Published on Jul 21, 2025 Updated 0 Hours ago

অর্থনৈতিক সূচকগুলি ট্রাম্পকে বলছে যে যদি তিনি অযৌক্তিক নীতি নিয়ে এগিয়ে যান, তাহলে ফলাফল হবে ভয়াবহ

ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি ত্রয়ী

মিত্ররা হতবাক। প্রতিপক্ষরা আনন্দিত। বিশ্ব বিভ্রান্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক প্রতিহিংসার মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে, তা অর্থনীতির সর্বত্র ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনছে। অবশ্যই, 'শুল্ক' শব্দটি কেবল একটি বর্ম, যার পিছনে লুকিয়ে আছে একটি বিচিত্র ও বেপরোয়া ব্যাধি।

চিয়ারলিডাররা আত্মসমর্পণ করবে। ভুক্তভোগীরা আতঙ্কিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এবং ট্রাম্প তাঁর আজ-‌এমন-‌কাল-‌তেমন নীতিগুলির অনির্দেশ্যতা পুনর্বিবেচনা করবেন, কিন্তু সেগুলি প্রত্যাহার করবেন না, কারণ এভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠা পান (
ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার বিশাল ঘোষণার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হওয়া থেকে সাম্প্রতিক বিচ্যুতি হল শুধুই সর্বশেষ উদাহরণ)। যা লুকিয়ে ছিল তা এখন প্রকাশ্যে: রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে ১৯৪৫-পরিচালিত নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে ১৯৯৫-প্ল্যাটফর্মযুক্ত বিশ্বায়নে এসব একটি বিশাল ব্যাঘাত। এই দুটিই কয়েক দশক ধরে বেজিং কর্তৃক ক্রমবর্ধমান হাইজ্যাকের সাক্ষী, যা শি জিনপিংয়ের চিনে বিশাল গতিবেগ লাভ করেছে।
 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক প্রতিহিংসার মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে, তা অর্থনীতির সর্বত্র ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনছে।



ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ১২,০৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নয়াদিল্লি এই নাটকটিকে তিন-অঙ্কের নাটক হিসেবে দেখে। এটি বিনোদনের সমস্ত আবেগ বহন করে — ধাক্কা ও বিস্ময়, বিনোদন, আতঙ্ক, উত্তেজনা, অবকাশ; একজন হতাশ প্রেমিক, একজন অবজ্ঞাপূর্ণ প্রতিপক্ষ, অবিরাম দুই-পক্ষের দুই-ভূগোল যুদ্ধ। চূড়ান্ত পরিণতি অপেক্ষা করছে, সম্ভবত এখনও লেখা হচ্ছে। প্রথম অঙ্ক ট্রাম্পের প্রাক-নির্বাচনী অ্যাজেন্ডার ভিত্তি ও প্রত্যাশা স্থাপন করেছিল। দ্বিতীয় অঙ্ক চলছে, আংশিকভাবে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সফল, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বহির্বিশ্বে নয়। তৃতীয় অঙ্ক আরও কিছুটা দূরে।

সেই দূরত্বের দিগন্তে, তিনটি শক্তিশালী সত্তা এমন একটি শক্তির উপর পাল্টা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য প্রদান করবে যার একটি যুক্তিসঙ্গত মৌলিক দর্শন ছিল — যার সঙ্গে আপনি একমত না হতে পারেন, তবে এটি যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে ছিল। এটি ভালভাবে শুরু হয়েছিল। তবে, এটি এখন নেশা ও অযৌক্তিক উচ্ছ্বাসের অবস্থায় রয়েছে। এই প্রবন্ধটি তিনটি পাল্টা ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি প্রতিফলিত করে যা ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

বাজার

শেয়ারবাজারকে ধনীদের তৈরি, ধনীদের দ্বারা, ধনীদের জন্য একটি মাধ্যম বলে ধরে নিয়ে একে উপেক্ষা করে এমন রাজনৈতিক আখ্যানের দিন শেষ হয়ে গিয়েছে।। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে,
৫৬ শতাংশ পরিবার বা ১২৭ মিলিয়ন বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডের মালিক। ভারতে, ২২ কোটি সরাসরি ইকুইটি পোর্টফোলিও এবং ২৩ কোটি ৫০ লক্ষ মিউচুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিও রয়েছে। বাজার আর ধনীদের জন্য প্ল্যাটফর্ম নয়। সেগুলি মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সম্পদ  তৈরির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। একজন নেতা যদি বাজারকে উপেক্ষা করেন, তাহলে তিনি রাজনৈতিক অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবেন না। "সেনসেক্স ভাড় মে যায়ে " (সেনসেক্স জাহান্নমে যাক)-র দিনগুলি, যেমনটি ২০০৪ সালের মে মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এ বি বর্ধন বলেছিলেন, আজ ইতিহাস। আজ, যখন শেয়ার বাজারের পতন হয়, তখন ভোটারদের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর তা প্রভাব ফেলে। কেউ হতাহত নাও হতে পারেন, কিন্তু আপনি চার ট্রেডিং দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০-র ১২ শতাংশ পতন এবং তারপরেই ট্রাম্পের ৯০ দিনের 'শুল্ক' অবকাশের সম্পর্ককে উপেক্ষা করতে পারবেন না।

রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে এমন অন্যান্য বাজার হল বন্ড ও মুদ্রা। বন্ড এবং তাদের মূল্যের পিছনের অন্তর্নিহিত সম্পদ হল কোম্পানি বা সার্বভৌম দেশ, তাদের ঋণ ঝুঁকি এবং তাদের সুদের হার। বন্ড বাজারগুলি এই পরিবর্তনগুলির পূর্বাভাস দেয়। সুদের হারে পরিবর্তন না-‌হওয়া সত্ত্বেও বন্ডের দামের হঠাৎ পরিবর্তন কোনও অর্থনীতিতে আস্থার একটি শক্তিশালী সূচক। বন্ড বাজার কোনও ঘটনা বা নীতির প্রতি তার অসন্তুষ্টি বা অস্বস্তি বন্ড বিক্রি করে প্রকাশ করে। যখন বন্ডের দাম কমে যায়, তখন ফলন (‌ইল্ড বা তা থেকে ক্রেতার আয়)‌ বৃদ্ধি পায়। ১০ বছরের বন্ডের ফলন ১১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে
৪.০১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.৪৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কার্যকরভাবে, ট্রাম্প এই ধারণাটিও বাতিল করে দিয়েছেন  যে মার্কিন বন্ডগুলি বিশ্বব্যাপী অর্থায়নের জন্য একটি স্বর্গরাজ্য। যদিও পরিণতিতে ট্রাম্প তাঁর 'শুল্ক' যুদ্ধ থামিয়েছেন, তবুও অনিশ্চয়তা এখনও শেষ হয়নি।


সুদের হারে পরিবর্তন না-‌হওয়া সত্তেও বন্ডের দামের হঠাৎ পরিবর্তন কোনও অর্থনীতিতে আস্থার একটি শক্তিশালী সূচক।



মুদ্রা বাণিজ্য সংস্থার দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মূল্য প্রতিযোগিতা, বিনিয়োগ ও অর্থায়ন এবং পরিবারের দিক থেকে অভিবাসন, শিক্ষা ও ভ্রমণকে প্রভাবিত করে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ডলারের মূল্যের ২.৫ শতাংশ পতন বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার উপর আস্থা হ্রাস করেছে, যার প্রভাব পড়েছে বন্ড বাজারের পতনের উপর। 'শুল্ক' সম্পর্কে ট্রাম্পের ইউ-টার্ন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে
ডলারের দাম আরও কমতে পারে, প্রায় আরও ১০ শতাংশ। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে, কারণ একটি নতুন মুদ্রা ঝুঁকি এমন একটি বাজার থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা এতদিন স্থিতিশীল ছিল। এর ফলে অন্যান্য মার্কিন সম্পদ, যেমন ইকুইটি ও বন্ড, ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। এটি দুটি লক্ষ্যের মধ্যে একটি নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি করে। ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার অর্থ দুর্বল ডলার, আবার বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে ডলারের মর্যাদা ধরে রাখার জন্য তাঁর কৌশলগত প্রচেষ্টার অর্থ একটি স্থিতিশীল বা শক্তিশালী ডলার। ডলারের উপর একটি অনিশ্চিত নীতিমালা বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

ইকুইটি, বন্ড এবং মুদ্রাগুলিকে একত্রিত করে একটি সম্মিলিত অর্থায়নের ঝুড়িতে রাখলে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হল তাদের সম্পর্কগুলির উপর আস্থার ক্রমাগত পতন। এটি শুধু ট্রাম্পের নির্দিষ্ট নীতিগুলিকেই নয়, এমনকি তাদের দিক-‌নির্দেশনাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

