সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) তার ২০৫তম বোর্ড সভায় সেবি প্রবিধানে (২০২১) বেশ কয়েকটি সংশোধন করেছে৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল ব্যক্তিগতভাবে ক্রয়যোগ্য ঋণ সিকিউরিটির অভিহিত মূল্য ১০,০০০ ভারতীয় রুপিতে হ্রাস করার অনুমোদন৷ প্রাথমিকভাবে, ন্যূনতম অভিহিত মূল্য ১০ লক্ষ ভারতীয় রুপি নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা অক্টোবর ২০২২-এ কমিয়ে ১ লক্ষ ভারতীয় রুপি করা হয়েছিল৷ ন্যূনতম অভিহিত মূল্যের ক্রমান্বয়ে পতনকে কর্পোরেট ঋণের বাজারে খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, তারল্য বৃদ্ধি এবং ব্যবসার জন্য মূলধন খরচ কমানোর লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ হিসাবে দেখা যেতে পারে। ভারতের অনুন্নত ঋণ বাজারে এই হস্তক্ষেপ এবং এর প্রভাবের অনেক কিছু করার আছে।
কর্পোরেট বন্ডের জন্য ভারতীয় বাজার
কর্পোরেট বন্ড বলতে দেশে নিযুক্ত বেসরকারি বা সরকারি কর্পোরেশনের জারি করা সুদ-প্রদানকারী ঋণের উপকরণগুলিকে বোঝায়। কোম্পানিগুলি পাবলিক বা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করতে পারে — প্রথমটিতে তালিকাভুক্ত বন্ডগুলি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় বাজারের মাধ্যমে কেনা যেতে পারে। ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ৮৩৮,০০০ কোটি ভারতীয় রুপির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের বিপরীতে কর্পোরেট বন্ডের পাবলিক প্লেসমেন্ট মোটের উপর ১৯,০০০ কোটি ভারতীয় রুপি। পাবলিক ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের আয়তনের বিশাল পার্থক্য স্বচ্ছতা, মূল্য আবিষ্কার এবং বাজারের দক্ষতার প্রশ্নে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে।
কর্পোরেট বন্ড বলতে দেশে নিযুক্ত বেসরকারি বা সরকারি কর্পোরেশনের জারি করা সুদ-প্রদানকারী ঋণের উপকরণগুলিকে বোঝায়। কোম্পানিগুলি পাবলিক বা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করতে পারে — প্রথমটিতে তালিকাভুক্ত বন্ডগুলি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় বাজারের মাধ্যমে কেনা যেতে পারে।
পাবলিক প্লেসমেন্টের জন্য কোম্পানিগুলিকে একটি প্রসপেক্টাস ইস্যু করতে হয়, যা ব্যবসার নগদ প্রবাহ উৎপাদনকারী পরামিতিগুলি সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা দিতে পারে। এটি আরও বেশি স্বচ্ছতা এবং আরও সঠিক মূল্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের অপ্রতিরোধ্য আধিপত্যের কারণ হল এর সময়-ও খরচ-কার্যকারিতা এবং কম অনুবর্তিতা-প্রয়োজনীয়তা। যাই হোক, প্রাইভেট প্লেসমেন্টগুলির লক্ষ্য মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, কারণ এক্ষেত্রে অল্পসংখ্যক ঋণদাতাদের থেকে একটি বৃহত্তর অর্থভান্ডার পাওয়া যায়। বাজারের অন্য দিকে, খুচরা বিনিয়োগকারীরা উচ্চ অভিহিত মূল্য (প্রবেশের খরচ), তথ্যগত অসামঞ্জস্য ও সেকেন্ডারি মার্কেটের (সীমিত তারল্য) অনুপস্থিতির কারণে কর্পোরেট বন্ড বাজারে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে। চাহিদা ও সরবরাহের ক্রমপ্রসারিত ব্যবধান বাজারের কার্যকারিতাকে ক্রমবর্ধমানভাবে কঠিন করে তোলে, এবং নিয়ামক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
একটি নিয়ামক ধাক্কার প্রয়োজন
