Occasional PapersPublished on Aug 11, 2024
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

বাগাড়ম্বর ও কৌশল: চিনের প্রতি ইউরোপীয় মনোভাবের বিবর্তন

  • Shairee Malhotra
  • Ankita Dutta

    চিনের আচরণ এবং নানাবিধ কর্মকাণ্ড বর্তমানে ইউরোপীয় মূল্যবোধ স্বার্থের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় চিনের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিবর্তিত হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মধ্যে ইউরোপ যখন নতুন আন্তর্জাতিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি চিনের সঙ্গে নিজেদের কৌশল ম্পর্কের পুনর্নির্মাণ করছে। এই নিবন্ধটির লক্ষ্য হল ইইউ-এর মনোভাব এবং চিন সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলিকে অন্তর্ভুক্তকারী নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ্যে আনা প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলির মনোভাবের বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এ হেন বিবর্তন খতিয়ে দেখা। অনেক ইউরোপীয় দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে চিনের মর্যাদার নিরিখে অর্থনৈতিক স্বার্থ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এমন একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যা চিনেপ্রতি একাধিক দেশভিত্তিক মনোভাবকে সংযুক্ত করে। বৃহত্তর ইইউ অবকাঠামো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশগুলি এমনটা করছে।

ভূমিকা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিনের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক বেশ কয়েকটি কারণে পরিবর্তিত হয়েছে। জিনজিয়াং-এ মানবাধিকার লঙ্ঘন, হংকং-এ ধরপাকড়, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন চিনের সরবরাহ শৃঙ্খলের অস্ত্রায়ন, লিথুয়ানিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ, বাণিজ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, দক্ষিণ চিন সাগরে আগ্রাসন, তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা, ইউরোপীয় দেশগুলিতে চিনা গুপ্তচরবৃত্তি এবং বেজিংয়ের সংশোধনবাদী প্রবণতার দরুন চিনকে ক্রমশ ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে। একই সময়ে, চিনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতি ২০২২ সালে ৪০০ বিলিয়ন ইউরোতে এসে দাঁড়িয়েছে(১), ইইউ-চায়না কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অন ইনভেস্টমেন্ট (সিএআই) এখনও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষারত এবং দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনগুলি তেমন বিশেষ কিছু সম্পন্ন করতে পারেনি (২০২২ সালের আলোচনাসভাটিকে ইইউ-এর বৈদেশিক বিষয় ও নিরাপত্তা নীতির উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ‘ডায়লগ অব দ্য ডেফ’ বা ‘বধিরদের সংলাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন)।(২)

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে বাধ্য করেছে রাশিয়ার জ্বালানির উপর তার অত্যধিক নির্ভরতা থেকে গৃহীত শিক্ষাগুলি প্রয়োগ করতে এবং চিনের উপর তার একমুখী কৌশলগত ও অর্থনৈতিক নির্ভরতার কথা পুনর্বিবেচনা করতে। সর্বোপরি, ট্রান্সআটলান্টিক জোটের শক্তিশালীকরণ এবং মার্কিন নিরাপত্তার উপর ইউরোপের নির্ভরতা উচ্চতর মার্কিন-চিন মহান শক্তি প্রতিযোগিতার সামনে ইউরোপীয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের পরিসরকে সীমাবদ্ধ করেছে। চিন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’-এ স্বাক্ষর, চিনা কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেস ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের শৈলীর মতো সাম্প্রতিক ঘটনাবলি চিন সম্পর্কে ইউরোপীয় ধারণার নেতিবাচক পরিবর্তনকে আরও উস্কে দিয়েছে।

ইউরোপ নতুন আন্তর্জাতিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি চিনের সঙ্গে নিজেদের কৌশল ও সম্পর্কগুলি ফের খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। কী ভাবে এই ক্রমবিবর্তনশীল উপলব্ধিগুলি পৃথক সদস্য রাষ্ট্র এবং ইইউ-র নীতি পরিবর্তন করেছে, সেই দিকটিরই অন্বেষণ করা হয়েছে এই নিবন্ধে।

 

ইইউ ট্রিনিটি: সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য প্রেক্ষাপট নির্মাণ

২০১৯ সালটি ইইউ-চিন সম্পর্কের একটি বাঁকবদলকারী বছর। কারণ নিজের ইইউ-চায়না স্ট্র্যাটেজিক আউটলুক-এ ইইউ চিনকে একটি অংশীদার, অর্থনৈতিক প্রতিযোগী এবং পদ্ধতিগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে

ত্রিমুখী বিশেষণে বিদ্ধ করেছে() এর পরের বছরগুলিতে এক দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যায় চিনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং অন্য দিকে বাণিজ্য পারস্পরিকতা, গা-জোয়ারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং চিনের সঙ্গে ইইউ-এর সম্পর্ককে সংযুক্তকারী নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রমের পরিবর্তে বিকল্প প্রশাসনিক মডেলের প্রচার চালানোর চিনা প্রচেষ্টাকে প্রকাশ্যে আনাএই দুই বৈপরীত্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা অব্যাহত থেকেছে

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের  লেচিনকে দেশের অভ্যন্তরে আরও নিপীড়ক এবং বিদেশে আরও আগ্রাসী’ বলে ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন যে, ‘নির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে চিন ছোট দেশগুলির কাছ থেকে নিজের ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই আদায় করে নেয়।’(৪) ব্রাসেলসে ইইউ বিতর্ক প্রাথমিক ভাবে ডি-রিস্কিং’ বা ‘ঝুঁকিমুক্তকরণ’-এর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যা ‘ডিকাপলিং’ বা ‘বিচ্ছিন্নকরণ’-এর(ক)(৫) এক নরম অবস্থান। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল কাঁচামাল, খনিজ পদার্থ এবং ক্রিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি বা গুরুত্বপূর্ণ শিল্প (উদাহরণস্বরূপ, সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী এবং ব্যাটারি) ক্ষেত্রগুলিতে আরও স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করার সময় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সরবরাহ উৎসের বৈচিত্র্যকরণ ঘটিয়ে চিনের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। এই লক্ষ্যে ইইউ ক্রিটিক্যাল র মেটেরিয়ালস অ্যাক্ট এবং ইইউ চিপস অ্যাক্টের মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া, সাধনী এবং উদ্যোগের সূচনা করেছে।  এ ছাড়াও, ইইউ শক্তিশালী রফতানি নিয়ন্ত্রণের বাস্তবায়ন করছে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী সাধনী গড়ে তুলেছে এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তি কৌশলগত অবকাঠামোর অভ্যন্তরীণ এবং বহির্মুখী উভয় ক্ষেত্রেই নজরদারি চালিয়েছে।

ঝুঁকিমুক্তকরণ’ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন বিশদ নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্লকের বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের জন্য মনোভাবের সুর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে চিনের প্রতি এই দেশগুলির জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা ঐকমত্য দেখা গিয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সাম্প্রতিকতম ইইউ-চিন শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল চিনা ভর্তুকি ইউরোপীয় শিল্পকে ক্ষুণ্ণকারী অত্যধিক সক্ষমতা এবং চিনের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য ঘাটতি-সহ অর্থনৈতিক বাধাগুলি দূর করাপূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনের মতো বৈঠকটি এ বারও একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই সম্মেলনটি ফন ডের লেইনের কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্যের পরেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফন ডের লেইন দুই পক্ষের সম্পর্কের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুস্পষ্ট উপাদান’-এর উপর জোর দিয়েছিলেন এবং ‘চিনের পরিবর্তিত বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি’র বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন।(৬)

ব্রাসেলসের আরও সুসঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ব ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব সত্ত্বেও দেশগুলির চি সংক্রান্ত নীতিগুলি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনার সংমিশ্রণে জটিলতর হয়েছে এবং বিভিন্ন পক্ষ আরও মধ্যপন্থী ব্যবসা-বান্ধব অবস্থান কঠোর অবস্থানের মধ্যে কোন অবস্থান গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে। জার্মানির মতো পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে আগ্রহী, যেমনটা জার্মানির তরফে চিনে সাম্প্রতিক একাধিক উচ্চ-পর্যায়ের সফর দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং সে ক্ষেত্রে প্রায়শই বড় ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা এই সফরে সঙ্গী হয়েছেন। ফ্রান্সের মতো অন্য দেশগুলি শূন্য-সমষ্টির দ্বিমেরু প্রতিযোগিতায় পর্যবসিত হওয়ার পরিবর্তে একটি তৃতীয় পন্থা’ বেছে নিতে আগ্রহী, বিশেষ করে ২০২৪ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ঘনিয়ে আসার দরুন। সর্বোপরি দেশগুলির সরকার আলোচনায় এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক হলেও, তাদের লাভের জন্য চিনা বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসাগুলি অভিযোজন অধরাই রয়ে যেতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, ইইউ মনোভাবের সাফল্য নির্ভর করবে সদস্য রাষ্ট্রগুলি কী ভাবে চিনের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ পরিচালনা করে, তার উপর। যাই হোক, ব্লকের সদস্যদের একজোট হওয়া সংক্রান্ত থাকা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মহাদেশ জুড়ে ইউরোপীয় দেশগুলি চিনেসঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও কৌশলী করে তুলবে, যখন চিন সংক্রান্ত আলোচনা ক্রমনিরাপত্তাকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে।

 

ডেনমার্ক: আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদার করতে ডেনমার্ক ও চি২০০৮ সালে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করে। যাই হোক, ২০১৮ সাল থেকে চিনের উপর ডেনমার্কের নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে এবং আংশিক ভাবে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দু দেশের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সেই উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।(৭)

মনোভাবের এই পরিবর্তনটি ডেনমার্কের বৈদেশিক এবং নিরাপত্তা কৌশলে প্রকাশ পেয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে(৮) রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করার ঠিক আগে প্রকাশিত হয়েছিল। এই কৌশলে একটি সম্পূর্ণ অংশ চিনেজন্য নিবেদন করা হয়েছে২০২৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ কৌশলটি অনুরূপ সুরেরই প্রতিধ্বনি করে।(৯) চিনকে প্রতিযোগী, অংশীদার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মনে করার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মনোভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উভয় নথিতে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা এবং চিনের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ অর্থাৎ স্থিতিশীলতা ও দূষণহীন পরিবর্তনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেগুলিকে ডেনমার্ক-চিন অংশীদারিত্বে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের কৌশলটি থেকে স্পষ্টতই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ডেনমার্ক ‘নিতান্তই নির্বোধ ছিল এবং তাই ‘চিনের আচরণের উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হিসাবে নিজেমনোভাবের বদল ঘটিয়েছে।

ডেনমার্কের বৃহত্তর নিরাপত্তা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিন সম্পর্কে দেশটির ধারণাপরিবর্তিত হচ্ছে, যার মধ্যে একটি গণভোটের পর ইইউ-এর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতি থেকে ডেনমার্কের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটিও অন্তর্ভুক্ত এবং সেখানে ৬৭ শতাংশ ড্যানিশ সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতিতে যোগদানের পক্ষে ভোট দিয়েছে(১০) ২০২৩ সালের কৌশলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ড্যানিশ এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে চিনে কথা ২১ বার উল্লেখ করা হয়েছে (রাশিয়ার কথা ৪২ বার উল্লেখ করা হয়েছে)।

ডেনমার্কে চিন সংক্রান্ত আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সম্পর্কিত নিরাপত্তা উদ্বেগের উপর মনোনিবেশ করেছে, যেমন ড্যানিশ টেলিকম নেটওয়ার্কগুলিতে হুয়াই-এর উপস্থিতি, স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সহযোগিতা এবং ড্যানিশ ব্যবসার জন্য চিনা বাজারের তাত্পর্য। গ্রিনল্যান্ডে চিনের বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান কৌশলগত উপস্থিতি ২০১৮ সালে গ্রিনল্যান্ডের বিমানবন্দর অবকাঠামো নির্মাণের প্রচেষ্টায় প্রতিফলিত এবং গ্রিনল্যান্ডের চিনা ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়ে ড্যানিশ উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।(১১)

২০২৩ সালের গস্ট মাসে ডেনমার্কের বিদেশমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেনের বেজিং সফর কনফেডারেশন অব ড্যানিশ ইন্ডাস্ট্রির মতো সংস্থার সমর্থনে হয়ে থাকলেও তা বিরোধী দলগুলিতরফে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল(১২) ডেনমার্ক এবং চিন সফরের সময় ২০২৩-২০২৬ সালের জন্য একটি গ্রিন জয়েন্ট ওয়ার্ক প্রোগ্রামে স্বাক্ষর করে।(১৩) উইন্ড  টারবাইনের মতো প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের মূল রফতানিকারক হিসাবে দূষণহীন কর্মসূচিতে চিনের কেন্দ্রিকতা দেশটিকে বায়ু শক্তির অগ্রগামী হিসাবে ডেনমার্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তোলে।

ড্যানিশ কৌশলটি চিন থেকে কাঁচামাল প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্ভরতা হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ড্যানিশ রফতানির সুযোগগুলিকে বিচ্ছিন্ন বা অস্বীকার না করার পাশাপাশি ড্যানিশ এবং ইউরোপীয় সংস্থাগুলির জন্য আরও সমান সুযোগের দাবি জানানো হয়েছে। নানাবিধ দৃষ্টান্তে চিনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং উভয় দেশকেই বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ভাবে তাদের প্রভাব বৃদ্ধিতে ব্রতী’ বলে মনে করা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে, চিনকে একটি সংশোধনবাদী রাষ্ট্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যার লক্ষ্য হল নিজের সুবিধা মতো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বদলে ফেলা।

ডেনমার্ক বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সঙ্গে একটি সাধারণ ইইউ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করার উপর জোর দেয়। ব্রিটেনকে ডেনমার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি চিনের সঙ্গে ডেনমার্কের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে এবং মার্কিন-চিন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করে। এ ভাবে চিনের সঙ্গে ডেনমার্কের সম্পর্ক ক্রম ওয়াশিংটন বেজিংয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং ব্রাসেলসে ইইউ স্তরে গৃহীত পদক্ষেপ দ্বারা সংজ্ঞায়িত হতে পারে।

জার্মানি: ওয়ান্ডেল ডার্চ হ্যান্ডেলের (বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন) অন্তিম পর্যায়?

