এ নামিয়ে আনতে আগ্রহী এবং নৌ ও বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এমনটা করতে রাজি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। সরকারের প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা ২০৩০-এ একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, শক্তি সংক্রান্ত ভঙ্গি, এবং প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্য এবং নিরাপত্তা স্বার্থের রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শ্রীলঙ্কা অন্যান্য দেশের চাপ এড়াতে এবং সামুদ্রিক পরিসরের অস্ত্রায়ন এড়াতে এবং সমান গবেষণা অংশীদার হওয়ার জন্য নিজের ক্ষমতাকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে গবেষণার স্বার্থে বিদেশি জাহাজের নোঙর বা নিয়োগের উপর একটি বছরব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সামুদ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কা তার সামরিক সক্ষমতা উন্নত করছে। আশা করা যায় যে, এই উন্নয়নটি দেশটিকে তার অঞ্চলগুলিকে সুরক্ষিত করতে এবং আইওআর-এ অতিরিক্ত উপস্থিতি ছাড়াই এর সংস্থানগুলি অন্বেষণ করতে সহায়তা করবে।
এমনটাও বলা হয়েছে, কলম্বোয় নীতিনির্ধারকরা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যান্য বড় শক্তির কাছ থেকে সহায়তা আকৃষ্ট করার জন্যই প্রতিযোগিতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে শ্রীলঙ্কা ভারতের কাছ থেকে একটি ডর্নিয়ার বিমান, একটি ভাসমান ডক ফেসিলিটি, একটি এমআরসিসি এবং একটি ছোট অস্ত্র তৈরির ইউনিট পাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ভারতের তথ্য ফিউশন কেন্দ্রেও যোগ দেবে। এ ছাড়াও তিনটি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেলের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। চিন ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কাকে একটি ফ্রিগেট দান করেছে এবং সম্প্রতি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ সরঞ্জাম দিয়েছে। চিন তার গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এ শ্রীলঙ্কাকেও যুক্ত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে তিনটি কোস্টগার্ড কাটার এবং সামরিক হার্ডওয়্যার প্রদান করেছে। অস্ট্রেলিয়া এর আগে শ্রীলঙ্কাকে দু’টি টহলদার জাহাজ মঞ্জুর করেছিল এবং এখন জাহাজের ইঞ্জিনগুলিও মঞ্জুর করে চলেছে। অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেকে একটি বিচক্র্যাফ্ট বিমান প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে এবং ফ্রান্স ত্রিনকোমালিতে একটি মেরিটাইম সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে।
জ্বালানি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রতিযোগিতা ক্রমবর্ধমান ভাবে দৃশ্যমান। সম্পদের সুবিবেচনামূলক ব্যবহার এবং লোকসানকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের বেসরকারিকরণে আগ্রহী পুনরুজ্জীবিত শ্রীলঙ্কা এখন শক্তি প্রকল্প, বন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য দেশগুলির প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী থাকছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও চিন টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। জ্বালানি খুচরো বিক্রেতা ক্ষেত্রে - যেখানে অতীতে শুধুমাত্র ভারতীয় সংস্থাগুলি পরিচালনা করছিল - শ্রীলঙ্কা এখন চিনা, মার্কিন এবং অস্ট্রেলীয় সংস্থাগুলিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। চিন হাম্বানটোটায় একটি তেল শোধনাগার তৈরি করতে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে এবং অন্য দিকে ভারত শ্রীলঙ্কাকে দ্বি-মুখী শক্তি গ্রিড এবং তেল পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে আগ্রহী। এই ভাবে সেই প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিতে শ্রীলঙ্কা ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে, যে দ্বন্দ্ব এত দিন দ্বীপদেশটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে।
একটি দেশের নিরাপত্তা বিবেচনা এবং সমীকরণ কী ভাবে ভৌগোলিক পরিসর নির্ধারণ করে, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা যখন উদীয়মান হুমকি মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরে সংস্কার এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতার জন্য জোর দিচ্ছে, তখন এর অবস্থান এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতার রাজনীতি থেকে ক্রমশ সরে আসতে বাধ্য করেছে। উপরন্তু, তার চিরাচরিত এবং নতুন নিরাপত্তা চাহিদা বিবেচনা করে দ্বীপদেশটি তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের সুবিধাও নিচ্ছে এবং আরও প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এটি শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সমীকরণে নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে। নীতিনির্ধারকেরা কী ভাবে দ্বীপদেশের অগ্রাধিকারগুলিকে সংজ্ঞায়িত করবেন এবং নিজেদের বৈদেশিক নীতি, নিরাপত্তা লক্ষ্য ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে অমিল দূর করবেন, তার উপরেই নির্ভর করে এই দ্বিধা মোকাবিলা করা সম্ভব।
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.