জিডিপির অনুপাতে তার কর্পোরেট বন্ড বাজারের আকারের দিক থেকে যখন ভারত এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান বাজার অর্থনীতির থেকে পিছিয়ে, ঠিক সেই সময়েই ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস)-এর একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে উন্নত বা উদীয়মান উভয় বাজারই সেকেন্ডারি মার্কেটের তারল্যের ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ অর্থাৎ, ভারতীয় কর্পোরেট বন্ড বাজার তারল্য তৈরিতে কোনও অনন্য সমস্যার সম্মুখীন হয় না। যাই হোক, বন্ড মার্কেটকে গভীর করা অপরিহার্য, কারণ ভারত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি চালনা করার জন্য তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও উদীয়মান উদ্যোক্তা নীতিকে পুঁজি করার পরিকল্পনা করছে। এই উভয় উন্নয়নের জন্যই শক্তিশালী ঋণ বাজার ও অর্থনৈতিক উপকরণকে ইন্ধন জোগাতে তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজন।
জিডিপির অনুপাতে তার কর্পোরেট বন্ড বাজারের আকারের দিক থেকে যখন ভারত এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান বাজার অর্থনীতির থেকে পিছিয়ে, ঠিক সেই সময়েই ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস)-এর একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে উন্নত বা উদীয়মান উভয় বাজারই সেকেন্ডারি মার্কেটের তারল্যের ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়৷
ভৌত সম্পদের প্রতি গড় ভারতীয়দের সঞ্চয় সংক্রান্ত পছন্দের কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে সেদিকেই ঋণ সম্প্রসারিত হয়েছে, এবং তার থেকে উদ্ভূত ক্রমবর্ধমান উপভোক্তা চাহিদা ব্যাঙ্কের কার্যকরী ব্যবহার প্রশস্ত করেছে। উপভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির সম্প্রসারণের ফলে অর্থনীতিতে ঋণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অধিকন্তু, ব্যাঙ্ক সম্পদ ও কর্পোরেশনের প্রকল্পের পরিপক্বতার মধ্যে মেয়াদের অমিল কর্পোরেট বন্ড বাজারকে ব্যবসায়িক অর্থায়নের জন্য আরও উপযুক্ত উৎস করে তোলে। উপভোক্তা ঋণ বৃদ্ধির সময় কর্পোরেট বন্ড বাজার ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির ব্যবহারিক ঝুঁকিগুলি কমাতে পারে এবং আরও বেশি আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
কর্পোরেট বন্ড বাজারে বৃহত্তর তারল্য নিয়ে আসার ঘটনাটি খুচরা বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওগুলিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য আরেকটি উপায় প্রদান করবে। গত পাঁচ বছরে আরও ১২০ মিলিয়ন খুচরা বিনিয়োগকারী যুক্ত হওয়ায় ভারতীয় স্টক মার্কেট তার সর্বকালীন উচ্চতার দিকে র্যালি করেছে, যা উপভোক্তাদের আস্থা এবং কম প্রচলিত বিনিয়োগ উপকরণের দিকে পরিবর্তন প্রতিফলিত করে। কর্পোরেট বন্ড বাজারে প্রবেশের জন্য খুচরা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করে নীতি তৈরির জন্য এটি একটি ভাল পরিস্থিতি; এবং এভাবে স্টক মার্কেটে কোনও অনুমানমূলক উচ্ছ্বাস বা বিদ্যমান অংশীদারদের অত্যধিক ইক্যুইটি হ্রাসের ঘটনাও এড়ানো যাবে। অধিকন্তু, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বন্ড রিটার্নের সঙ্গে তাদের ইক্যুইটি পোর্টফোলিও সমন্বিত করে ঝুঁকি কমাতে পারবেন, যা অর্থনীতিতে আরও ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশের সুবিধার্থে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করতে পারে। এইভাবে, বৃহত্তর কর্পোরেট বন্ড বাজারের অংশগ্রহণ ঝুঁকি কমিয়ে দেবে, এবং তিনটি উপায়ে বৃদ্ধি বাড়াবে—ব্যাঙ্কের স্থিতিশীলতা, স্টক মার্কেটের সংযম এবং সস্তা কর্পোরেট অর্থায়ন।