চিনেজন্য জার্মানি সম্ভবত সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ইউরোপীয় দেশ। চিন হল জার্মানির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ইউরোপে চিনেজন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও উন্মুক্ত হল জার্মান অর্থনীতিবছরের পর বছর ধরে জার্মানি ওয়ান্ডেল ডার্চ হ্যান্ডেল (বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন) নীতি অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যের মাধ্যমে চিনকে আরও কম কর্তৃত্ববাদী এবং আরও উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক করে তোলা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে জার্মান জেইটেনওয়েন্ডে রাশিয়া এবং চিনের উপর জার্মানির একতরফা নির্ভরতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে, যার ফলে ২০২৩ সালের জুন মাসে একটি বহু-প্রতীক্ষিত চিনা কৌশল প্রকাশিত হয়।(১৪) ৬৪ পৃষ্ঠার নথিতে জার্মানির অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতির বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চিনের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ লিখেছিলেন, ‘চিনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিনের সঙ্গে আমাদের আচরণের উপায়ও বদলাতে হবে।’(১৫)

চিনকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ইইউ-এর ত্রিমুখী বিশেষণ অবলম্বন করা সত্ত্বেও জার্মান কৌশলটি প্রতিদ্বন্দ্বীউপাদানকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং জোর দিয়ে বলে  যে, চিরাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্বার্থ জাহির করার জন্য এগুলিকে ব্যবহার করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নির্ভরতাকে স্থায়ী করে’ তোলে।(১৬) ইইউ মনোভাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৌশলটিতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে চিনের কাছ থেকে ‘ঝুঁকিমুক্তকরা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার আরও ‘সমমনস্ক’ দেশগুলিতে বাণিজ্যিক অংশীদার খোঁজার আহ্বান জানানো যায়। চিনা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে চিনে অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী বিনিয়োগের বৃহত্তর নিরীক্ষণ, বিশেষ করে সংবেদনশীল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হয়ে উঠেছে

সমালোচকরা কৌশলের ফাঁকফোকরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নথিটি কৌশলগত নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য তাগিদ দিলেও দেখানে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল প্রযুক্তির উৎস সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও পক্ষাবলম্বন করা হয়নি। যেমন দূষণহীন পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সৌর প্যানেলের ক্ষেত্রে চিন একটি প্রধান সরবরাহকারী।(১৭) জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও, সরকারি পদক্ষেপ (যেমন স্কোলজের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চিনা সংস্থা কসকো-কে হ্যামবুর্গ পোর্ট টার্মিনালে বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া) নথির দাবির বিপরীত ভূমিকাকেই দর্শায়। ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা, প্রণোদনা বা সংস্থার বেলআউটের মতো জটিল সুনির্দিষ্ট অনুপস্থিতিতে, কৌশলটি মূলত ঝুঁকিমুক্ত’ সংস্থাগুলির জন্য একটি বিশেষ পছন্দ হয়ে ওঠে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি তাদের পণ্য বিক্রয়ের জন্য চিনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। চিনের বাজারের সঙ্গে জার্মান ব্যবসা কতটা আন্তঃসম্পর্কিত তার ইঙ্গিত বোঝা যায় সহজে। অর্থাৎ প্রতি তিনটি জার্মান গাড়ির মধ্যে একটি বিক্রি হয় চিনে।(১৮) ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চিনে সকল ইউরোপীয় বিনিয়োগের ৩৪ শতাংশ ঘটেছে চারটি জার্মান সংস্থার সঙ্গেই (বিএমডব্লিউ, বিএএসএফ, ফোক্সভাগেন এবং মার্সিডিজ-বেনজ)। তদুপরি, নথিটি নিয়ে জার্মানির ক্ষমতাসীন ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন বা জোটের দলগুলির মধ্যে যে কঠিন সমঝোতা ছিল তা চূড়ান্ত খসড়ায় প্রতিফলিত হয়। সেখানে গ্রিনস পার্টির দ্বারা প্রণীত শক্তিশালী পদক্ষেপগুলি যেমন চিন-সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি পরিমাপ করার  জন্য জার্মান সংস্থাগুলির জন্য চাপ পরীক্ষার মতো বিষয়গুলি শেষ পর্যন্ত বাদ দিয়ে দেওয়া হয়

ইউরোপের বৃদ্ধির প্রবাহ কতটা কার্যকরী ভাবে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং নির্ভরতা হ্রাস করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে, তা মহাদেশ জুড়ে নীতিকে প্রভাবিত করবে ইইউ মনোভাবের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

সুইডেন: সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণকারী দেশ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সুইডেন কয়েক শতাব্দীব্যাপী বজায় রাখা নিরপেক্ষ মনোভাব পরিত্যাগ করে এবং ন্যাটো যোগদানের জন্য আবেদন করে। একই সময়ে চিনের প্রতি সুইডেনের দৃষ্টিভঙ্গিও ইউরোপের সবচেয়ে হকিশ অর্থাৎ কঠোরতম হয়ে ওঠে।

২০১৫ সাল থেকে চিন সম্পর্কে সুইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয় ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। চিনের উলফ ওয়ারিয়র বা নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি(২০), চিনের সুইডিশ বই বিক্রেতা গুট মিনহাই-এর গ্রেফতারের মামলা(২১) এবং চিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অসংখ্য চালিকাশক্তি মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। চিনের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোভাবের ২০২০ সালের সমীক্ষা অনুসারে, ৮৫ শতাংশ সুইডিশের চিন সম্পর্কে প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যা জাপানের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।(২২)

সুইডেন প্রথম ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্রে চিনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেয়।(২৩) অতি সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকাশিত সুইডিশ প্রতিরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে ‘চিন ও রাশিয়ার মতো স্বৈরাচারী সংশোধনবাদী রাষ্ট্রগুলিকে একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য প্রাথমিক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।(২৪) সুইডেনের ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে মাত্র তিন বার চিনের কথা উল্লেখ করা হলেও ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে ৩৩১ বার উল্লেখ করা হয়, যা পরিবর্তনের ব্যাপকতাকেই দর্শায়।(২৫)

সুইডেন তার চিনা নীতিতে সামগ্রিক ইউরোপীয় কাঠামোর জমিকে শক্ত রলেও - যেমনটা প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসনের মধ্য-দক্ষিণপন্থী সরকার পুনর্ব্যক্ত করেছে - সুইডিশ রিপোর্টটি ইইউ-এর চিন সংক্রান্ত ত্রিমুখী বৈশিষ্ট্য গ্রহণ না করে তার পরিবর্তে চিনকে শুধুমাত্র একটি হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করে, তা-ও সরাসরি সামরিক হুমকি হিসেবে নয়। কৌশলটিতে রাশিয়াকে সবচেয়ে গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং রাশিয়া-চিন সহযোগিতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়ে এশীয় এবং ইউরোপীয় মঞ্চের নিরাপত্তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সুইডিশ পদ্ধতির কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা

২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ইইউ কাউন্সিলে সুইডেনের সভাপতিত্বের সময় চি  সম্পর্কিত বিষয়ে সংহতি গড়ে তোলাই ছিল একটি মূল লক্ষ্য(২৬) অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো সুইডেন চিনের উপর কৌশলগত নির্ভরতা কমাতে চায়। এমনটা অর্জনের জন্য সুইডেন সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সমর্থন করে, ইইউ একক বাজারকে গভীর করে তোলে এবং বায়ু শক্তির মতো ক্ষেত্রে চিনা বিনিয়োগগুলি যাচাই করার পন্থা বেছে নেয়। অন্য ইউরোপীয় দেশগুলি ৫জি বণ্টনের জন্য দেশের সংস্থাগুলিকে হুয়াইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে বাধা দিয়েছে এবং তার বদলে কিছু প্রণোদনাও দিয়েছে। কিন্তু সুইডেন সেই পদক্ষেপের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে হুয়াইকে দেশে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও চিন সুইডেনের রফতানিমুখী অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক রয়ে গিয়েছে। কারণ এইচঅ্যান্ডএম এবং আইকিয়া-র মতো সুইডিশ সংস্থাগুলি প্রধানত চিনা বাজারে বিনিয়োগ করে, যা সুইডেনের জন্য অর্থনৈতিক স্তরে শক্তি অর্জনের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রিটেন: 'সুবর্ণ যুগ থেকে 'যুগ নির্ণায়ক প্রতিবন্ধকতা' পর্যন্ত

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী সম্পৃক্ততার জন্য ব্রিটেনের মূল ২০২১-এর ব্লুপ্রিন্টের (একটি প্রতিযোগিতামূলক যুগে আন্তর্জাতিক ব্রিটেন: নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন এবং বৈদেশিক নীতির সমন্বিত পর্যালোচনা’(২৭)) নতুন নথি সংস্কার করা হয়েছিল ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ রিফ্রেশ ২০২৩: রেসপন্ডিং টু আ মোর কনটেস্টেড অ্যান্ড ভোলাটাইল ওয়ার্ল্ড’-এ (আইআর রিফ্রেশ), যার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের মতো নতুন বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ অগ্রাধিকারগুলি পুনর্মূল্যায়ন করা।(২৮)

আইআর রিফ্রেশ-এ ব্রিটেনের ‘ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি ঝোঁক’কে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সেখানে ৫৯ পৃষ্ঠার মধ্যে দুটি পাতা চিনের জন্য বরাদ্দ রা হয়েছে এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি যুগ-সংজ্ঞায়িত পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে

ইউকে-চিন সম্পর্কের তথাকথিত সুবর্ণ যুগ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ বলে মনে করা হয়, যেমনটা ২০২২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার ঋষি সুনাক তাঁর প্রথম বিদেশনীতি সংক্রান্ত বক্তৃতায় পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন(২৯) ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশ হংকং-এ বিক্ষোভকারীদের উপর চিনের ২০১৯ সালের ধরপাকড়, জিনজিয়াং-এ অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তাইওয়ান দক্ষিণ চিসমুদ্রে আগ্রাসন আসলে চিন সম্পর্কে ব্রিটেনের নেতিবাচক ধারণাকে অনেকটাই উস্কে দিয়েছে।

তা সত্ত্বেও আইআর রিফ্রেশ সুনাকের পূর্বসূরি লিজ ট্রাস এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে বেজিংয়ের প্রতি আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য অন্যান্য উপাদানের চাপ সত্ত্বেও চিনকে হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দিকে, রাশিয়াকে ব্রিটেনের জন্য তীব্রতর হুমকি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং কৌশলটিতে রাশিয়া-চিন অংশীদারিত্বের গভীরতর সমস্যাগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। নথিটিতে চিনের প্রতি একটি ত্রিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা জোরদার করা, চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়া অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা এবং বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে চিনেসঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া।

তৎকালীন বিদেশসচিব জেমস ক্লেভারলির মতো সরকারি কর্মকর্তারা - যিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চিন সফর করেছিলেন (২০১৮ সালে প্রাক্তন বিদেশসচিব জেরেমি হান্টের শেষ সফরের পাঁচ বছর পর) - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে চিনের অবস্থার উপর ভিত্তি করে বৃহত্তর সম্পৃক্ততার জন্য জোর দিচ্ছেন।(৩০) এটি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ২০২৩ সালের মে-জুন মাসে ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮.৭ শতাংশের বেশি, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই হার ৭.১ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২.৭ শতাংশ(৩১) অতি সম্প্রতি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড ক্যামেরনের বিদেশসচিব হিসেবে নিয়োগ ব্রিটেনের চিন নীতির সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মেয়াদকালে (২০১০-২০১৬) - যা ব্রিটেন-চিন সম্পর্কের ‘সুবর্ণ যুগ’-এর সঙ্গে সমাপতিত হয় - ক্যামেরন চিনেসঙ্গে গভীর সহযোগিতার জন্য ওকালতি করেন এবং পশ্চিমে চিনের প্রধান অংশীদার হওয়া’ সংক্রান্ত ব্রিটেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা ঘোষণা করেন।(৩২) কিন্তু তাঁর বর্তমান নিয়োগ মৌলিক ভাবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংঘটিত হয়েছে এবং ক্যামেরনের ভবিষ্য চিনা নীতি সুনাকের পন্থার বিপরীত হতে পারে।

