Published on Feb 27, 2025 Updated 0 Hours ago

বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তাইল্যান্ডের সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক উদ্যোগকে সমন্বিত করে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চাপ দেয়

পশ্চিম অভিমুখী নীতির লক্ষ্যে কাজ করা: তাইল্যান্ডের নিরাপত্তা ও বঙ্গোপসাগরের অভিন্ন সাধারণ সমৃদ্ধির পথে যাত্রা

Image Source: Getty

ভারত মহাসাগরের সঙ্গে তাইল্যান্ডের ঘনিষ্ঠতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চল পূর্ব আন্দামান সাগরে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে দ্বীপটির সংযোগ চিরাচরিত ভাবে তাইল্যান্ডের সামুদ্রিক পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছে। যাই হোক, বঙ্গোপসাগরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা উদ্বেগগুলিও এই পদ্ধতির গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিশেষ করে দেশটির অ্যাক্ট ওয়েস্ট পলিসি-র (এডব্লিউপি) নিরিখে, যার লক্ষ্য হল বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সুযোগগুলিকে কাজে লাগানো। তাই তাইল্যান্ড নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যের নিরিখে তার কৌশলগত অবস্থান এবং আসিয়ান-এর (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্থিতিশীলতা ও অভিন্ন সাধারণ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই কৌশলটির লক্ষ্য হল দুই ক্ষেত্রেই তাইল্যান্ডের প্রভাব বৃদ্ধি করা এবং দেশটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসাবে তুলে ধরা

তাইল্যান্ড নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যের নিরিখে তার কৌশলগত অবস্থান এবং আসিয়ান-এর (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্থিতিশীলতা ও অভিন্ন সাধারণ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেছে।

উপসাগরের অর্থনৈতিক জলরাশি

বঙ্গোপসাগরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা শুধু বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতিকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যা এই অঞ্চলের বিশাল সম্পদ। এই সব কিছুই দেশের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশকে সমর্থন করে এবং তাইল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক-তৃতীয়াংশে অবদান রাখে। এর পাশাপাশি মৎস্য ও সামুদ্রিক চাষ এমন একটি অপরিহার্য ক্ষেত্র, যা খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে। সর্বোপরি, সামুদ্রিক পর্যটন বার্ষিক লক্ষ লক্ষ পর্যটককে আকর্ষণ করে। নীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাইল্যান্ড আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য দ্বিপাক্ষিকতা বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোনিবেশ করেছে।

উপসাগরটি তাইল্যান্ডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য করিডোরও বটে, যা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদান করে। জলের এই অত্যাবশ্যক অংশের সীমান্তবর্তী ছটি উপকূলীয় দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে তাইল্যান্ড কৌশলগত ভাবে বাংলাদেশ, মায়ানমার ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি সঙ্গে নিজের সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে আগ্রহী হয়েছে। বহুপাক্ষিক উদ্যোগে তাইল্যান্ডের প্রচেষ্টাগুলি বঙ্গোপসাগরে তার কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করে এ হেন প্রকল্পগুলি দ্বারা পরিপূরক হয়ে উঠেছে। ব্যাঙ্ক ঢাকা তাইল্যান্ডের রানং বন্দর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপন করতে চায়। আবার তিনটি উপকূলীয় দেশের মধ্যে ভারতীয় নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো প্রকল্প ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়কে তাইল্যান্ডের অংশগ্রহণ আসলে এই অঞ্চলের প্রতি তাইল্যান্ডের উৎসাহকেই দর্শায়। বন্দর আন্তঃসংযোগ ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক দ্বিপাক্ষিক ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ককে উপকৃত করে এবং ভুটান, নেপাল ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্যাঙ্ককের সম্পৃক্ততার জন্য কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। এই সম্পৃক্ততা তাইল্যান্ডকে তার বাজারে প্রবেশ করতে এবং সস্তা পরিবহণের মাধ্যমে তার বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে।