প্রভাব: এখন এবং পরে
১০ লাখ থেকে ১ লাখে মূল্যহ্রাসের পর অ-প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ পূর্বের স্বাভাবিক গড় ১ শতাংশের বিপরীতে ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এইভাবে, টিকিটের আকার ১০,০০০ ভারতীয় রুপিতে হ্রাস করার লক্ষ্য হল অনলাইন বন্ড প্ল্যাটফর্মগুলির (ওবিপি) মাধ্যমে বন্ডের অ-প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয়ের মাধ্যমে তারল্য বৃদ্ধি করা। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের বিশাল আকারের সুযোগের ব্যবহার কার্যকরভাবে ওবিপি-গুলির মাধ্যমে খুচরা অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে পারে, আরও তরল সেকেন্ডারি মার্কেট সহজতর করে, এবং একটি কার্যকর স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হিসাবে কর্পোরেট বন্ডকে তুলে ধরতে পারে।
সময়ের সঙ্গে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের গভীরতা পাবলিক ইস্যুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এবং বকেয়া বন্ড ইস্যুগুলির সামগ্রিক পরিমাণ বাড়াতে পারে। একটি বৃহত্তর বন্ড মার্কেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ঋণের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে, লাভজনকতা বাড়াতে পারে, এবং নতুন প্রবেশকারীদের উৎসাহিত করতে পারে। যাই হোক, বন্ড মার্কেটে সেই সংস্থাগুলির আধিপত্য রয়েছে যাদের উচ্চ ক্রেডিট রেটিং আছে, যা ঋণ অর্থায়নকে ছোট সংস্থাগুলির (নিম্ন ক্রেডিট রেটিং সহ) নাগালের বাইরে নিয়ে যায়। এমনটি ঘটে থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে কম ঝুঁকি পছন্দের ব্যাপকতার কারণে। উচ্চ ঝুঁকির ক্ষুধা-সহ খুচরা বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশীদারিত্ব নিম্ন-রেটযুক্ত বন্ডের অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে, এবং অর্থনীতি-ব্যাপী মূলধনী ব্যয়ের দুরবস্থা ঘোচাতে পারে। একইসঙ্গে পরিপূরক রেপো ও ডেরিভেটিভ মার্কেটের প্রবর্তন সম্প্রসারণ প্রভাবকে বহুগুণ করতে পারে।
সময়ের সঙ্গে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের গভীরতা পাবলিক ইস্যুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এবং বকেয়া বন্ড ইস্যুগুলির সামগ্রিক পরিমাণ বাড়াতে পারে। একটি বৃহত্তর বন্ড মার্কেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ঋণের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে, লাভজনকতা বাড়াতে পারে, এবং নতুন প্রবেশকারীদের উৎসাহিত করতে পারে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই পদক্ষেপটি উল্লেখযোগ্যভাবে কর্পোরেট বন্ডের কার্যকর চাহিদা বাড়াতে পারে, যতক্ষণ না বাজারের আকারের সম্প্রসারণ হয়। এর মধ্যে পড়ে বন্ডের দাম বেড়ে যাওয়ায় সুদের হারের হ্রাস। মূল্যস্ফীতির বর্তমান স্থির গতিপথের পরিপ্রেক্ষিতে, সুদের স্বাভাবিক হারে একটি সম্ভাব্য নিম্নগামী স্থানান্তর হতে পারে যা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আরও নরম অবস্থান নিতে দেবে। যাই হোক, যে কোনও সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির প্রভাব ও বিশালতা শুধুমাত্র ভবিষ্যতে পরিমাপ করা যেতে পারে, আর তা অবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনকে সামনে নিয়ে আসে।
আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.