এ ছাড়াও, ব্রেক্সিট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঊর্ধ্বে উঠে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক অন্বেষণ করার জন্য লন্ডনকে চাপ দিয়েছে, যা চিনকে ব্রিটিশ সংস্থাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার বাজার হিসাবে উপস্থাপন করেছে। একই সঙ্গে ব্রিটেন তার ৫জি নেটওয়ার্ক থেকে হুয়াইকে নিষিদ্ধ করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্ভরতা সীমিত করছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে ইউকে তার বৃহত্তম চিপমেকিং কারখানা ওয়েলসের নিউপোর্ট ওয়েফার ফ্যাবের চিনা দখলকে আটকে দিয়েছে।(৩৩)

গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আইআর রিফ্রেশ বলেছে যে, চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক পূর্ব নির্ধারিত ভিত্তি’তে গৃহীত হয়নি। ব্রিটেন সহযোগিতা স্থিতিশীলতা পছন্দ করলেও বৃহত্তর কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো চিনের পছন্দের উপর নিজস্ব কিছু শর্ত চাপিয়েছে। কৌশলটিতে বেসামরিক কর্মচারীদের মধ্যে ম্যান্ডারিন ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি-সহ চিনের স্থানীয় দক্ষতা এবং ক্ষমতা তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে।

আইআর রিফ্রেশের পরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পার্লামেন্টের ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিটি চিন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে(৩৪) যা শিক্ষা, শিল্প ও প্রযুক্তির মতো তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে অসামরিক পারমাণবিক শক্তিক্ষেত্রে চিনা প্রভাব গুপ্তচরবৃত্তির বিশ্লেষণ করেছে। ব্রিটেন এই কৌশলগুলিকে পরিপূরক করে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রনির্দিষ্ট কৌশলও প্রকাশ করেছে, যেমন একটি অর্ধপরিবাহী কৌশল(৩৫) এবং এর গুরুত্বপূর্ণ খনিজ কৌশল সংক্রান্ত সংস্কার।(৩৬)

২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন সামনে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লেবার পার্টির বিজয়ের দৃঢ় সম্ভাবনার দরুন ব্রিটেন তার চিন নীতিকে আরও কঠোর করতে পারে। দক্ষিণপন্থী দলটি সম্ভবত চিনের প্রতি আরও আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করবে ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান নেবে।

চেক প্রজাতন্ত্র: কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা

চিনের সঙ্গে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজনৈতিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় বছরের পর বছর ধরে ওঠা-পড়া থেকেছে। প্রেসিডেন্ট মিলোস জেমানকে সাধারণত চিনের সঙ্গে দেশটির সক্রিয় আলোচনা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের নেপথ্যে প্রধান শক্তি বলে মনে করা হয়। যাই হোক, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে পেট্র পাভেল প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে চেক প্রজাতন্ত্র ইউরোপের অন্যতম চিন-বান্ধব দেশ থেকে সরে এসে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিম্নগামী থেকেছে, যখন চেক জাতীয় সাইবার এজেন্সি হুয়া এবং জেডটিই সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে হুমকির কথা ঘোষণা রার পরে চিন সাইবার এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে।(৩৭)

চিনের প্রতি মনোভাবেএ হেন পরিবর্তনটি ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকাশিত নিরাপত্তা কৌশলেও দেখা যায়। ২০১৫ সালের কৌশলের তুলনায়(৩৮) বর্তমান পরিকল্পনাটিতে চেক প্রজাতন্ত্রের জন্য হুমকি ও ঝুঁকির কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সরাসরি চিনের কথা উল্লেখ রা হয়েছেসেখানে চিনকে এমন একটি দেশ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী ও চেক প্রজাতন্ত্র-সহ গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে সরাসরি প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।’(৩৯) কৌশলটিতে চিনের পদক্ষেপকে সংশোধনবাদী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর সামরিক গঠন, সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি বিভিন্ন ধরনের জবরদস্তি (অর্থনৈতিক এবং মিশ্র পদ্ধতির হস্তক্ষেপ-সহ) কথা তুলে ধরা হয়েছে। কৌশলটিতে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং উদ্বেগের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চিনা বিনিয়োগগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, কৌশলটিতে বলা হয়েছে যে, পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তামূলক পরিবেশ রাশিয়া চিনের ক্রমবর্ধমান যৌথ ব্যবস্থা-বিরোধী ধারণা’ দ্বারা আকার পাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার প্রচেষ্টা। কৌশলটিতে আরও নির্দেশ করা হয়েছে যে, চুক্তিভিত্তিক প্রতিশ্রুতিগুলির প্রতি রাশিয়ার অবহেলার কারণে এবং চিনেসম্পৃক্ত হওয়ার অনিচ্ছার দরুন বিশ্বব্যাপী কৌশলগত ভারসাম্যের অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে।’

চিনের প্রতি মনোভাবের প্রবণতা নেতিবাচক বলে মনে হলেও চেক প্রজাতন্ত্র তাইওয়ানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন সমীকরণ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। গত দুবছরে প্রাগ ইউরোপে তাইপেইয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেপাভেল বলেছেন যে, ‘চিন এবং তাপ্রশাসন এই মুহূর্তে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানে নেই এবং তা তাদের কৌশলগত লক্ষ্য নীতির প্রেক্ষিতে পশ্চিমী গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ তিনি বলেন, ‘যে কোন পর্যায়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই-ইং ওয়েনের সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত এবং তাইওয়ানের সঙ্গে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী(৪০) এর পরেই চেক রিপাবলিকের লোয়ার হাউসের সদস্যরা তাইপেই সফরে যান এবং অস্ত্র ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।(৪১)

ফ্রান্স: সহযোগিতা এবং প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য

চিনের মধ্যকার গভীর পরিবর্তনগুলি স্বীকার করে নিলেও ফ্রান্স যত দিন সম্ভব তার অর্থনৈতিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে। অতএব গত কয়েক বছরে চিনের বিষয়ে ফরাসি অবস্থান প্রতিযোগিতা সহযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। জিনজিয়াং-এ মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ফ্রান্স সামগ্রিক অবস্থান কঠোর করলেও অতিমারি চলাকালীন চিনের উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের বিস্তৃত সামরিক উপস্থিতির দরুন প্যারিস বেজিংয়ের সঙ্গে পথ চলার ক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম সতর্কতা অবলম্বন করেছেএমনকি ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমশ পরিবর্তিত হয়েছে

প্রতিরক্ষা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফ্রান্সের ২০১৩ সালের শ্বেতপত্রে(৪২) ফ্রান্স চিনকে বিশ্বায়নের গঠনকারী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, চিনের সঙ্গে ফ্রান্স বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বকে উন্নত করতে প্রস্তুত।(৪৩) তবে ২০২১ সালের কৌশলগত সংস্কারে ফ্রান্স কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চিনের উত্থানের কথা বলেছে এবং চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও  প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ এবং সমস্ত ক্ষেত্রে চিনের সম্প্রসারণবাদের কথা উল্লেখ করেছে। ২০২২ সালের সংস্করণটিতে চিনের অভ্যন্তরে উন্নয়ন বিশ্বব্যবস্থার উপর চিনের প্রভাবের জন্য একটি পৃথক অংশ বরাদ্দ করে বিষয়টির উপর আরও জোর দেওয়া হয়েছে(৪৪) এবং বলা হয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান তীব্র কৌশলগত প্রতিযোগিতা সংঘর্ষের কারণে উদার গণতন্ত্রের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে কারণ এগুলি একটি আন্তর্জাতিক আদেশ রক্ষা করছে, যার ভিত্তি (আন্তর্জাতিক আইন, বহুপাক্ষিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি) বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র দ্বারা প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।’(৪৫) সংস্করণটিতে দেশগুলির রাজনৈতিক ব্যবস্থা জাতীয় সংহতিকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য রাশিয়া চিনা কার্যকলাপের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। এই সংস্করণটি মস্কো বেজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অভিসারের দিকে নির্দেশ করে পশ্চিমী উদ্দেশ্যের অভিব্যক্তির বিরুদ্ধে চালিত পশ্চিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সারিবদ্ধতার সুযোগ প্রদান করেছে।’(৪৬) লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ই কৌশলটিতে অবকাঠামোয়, বিশেষ করে আফ্রিকায় চিনের বিনিয়োগের কথাও বলা হয়েছে, যা আবার নির্ভরতা, গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিধিনিষেধের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।(৪৭)

অনেক ইউরোপীয় দেশের মতো ফ্রান্স চিন থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলি স্বীকার করে নিলেও সহযোগিতা প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দ্বৈত মনোভাব ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বেজিং সফরের সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে তিনি ১৬০টি এয়ারবাস প্লেন বিক্রি এবং ক্ষমতাকে দ্বিগুণ করার জন্য চিনে একটি নতুন এয়ারবাস অ্যাসেম্বলি শৃঙ্খল খোলার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম বিমান চলাচলের বাজার সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য চাপ দিয়েছিলেন তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সফরের সময় তাইওয়ান সম্পর্কে তিনি বলেন: ইউরোপীয়দের যে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দরকার… তাইওয়ান সংক্রান্ত (কোনও সঙ্কট) ত্বরান্বিত করা কি আমাদের স্বার্থের অনুকূল? না। সবচেয়ে খারাপ হবে যদি কেউ মনে করেন যে, আমরা ইউরোপীয়রা এ বিষয়টি নিয়ে ভীষণ ভাবিত এবং মার্কিন লক্ষ্য চিনের তরফে অত্যধিক প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা কোনও ইঙ্গিত গ্রহণ করছি।’ তিনি আরও বলেন যে, তাইওয়ানের সঙ্কট আমাদের সমস্যা নয়।’ ইউরোপের উচিত এটি থেকে দূরে থাকা এবং ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী হওয়া মোটেই উচিত নয়।(৪৮) ম্যাক্রোঁর বিবৃতি স্পষ্টতই তাইওয়ান সংক্রান্ত বিষয়ে ইইউ কমিশনারের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। ফলে ফ্রান্স এখন ইইউ থেকে আলাদা কোনও অবস্থান গ্রহণ করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।

নেদারল্যান্ডস: সুরক্ষাবাদের অভিমুখে চালিত?

নেদারল্যান্ডস ২০১৩ সালে চিন সংক্রান্ত তার প্রথম নীতি প্রকাশ করে চিনা বিনিয়োগ আকর্ষণের উপর জোর দেয়।(৪৯) ২০১৯ সালে সংস্কারকৃত নীতিতে(৫০) আবার নেদারল্যান্ডস ইউরোপের জন্য চিনের উত্থানের অর্থ কী তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল। নীতির মূল ধারণাটি ছিল যেখানে সম্ভব সেখানে উন্মুক্ত রাখা, যেখানে প্রয়োজন সেখানে সতর্ক হওয়া জরুরি এই নীতিটি চিন সম্পর্কে ইইউ-এর কৌশলকেই অনুসরণ করে এবং দেশটিকে একটি প্রতিযোগী অংশীদার বলে মনে করে। নীতিটি প্রকাশের পর থেকে ডাচ সরকার দেশীয় চিপ তৈরি এবং অর্ধপরিবাহী শিল্পে আরও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ-সহ চিনের বর্ধিত উপস্থিতি থেকে তার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার ১.১ বিলিয়ন ইউরো প্রোজেক্ট ফোটনডেল্টায় বিনিয়োগ করেছে(৫১) এবং রয়্যাল আইএইচসি জাহাজ নির্মাণ সংস্থাকে দেউলিয়া হওয়া সম্ভাব্য চিনা অধিগ্রহণের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে।(৫২) নেদারল্যান্ডস চিনে মাইক্রোচিপ উত্পাদন সরঞ্জামের উপর নতুন রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপকারী প্রথম ইউরোপীয় দেশ হয়ে ওঠে।(৫৩) এটি করা হয়েছিল ডাচ প্রযুক্তিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা বা গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি  করা থেকে বিরত রাখার জন্য। এ ছাড়াও নেদারল্যান্ডস বিনিয়োগের উপর নজরদারিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে(খ) যা ২০২৩ সালের ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে।

২০২৩ সালে প্রকাশিত তার সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে চিনকে দুটি আন্তঃসংযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সেগুলি নেদারল্যান্ডসের সামগ্রিক নিরাপত্তার উপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলবে। প্রথমটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কৌশল অনুসারে, এটি প্রাথমিক ভাবে সামরিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় এবং সম্ভাব্য উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন নির্ভরতার সৃষ্টি করে। এটি নেদারল্যান্ডের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র অংশীদার চিনকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুসরণ না করার জন্য বিচ্ছিন্ন করেছে। দ্বিতীয়টি হল রাশিয়া চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্ব, যা বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। উভয় দেশই পশ্চিমের সঙ্গে ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে দুর্বলতর করে তুলছে বলে মনে করা হয়। ডাচ কৌশল অনুসারে, এই উন্নয়নগুলি একটি বহুমুখী বিশ্বের অভিমুখে চালিত হবে, যেখানে নেদারল্যান্ডসকে শক্তির পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক ভারসাম্যের উপর ভিত্তি করে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

