Author : Naghma Mulla

Published on Jan 02, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতের মহিলা কর্মীবাহিনীর অংশগ্রহণ অকিঞ্চিৎকর এবং তা নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত ভারতের নীতি ও প্রকল্পগুলির জরুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানায়

ভারতের অর্থনৈতিক প্রগতিতে নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধি করা দরকার

লিঙ্গ নিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব, গৃহস্থালির কাজ, বাচ্চাদের লালনপালন এবং বয়স্কদের যত্নের অসম দায়বদ্ধতা কর্মশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। এই অবৈতনিক যত্নশীল দায়িত্বগুলি আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাঁদের সময় এবং সুযোগগুলিকে ব্যাপকভাবে সীমিত করে, যার ফলে মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার কম হয়। এর একটি সুদূরপ্রসারী আর্থ–সামাজিক প্রভাব আছে, এটি ক্ষতিকারক লিঙ্গ পক্ষপাতকে শক্তিশালী করে, এবং অর্ধেক জনসংখ্যার সম্ভাবনা সীমিত করে। ২০২২ সালে ভারতের মহিলা কর্মশক্তির অংশগ্রহণ ছিল ২৪ শতাংশ। এই নিম্ন হার, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণকে ক্ষুণ্ণ করে, নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত ভারতের নীতি ও প্রকল্পগুলির জরু্রি পর্যালোচনার আহ্বান জানায়।

এর একটি সুদূরপ্রসারী আর্থ–সামাজিক প্রভাব রয়েছে, এটি ক্ষতিকারক লিঙ্গ পক্ষপাতকে শক্তিশালী করে, এবং অর্ধেক জনসংখ্যার সম্ভাবনা সীমিত করে।



ভারতের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের
মিশন শক্তি, তার দুটি উপ–প্রকল্প ‘‌সামর্থ্য’‌ ও ‘‌সম্বল’‌ সহ, মহিলাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সামর্থ্য নারীর ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, আর সম্বল লিঙ্গভিত্তিক হিংস্রতা, পুনর্বাসন ও কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বাসস্থানের বিষয়টি দেখে। ন্যাশনাল ক্রেশ স্কিম ও প্রধানমন্ত্রী মাত্রু বন্দনা যোজনা, যেগুলি আগে বৃহত্তর সমন্বিত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ছিল, সেগুলিও সমর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, মিশন শক্তির ন্যাশনাল হাব ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট একটি ফ্লেক্সি–ফান্ড বজায় রাখে, যা উপ–প্রকল্পগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত অপ্রত্যাশিত প্রয়োজন মোকাবিলা করার জন্য এবং একটি নমনীয়, প্রতিক্রিয়াসম্পন্ন উপায়ে মহিলা ও মেয়েদের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদান করে, বিশেষত যখন অন্যান্য তহবিল উৎস অপ্রতুল হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাও এই উদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করে। যাই হোক, ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ মহিলাদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সুযোগের ক্ষেত্রে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতকে ১৪২তম স্থান দিয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে লিঙ্গ সমতা অর্জনের যাত্রায় এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে৷ যদিও সরকার নারীদের কর্মশক্তির অংশগ্রহণকে উন্নীত করার জন্য ব্যাপক নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করেছে, সামাজিক ও পদ্ধতিগত পক্ষপাতিত্ব এবং লজিস্টিক প্রতিবন্ধকতা সেগুলির কার্যকর বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলি গভীরভাবে অন্তর্নিহিত সাংস্কৃতিক পক্ষপাতিত্ব, সচেতনতার অভাব, এবং এই কর্মসূচিগুলির প্রাপ্যতার অভাব থেকে শুরু করে সম্পদের সীমাবদ্ধতাকে সূচিত করে। অতএব, এই সমস্যাগুলি বোঝা এবং উপযুক্ত নীতি ও হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন।

ন্যাশনাল ক্রেশ স্কিম ও প্রধানমন্ত্রী মাত্রু বন্দনা যোজনা, যেগুলি আগে বৃহত্তর সমন্বিত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ছিল, সেগুলিও সমর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। 