মূল্যস্ফীতি

মুনাফা অর্জনকারী, মূল্য-নির্মাণ, কর-প্রদানকারী, কর্মসংস্থান-সৃষ্টিকারী এবং সম্পদ-সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেসরকারি কোম্পানিগুলি আমেরিকার রাজনৈতিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। তারা তাদের কাঁচামাল সারা বিশ্ব থেকে সংগ্রহ করে। এর কারণের মধ্যে থাকতে পারে প্রাপ্যতা (বিরল মৃত্তিকা) থেকে শুরু করে মূল দক্ষতা (ইলেকট্রনিক উপাদান)। এগুলি মার্কিন কোম্পানিগুলিকে তাদের চূড়ান্ত পণ্যের খরচ বাঁচাতে সাহায্য করে। তারা ঝুঁকির বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম। এবং তারা উদ্ভাবন আমদানি করতে পারে। যখন অযৌক্তিক শুল্ক এই পণ্যগুলির আমদানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে, তখন বৃহৎ কর্পোরেশনগুলি কিছু সময়ের জন্য লোকসান বহন করতে সক্ষম হবে। কিন্তু ছোট সংস্থাগুলির জন্য, শুল্ক একটি স্থানান্তরণের প্রক্রিয়া হবে; তারা বর্ধিত খরচ চূড়ান্ত ভোক্তাদের উপর চাপাবে। ভোক্তা কিনবে কি কিনবে না তা তাদের ঝুঁকি হবে।

এই স্থানান্তরণের পরিমাণ যাই হোক না কেন (আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, সমস্ত আমদানি থেকে শুরু করে শিল্প-নির্দিষ্ট পার্থক্য
৫৩ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ), ফলাফল, যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে, হবে মূল্যস্ফীতি। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষে এটি পরিচালনা করা জটিল হবে, এবং এর চেয়ারম্যান জেরোম এইচ পাওয়েল একটি হট সিটে বসে আছেন। একদিকে, ট্রাম্প তাঁকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে সুদের হার কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, সম্ভাব্যভাবে ২ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা তাঁকে সুদের হার বাড়াতে অথবা ৪.২৫ শতাংশ থেকে ৪.৫ শতাংশের মধ্যে স্থিতিশীল রাখতে চাপ দিচ্ছে।


ট্রাম্প যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর বাজি ধরেন, তাহলে সেখানে পৌঁছনোর আগে তাঁকে রাজনীতির প্রতারণামূলক জলরাশি অতিক্রম করতে হবে।



যেভাবেই হোক, বিভিন্ন দেশেই মূল্যস্ফীতি ভোট-হত্যাকারী। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এর থেকে আলাদা নয়। অর্থনৈতিক কষ্ট এবং জীবনযাত্রার মান হ্রাস ছাড়াও, মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক অসন্তোষ তৈরি করে যা ভোটদানের আচরণে প্রতিফলিত  হয়। 'শুল্ক' সম্পর্কে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান তাঁর প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে চাপ দেবে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য নেওয়া হবে। ভোটারদের জন্য, রাজনৈতিক ফলাফল নির্ধারণে স্বল্পমেয়াদি কষ্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর বাজি ধরেন, তাহলে সেখানে পৌঁছনোর আগে তাঁকে রাজনীতির প্রতারণামূলক জলরাশি অতিক্রম  করতে হবে।

তাই যদি তিনটি বাজার (ইকুইটি, বন্ড ‌ও মুদ্রা) না পারে, তাহলে মূল্যস্ফীতি ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করবে। অবশ্য উভয়ই ভিত্তির সঙ্গে সংযুক্ত। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুদের হারও বৃদ্ধি পায়। কোম্পানিগুলির জন্য, উচ্চ সুদের হার মূলধনকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে এবং সুদের খরচ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির রাজনীতি অবশ্যই আঘাত করবে —
জিডিপির তুলনায় মার্কিন পরিবারগুলির ঋণ ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং ভোটাররা সুদের হারের অস্থিরতার মুখোমুখি হবেন। এক পর্যায়ে, যদি 'শুল্ক' এবং সুদের হারের কারণে ইনপুট খরচ খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে ব্যবসাগুলি সম্প্রসারণের পথে যাবে না, ক্ষতির সম্মুখীন হবে বা এমনকি বন্ধ হয়ে যাবে, এবং পরিবারগুলি আর্থিক চাপের মধ্যে পড়বে। ট্রাম্পের শুল্ক প্রতিশোধকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাজার এবং মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ আঘাত আনতে পারে।

মন্দা

অবশেষে, যদি খুব বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে ২০২৫ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মন্দার এক অনিশ্চিত অবস্থার মুখোমুখি হবে। টানা দুটি ত্রৈমাসিকে নেতিবাচক জিডিপি বৃদ্ধিকে মন্দা বলা হয়। এর ফলে ভোক্তাদের ব্যয় হ্রাস পায়, যা ব্যবসায়িক অস্থিরতা এবং লাভজনকতার এক দুষ্টচক্রের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক ফলাফল হল চাকরি হারানো। অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিলিত হয়ে মন্দা এমনকি স্ট্যাগফ্লেশন — উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর নেতিবাচক বৃদ্ধি — নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক হতাশার জন্ম হতে পারে। অথবা আরও খারাপ, আসতে পারে ডিপ্রেশন, যা হল অর্থনৈতিক পতনের একটি স্থায়ী সময়কাল, যে সময়ে জিডিপি সংকুচিত হয়, বেকারত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ভোক্তাদের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রাম্প এটি প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান।