নতুন বাল্টিক পথ

এক সময় চিনের জন্য উত্সাহী অংশীদার হিসাবে বিবেচিত বাল্টিক দেশগুলি এখন বেজিংয়ের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্নির্মাণ করছে। বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা, চিনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ১৭+১ প্রক্রিয়ার(গ) প্রতিশ্রুতি পূরণে চিনের ব্যর্থতার কারণে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ সংক্রান্ত ঘোষণার ফলে এই সমস্যাগুলি আরও জটিল হয়ে উঠেছে(৫৪)

 

লিথুয়ানিয়া: কৌশলগত বিকল্প বেছে নেওয়া

 

২০১৯ সালে তার ন্যাশনাল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট বা জাতীয় হুমকি মূল্যায়ন প্রকাশের পর থেকে চিনের সঙ্গে লিথুয়ানিয়ার সম্পর্ক নিম্নগামী থেকেছে। দেশে চিনা গুপ্তচরবৃত্তির কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে মূল্যায়নে বলা হয়েছে, বেজিং চাইছিল যে লিথুয়ানিয়া তিব্বত এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করবে না এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বিষয়গুলি নিয়ে কোনও কথা বলবে না।(৫৫) ২০২০ সালে ইনগ্রিদা সিমোনিতে সরকারের নির্বাচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। মূল্যায়নটিতে একটি মূল্যভিত্তিক বৈদেশিক নীতিঅনুসরণ করা এবং সক্রিয় ভাবে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার যে কোন লঙ্ঘনের বিরোধিতা করা এবং বেলারুশ থেকে তাইওয়ান পর্যন্ত... সারা বিশ্বে যাঁরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তাঁদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়(৫৬)

দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে, যখন ২০২১ সালে ভিলনিয়াস তাইওয়ানে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস খোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করে এবং তার পরে তাইপেই লিথুয়ানিয়ায় একটি তাইওয়ানিজ প্রতিনিধি অফিসখোলার সিদ্ধান্ত নেয়, যা ইউরোপে প্রথম তাইওয়ানিজ কাজ বলা যেতে পারে(৫৭) ১৭+১ জোট থেকে লিথুয়ানিয়ার প্রত্যাহারের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিথুয়ানিয়া জোটটিকে ‘ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাজনকারী এবং অ-কার্যকর বলে অভিহিত করে(৫৮)এবং বেজিংয়ের মোকাবিলা করার জন্য একটি সম্মিলিত ইইউ প্রচেষ্টার আহ্বান জানায়। এর ফলে লিথুয়ানিয়া-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়ে।

এই ঘটনাপ্রবাহ থেকে ২০২১ সালে সংস্কারকৃত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের জন্ম হয়, যেখানে প্রথম বারের মতো চিন এবং রাশিয়াকে এমন দুটি কর্তৃত্ববাদী দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যারা পশ্চিমী গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কৌশল নথিতে চিনা মতাদর্শকে লিথুয়ানিয়া জাতীয় স্বার্থ ও মূল্যবোধের বিপরীত বলে অভিহিত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জাতীয় হুমকি মূল্যায়নে চিন সংক্রান্ত একটি পৃথক বিভাগ বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেজিং বিশ্ব নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আকার দিতে এবং পশ্চিমী জোটগুলির নিরিখে ভিন্ন ভারসাম্য তৈরি করতেগ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এর(ঘ) মতো তার নতুন নীতিগুলি ব্যবহার করেছে(৫৯) কৌশল নথিটিতে বিশেষ করে ইউক্রেন সংঘাতের পরে রাশিয়া ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মস্কোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বেজিংয়ের লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়নিইউক্রেন সঙ্কটের ফলে চিনের জন্য কিছু কঠিন প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তার অ-হস্তক্ষেপ নীতি’, রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে পশ্চিমে তার ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তা।’(৬০) নথিটিতে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে উল্লেখ করা হয়েছে, চিযেহেতু তাইওয়ানের প্রতি তার আগ্রাসন বাড়াবে, তাই সামরিক আক্রমণের দূরবর্তী সম্ভাবনা থেকে যায়নথিটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মধ্য মেয়াদে লিথুয়ানিয়া আশা করে, চিন পশ্চিমের উপর তার নির্ভরতা কমাতে নিজের নীতিগুলি অনুসরণ করবে যাতে তাইওয়ানে সামরিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতা’য় এলে চিন ‘বিকল্প অংশীদার’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।(৬১)

 

এস্তোনিয়া: একটি অভিযোজিত নিরাপত্তামূলক দৃষ্টিভঙ্গি

 

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো এস্তোনিয়াও রাশিয়াকে তাৎক্ষণিক হুমকি চিনকে দীর্ঘমেয়াদি হুমকি বলে মনে করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তালিন ২০০৫ সালে ইলেকট্রনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যাক্ট পাস করে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করেছেন, যা ২০২০ সালে সংস্কার করা হয়েছিল এবং সমস্ত টেলিযোগাযোগ কাঠামোর নিরাপত্তা নেটওয়ার্কগুলির ভবিষ্য উন্নয়ন পর্যালোচনা করার জন্য গোয়েন্দা পরিষেবাগুলিকে ক্ষমতা প্রদান করার পাশাপাশি যোগাযোগ কাঠামো থেকে হুয়াইকে নিষিদ্ধ করা হয়।(৬২) তা ছাড়া ২০২২ সালে এস্তোনিয়াও নিজেকে ১৭+১ জোট থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।(৬৩) ২০২৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড এস্তোনিয়া রিপোর্টে চিনের আন্তর্জাতিক ভঙ্গি সম্পর্কে দেশটির উদ্বেগ উঠে এসেছে, যার মধ্যে বেজিংয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সংস্কারের ধারণা, তার প্রতিবেশীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তি আধিপত্যের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা স্পষ্ট(৬৪) চিনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনকে তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘চিনের বাগাড়ম্বর এবং বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আগে চিন আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিজেকে একটি মহান শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু এখন চিন বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আর গোপন করে না।’(৬৫)

প্রতিবেদনে চিন সম্পর্কিত তিনটি নির্দিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, শি-র নেতৃত্বে বেজিং কর্তৃত্ববাদ পশ্চিমের সঙ্গে সংঘর্ষ গভীরতর করার পথে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিনা গোয়েন্দারা বিশ্বাস করে যে, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ কার্যকর ভাবে পশ্চিমী নিরাপত্তামূলক অবকাঠামোকে ব্যাহত করতে পারে। দ্বিতীয়ত এটি নির্দেশ করে যে, বেজিং তাইওয়ানের অস্তিত্বগত পরিসর’ সঙ্কুচিত করার জন্য তার তাইওয়ান-বিরোধী প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করেছে। তাইওয়ানে চিনের আক্রমণ করার সম্ভাবনা খুবই কম বলে উল্লেখ করা হলেও প্রতিবেদনটিতে কথাও বলা হয়েছে যে, সেই পরিস্থিতি (তাইওয়ানে চিনা আক্রমণ সংক্রান্ত) যে কোনও সময়ে বদলে যেতে পারে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি চিনকে ব্যাহত করতে পারে না, ঠিক যেমন হংকং জিনজিয়াং-এ নেওয়া চিনের পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের উপর কোন প্রভাব পড়ে না। তৃতীয়ত, চিন ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক আসলে পরিবর্তনশীল প্রকৃতি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাক্‌-যুদ্ধ কিছু প্রবণতা শক্তিশালী হয়েছে  (যেমন চিনেআন্তর্জাতিক উচ্চাভিলাষে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ভূমিকা), অংশীদারিত্বেও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিদ্যমান। চিনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন উপযোগী’। কারণ তারা একটি বৈসাদৃশ্যকেই উপস্থাপন করে অর্থাৎ আক্রমণাত্মক এবং অপ্রত্যাশিত রাশিয়া চিনকে রাশিয়ার মতো একই লক্ষ্য অনুসরণ করার সময় একটি ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ শক্তির ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেয়।’ প্রতিবেদনে এই মতামতও পোষণ করা হয়েছে যে, চিন এবং রাশিয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এবং ব্রিকস-এর মতো অ-পশ্চিমী সংস্থাগুলিতে প্রভাব বজায় রাখার জন্য প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাবে। রাশিয়া ও চিন এই সংস্থাগুলির সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পশ্চিম-বিরোধী মনোভাব জোরদার করা এবং মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমানোর বিষয়ে তাদের পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা দ্বারা সমন্বিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত একটি আকর্ষণীয় দিক হল ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড নিয়ে চিনের পর্যালোচনা। ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপগুলি আসলে পশ্চিমী ঐক্য সংকল্পের সম্মুখে ঠিক কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে চিনের জন্য একটি কেস স্টাডি হিসাবে উঠে এসেছে… এ হেন এক সংযোগ এই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বেজিং ক্ষমতার আন্তর্জাতিক ভারসাম্যের উপর প্রভাবগুলিকে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং মনে করা হচ্ছে, ‘যদি পশ্চিমের সঙ্গে চিনের দ্বন্দ্ব উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়’ এবং চিন যদি সেই সময়ে আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন ‘ভাল বিকল্প’ বেছে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকরী কৌশল নির্মাণ করছে চিন।

মূল ভাবনা থেকে দূরে যারা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি চিনের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার সময় গ্রিস এবং হাঙ্গেরির মতো দু’টি প্রধান দেশ একটি বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যা তাদের বহিরাগত বা মূল ভাবনা থেকে দূরবর্তী দেশ করে তুলেছে।

 

গ্রিস: একটি ধীর অথচ অস্থিতিশীল রূপান্তর?

অ্যালেক্সিস সাইপ্রাসের (২০১৫-২০১৯) শাসনের অধীনে চিন-গ্রিস সম্পর্কের উত্থান ঘটেছিল এবং চিনের লক্ষ্য ছিল গ্রিসকে ইউরোপের জন্য চিনের প্রবেশদ্বার করে তোলা। গ্রিসের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, ইউরোজোনের কঠোর ব্যবস্থা এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দেশটির কৌশলগত অবস্থান এটিকে চিনা বিনিয়োগের জন্য একটি সহজ লক্ষ্য করে তুলেছে। হাঙ্গেরির মতো চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক  থাকার দরুন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গ্রিস বেজিংকে মোকাবিলা করতে অনিচ্ছা দর্শিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আগ্রাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতিতে ভেটো প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিসের রক্ষণশীল সরকারের অধীনে এই সম্পর্কের গতি তরতরিয়ে এগিয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে শি-র গ্রিস সফরকে চিন-গ্রিক সম্পর্কের একটি নতুন যুগ’ হিসাবে মনে করা হয়েছিল, যেখানে মিৎসোতাকিস শি-কে বলেছিলেন, ‘আপনার ক্ষমতা এবং চিন আমার দেশে উপর সেই সময়ে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করেছে এবং বিনিয়োগ করেছে, যখন অনেকে মনে করেছিল যে, গ্রিসে বিনিয়োগের কোনও সম্ভাবনা নেই।’(৬৬) এই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মূলে থেকেছে কসকো-র কৌশলগত গ্রিক বন্দর পাইরেউসের ৬৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব, যাকে ইউরোপে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) ড্রাগনস হেড’ বা ‘কৌশলী মস্তিষ্ক’ বলা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক সংখ্যক বাণিজ্যিক বহর-সহ একটি সামুদ্রিক দেশ হিসাবে চিন গ্রিক শিপিং সংস্থাগুলির জন্য হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক। চিন সম্পর্কে গ্রিসের দৃষ্টিভঙ্গি অতিমারি চলাকালীন একটি পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে, যখন চিনের নিজেকে একটি হিতৈষী দেশ হিসাবে তুলে ধরার পরেও গ্রিসে চিনা উপস্থিতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা এবং কিছু দ্বিধার জন্ম হয়।(৬৭) ২০২১ সালে কন্টেনার টার্মিনালে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার মতো পাইরেউস বন্দরকে ঘিরে ওঠা নানাবিধ বিতর্ক চিনা বিনিয়োগকে প্রভাবিত করেছে।(৬৮) চিনা সংস্থাগুলিকে পাবলিক টেন্ডারের বাইরে রাখা হয়েছে; গ্রিসের রেলওয়ে অপারেটর ট্রেনওএসই-র বেসরকারিকরণ এবং গ্রিবিমা সংস্থা এথনিকি আসফালিস্টিকি বিক্রয়ের মতো চুক্তিগুলি খারিজ করা হয়েছে(৬৯) ২০২১ সালে মিৎসোতাকিস ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘গ্রিস বিশেষ ভাবে চিনা বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল নয় এবং গ্রিসে৫জি নেটওয়ার্ক হবে হুয়া-মুক্ত(৭০)