তিনটি উপকূলীয় দেশের মধ্যে ভারতীয় নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো প্রকল্প ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়কে তাইল্যান্ডের অংশগ্রহণ আসলে এই অঞ্চলের প্রতি তাইল্যান্ডের উৎসাহকেই দর্শায়।

দ্বিপাক্ষিকতা ছাড়াও তাইল্যান্ড এই অঞ্চলে বহুপাক্ষিকতার দিকে ঝুঁকছে, বিশেষ করে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টে) এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন-এর (আইওআরএ) প্রতি তাইল্যান্ডের ঝোঁক থেকেই এ কথা স্পষ্ট। এই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ব্লু ইকোনমি সামুদ্রিক সংযোগ উদ্যোগগুলিকে আকার দেয়। বহুপাক্ষিকতার প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাইল্যান্ড বিমস্টেকের ক্ষেত্রে একটি নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতা বাড়ানো যায় এবং গোষ্ঠীটিকে আরও সুসংহত করা যায়। বিমস্টেক-কে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে তাইল্যান্ডের লক্ষ্য হল প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সমন্বিত গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উন্নত করতে সক্ষম। কারণ আসিয়ান-এর মতো সংস্থার তুলনায় আন্তঃ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সমন্বিত ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম হল বঙ্গোপসাগরনিজেএডব্লিউপি-সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আগেকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেএবং বিমস্টেক-এর চেয়ার হিসাবে তাইল্যান্ড অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিকে চোদ্দ থেকে সাতটি ক্ষেত্রে প্রবাহিত করতে সাহায্য করেছে এবং সেই ক্ষেত্রগুলি হল কৃষি, সংযোগ, পরিবেশ, নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তঃসংযোগ জনগণের মধ্যে যোগাযোগ। এই প্রচেষ্টায় তাইল্যান্ডের সমৃদ্ধ আসিয়ান-এর অভিজ্ঞতা বিমস্টেকের ক্ষেত্রেও কার্যকর হয়েছে। সর্বোপরি, আসিয়ান-এর সদস্য হিসেবে তাইল্যান্ড মাস্টার প্ল্যান আসিয়ান কানেক্টিভিটি ২০২৫ এবং বিমস্টেক ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি-কে আকার দিতে ইনিশিয়েটিভ ফর আসিয়ান ইন্টিগ্রেশনের মতো উদ্যোগ শুরু করেছে। একই ভাবে, আইওআরএ-তে তাইল্যান্ড একটি সক্রিয়ভূমিকা পালন করেছে এবং ‘স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান বিনিময়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের প্রচার এবং অবৈধ, অপ্রতিবেদিত অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে লড়াই’-এর বিষয়টিকে সমর্থন করেছে।

এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগগুলি সত্ত্বেও তাইল্যান্ডের অবদানকারীরা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং কয়েকটি প্রধান সমস্যা হল অংশীদারদের মধ্যে সীমিত সচেতনতা, অপ্রতুল পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রক সহায়তার অভাব, যা দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে। তাইল্যান্ড স্থিতিশীল ঋণ ব্লু বন্ডের মতো আর্থিক পণ্যগুলির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য নিজের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সংহত করেছে। দেশটি পরিবেশগত সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মেরিন স্প্যাশিয়াল প্ল্যানিং-এর (এমএসপি) বাস্তবায়ন করেছে এবং অতিরিক্ত মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন দূষণ মোকাবিলায় বে অফ বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম প্রজেক্ট ফেজ টু-র (বিওবিএলএমই টু) মতো উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে।

তাইল্যান্ড স্থিতিশীল ঋণ ব্লু বন্ডের মতো আর্থিক পণ্যগুলির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য নিজের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সংহত করেছে।

