Author : Shairee Malhotra

Published on Jun 25, 2025 Updated 0 Hours ago

যেহেতু ইউরোপীয় উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের ভোটার ভিত্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক ব্যাঘাতের পরিণতি বহন করছে, তাই ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে পড়ার সূচনা হতে  পারে।

ইউরোপের অতি-দক্ষিণপন্থীদের জন্য বাস্তবে ফেরার সময়

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউরোপের অতি-দক্ষিণপন্থী নেতারা মাদ্রিদে স্পেনের অতি-দক্ষিণপন্থী ভক্স পার্টি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সম্মিলিত হন। মেক ইউরোপ গ্রেট এগে (মেগা বা এমইজিএ) স্লোগানের অধীনে এই অনুষ্ঠানটি ট্রাম্পের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ইউরোপীয় অতি-দক্ষিণপন্থীদের সখ্য সুপরিচিত। অভিবাসন-বিরোধী এবং প্রতিষ্ঠা-বিরোধী থেকে শুরু করে জলবায়ু নীতি বহুপাক্ষিকতার প্রতি ইউরো-সংশয়বাদ বৈরিতা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা একই রকম রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসা ইউরোপীয় অতি-দক্ষিণপন্থীদের ধারণাগুলিকে বৈধতা মান্যতা দিতে দেখা গিয়েছে। যেমন হাঙ্গেরির জনপ্রিয় প্রাইম মিনিস্টার ভিক্টর অরবান এমইজিএ অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন যে, ‘গতকাল আমরা ধর্মদ্রোহী ছিলাম, এখন আমরা মূলধারার।’ ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব - যেমন টেক বিলিয়নেয়ার লন মাস্ক - স্পষ্টতই ইউরোপীয় উগ্র দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে নিজেদের একত্রিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েশল্যান্ড (এএফডি), ফ্রান্সের মেরিন লে পেন এবং  ইতালির রক্ষণশীল লিগ পার্টি।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসা ইউরোপীয় অতি-দক্ষিণপন্থীদের ধারণাগুলিকে বৈধতা মান্যতা দিতে দেখা গিয়েছে।

তবে এমএজিএ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন) ব্রিগেডের সঙ্গে তাদের বিস্তৃত আদর্শগত মিল থাকা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের শুল্ক আমেরিকা ফার্স্ট নীতিগুলি ইউরোপের অতি-দক্ষিণপন্থী নেতাদের হতাশ করেছে কারণ এর সরাসরি প্রভাব ইউরোপীয় জাতীয় স্বার্থ অর্থনীতির উপর পড়েছে।

২ এপ্রিল ট্রাম্প ধাতু অটোমোবাইলের উপর পূর্বে আরোপিত ক্ষেত্রভিত্তিক শুল্কের পাশাপাশি ইউরোপীয় আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক হার ঘোষণা করেছেন। এই হার সাময়িক ভাবে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা হলেও শুল্কটি ইউরোপের সকল বর্ণের রাজনীতিবিদদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে কারণ এই ধরনের শুল্ক ইউরোপীয় প্রবৃদ্ধিতে ১.৫ শতাংশ বা ২৬০ বিলিয়ন ইউরোর প্রভাব ফেলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অনেক অতি-দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদ যা করতে পারেন, তা করেছেনও বটে এবং এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দায়ী। ভক্সের প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো অ্যাবাস্কাল ইইউ-র নিয়মকানুন এবং কর প্রক্রিয়াকে আরও বড় বিপদ বলে অভিহিত করেছেন। এএফডি গাড়ির উপর উচ্চ ইউরোপীয় শুল্ক না কমানোর জন্য ব্রাসেলসকে দায়ী করেছে এবং অন্য দিকে এর নেতা অ্যালিস ওয়েইডেল একই সঙ্গে শুল্কগুলিকে মুক্ত বাণিজ্যের জন্য মৌলিক ভাবে খারাপ বলে সমালোচনা করেছেন।

এই ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে যে, শুল্কগুলি অতি-দক্ষিণপন্থী দলগুলির চিরাচরিত ভোটার ভিত্তির উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপরেও প্রভাব পড়তে বাধ্য, যা এমএজিএ এবং এমইজিএ কর্মসূচির মধ্যে একটি মৌলিক সংঘাতকেই প্রকাশ্যে এনে দেয়।