গ্রিক অর্থনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পুনরুদ্ধারের পথে হেঁটেছে এবং ২০২১ সালে ৮.৪ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৫.৯ শতাংশ জিডিপি-র প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। এর পাশাপাশিই এথেন্স একটি ভারসাম্যমূলক কাজও সম্পাদন করছে। চি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার সময়, বিশেষ করে তুর্কিয়ের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এবং এজিয়ান সাগরে বিরোধের প্রেক্ষিতে গ্রিস পশ্চিমী ইইউ অভিযোজন (ইইউ-এর দ্বারা বিশ্লেষিত চিনা ত্রিমুখী বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে) পুনর্নিশ্চিত করেছে

 

হাঙ্গেরি: চিনের ইউরোপীয় ট্রোজান ঘোড়া

ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্যপদ এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অবরুদ্ধ করার জন্য রুশ জ্বালানির উপর হাঙ্গেরির নির্ভরতা হ্রাসের অনিচ্ছা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, হাঙ্গেরি ইইউ-র মনোভাব অনুযায়ী চলতে মোটেও আগ্রহী নয়। ইউরোপের বাকি অংশের সঙ্গে এই পার্থক্যগুলি দেশের চিনা নীতিতেও স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান। ফলে হাঙ্গেরিই এখন হয়ে উঠেছে ইউরোপে চিনের তুরুপের তাস বা ইউরোপে চিনের ট্রোজান ঘোড়া (গ্রিক পুরাকাহিনির মতো)।(৭২)

ইউরোপীয় দেশগুলি বর্তমানে বেজিংয়ের প্রতি অনেক শীতল বা অনাগ্রহী মনোভাব বজায় রেখে চললেও বুদাপেস্ট তার চিনপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখেছে এবং হাঙ্গেরির বিদেশমন্ত্রী পিটার জিজ্জার্তো চিন থেকে ঝুঁকিমুক্তকরণ’ সংক্রান্ত কৌশলটিকে ইউরোপের জন্য আত্মহত্যাসম’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হাঙ্গেরি চিনের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণকারী এবং বিআরআই-তে যোগদানকারী প্রথম ইউরোপীয় দেশ হয়ে ওঠে। হাঙ্গেরি ২.৩ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়সম্পন্ন বুদাপেস্ট-বেলগ্রেড রেলওয়ে প্রকল্পকে সমর্থন করেছিল।(৭৩) ইউরোপের অন্যান্য দেশ নিজেদের ৫জি নেটওয়ার্ক থেকে চিনের হুয়াইকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করলেও হাঙ্গেরির এই হুয়াই সংস্থাটির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং চিনের বাইরে হুয়াইয়ের বৃহত্তম সরবরাহ কেন্দ্র রয়েছে হাঙ্গেরিতেই(৭৪)

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে হাঙ্গেরি পশ্চিমের উপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য একটি কেলেতি নিতাস’ (ইস্টার্ন ওপেনিং বা পূর্ব-অভিমুখী) নীতি অনুসরণ করেছে।(৭৫) চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক হাঙ্গেরিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-র কাছ থেকে কিছু স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে সক্ষম করে, বিশেষ করে ব্রাসেলসের সঙ্গে বিদ্যমান আইনের শাসনের বিরোধ এবং ইইউ অর্থায়নের সঙ্গে সংযুক্ত শর্তগুলির পরিপ্রেক্ষিতে। এগুলি বেজিংকে বিনিয়োগ তহবিলের আরও লভ্যতাযোগ্য বিকল্প উত্স করে তোলে এবং ইইউ স্তরে রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি উপায় হয়ে ওঠে। অরবানের উদারপন্থী এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন শৈলী শি-র অনুরূপঅন্যান্য ইউরোপীয় দেশ চিনের সঙ্গে তাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে যে মূল্যবোধ সংক্রান্ত টানাপড়েনের সম্মুখীন হয়, অরবানের শাসনামলে তেমন সমস্যা হয় না।

চিন হাঙ্গেরিতে শীর্ষ বিনিয়োগকারী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে তার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। এই বিনিয়োগগুলি সম্ভাব্য ঋণ ফাঁদ আকারে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করার পাশাপাশি হাঙ্গেরিকে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। চিনা সংস্থা কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেক্স টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড হাঙ্গেরিতে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাটারি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে (বিলিয়ন ইউরোরও বেশি খরচ করে), যা দেশের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য একটি আশীর্বাদসম (এর রফতানির এক পঞ্চমাংশও অন্তর্ভুক্ত)।(৭৬) এই ধরনের বিনিয়োগগুলি ইইউ স্তরে দক্ষিণ চিসমুদ্রে বেজিংয়ের কর্মকাণ্ড বা হংকংয়ে ধরপাকড়ের নিরিখে ইইউ-র নিন্দার মতো বিষয়ে হাঙ্গেরি আচরণকে প্রভাবিত করেছে

বাণিজ্য এবং বিনিয়োগই প্রধান চালিকাশক্তি

ইউরোপীয় দেশ ও চিনের মধ্যকার সম্পর্কের নেপথ্যে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। যেহেতু এই দেশগুলি বেজিংয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে, তাই তাদের পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতা নিয়ে একটি প্রধান প্রশ্ন উঠে আসে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলি এবং ইইউ কিছু ক্ষেত্রে একমত এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্মত বলে মনে হয়। ফন ডের লেইনের ২০২৩ সালের মার্চ মাসের বক্তৃতার কথাই ধরা যাক, যেখানে তিনি চিনের কাছ থেকে ইউরোপের অর্থনীতিকে ‘ডি-রিস্ক’ বা ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিলেন। যদিও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান কিন্তু একটি ভিন্ন মতই প্রকাশ করে (দ্রষ্টব্য সারণি ১)। বেজিং সম্পর্কে তাদের অবস্থান চিনা সংস্থাগুলি দ্বারা ব্যবহৃত ন্যায়সঙ্গত বাজার প্রবেশাধিকার বা অনুশীলনের বিষয় নির্বিশেষে গত কয়েক বছর  ধরে চি এই দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি চিনের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে একটি স্থবির পরিস্থিতিতে আটকে পড়া লিথুয়ানিয়া এস্তোনিয়ার মতো দেশগুলিচিনের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী, চিন ইইউ-এর বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার রয়ে গিয়েছে এবং ২০২২ সালে বাণিজ্যের দ্বিপাক্ষিক প্রবাহ ৮৫০ বিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে গিয়েছে।(৭৭)

 

সারণি ১: চিনের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্ক 

২০১৯

২০২০

২০২১

২০২২

ডেনমার্ক

রফতানি

৪৮৩৬৫৯৩

৫৫৪০৭১৬

৫৯২৯২৬৩

৫৬৯০৪৪৯

আমদানি

৬৫৪৪৪৮৬

৬৯২০৮০৬

৮৯৫২৪৯৭

১০৯২৯০৪৬

মোট বাণিজ্য

১১৩৮১০৭৯

১২৪৬১৫২২

১৪৮৮১৭৬০

১৬৬১৯৪৯৫

জার্মানি

রফতানি

৯৫৯৮৩৯৪

৯৫৮৪০০৮৬

১০৩৫৬৪৩৭৯

১০৬৮৭৯১৩৯

আমদানি

১১০০৫৪১৬২

১১৭৩৭৩২৫৬

১৪২৯৬৪৩১৩

১৯২০০৬০১১

মোট বাণিজ্য

১১৯৬৫২৫৫৬

২১৩২১৩৩৪২

২৪৬৫২৮৬৯২

২৯৮৮৮৫১৫০

সুইডেন

রফতানি

৭১১১০২৩

৭৯৫৩৮৩৫

৭৩৮৫০২৪

-

আমদানি

৯১১৯৩৮৮

৮৭২১৮২০

১২১৭৪১৬৮

-

মোট বাণিজ্য

১৬২৩০৪১১

১৬৬৭৫৬৫৫

১৯৫৫৯১৯২

-

ব্রিটেন

রফতানি

৩৫.৯

২৭.২

২৭.৩

৩৭.৬

আমদানি

৫০.৮

৫০.৮

৫৭.৪

৬৬.৫

মোট বাণিজ্য

৮৬.৭

৮৪.৬

৯৩.৮

১১১.০

চেক রিপাবলিক

রফতানি

২৩৩০০৫৩

২৪৫৭৪৫০

২৮২৮৩৫২

-

আমদানি

২৬৭৩৫৮৪৮

২৯২৮২৯৪৭

৩৩১০১৫৭৮

-

মোট বাণিজ্য

২৯০৬৫৯০১

৩১৭৪০৩৯৭

৩৫৯২৯৯৩০

-

ফ্রান্স

রফতানি

২০৯৩৭

১৭৬২০

২৪৪১৭

২৪১০২

আমদানি

৫৩২৭৬

৫৬৪৯৭

৬৪৪১২

৭৮২৬৯

মোট বাণিজ্য

৭৪,২১৩

৭৪১১৭

৮৮৮২৯

১০২৩৭১

নেদারল্যান্ডস

রফতানি

৫১৫২৬৪

৪৮২৭১৩

৫৮৯২০২

৫৯৪০৬৫ (জানু-অক্টো)

আমদানি

৪৫৯৮৯৩

৪২৩৮২৩

৫২৭০৫৫

৫৫৪৭৮২ (জানু-অক্টো)

মোট বাণিজ্য

৯৭৫১৫৭

৯০৬৫২৬

১১১৬২৫৭

১১৪৮৮৪৭ (জানু-অক্টো)

লিথুয়ানিয়া

রফতানি

-

৩১৬

২২৭.৯

৯৯.৬

আমদানি

-

১১৭২.২৯

১৫৭০.০০

১৯৮৬.৪৪

মোট বাণিজ্য

-

১৪৮৮.২৯

১৭৯৭.৯০

২০৮৬.০৫

এস্তোনিয়া

রফতানি

১৬৬

২৪৪

১৯৪

২১০

আমদানি

৫৪৮

৬৪৭

৭১২

৯৫৪

মোট বাণিজ্য

৭১৪

৮৯১

৯০৬

১১৬৪

গ্রিস

রফতানি

৯৪২,৫২৮

৯১৯,৯৬১

১৫৯৬৫৪৬

-

আমদানি

৪,২৮৯,০৯৬

৪,০৩৩,০৬২

১১১৭৮৪৭৩

-

মোট বাণিজ্য

৫,২৩১,৬২৪

৪,৯৫৩,০২৩

১২৭৭৫০১৯

-

হাঙ্গে্রি

রফতানি

১.৫৭২.২০৬

১,৯৪৬,৯৭৩

২,৩৩৫,৯৭০

-

আমদানি

৬,৭৫৩,২৯৬

৮.৫০৭.৩৭০

৯,৭২০,০২২

-

মোট বাণিজ্য

৮,৩২৫,৫০২

১০.৪৫৩,৫৪৩

১১,৬০৫,৯৯২

-

দ্রষ্টব্য: ব্রিটেন ব্যতীত সমস্ত পরিসংখ্যান মিলিয়ন ইউরোতে এবং ব্রিটেনের পরিসংখ্যান বিলিয়ন পাউন্ডে

সূত্র: পরিসংখ্যান; ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যভাণ্ডার; বিশ্ব ব্যাঙ্ক; ব্রিটেন সরকার; পরিসংখ্যান এবং বৈদেশিক বাণিজ্য অধ্যয়ন বিভাগ; স্ট্যাটিস্টিকস নেদারল্যান্ডস; লিথুয়ানিয়া দূতাবাস(৭৮)

 

ইইউ স্তরে বিদেশি বিনিয়োগের উপর নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া, বিদেশি ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণ এবং জবরদস্তি-বিরোধী সাধনী গ্রহণের মতো সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ একটি সমান পরিসরের প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি বৃদ্ধি এবং চিনের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার দিকে নির্দেশ করে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ইইউ কমিশন ২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে ইইউ সদস্যদের কাছে চিনা ইভি আমদানি ১১২ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৩৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর চিন থেকে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) বিরোধী ভর্তুকি তদন্ত শুরু করেছে।(৭৯) এই ঘটনাপ্রবাহ ইতিমধ্যেই জটিল অংশীদারিত্বকে আরও জটিল করে তুলেছে, যা মানবাধিকার বিষয়ক মতবিরোধ, ইউরোপে চিনা প্রভাব বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তি অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা এবং চিনা বাজারে অসম প্রবেশাধিকারের কারণে ইতিমধ্যেই চাপের মধ্যে ছিল।

উপরন্তু, বাণিজ্য প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনেমধ্যে স্থবিরতার মাঝে ইইউ আটকা পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় সংস্থাকে চিনের বিরুদ্ধে তার চিপস রফতানি-নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য চাপ দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস এই দাবি মেনে নিয়ে সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি রফতানির উপর বিধিনিষেধ ঘোষণা করে(৮০) যা চিনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে এই অবস্থান অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র মোটেই সমর্থন করেনি

এই প্রবণতাগুলি চিনের প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলির তরফে গৃহীত পরস্পরবিরোধী পন্থাকেই দর্শায়। অনেক ইইউ দেশ চিনের উপর তাদের অত্যধিক নির্ভরশীলতা এবং এই ধরনের নির্ভরশীলতা থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি সম্পর্কিত উদ্বেগ তুলে ধরলেও তারা এ কথা স্বীকার করেছে যে, চিনের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, যা চিনে ইউরোপীয় নেতৃত্বের সফর থেকেই স্পষ্ট (যেমন ম্যাক্রোঁ এবং স্কোলজেচিন সফর)। নীতি নির্মাণের ক্ষেত্রে এই দোলাচল এ হেন প্রশ্নেরই উত্থাপন করে যে, ইউরোপীয় দেশগুলির চিন সম্পর্কে আদৌ কোনও সর্বাত্মক ও সুসংহত নীতি আছে কি না।