কোভিড–১৯ অতিমারি সঙ্কটের সময়টি মহিলাদের কর্মসংস্থানের দুর্বলতার উপর আলোকপাত করেছে।
একটি সমীক্ষা ২০২০ লকডাউনের সময় চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য লিঙ্গবৈষম্য নির্দেশ করে। যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ পুরুষ  কাজের বাইরে ছিলেন, সেখানে ৪৭ শতাংশ মহিলা তাঁদের চাকরি হারিয়েছিলেন, এবং বেশিরভাগই বছরের শেষ পর্যন্ত আর চাকরি শুরু করেননি। অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল, যেখানে লকডাউনের মাসগুলিতে ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছিলেন। নারীর কর্মশক্তির অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য শিক্ষা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তথ্য নির্দেশ করে যে, ১৫–৪৯ বছর বয়সী ৮৪.৪ শতাংশ পুরুষের তুলনায় ৭১.৫ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত৷ বিগত বছরগুলির তুলনায় উন্নতি সত্ত্বেও মহিলাদের জন্য নিম্ন সাক্ষরতার সমস্যা এবং শিক্ষায় তাঁদের প্রবেশাধিকার অন্যান্য বিদ্যমান সমস্যার সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। যদিও গভীর শিকড়যুক্ত লিঙ্গগত পক্ষপাতিত্ব এবং অবৈতনিক পরিচর্যামূলক কাজগুলি নারী ও মেয়েদের শিক্ষা ও জীবিকা অর্জনে বাধা, এবং দুর্বল জল ও স্যানিটেশন সুবিধাগুলি আরও মহিলা ও মেয়েদের এই সুযোগগুলি ব্যবহার করতে বাধা দেয়। মেয়েরা সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ছয় দিন স্কুল মিস করে, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অপ্রতুল স্যানিটেশন সুবিধার কারণে বয়ঃসন্ধিকালে ২৩ শতাংশ স্কুল ছেড়ে দেয়। ফলস্বরূপ, তাদের সম্ভাব্য ও ভবিষ্যৎ কর্মশক্তির অবদান মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত)–সংশ্লিষ্ট পেশায় নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের  স্টেম গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় অর্ধেকই মহিলা৷ যাই হোক, ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি–সম্পর্কিত পেশায় নিয়োজিত মহিলাদের অনুপাত ১৪ শতাংশ, যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাগত বিভাগে তাদের প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে ব্যাপকভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ। তাই, শিক্ষা ও কর্মশক্তি উভয় পর্যায়েই নারীর প্রবেশের বাধাগুলি বোঝা ও সেই সমস্যাগুলির সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ।

মাত্র ৭ শতাংশ পুরুষ কাজের বাইরে ছিলেন, সেখানে ৪৭ শতাংশ মহিলা তাঁদের চাকরি হারিয়েছিলেন, এবং বেশিরভাগই বছরের শেষ পর্যন্ত আর চাকরি শুরু করেননি।



মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থনৈতিক যুক্তি অনস্বীকার্য, কারণ ভারতের জিডিপি সম্ভাব্যভাবে
২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ৭৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান, যদি ভারত তার মহিলা কর্মশক্তির অংশগ্রহণ পুরুষদের সমান স্তরে বাড়াতে পারে। সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, নারী–নেতৃত্বাধীন ব্যবসার জন্য ঋণের সুযোগ প্রদান, কাজের অবস্থার উন্নতি এবং আইনি ও সামাজিক সংস্কারের পক্ষে সমর্থন–সহ এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। সরকার, জনহিতৈষী, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রসহ অংশীদারদের অবশ্যই তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং স্থিতিশীল সমাধানের দিকে এগোতে হবে। শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিকাঠামো এবং জনসেবা প্রদানের উন্নতি কর্মশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, পূর্বে কর্মরত প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা বলেছেন যে তাঁদের শিশুযত্নের দায়িত্বের কারণে বৈতনিক কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে। যেহেতু শিশুযত্নের দায়িত্ব বিশেষ করে মহিলাদের উপর অর্পিত হয়, তাই তাঁদের কর্মক্ষেত্রে মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শিশুযত্নের সুবিধা দিয়ে তাঁদের সমর্থন করা প্রয়োজন। একইভাবে, স্যানিটেশন পরিকাঠামো নারীদের শিক্ষাগত এবং আয়বর্ধক ভূমিকার বাইরে চলে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।

