Author : Ayjaz Wani

Originally Published The Print Published on Nov 23, 2022 Commentaries 16 Days ago

কাশ্মীর নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে রাজনৈতিক বিবৃতি বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে ওআইসি–র উচিত উপত্যকা সম্পর্কে নতুন করে জ্ঞান আহরণ করা।

ও আই সি–র উচিত কাশ্মীর সম্পর্কে ঘোর কাটিয়ে পরিবর্তে চিনের উইঘুরদের দিকে মনোযোগ দেওয়া
ও আই সি–র উচিত কাশ্মীর সম্পর্কে ঘোর কাটিয়ে পরিবর্তে চিনের উইঘুরদের দিকে মনোযোগ দেওয়া

অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো–অপারেশন (ও আই সি)‌ ‌নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘‌আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের দাবির সঙ্গে তাদের পূর্ণ একাত্মতা’‌ পুনরায় বিবৃত করে। বিবৃতিতে ‘‌অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর’‌–এর মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে, এবং নয়াদিল্লিকে ‘‌৫ আগস্ট ২০১৯–এ নেওয়া অবৈধ ও একতরফা পদক্ষেপগুলি থামাতে এবং আগের অবস্থা ফিরিয়ে দিতে’‌ আহ্বান জানানো হয়েছে। ও আই সি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘‌প্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করার’‌ও আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিটি আবারও সংস্থাটির দু’মুখো মনোভাব উন্মোচিত করেছে। যখন বেজিং–এর জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমানদের উপর নিপীড়নের কথা আসে, তখন ও আই সি এবং তার সদস্য দেশগুলি নীরব থাকে এবং এমনকি ধর্মীয় বিধিনিষেধ, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, শ্রম, গণহত্যা ও ডিটেনশন ক্যাম্পে মুসলিম নারীদের গণধর্ষণের বিষয়ে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) পদক্ষেপকে সমর্থন করে।

ওআইসি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘‌প্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করার’‌ও আহ্বান জানিয়েছে।

এই ঘটনা আবারও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে ও আই সি–র যোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও বৈধতাকে চুরমার করে দিয়েছে। এই নির্লজ্জ দু’মুখো মনোভাব ও আই সি–কে এমন এক ভন্ডদের সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে যা‌ অনৈতিক এবং বিশ্বশান্তির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। ও আই সি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ৫৭টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত। এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তঃসরকারি সংস্থা। ও আই সি–র মিশনের বিবৃতি মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর, যার উদ্দেশ্য তাদের স্বার্থ রক্ষা ও সুনিশ্চিত করা।

কাশ্মীর নিয়ে ও আই সি–র মোহ

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ও আই সি কাশ্মীর ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী আলোচনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিছু স্বার্থান্বেষী পক্ষের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। এর সাধারণ সচিবালয়ের (‌জেনারেল সেক্রেটারিয়েট)‌ কাছে জম্মু ও কাশ্মীর কিন্তু নয়াদিল্লির অবৈধভাবে দখল করা এলাকা নয়। এটি এই সাধারণ তথ্যই স্বীকার করে যে জম্মু ও কাশ্মীরকে পাকিস্তানি হানাদার ও সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচানোর জন্য মহারাজা হরি সিংয়ের রাজ্যটি ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ তারিখে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ‘‌ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাক্সেশন’‌ স্বাক্ষর করেছিল। কাশ্মীরিদের সহায়তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রথমে শ্রীনগর থেকে পাকিস্তানকে বার করে দেয়, এবং তারপর ৮ নভেম্বর বারামুলা পুনরুদ্ধার করে। পক্ষপাতদুষ্ট ও আই সি–র জ্ঞানের জন্য উল্লেখ্য, কাশ্মীরিরা দ্রুত হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে একটি ‘জাতীয় মিলিশিয়া’ সংগঠিত করেছিল, যারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল। এই স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাটি সশস্ত্র বাহিনীকে খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে গোয়েন্দা এজেন্ট ও পোর্টার হিসাবে কাজ করা–সহ নানাভাবে সাহায্য করে।

ফলে পাকিস্তান শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। পরবর্তিকালে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এর ক্রমাগত ক্ষয়ক্ষতির পরিণতিতে সিমলা চুক্তি হয়েছিল, যা ক্ষমতার আঞ্চলিক ভারসাম্যকে ভারতের পক্ষে পরিবর্তিত করে।

১৯৮৯ সালের পর পাকিস্তান সফলভাবে কাশ্মীরে একটি সহিংস মৌলবাদ প্রচার শুরু করে, যা উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদের প্রসার ঘটায়। অধিকন্তু আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যাহারের পর ইসলামাবাদ সন্ত্রাসবাদের একটি নতুন মঞ্চ তৈরি করার জন্য যুদ্ধদক্ষ জঙ্গিদের কাশ্মীরে নিয়ে যায়।

২০১৯ সালে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুরূপ যুক্তি দিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদকে রাজ্যে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ‘‌মূল কারণ’‌ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।

ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে সমতা ফেরাতে কাশ্মীরের জনগণকে এই ‘‌প্রক্সি যুদ্ধে’‌ বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে এই পাকিস্তানি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ নয়াদিল্লির সামনে প্রধান জাতীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হি্সাবে আবির্ভূত হয়েছে। কাশ্মীরে জন্মগ্রহণকারী কিছু  রাজনৈতিক অভিজাত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রবাদকে উৎসাহিত করার জন্য ৩৭০ ও ৩৫ক ধারাগুলিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৯ সালে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুরূপ যুক্তি দিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদকে রাজ্যে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ‘‌মূল কারণ’‌ হিসাবে উল্লেখ করেন। ওই ধারাগুলি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পরিবর্তন করতে, এবং অঞ্চলটিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে রূপান্তরিত করতে।

ও আই সি এবং তার অংশীদার দেশগুলির তথ্যের জন্য উল্লেখ্য, ৩৭০ ও ৩৫ক অনুচ্ছেদ বাতিল করার পরে কাশ্মীরে সন্ত্রাস সম্পর্কিত ঘটনা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এনকাউন্টার–এর জায়গাগুলিতে বিক্ষোভ অদৃশ্য হয়ে গেছে, এবং পাথর নিক্ষেপ ও ধর্মঘটের ঘটনা ইতিহাস হয়ে গেছে। কাশ্মীরও ভারতের অন্যান্য অংশের মতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, এই বছরের শুরুতে রেকর্ড সংখ্যক ২০.৫ লক্ষ পর্যটক উপত্যকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। অবকাশের বিশিষ্ট গন্তব্যগুলিতে হোটেলগুলি ১০০ শতাংশের কাছাকাছি ভর্তি থেকেছে, হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছে৷

ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে কাশ্মীর নিয়ে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার আগে ও আই সি-র উচিত উপত্যকা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা এবং সাম্প্রতিক কালে কাশ্মীরের রূপান্তরের প্রতি নজর ফেরানো। অঞ্চলটির সামাজিক কাঠামোর ক্ষতিসাধনের জন্য পাকিস্তান যে কাশ্মীরি যুবকদের মাদক সরবরাহ করত, ও আই সি-র উচিত সে ব্যাপারেও তার সদস্য দেশগুলিকে প্রশ্ন করা।

চৈনিক দমনকে সমর্থন করা

১৯৪৯ সালে সি সি পি জিনজিয়াং দখল করার পর থেকে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বলপূর্বক জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং সম্পদের শোষণ। হান জনসংখ্যা ১৯৪১ সালের ৫ শতাংশ থেকে ১৯৮০ সালে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়, যেখানে একই সময়ে উইঘুর মুসলিম জনসংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৭ সালের পর চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশে সিসিপি ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ১,২০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণ করেছে। এই শিবিরগুলিতে উইঘুর, কাজাখ ও উজবেক সহ এক মিলিয়নেরও বেশি মুসলমানকে বোরখা পরা, লম্বা দাড়ি রাখা বা সরকারের পরিবার পরিকল্পনা নীতি লঙ্ঘনের মতো অপরাধের জন্য আটক করা হয়। উইঘুর মুসলমানদের তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বেজিং সরকারি দপ্তরে কর্মরতদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার করতে বাধ্য করেছে, এবং এমনকি মসজিদ ও মাজার ধ্বংস করেছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে মুসলিম নারীরা সি সি পি সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, এবং পরিকল্পিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

উইঘুর মুসলমানদের তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বেজিং সরকারি দপ্তরে কর্মরতদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার করতে বাধ্য করেছে, এবং এমনকি মসজিদ ও মাজার ধ্বংস করেছে।

এই বন্দিশিবিরে মুসলমানদের দুর্দশার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ই ইউ, কানাডা এবং অন্যান্য দেশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এবং চিনা নীতিকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই দেশগুলি কূটনৈতিকভাবে ২০২২ সালের বেজিং শীতকালীন অলিম্পিক বয়কট করে, এবং সি সি পি কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ও আই সি এবং এর সদস্য দেশগুলি বিশ্বব্যাপী ফোরামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রের আহ্বান নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। তারা এই ফোরামগুলিতে ‘‌মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া এবং উন্নয়নের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রচারে’‌ চিনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। চিনের নিপীড়নমূলক নীতির প্রতি তাদের সমর্থনের সর্বশেষ প্রদর্শনটি এসেছিল যখন বেশিরভাগ সদস্য দেশ জিনজিয়াং–এ মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্কের জন্য ইউ এন এইচ আর সি–তে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউ এ ই), উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ইন্দোনেশিয়া, গ্যাবন, ক্যামেরুন, মওরিটানিয়া ইত্যাদি। ও আই সি সদস্য দেশগুলি ২০১৭ সাল থেকে মোট ৬৮২ জন উইঘুর নির্বাসিতকে চিনে ফেরত পাঠিয়েছে, এবং উইঘুর  মুসলমানদের কণ্ঠস্বর দমন করতে সি সি পি–র সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে।

রাজনৈতিক ছলনা বাদ রাখলেও ও আই সি এমন একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে যার সদস্যরা  তাদের মূল মূল্যবোধ চিনাদের কাছে বিক্রি করেছে। কাশ্মীর নিয়ে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার পরিবর্তে ও আই সি–র উচিত চিনের বর্ধিত অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা। উইঘুরদেরই এই ধরনের বক্তব্য প্রয়োজন, কাশ্মীরিদের নয়।


এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘দ্য প্রিন্ট’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.