এই অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা

বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত তাৎপর্যের নেপথ্যে থাকা অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাকে খাটো করা উচিত নয়। তবে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা তাইল্যান্ডের জন্য সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই প্রতিফলিত করে: তাইল্যান্ডের এডব্লিউপি নিরাপত্তা স্তম্ভের একটি ক্রমবর্ধমান দাবি এবং ব্যাপক ভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কাঠামো গঠনে এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব। বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের দৃশ্যমান, ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও প্রসারের কারণে নিরাপত্তা আঞ্চলিক পরিবর্তনের অংশ হয়ে উঠেছে, যা নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তবে তাইল্যান্ডের পদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা। তাইল্যান্ড নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দিলেও এবং সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা সহযোগিতা যৌথ প্রতিরক্ষা মহড়ার মাধ্যমে ভারতের মতো আঞ্চলিক দেশগুলির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা করলেও (যেমনটা সারণি ১-এ দেখানো হয়েছে) তাইল্যান্ড আসলে কোনও সংঘর্ষের অবস্থান না গ্রহণ করেই এ হেন কাজ করেছে। উপরন্তু, দেশটি সামুদ্রিক সহযোগিতার মাধ্যমে নীল অর্থনীতির গুরুত্বের উপরেও জোর দিয়েছে।

সারণি ১: তাইল্যান্ড অন্যান্য দেশের মধ্যে সামুদ্রিক অনুশীলন

দেশ

সামুদ্রিক মহড়া

বছর

কর্মসূচি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

গার্ডিয়ান সি

২০১৬-২০২৪

ডুবোজাহাজ-বিরোধী ও সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মহড়া

ভারত

সিওআরপিএটি

২০০৫-২০২৪

সামুদ্রিক নিরাপত্তা, আন্তঃকার্যকারিতা, আইন প্রণয়ন, দুর্যোগ ত্রাণ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা

ত্রিপাক্ষিক – সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে

এসআইটিএমইএক্স

২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২৪

আন্তঃকার্যকারিতা ও আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধি

বহুপাক্ষিক

মিলন

১৯৯৫-২০২৪

সামরিক চুক্তি, সামুদ্রিক সহযোগিতা সশক্ত করা ও আন্তঃকার্যকারিতা বৃদ্ধি করা

সূত্র: লেখক দ্বারা সঙ্কলিত

সামুদ্রিক সহযোগিতার কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়াযেমন ইন্ডিয়া-তাইল্যান্ড কোঅর্ডিনেটেড প্যাট্রল (সিওআরপিএটি)। এটি একটি দ্বি-বার্ষিক উদ্যোগ, যা ভারতীয় ও রয়্যাল তাই নৌবাহিনীর মধ্যে হয় এবং এটি ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল এই যৌথ মহড়াগুলি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকেই দর্শায় এবং ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং তাইল্যান্ডের অ্যাক্ট ওয়েস্ট পলিসি মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের পর জোর দেওয়ার পাশাপাশি সমুদ্রপথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে ভারত ছাড়া তাইল্যান্ড এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও নৌ সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাইল্যান্ড আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা শাসন প্রতিরক্ষা বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে নিজেদের সমন্বিত করছে, যেমন ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই)আইওএনএস-এর চেয়ার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আইপিওআই -এর সামুদ্রিক পরিবেশ স্তম্ভের সহ-নেতা হিসাবে তাইল্যান্ড সমন্বিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ করেছে। তাইল্যান্ডের আইওএনএস-এর সভাপতিত্বে দেশটি জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা চোরাচালান-সহ আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক কৌশল তৈরি করেছে এবং এটি সামুদ্রিক সম্পদের কার্যকর স্থিতিশীল ব্যবহার এবং দক্ষ ও উপকারী শেয়ার্ড মেরিটাইম ডোমেন ব্যবস্থাপনা" সমর্থনে নীল অর্থনীতির ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাইল্যান্ড আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা শাসন প্রতিরক্ষা বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে নিজেদের সমন্বিত করছে, যেমন ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই)

এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাইল্যান্ড আইওএনএস-এর সম্মিলিত শক্তিতে যোগদান করে এবং এই সমস্যাগুলিকে কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য আঞ্চলিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং পরিবেশগত অবক্ষয় চোরাচালানের মতো নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এই প্রচেষ্টাগুলি তাইল্যান্ডের অনন্য সামুদ্রিক পদ্ধতিকেই দর্শায়, যা সমবায় কাঠামোর মাধ্যমে জাতীয় স্থিতিস্থাপকতার উপর জোর দেয় এবং বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরকে জুড়ে একটি সমন্বিত নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি মনোভাবের দিকে ইঙ্গিত করে। সুতরাং, এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ দর্শায় যে, নিরাপত্তা বিবেচনাগুলি ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সমাপতিত হচ্ছে। এ হেন প্রচেষ্টার মাধ্যমে একে অপরের জন্য আপস না করে সামুদ্রিক পরিসরে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা স্বার্থকে সমঞ্জস করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

তাল্যান্ডের পদ্ধতি: একটি স্বতন্ত্র পদ্ধতির প্রচার

সক্রিয় উদ্যোগ সুপরিকল্পিত কৌশলগুলির মাধ্যমে তাইল্যান্ড বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে একটি প্রধান শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রদর্শন করেছে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে শক্তিশালী করতে, সংযোগ বৃদ্ধি করতে সমুদ্রতীরবর্তী দেশগুলির মধ্যে অখণ্ডতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার করার জন্য অগ্রণী প্রচেষ্টা কার্যকর ভাবে অভিন্ন  সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহযোগিতার ক্ষমতা দর্শিয়েছে। নিজের নেতৃত্বের ভূমিকার ঊর্ধ্বে উঠে তাইল্যান্ড একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ভিত্তি তৈরি করছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রভাবকে শক্তিশালী করে তোলে এবং স্থিতিশীল অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করার জন্য তাইল্যান্ডের প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।

তাইল্যান্ড দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে পারে এবং অ্যাক্ট ওয়েস্ট নীতি অনুসরণ করে একটি অর্থনৈতিক সেতু সামুদ্রিক কেন্দ্র হিসাবে নিজের ভূমিকাকে কাজে লাগাতে পারে।

আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্যোগে তাইল্যান্ডের সম্পৃক্ততা তার আসিয়ান-এর অভিজ্ঞতা থেকে ভাগ করে নিয়ে সামুদ্রিক নিরাপত্তা অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলিকে সমন্বিত করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। এই অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি বিমস্টে, আইপিওআই এবং আইওআরএ-র মতো আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও আকার দিয়েছে, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপের উপর জোর দিয়েছে। এই সব কিছুই আসলে সামুদ্রিক পরিসরে অর্থনীতি নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে এই অনুন্নত অঞ্চলের মধ্যে একটি আরও সমন্বিত ভূ-রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য তাইল্যান্ডের আকাঙ্ক্ষাকে দর্শায়। তাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা বিকশিত হতে থাকায় সংলগ্ন সামুদ্রিক ভূগোলের ক্ষেত্রে তাইল্যান্ডের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনৈতিক সুযোগগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলিকে কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ থাকবে।

তাইল্যান্ড দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে পারে এবং অ্যাক্ট ওয়েস্ট নীতি অনুসরণ করে একটি অর্থনৈতিক সেতু সামুদ্রিক কেন্দ্র হিসাবে নিজের ভূমিকাকে কাজে লাগাতে পারে। এই প্রেক্ষিতে ভারত আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তাইল্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এই অনুভূতি অনুরণিত হয়েছিল, যেখানে উভয় পক্ষই ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট বা পূর্ব অভিমুখী নীতি … এবং তাইল্যান্ডের অ্যাক্ট ওয়েস্ট বা পশ্চিম অভিমুখী নীতির অভিন্নতা লক্ষ্য করেছে। তাই, সামুদ্রিক ভূগোলের প্রতি তাইল্যান্ডের বহুমুখী মনোভাব এই অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তাগুলিকে দর্শায়।

 


অভিষেক শর্মা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

আদিত্যবিক্রম রানা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.