জনহিতৈষী, সুশীল সমাজ সংস্থা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের মতো অংশীদারেরা নারীদের অধিকার ও সুরক্ষাতে আরও অবদান রাখতে পারে এবং তা শক্তিশালী করতে পারে।



একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব হিসাবে সরকারের ভূমিকা তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি মাত্রা জুড়ে বিস্তৃত। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকার রক্ষা, সমান বেতন নিশ্চিত করা, এবং মহিলাদের হয়রানির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করার নীতির সংস্কার করেছে৷ জনহিতৈষী, সুশীল সমাজ সংস্থা ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মতো অংশীদারেরা নারীদের অধিকার ও সুরক্ষাতে আরও অবদান রাখতে পারে এবং তা শক্তিশালী করতে পারে। বেসরকারি ক্ষেত্র কর্মক্ষেত্রের নীতিগুলি  পরিচালনা করতে পারে, যেমন অর্থ–সহ পিতৃত্বকালীন ছুটি, নমনীয় সময়, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য অর্থপ্রদান করা, এবং কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা ও বজায় রাখার জন্য শিশুযত্নের সুবিধার ব্যবস্থা। অধিকন্তু, বেসরকারি সংস্থাগুলি নারীদের কর্মশক্তিতে প্রবেশ উৎসাহিত করতে সহায়তা করতে পারে লিঙ্গ–ইতিবাচক নিয়োগ-নীতির মাধ্যমে, যেমন নারীদের একটি ব্যবধানের পরে কাজে যোগদান করতে সক্ষম করা এবং মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলি প্রসারিত করা। সুশীল সমাজ সংস্থাগুলির সাহায্যে কর্মক্ষেত্রগুলিও মহিলাদের জন্য সক্ষমতা–নির্মাণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি চালু করতে পারে, যাতে তাঁরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ না–পেলেও প্রতিযোগিতামূলক এবং কর্মপ্রাপ্তিযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। জনহিতকর সহায়তার মাধ্যমে মহিলারা, বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে, ক্ষুদ্রঋণ এবং ঋণ পেতে পারেন, যা ছোট ব্যবসা শুরু এবং আয়তনে বড় করার জন্য অপরিহার্য। একইসঙ্গে জনহিতকর তহবিল সামাজিক উদ্যোগগুলিতে বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগুলিতে অবদান রাখতে পারে, যা দক্ষতা বিকাশ এবং মহিলাদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।


নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সম্ভাব্য সুবিধাগুলি নারী ও সমাজ উভয়ের জন্যই বিশাল এবং ‌রূপান্তরের পথিকৃৎ। 



নারী–নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলি নারীদের সমর্থন, পরামর্শদান এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগ প্রদান করে তাৎক্ষণিক ত্রাণ প্রদান করতে পারে। তারা জ্ঞান ও সংস্থান ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে, এবং কর্মীবাহিনীতে সফল হওয়ার জন্য মহিলাদের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দীর্ঘমেয়াদে এই সংস্থাগুলি মহিলাদের অধিকারের জন্য প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিতে এবং সমর্থন করতে পারে, কার্যকর কৌশল বাস্তবায়নের জন্য অন্য অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে, এবং সমস্ত ক্ষেত্রব্যাপী নেতৃত্বের ভূমিকায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব প্রসারিত করতে পারে। ভারতের কর্মশক্তিতে লিঙ্গসমতার যাত্রা দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং। তবুও, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সম্ভাব্য সুবিধাগুলি নারী ও সমাজ উভয়ের জন্যই বিশাল এবং ‌রূপান্তরের পথিকৃৎ। আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব হল ভারতের নারী কর্মশক্তি যাতে তাদের প্রাপ্য পায় তা নিশ্চিত করা।



নাগমা মুল্লা এডেলগিভ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.