এবার আমেরিকার জন্য পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ হত কারণ তারা বাণিজ্যের দরজা বন্ধ করে দিত, কোম্পানির খরচ বাড়িয়ে দিত এবং আস্থা হারাতে বাধ্য করত, ফলে ভোক্তাদের উপর উচ্চ মূল্য চাপিয়ে দিত। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা কম, তবে 
মন্দার আশঙ্কা রয়েছে (৬০ শতাংশ সম্ভাবনা) অথবা ইতিমধ্যেই তা শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থনীতির জন্য মন্দা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। এবার আমেরিকার জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ কারণ আস্থা হারানোর পরিস্থিতিতে তাদের বাণিজ্যের দরজা বন্ধ থাকবে, আর কোম্পানির খরচ বেড়ে যাবে। ট্রাম্প নাগরিকদের জন্য আশার পরিবর্তে অন্ধকার নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্পের নীতিগত আচরণের বাস্তবতা বিবেচনা করে বলা যায়, তিনি হয়তো এই দুর্ভাগ্যজনক প্রতিশোধমূলক দুঃসাহসিক কাজ থেকে ফিরে আসতে পারেন এবং আমেরিকাকে আবার মহান করে তোলার জন্য নতুন উপায় খুঁজতে পারেন।

এটি করার জন্য, ট্রাম্পকে তার অহংকে গ্রাস করতে হবে, এবং মিত্রদের, বিশেষ করে ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের ইইউ-‌কে তাঁর সঙ্গে কাজ করানোর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। ইইউ হয়তো এমনটা করতে পারে। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে অন্যান্য ৫০টি দেশও
তার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য রাজি হয়েছে। কিন্তু সকলেই এটা জেনেই আলোচনা করবে যে ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকা আর আগের আট দশকের মতো বিশ্বস্ত অংশীদার নয়। ভারত ও আমেরিকা ইতিমধ্যেই একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রথম পর্যায়ের জন্য একটি শর্তাবলিতে স্বাক্ষর করেছে। তাই মন্দা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারত, সম্ভবত তা ঘটবে না।

আস্থা

মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের উপর চাপ প্রয়োগ করে ট্রাম্প যে প্রধান শক্তির খেলাগুলির ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে চেয়েছিলেন, তা এখন তাড়াহুড়ো করে প্রণীত নীতি, দুর্বল বাস্তবায়ন এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফলের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।  উদাহরণস্বরূপ, চিন আলোচনার লাইনে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, যার ফলে মনে হচ্ছে ট্রাম্প যেন বাতাসে বেড়া দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কৌশলগত অস্ত্র — ট্রাস্ট নামে পাঁচ অক্ষরের একটি ইংরাজি শব্দ — আরেকটি পাঁচ অক্ষরের শব্দ পাওয়ার-‌এর অহংকারে পচে যাচ্ছে। এবং এই অসম্ভব পৃথিবীতে নতুন অসম্ভাব্যতা দেখা দেবে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কৌশলগত অস্ত্র — ট্রাস্ট নামে পাঁচ অক্ষরের একটি ইংরাজি শব্দ — আরেকটি পাঁচ অক্ষরের শব্দ পাওয়ার-‌এর অহংকারে পচে যাচ্ছে।



এ সবের মধ্যে নতুন কিছু নেই। বিভিন্ন উপায়ে শি জিনপিংয়ের চিন প্রায় একই কাজ করছে:‌ নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা অনুসরণ না করা, বাজারে প্রবেশাধিকার রোধ করা, প্রযুক্তি চুরি করা, বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে অস্ত্রে পরিণত করা, এবং সামরিক শক্তির হুমকি দিয়ে ছোট দেশগুলিকে হয়রান করা।

এখন, বিশ্বব্যাপী আস্থার ঘাটতি ওয়াশিংটন ডিসি-‌তেও বিস্তৃত হয়েছে। আজ থেকে ৪৫ মাস পর যদি ট্রাম্পের উত্তরাধিকার হয় চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং শি-‌র সঙ্গে নিজেকে হাইফেন করা, তাহলে বিশ্বকে নেকড়েদের সঙ্গে নাচতে নাচতে এই ভূ-রাজনৈতিক সার্কাসের বাইরে তাকাতে হবে, এবং গুরুতর, পরিপক্ব ও শক্তিশালী কৌশলগত ও অর্থনৈতিক শক্তির নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।



গৌতম চিকারমানে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Gautam Chikermane

Gautam Chikermane

Gautam Chikermane is Vice President at Observer Research Foundation, New Delhi. His areas of research are grand strategy, economics, and foreign policy. He speaks to ...

Read More +