ট্রাম্প ২.০ থেকে শিল্প বিপর্যয়

ট্রাম্পের সঙ্গে উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে ইতালির অতি-দক্ষিণপন্থী প্রাইম মিনিস্টার জর্জিয়া মেলোনি - যিনি শুল্ককে ভুল বলে বর্ণনা করলেও মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনে ইউরোপে উপর মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের বাগাড়ম্বরমূলক আক্রমণকে সমর্থন করেছিলেন - ১৭ এপ্রিল ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্যিক উত্তেজনা হ্রাস করতে এবং ব্রাসেলস ওয়াশিংটনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনে সফর করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির মূল্য ৭০ বিলিয়ন ইউরো হওয়ায় ইতালি দেশটির সঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রেখেছে এবং ১০ শতাংশ শুল্ক হারের দরুন ইতালীয় অর্থনীতি ৭ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইতালি এখনও ২ শতাংশ সীমার নিচে রয়ে গিয়েছে এবং ন্যাটোতে জিডিপি-র মাত্র ১.৪৯ শতাংশ ব্যয় করে, যা ট্রাম্পের প্রত্যাশিত ৫ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই কম। ট্রাম্প মেলোনিকে চমৎকার কাজ করে ইউরোপে রীতিমতো ঝড় তুলতে সক্ষম’ এক ‘বন্ধু হিসেবে অভিহিত করার পরেও শুল্ক কমানোর মেলোনির লক্ষ্যটি অধরাই থেকেছে। মেলোনি হোয়াইট হাউস সফরের সময় পারস্পরিক ভাবে উপকারী ইইউ-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি এবং পশ্চিমকে আবার মহান করে তোলার লক্ষ্যের উপরেই জোর দিয়েছিলেন।

মেরিন লে পেনের ফরাসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্যতার পরে দলটিকে তার মূল ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক মধ্যবিত্ত শ্রেণিভোট ধরে রাখা জরুরি, যাঁরা শুল্কের দ্বারা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং যাঁদেরকে দলটি রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে

ফ্রান্সে অতি-দক্ষিণপন্থীদের প্রতি সাধারণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প এখনও অজনপ্রিয়। মার্কিন নির্বাচনের আগে হওয়া ইউ-গভ-এর সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গিয়েছে যে, লে পেনের সমর্থকরা ট্রাম্পের তুলনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পছন্দ করেছেন। লে পেনের ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টি ইতিমধ্যেই তার ভোটার ভিত্তি প্রসারিত করার জন্য প্রেসিডেন্টের উগ্র বক্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে মেরিন লে পেনের ফরাসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্যতার পরে দলটিকে তার মূল ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক মধ্যবিত্ত শ্রেণিভোট ধরে রাখা জরুরি, যাঁরা শুল্কের দ্বারা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং যাঁদেরকে দলটি রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে

শুল্কের ফলে ২০২৫ সালে স্প্যানিশ অর্থনীতিতে ৪.৩ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার ফলে কৃষি-খাদ্য খাত এবং যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্পেনের সেন্টার ফর সোশিওলজিক্যাল রিসার্চের তথ্য অনুসারে, অতি-দক্ষিণপন্থী ভক্স পার্টি প্রতি পাঁচজন কৃষি শ্রমিকের মধ্যে একজন এবং ১০% শিল্প শ্রমিক দ্বারা সমর্থিত। কিন্তু এই শ্রেণির মানুষজনই শুল্কের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হাঙ্গেরিতে ইইউ-র কুখ্যাত বহিরাগত অরবানের – যিনি এক অতি-দক্ষিণপন্থী প্রাইম মিনিস্টার এবং ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক - দেশটির উপরেও শুল্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে। কারণ হাঙ্গেরির অর্থনীতি তার অটোমোবাইল শিল্পের সাফল্যের উপরেই নির্ভর করে।

সাধারণ ভাবে বললে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে অটোমোবাইল, খাদ্য ও পানীয়, কৃষি এই শিল্পগুলিতে নিযুক্ত ক্ষেত্রগুলি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার ফলে ইউরোপীয় কৃষক, ওয়াইন প্রস্তুতকারক, চিজ উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য শ্রমশক্তির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

অতি-দক্ষিণপন্থীদের ইউরোসেপটিসিজম (ইউরোপ নিয়ে সংশয়বাদ) সত্ত্বেও কেবল মাত্র ইইউর সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমেই - যা বাণিজ্য নীতি এবং এর ৪৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের একক বাজারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে - সদস্য রাষ্ট্রগুলি ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। অতি-দক্ষিণপন্থী দলগুলি ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের আদর্শগত সমর্থনের পাশাপাশি ইইউ-এর প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ব্যবহার করে নিজেদের দেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সাধন করবে না কি বৃহত্তর ইউরোপীয় স্বার্থের পক্ষে তাদের প্রভাবকে কাজে লাগাবে, তা এখনও দেখার বিষয়।

অতি-দক্ষিণপন্থী দলগুলি ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের আদর্শগত সমর্থনের পাশাপাশি ইইউ-এর প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার মধ্যে  ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

মেলোনি এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ইউরোপীয় স্বার্থের পক্ষে কথা বলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। হোয়াইট হাউসে তাঁর সফরের সময় তিনি একটি ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে কথা বলেছিলেন এবং ট্রাম্পকে দ্রুতই রোম সফরে যেতে রাজি করিয়েছিলেন, যেখানে তিনি অন্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সুবিধার্থে কাজ করবেন। যেহেতু ইউরোপীয় উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের ভোটার ভিত্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক ব্যাঘাতের পরিণতি বহন করছে, তাই ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে পড়া শুরু হতে পারে।

 


শায়েরী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra is Deputy Director - Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation.  Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on ...

Read More +