চিনের সমস্ত ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে (আয়ারল্যান্ড বাদে) এবং এই প্রতিবেদনে মূল্যায়িত সমস্ত দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তিতে চিন স্বাক্ষর করেছে। ইইউ এবং চিনের মধ্যে বর্তমানে কোন বাণিজ্য বা বিনিয়োগ চুক্তি না থাকলেও একবার বাস্তবায়িত হওয়ার পরে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সর্বাত্মক চুক্তি (সিএআই) দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তিগুলিকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। একটি যুগান্তকারী চুক্তিটিতে চিনা বাজারের প্রবেশাধিকার উন্নত করতে এবং ইইউ ও চিনা সংস্থা উভয়ের জন্য বাণিজ্যের সমান পরিসর প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভর্তুকিতে স্বচ্ছতা জোরপূর্বক প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিরুদ্ধে নিয়ম লাগু করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের বেশ কয়েক জন সদস্যের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে এবং ব্লকগুলিকে এই সকল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে ২০২১ সালে ইইউ পার্লামেন্টে সিএই-র অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়েছিল(৮১)

তা সত্ত্বেও চিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে প্রাথমিক ভাবে এর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং বাজারের আকারের কারণে। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি ২০১৮-২০২১ সালে চিনে মোট বিনিয়োগের প্রায় ৮৭ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ ছিল (জার্মানি মোট বিনিয়োগের ৪৩ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ)। ইইউ দেশগুলি চিন সংক্রান্ত তাদের কৌশলগুলি পুনর্মূল্যায়ন করার পরেও এমনটা ঘটে। ‘ইউরোপীয় বিনিয়োগ অনেক বেশি ঘনীভূত হয়েছে... যদিও মুষ্টিমেয় বড় সংস্থা - যাদের মধ্যে অনেক জার্মান সংস্থাও আছে – চিনের কার্যকলাপের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলেও চিনে উপস্থিতি আছে এ হেন অন্যান্য সংস্থা আপাতত চিনে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ রেখেছে।’(৮২)(ইউরোপীয় দেশগুলির চিনা বিনিয়োগের নজরদারি সংক্রান্ত বিবরণের জন্য দ্রষ্টব্য সারণি ২)

 

সারণি ২: চিনা বিনিয়োগের উপর ইউরোপীয় নজরদারি 

চিনা বিনিয়োগ

লক্ষ্যে রয়েছে যে সব ইউরোপীয় সংস্থা

দেশ

ক্ষেত্র

বর্তমান অবস্থা (২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত)

এওনমেড

হায়ার মেডিকেল

জার্মানি

চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম

সরকারের তরফে অবৈধ ঘোষণা করা

বেকিং ইনফাইনাইট ভিশন টেকনোলজি

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারস

ব্রিটেন

ক্যামেরা সংক্রান্ত প্রযুক্তি

লাইসেন্স সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করে দেওয়া

সিসিইউআই এবং সিআরআরসি

আল্পি এভিয়েশন

ইতালি

ড্রোন

সরকারের তরফে অবৈধ ঘোষণা করা

সিআইএমসি

মায়েরস্ক’স বক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট, এমসিআই

ডেনমার্ক

লজিস্টিক্স

একচেটিয়া-বিরোধী পর্যালোচনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উদ্বেগের পরে প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়

চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার (সিজিএন)

সাইজওয়েল নিউক্লিয়ার প্রজেক্ট

ব্রিটেন

পারমাণবিক শক্তি

ব্রিটিশ সরকার সিজিএন-এর অংশ কিনে নেয়

চায়না পাওয়া্র ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং

এক্সআরই আলফা লিমিটেড

ব্রিটেন

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো

কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে সম্মতি দেওয়া হয়েছে

কসকো

এইচএইচএলএ কনটেনার টার্মিলান টলারর্ট

জার্মানি

লজিস্টিক্স

কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ও স্বল্প পরিমাণে ইক্যুইটির বিনিময়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে

ইফোর্ট ইন্টেলিজেন্ট ইক্যুইপমেন্ট

রোবোক্স

ইতালি

রোবোটিক্স

ইক্যুইটির বৃদ্ধিতে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে, প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তি বাতিল করা হয়েছে

নেক্সপেরিয়া

নিউপোর্ট ওয়েফার ফ্যাব

ব্রিটেন

অর্ধপরিবাহী

প্রাথমিক ভাবে সম্মতি দেওয়া হয়। তার পরে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়

রেডরক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড

ইলেকট্রিসি নর্থ ওয়েস্ট

ব্রিটেন

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো

চুক্তি সংক্রান্ত সরকারের তরফে সীমাবদ্ধতার দরুন ভেঙে দেওয়া হয়

সাই মাইক্রোইলেকট্রনিক্স

এলমোস

জার্মানি

অর্ধপরিবাহী

নিষিদ্ধ

সাংহাই কিংটন টেকনোলজি

পারপেটাস

ব্রিটেন

গ্র্যাফেন

পর্যালোচনার পরে ভেঙে দেওয়া হয়

সাংহাই সিয়েরচি এন্টারপ্রাইজ ম্যানেজমেন্ট পার্টনারশিপ

ফ্লুজো

ব্রিটেন

অর্ধপরিবাহী

নিরীক্ষণ চালানোর পরে সম্মতি দেওয়া হয়

সুপার অরেঞ্জ এইচকে হোল্ডিং লিমিটেড (ইউনিভিস্তা)

পালসিক লিমিটেড

ব্রিটেন

অর্ধপরিবাহী

নিষিদ্ধ

সিনজেনটা (চিনা মালিকানাধীন)

ভেরিসেম

ইতালি

কৃষি

আদালত সরকার প্রদত্ত ভেটো বজায় রেখেছে

অজ্ঞাত চিনা সংস্থা

ইআরএস ইলেকট্রনিক

জার্মানি

অর্ধপরিবাহী

নিষিদ্ধ

সূত্র: রোডিয়াম গ্রুপ এবং মেরিকস-এর রিপোর্ট(৮৩)

 

একই সময়ে, ইউরোপ চিনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য  একটি প্রাথমিক গন্তব্য হয়ে উঠেছে, যেখানে ২০১৬ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭.৩ বিলিয়ন ইউরোয় এসে পৌঁছ। যাই হোক, তখন থেকে ইউরোপে চিনা এফডিআই-এর পরিমাণ কমেছে এবং ২০২২ সালে ৮৩ শতাংশ কমে সেই পরিমাণ ৭.৯ বিলিয়ন ইউরোতে এসে পৌঁছেছে(৮৪) এর জন্য দুটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে: প্রথমত, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ (জিরো-কোভিড-১৯ নীতি) এবং বাহ্যিক কারণগুলির (ইউক্রেন সঙ্কটে) দরুন চিনা বহির্প্রবাহের সমন্বিতকরণ এবং অধিগ্রহণের অভাব এবং দ্বিতীয়ত ইউরোপীয়দের দ্বারা চিনা বিনিয়োগের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করা।

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং হাঙ্গেরি হল চিনা এফডিআই-এর নিরিখে শীর্ষ ইউরোপীয় গন্তব্য, যেখানে প্রথম তিনটি দেশ চিনা এফডিআই-এর ৬৮ শতাংশেরও বেশি পরিমাণের জন্য দায়বদ্ধ। যাই হোক, বিনিয়োগের ধরন এবং ইইউ-এর বিনিয়োগ নজরদারিমূলক প্রবিধানের বাস্তবায়নের উপর বর্ধিত নিরীক্ষণের ফলে বিশেষ করে সংবেদনশীল প্রযুক্তি খাতে চিনা বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউরোপ এবং চিন উভয়ের বাজার পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। চিনের বাজার নিয়ে ইউরোপের বড় সংস্থা ও শিল্পসংস্থার মধ্যে একসময় কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও, এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতা এবং ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে তা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়েছে। ইইউ-এর নতুন নিরীক্ষণ (স্ক্রিনিং) প্রক্রিয়া এবং কিছু ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের ঝুঁকিমুক্তকরণ নীতি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যাইহোক, ঝুঁকিমুক্তকরণ প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হবে কারণ এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াগুলি এখনও সংজ্ঞায়িত হয়নি। বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উন্মুক্ত থাকলেও ইতিমধ্যেএই দেশগুলি চিনা বিনিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি নজরদারি এবং নিরীক্ষণমূলক প্রবিধান আরোপের চেষ্টা চালাচ্ছে।

উপসংহার

বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ চিনের প্রতি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করলেও মাত্র কয়েকটি দেশ একটি আনুষ্ঠানিক চিনা কৌশল প্রকাশ করেছে। বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে তাদের সামগ্রিক নীতি কাঠামো চিন-নির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে।

চিনের প্রতি ইউরোপীয় নীতি বর্তমানে বিভিন্ন দিকে চালিত হয়েছে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতম মনোভাবের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সমন্বিত হচ্ছে। আবার অন্য দিকে জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী সদস্য রাষ্ট্রগুলি একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টায় রত। তবুও ইউরোপ সামগ্রিক ভাবে চিনা নীতির ক্ষেত্রে অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

চিন-রাশিয়া সুসম্পর্কের বিষয়ে প্রায় সমস্ত ইউরোপীয় মূল্যায়ন এই সীমাহীন অংশীদারিত্বেরবিবর্তনের প্রেক্ষিতে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইউক্রেনের বিষয়ে রাশিয়ার প্রতি চিনের সমর্থন রাশিয়ার কাছে সামরিক হার্ডওয়্যারের সম্ভাব্য সরবরাহের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় উদ্বেগ বাড়িয়েছেএমনকি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে হ্রাস করেছে।

আর কটি কারণ যা বিবেচনার যোগ্য তা হল, ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক - যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী হয়েছে – যেখানে ইউরোপ রাশিয়ার প্রতি পূর্বের অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চাইছে। যাই হোক, প্রাথমিক ভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে ইউরোপ চিনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত পোষণ করবে না। কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের ইউরোপের লক্ষ্যগুলি চিনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ইউরোপীয় নির্ভরতার সঙ্গেও সম্পর্কিত। মার্কিন রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা একটি উদ্বেগের বিষয় এবং ইউরোপ তার নিজের সব কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সঁপে দিতে চায় না। উপরন্তু, ইউরোপ সম্ভবত কোনও একটি বা অনেকের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের মধ্যে একটি ভারসাম্যমূলক কাজের মাধ্যমে কৌশলগত ক্ষেত্রটি পরিচালনা করতে আগ্রহী। বিশেষ করে যেহেতু অনেক ইউরোপীয়  দেশ চিনের বাজার থেকে অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হয়েছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সম্পর্ক ছিন্ন করায় ইউরোপ যথেষ্ট চাপের মুখে পড়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলি চিনের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বমূলক মনোভাবের ক্ষাবলম্বন করছে বলে মনে হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও, চিনের আগ্রাসী আচরণের ফলে উদ্ভূত উদ্বেগের ভিত্তিতে ভারসাম্যের পাল্লা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ঝুঁকতে থাকবে, যার ফলে চিনের প্রতি ইউরোপীয় অবস্থান ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠবে।

চিনের সঙ্গে সহযোগিতা এবং ব্যবসা ইউরোপের জন্য ক্রমবর্ধমান শর্তসাপেক্ষ এবং নিরীক্ষণমূলক হয়ে উঠছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক ইউরোপীয় দেশগুলির কর্মসূচিতে আধিপত্য বজায় রাখবে, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠলেও, কী ভাবে এটি অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে ধোঁয়াশা চোখে পড়ার মতো। ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলি চিনেসঙ্গে তাদের অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত করার আহ্বান জানালেও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে।

যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে বিষয়টি ইউরোপের জন্য চিনে সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। ইউরোপ যদি একটি ন্যায্য এবং আরও বেশি সমানুপাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পৌঁছতে পারে এবং চিনের সঙ্গে সম্পর্কের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতাকে উন্নত করতে পারে - উদাহরণস্বরূপ সিএআই – তা হলে চিনের প্রতি ইউরোপের অভিযোগ খানিক কমতে পারে এবং চিন আবার ইউরোপের জন্য একটি সুযোগের দরজা হয়ে উঠবে। এ কথা ইউরোপীয় নেতাদের চিন সফরে স্পষ্ট, যেখানে অগ্রাধিকারের বিষয় ইউক্রেন হলেও সফরে সহগামী ইউরোপীয় ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে।(৮৬) সর্বোপরি, ইইউ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলি আরও দৃঢ় নীতি ব্যবস্থা প্রণয়নে সফল হলেও চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক পারস্পরিক নির্ভরতা হ্রাস করা সম্ভবত একটি দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে।

পাদটীকা

[ক] ডিকাপলিং বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক অর্থনীতির মধ্যকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ। এতে বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক ছিন্ন করা, সরবরাহ শৃঙ্খল বিচ্ছিন্ন করা এবং অন্যত্র নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা জড়িত। অন্য দিকে, ডি-রিস্কিং বা ঝুঁকিমুক্তকরণ একটি সূক্ষ্মতর এবং ধীর পদ্ধতি, যা একটি নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার নিরিখে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ঝুঁকিগুলি হ্রাস করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এতে সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনা, পণ্য ও পরিষেবার বিকল্প উৎস শনাক্ত করা এবং সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জড়িত। আরও জানতে দ্রষ্টব্য: অ্যালেক্স ক্যাপ্রি, ‘চায়না ডিকাপলিং ভার্সাস ডি-রিস্কিং: হোয়াট’জ দ্য ডিফারেন্স?’, হাইনরিক ফাউন্ডেশন, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩, https://www.hinrichfoundation.com/research/article/trade-and-geopolitics/china-decoupling-vs-de-risking/#:~:text=Alex%20Capri&text=Like%20decoupling%2C%20de%2Drisking%20is,risks%20have%20been%20dealt%20with

[খ] বিনিয়োগ, সমন্বিতকরণ এবং অধিগ্রহণের নিরাপত্তামূলক নিরীক্ষণ সংক্রান্ত আইনটি ২০২৩ সালের ১ জুন কার্যকর হয়েছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনার ভিত্তিতে একটি বিনিয়োগমূলক নিরীক্ষণ পরিকাঠামো প্রবর্তন করা হয়েছে। এই আইনটি জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগে বিদ্যমান ক্ষেত্রনির্দিষ্ট নিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার পরিপূরক হবে। আরও জানতে দ্রষ্টব্য: ‘ইনভেস্টমেন্ট স্ক্রিনিং’, ইউএনসিটিএডি, https://investmentpolicy.unctad.org/investment-policy-monitor/measures/4328/netherlands-introduces-fdi-screening-regime

[গ] বেজিং-নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী, যা ২০১২ সালে চিন এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারিত করতে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

[ঘ] ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এ টি প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত: (১) সাধারণ, সর্বাত্মক, সহযোগিতামূলক এবং স্থিতিশীল নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অঙ্গীকার; (২) সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি; (৩) ইউএন চার্টারের উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলির প্রতি অঙ্গীকার; (৪) সমস্ত দেশের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি; (৫) আলোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে দেশগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের প্রতিশ্রুতি; এবং (৬) ঐতিহ্যগত অপ্রচলিত উভয় ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি। বিশদ বিবরণের জন্য দ্রষ্টব্য: ‘জয়েন্টলি ইমপ্লিমেন্টিং দ্য গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ ফর লাস্টিং পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অব দি ওয়ার্ল্ড’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, পিআরসি, https://www.mfa.gov.cn/eng/wjbxw/202311/t20231102_11172214.html  )

১) ‘ইইউ ট্রেড চিফ সিকস মোর ব্যালান্সড ইকোনমিক টাইজ অন চায়না ভিজিট’, রয়টার্স, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩,

https://www.reuters.com/markets/eu-trade-chief-seeks-more-balanced-economic-ties-china-visit-2023-09-21/

২) ‘ইইউ-চায়না সামিট- স্পিচ বাই হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ/ ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল অ্যাট দি ইপি প্লেনারি’, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, এপ্রিল ৬, ২০২২, https://www.eeas.europa.eu/eeas/eu-china-summit-speech-high-representativevice-president-josep-borrell-ep-plenary_en

৩) ‘ইইউ-চায়না – আ স্ট্র্যাটেজিক আউটলুক’, ইউরোপিয়ান কমিশন, মার্চ ১২, ২০১৯, https://commission.europa.eu/system/files/2019-03/communication-eu-china-a-strategic-outlook.pdf.

৪) ‘স্পিচ বাই প্রেসিডেন্ট ফন ডের লেইন অন ইইউ-চায়না রিলেশনস টু দ্য মের্কাটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ অ্যান্ড দি ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টার’, ইউরোপিয়ান কমিশন, মার্চ ৩০, ২০২৩, https://ec.europa.eu/commission/presscorner/detail/en/speech_23_2063.

৫) লিসা ও’ক্যারল, ‘ইইউ সফেনস চায়না স্ট্র্যাটেজি বাই অ্যাডপ্টিং ‘ডি-রিস্কিং’ অ্যাপ্রোচ’, দ্য গার্ডিয়ান, জুন ৩০, ২০২৩, https://www.theguardian.com/world/2023/jun/30/eu-china-strategy-de-risking-ursula-von-der-leyen-brussels

৬) ‘স্পিচ বাই প্রেসিডেন্ট ফন ডের লেইন অ্যাট দি ইউরোপিয়ান চায়না কনফারেন্স ২০২৩ অর্গানাইজইড বাই দি ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস অ্যান্ড দ্য মের্কাটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ’, ইউরোপিয়ান কমিশন, নভেম্বর ৬, ২০২৩,

https://ec.europa.eu/commission/presscorner/detail/es/speech_23_5851#:~:text=We%20must%20recognise%20that%20there,and%20strategic%20in%20our%20response.

৭) আন্দ্রেয়াস বি ফোর্সবি, ‘ডেনমার্ক – এনহ্যান্সড ভিজিল্যান্স ইন কাউন্টারিং পোটেনশিয়াল ডিপেন্ডেন্সিজ অন চায়না’, ইউরোপিয়ান থিংক-ট্যাঙ্ক নেটওয়ার্ক অন চায়না, এপ্রিল ২০২২, https://merics.org/sites/default/files/2022- 04/etnc_2022_report.pdf.

৮) ‘ফরেন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি স্ট্র্যাটেজি ২০২২’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব ডেনমার্ক, https://um.dk/udenrigspolitik/aktuelle-emner/udenrigs-og-sikkerhedspolitisk-strategi-2022.

৯) ‘ফরেন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি স্ট্র্যাটেজি ২০২৩’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব ডেনমার্ক,

https://um.dk/en/foreign-policy/foreign-and-security-policy-2023.

১০) ‘ডেনমার্ক টু জয়েন ইইউ ডিফেন্স পলিসি আফটার হিস্টোরিক ভোট’, আল জাজিরা, জুন ০১, ২০২২, https://www.aljazeera.com/news/2022/6/1/exit-polls-danish-voters-want-back-joining-eus-defence-policy.

১১) এরিন পার্সনস, ‘ইজ চায়না’জ ‘ডেট-ট্র্যাপ ডিপ্লোমেসি’ ইন গ্রিনল্যান্ড সিম্পলি অন আইস?’ দ্য ডিপ্লোম্যাট, জানুয়ারি ০৫, ২০২২, https://thediplomat.com/2022/01/is-chinas-debt-trap-diplomacy-in-greenland-simply-on-ice/.

১২) ‘ড্যানিশ ফরেন মিনিস্টার ডিফেন্ডস চায়না ট্রিপ অ্যামিড ক্রিটিসিজম ফ্রম অপোজিশন’, দ্য লোকাল ডিকে, অগস্ট ১৫, ২০২৩, https://www.thelocal.dk/20230815/danish-foreign-minister-defends-china-trip-amid-criticism-from-opposition.

১৩) ‘ডেনমার্ক’স স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ উইথ চায়না’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব ডেনমার্ক, https://kina.um.dk/en/about-denmark/denmarks-strategic-partnership-with-china.

১৪) ‘স্ট্র্যাটেজি অন চায়না অব দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি’, ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি, জুন ২০২৩, https://www.auswaertiges-amt.de/blob/2608580/49d50fecc479304c3da2e2079c55e106/china-strategie-en-data.pdf.

১৫) ওলাফ স্কোলজ, ‘উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ডিকাপল ফ্রম চায়না, বাট কান্ট বি ওভাররিলায়েন্ট’, পলিটিকো, নভেম্বর ০৩, ২০২২, https://www.politico.eu/article/olaf-scholz-we-dont-want-to-decouple-from-china-but-cant-be-overreliant/.

১৬) ‘স্ট্র্যাটেজি অন চায়না অব দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি’

১৭) শায়রী মলহোত্র, ‘জার্মানি’জ চায়না স্ট্র্যাটেজি – অ্যান অ্যাঙ্কর অ্যাট লাস্ট?’ এক্সপার্ট স্পিক, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, অগস্ট ০৭, ২০২৩, https://www.orfonline.org/expert-speak/germanys-china-strategy/.

১৮) ক্লাইজ উলরিখ, ‘আর জার্মান কারমেকারস টু ডিপেন্ডেন্ট অন চায়না?’, ফাশ ওয়েল, অক্টোবর ২৭, ২০২০, https://www.dw.com/en/are-german-carmakers-too-dependent-on-china/a-55400204.

১৯) আগাথা ক্রাৎজ, নোয়া বারকিন, লরেন ডাডলে, ‘দ্য চোজেন ফিউ – আ ফ্রেশ লুক অ্যাট ইউরোপিয়ান এফডিআই ইন চায়না’, রোডিয়াম গ্রুপ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২, https://rhg.com/research/the-chosen-few/.

২০) অগস্ত বোরইয়েনসন, ‘সুইডেন অ্যান্ড চায়না, ওয়ান্স বিটেন, টোয়াইস শাই’, ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি পলিসি, এপ্রিল ১৩, ২০২৩, https://isdp.se/sweden-and-china-once-bitten-twice-shy/

২১) লিলি কুরো, ‘হংকং বুকসেলার গুই মিনহাই জেলড ফর টেন ইয়ার্স ইন চায়না’, দ্য গার্ডিয়ান, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০, https://www.theguardian.com/world/2020/feb/25/gui-minhai-detained-hong-kong-bookseller-jailed-for-10-years-in-china

২২) ‘আনফেভারেবল ভিউজ অব চায়না রিচ হিস্টোরিক হাইজ ইন মেনি কান্ট্রিজ’, পিউ রিসার্চ সেন্টার, অক্টোবর ৬,  ২০২০, https://www.pewresearch.org/global/2020/10/06/unfavorable-views-of-china-reach-historic-highs-in-many-countries/.

২৩) ‘অ্যাপ্রোচ টু ম্যাটারস রিলেটিং টু চায়না’, সুইডিশ মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯,

https://www.government.se/contentassets/e597d50630fa4eaba140d28fb252c29f/government-communication-approach-to-matters-relating-to-china.pdf.

২৪) ‘দ্য সুইডিশ ডিফেন্স কমিশন’স রিপোর্ট অন সিকিউরিটি পলিসি’, এক্সার্প্টস, দ্য ডিফেন্স কমিশন’স সেক্রেটারিয়েট, জুন ১৯, ২০২৩,

https://www.regeringen.se/contentassets/de808e940116476d8252160c58b78bb7/sammandrag-pa-engelska-av-allvarstid-ds-202319.pdf.

২৫) ত্রিতা পারসি, ‘সুইডেন ইজ দ্য ল্যান্ড অফ আইকিয়া, আব্বা অ্যান্ড চায়না হকস’, ফরেন পলিসি, জুলাই ২৪, ২০২৩, https://foreignpolicy.com/2023/07/24/sweden-is-the-land-of-ikea-abba-and-china-hawks/#cookie_message_anchor.

২৬) সুইডিশ প্রেসিডেন্সি অব দ্য কাউন্সিল অব দি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ২০২৩, https://swedish-presidency.consilium.europa.eu/media/ntkerqpw/the-swedish-presidency-programme.pdf.

২৭) ‘গ্লোবাল ব্রিটেন ইন আ কম্পিটেটিভ এজ – দি ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ অব সিকিউরিটি, ডিফেন্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন পলিসি’, ক্যাবিনেট অফিস, গভর্নমেন্ট অব দি ইউকে, ১৬ মার্চ,  ২০২১, https://www.gov.uk/government/publications/global-britain-in-a-competitive-age-the-integrated-review-of-security-defence-development-and-foreign-policy.

২৮) ‘ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ রিফ্রেশ ২০২৩ – রেসপন্ডিং টু আ মোর কনটেস্টেড অ্যান্ড ভোলাটাইল ওয়ার্ল্ড’, ক্যাবিনেট অফিস, গভর্নমেন্ট অব দি ইউকে, ১৬ মে, ২০২৩, https://www.gov.uk/government/publications/integrated-review-refresh-2023-responding-to-a-more-contested-and-volatile-world/integrated-review-refresh-2023-responding-to-a-more-contested-and-volatile-world.

২৯) আউব্রে আল্লেগ্রেত্তি, ‘ঋষি সুনাক সিগনালস এন্ড অব ‘গোল্ডেন এরা’ অব রিলেশনস বিটুইন ব্রিটেন অ্যান্ড চায়না’, দ্য গার্ডিয়ান, নভেম্বর ২৮, ২০২২, https://www.theguardian.com/politics/2022/nov/28/rishi-sunak-signals-end-of-golden-era-of-relations-between-britain-and-china.

৩০) লাউরি চেন এবং অ্যান্ড্রিউ ম্যাক্যাস্কিল, ‘ইউকে ফরেন মিনিস্টার টু ভিজিট চায়না ইন অ্যাটেম্পট টু রিপেয়ার ড্যামেজড টাইজ’, রয়টার্স, অগস্ট ২৯, ২০২৩, https://www.reuters.com/world/uk-foreign-minister-visit-china-aug-30-2023-08-29/.

৩১) ড্যারেন ডড, ‘ইউকে ‘গ্লোবাল আউটলায়ার’ অ্যাজ ইনফ্লেশন রিফিউজেস টু ফেল’, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, জুন ২২, ২০২৩,

https://www.ft.com/content/da2ded05-40a2-4196-aced-b32bb4ae89fc.

৩২) টিমোথি অলিভার, ‘হোয়াই ডেভিড ক্যামেরন’স পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট রিলেশনস উইথ চায়না কুড বি ঋষি সুনাক’স ফার্স্ট পলিটিক্যাল হেডেক অব ২০২৪’, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, জানুয়ারি ৪, ২০২৪, https://www.manchester.ac.uk/discover/news/david-camerons-past-and-present-relations-with-china/#:~:text=As%20foreign%20secretary%2C%20Cameron%20is,during%20his%20time%20in%20office.

৩৩) রায়ান ব্রাউন, ‘চাইনিজ টেকওভার অব দি ইউকে’স বিগেস্ট ক্লিপ প্ল্যান্ট ব্লকড অন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গ্রাউন্ডস’, সিএনবিসি, নভেম্বর ১৬, ২০২২, https://www.cnbc.com/2022/11/16/chinese-takeover-of-biggest-uk-chip-plant-blocked-by-government.html.

৩৪) ‘চায়না’, ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিটি টু পার্লামেন্ট, হাউস অব কমন্স, দি ইউকে, জুলাই ১৩, ২০২৩, https://isc.independent.gov.uk/wp-content/uploads/2023/07/ISC-China.pdf.

৩৫) ‘ন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টর স্ট্র্যাটেজি’, গভর্নমেন্ট অব দি ইউকে, মে ১৯, ২০২৩, https://www.gov.uk/government/publications/national-semiconductor-strategy/national-semiconductor-strategy

৩৬) ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেলস রিফ্রেশ – ডেলিভারিং রেজিলিয়েন্স ইন আ চেঞ্জিং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট’, গভর্নমেন্ট অব দি ইউকে, মার্চ ৩, ২০২৩, https://www.gov.uk/government/publications/uk-critical-mineral-strategy/critical-minerals-refresh-delivering-resilience-in-a-changing-global-environment-published-13-march-2023

৩৭) ‘চেক সাইবার ওয়াচডগ কলস হুয়াই, জেডটিই প্রোডাক্টস আ সিকিউরিটি  থ্রেট’, রয়টার্স, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, https://www.reuters.com/article/us-czech-huawei-idUSKBN1OG1Z3

৩৮) ‘সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি অব দ্য চেক রিপাবলিক ২০১৫’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব দ্য চেক রিপাবলিক, ফেব্রুয়ারি ২০১৫, https://www.army.cz/images/id_8001_9000/8503/Security_Strategy_2015.pdf

৩৯) ‘সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি অব দ্য চেক রিপাবলিক ২০২৩’, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব দ্য চেক রিপাবলিক, জুন ২০২৩, https://www.mzv.cz/file/5119429/MZV_BS_A4_brochure_WEB_ENG.pdf

৪০) ‘চেক প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট সেজ ওয়েস্ট মাস্ট অ্যাকসেপ্ট চায়না ইজ ‘নট ফ্রেন্ডলি’,’ দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩,

https://www.ft.com/content/df41b4a8-97f0-4e20-9ef4-4a53c0ab8f30

৪১) ‘চেক লোয়ার হাউস স্পিকার আদামোভা ইন তাইওয়ান উইথ হিউজ ডেলিগেশন’, ফোকাস তাইওয়ান, মার্চ ২৫, ২০২৩,  https://focustaiwan.tw/politics/202303250015

৪২) ‘ফ্রেঞ্চ হোয়াইট পেপার – ডিফেন্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি ২০১৩’, ২০১৩, https://ccdcoe.org/uploads/2018/10/White-paper-on-defense-2013-1.pdf

৪৩) ‘স্ট্র্যাটেজিক আপডেট ২০২১’, ফ্রেঞ্চ মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, ২০২১, https://otan.delegfrance.org/IMG/pdf/strategic_review_2021.pdf?1326/3874cfafd4bde77f93880652921601c39bbdb174

৪৪) ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ ২০২২’, রিপাবলিক অব ফ্রান্স, ২০২২, https://www.sgdsn.gouv.fr/files/files/rns-uk-20221202.pdf

৪৫) ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ ২০২২’, রিপাবলিক অব ফ্রান্স, ২০২২

৪৬) ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ ২০২২’, রিপাবলিক অব ফ্রান্স, ২০২২

৪৭) ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ ২০২২’, রিপাবলিক অব ফ্রান্স, ২০২২

৪৮) জামিল আনদেরলিনি এবং ক্লেয়া কলকট, ‘ইউরোপ মাস্ট রেজিস্ট প্রেশার টু বিকাম ‘আমেরিকা’স ফলোয়ার’, সেজ ম্যাক্রোঁ, পলিটিকো, এপ্রিল ৯, ২০২৩, https://www.politico.eu/article/emmanuel-macron-china-america-pressure-interview/#:~:text=%E2%80%9CThe%20question%20Europeans%20need%20to,Chinese%20overreaction%2C%E2%80%9D%20he%20said.

৪৯) ভেরা ক্রানেনবার্গ এবং ফ্রাঞ্জ-পল ভন দের পুতেন, ‘কনস্ট্রেনটস ফর এনগেজমেন্ট উইথ চায়না – ডাচ পোর্টস অ্যান্ড দ্য বিআরআই’, আইএআই কমেন্টারিজ ২২, এপ্রিল ১৬, ২০২২, https://www.iai.it/it/pubblicazioni/constraints-engagement-china-dutch-ports-and-bri#_ftn4

৫০) ‘পলিসি মেমোরেন্ডাম ‘নেদারল্যান্ডস-চায়না – আ নিউ ব্যালান্স’,’ পার্লামেন্টারি পেপারস, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, দ্য নেদারল্যান্ডস, ২০১৯, https://www.tweedekamer.nl/kamerstukken/detail?id=2019Z09525&did=2019D19427

৫১) ‘ফোটোনিক্স সেক্টর ইন্ডহোভেন গেটস মেজর বুস্ট উইথ ১.১ বিলিয়ন ইউরো ইনভেস্টমেন্ট’, ইন্ডহোভেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, এপ্রিল ২২, ২০২২, https://www.tue.nl/en/news-and-events/news-overview/22-04-2022-photonics-sector-eindhoven-gets-major-boost-with-11-billion-euro-investment

৫২) ‘ডাচ-ভেলজিয়ান অফশোর কনসর্টিয়াম কিপস রয়্যাল আইএইচসি ফ্রম চাইনিজ হ্যান্ডস’, প্রজেক্ট কার্গো জার্নাল, মে ৪, ২০২০, https://projectcargojournal.com/shipping/2020/05/04/dutch-offshore-companies-keep-royal-ihc-from-chinese-hands/?gdpr=accept

৫৩) পিটার হ্যাক, ‘দ্য নেদারল্যান্ডস টু ব্লক এক্সপোর্ট অফ অ্যাডভান্সড চিপস প্রিন্টার্স টু চায়না’, পলিটিকো, মার্চ ৮, ২০২৩, https://www.politico.eu/article/netherlands-impose-restrictions-chips-export-to-china-asml/

৫৪) ‘রাশিয়া অ্যান্ড চায়না লাইন আপ এগেনস্ট ইউএস ইন ‘নো লিমিটস’ পার্টনারশিপ’, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২, http://timesofindia.indiatimes.com/articleshow/89351575.cms?from=mdr&utm_source=contentofinterest&utm_medium=text&utm_campaign=cppst

৫৫) ‘ন্যাশনাল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট – ২০১৯’, স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব লিথুয়ানিয়া অ্যান্ড ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস আন্ডার দ্য মিনিস্ট্রি অব ন্যাশনাল ডিফেন্স, ২০১৯, https://www.vsd.lt/wp-content/uploads/2019/02/2019-Gresmes-internetui-EN.pdf

৫৬) আন্দ্রিয়াস সাইটাস, ‘লিথুয়ানিয়া টু সাপোর্ট ‘দোজ ফাইটিং ফর ফ্রিডম’ ইন তাইওয়ান’, রয়টার্স, নভেম্বর ৯, ২০২০, https://www.reuters.com/article/us-lithuania-china-idUSKBN27P1PQ

৫৭) ‘লিথুয়ানিয়া সেজ ইট উইল ওপেন ট্রেড অফিস ইন তাইওয়ান, চায়না হিটস ব্যাক’, এএনআই, মার্চ ৫, ২০২১,

https://www.aninews.in/news/world/asia/lithuania-says-it-will-open-trade-office-in-taiwan-china-hits-back20210305165255/

৫৮) কিনলিং লো, ‘লিথুয়ানিয়া কুইট ১৭+১ বিকজ অ্যাকসেস টু চাইনিজ মার্কেট ডিড নট ইমপ্রুভ, ইটস এনভয় সেজ’, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, জুন ১, ২০২১, https://www.scmp.com/news/china/diplomacy/article/3135522/lithuania-quit-171-because-access-chinese-market-did-not

৫৯) ‘ন্যাশনাল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট – ২০২৩’, স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব লিথুয়ানিয়া অ্যান্ড ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস আন্ডার দ্য মিনিস্ট্রি অব ন্যাশনাল ডিফেন্স, ২০২৩, https://kam.lt/wp-content/uploads/2023/03/Assessment-of-Threats-to-National-Security-2022-published-2023.pdf

৬০) ‘ন্যাশনাল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট – ২০২৩’, স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব লিথুয়ানিয়া

৬১) ‘ন্যাশনাল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট – ২০২৩’, স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব লিথুয়ানিয়া

৬২) ‘দি ইলেকট্রনিকস কমিউনিকেশনস অ্যাক্ট’, ন্যাশনাল ডিফেন্স কমিশন, রিগা, এস্তোনিয়া, জানুয়ারি ২৮, ২০২০, https://www.riigikogu.ee/tegevus/eelnoud/eelnou/0d2732e6-1877-42bd-9643-dfd304b6eaf1/Elektroonilise%20side%20seaduse%20muutmise%20seadus

৬৩) স্টুয়ার্ট লাউ, ‘ডাউন টু ১৪+১ – এস্তোনিয়া অ্যান্ড লাতভিয়া কুইট চায়না’স ক্লাব ইন ইস্টার্ন ইউরোপ’, পলিটিকো, অগস্ট ১১, ২০২২, https://www.politico.eu/article/down-to-14-1-estonia-and-latvia-quit-chinas-club-in-eastern-europe/

৬৪) ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড এস্তোনিয়া ২০২৩’, এস্তোনিয়ান ফরেন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, ২০২৩, https://raport.valisluureamet.ee/2023/en/

৬৫) ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড এস্তোনিয়া ২০২৩’

৬৬) জন সারোপউলুস, ‘গ্রিস অ্যান্ড চায়না হেইল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, অ্যাজ ইউএস অ্যান্ড ইইউ লুক অন’, আল জাজিরা, নভেম্বর ১১, ২০১৯, https://www.aljazeera.com/economy/2019/11/11/greece-and-china-hail-strategic-partnership-as-us-and-eu-look-on

৬৭) ফিলিপ লে কোরে, ‘গ্রিস’জ অ্যাম্বিভ্যালেন্ট রোম্যান্স উইথ চায়না’, ইউর‍্যাক্টিভ, অক্টোবর ২৫, ২০২১, https://www.euractiv.com/section/eu-china/opinion/greeces-ambivalent-romance-with-china/

৬৮) প্ল্যামেন তোনচেভ, ‘চাইনিজ ইনফ্লুয়েন্স ইন গ্রিস’, সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালিসিস, অগস্ট ২৪, ২০২২, https://cepa.org/comprehensive-reports/chinese-influence-in-greece/.

৬৯) ফিলিপ লে কোরে, ‘গ্রিস’জ অ্যাম্বিভ্যালেন্ট রোম্যান্স উইথ চায়না’

৭০) ‘প্রাইম মিনিস্টার কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস’স ইন্টারভিউ টু বেল হল অ্যাট দ্য গ্লোবাল বোর্ডরুম ডিজিটাল কনফারেন্স’, মে ০৫, ২০২১, https://primeminister.gr/en/2021/05/05/26464.

৭১) এলেনি ভারভিৎসিওতি, মার্টিন আর্নল্ড, মেরি ম্যাকডোগাল, ‘গ্রিস’জ ‘গ্রেটেস্ট টার্নরাউন্ড’ – ফ্রম জাঙ্ক টু ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড’, দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, মে ১৪, ২০২৩, https://www.ft.com/content/fcef4f83-f8db-4059-ae9b-34c4c871cb41.

৭২) পার্লে পেতিত, ‘সিনো-হাঙ্গেরিয়ান রিলেশনস – শি’জ ‘ট্রোজান হর্স’ ইন দি ইইউ’, ৯ড্যাশলাইন, নভেম্বর ১৫, ২০২৩, https://www.9dashline.com/article/sino-hungarian-relations-xis-trojan-horse-in-the-eu

৭৩) সেবাস্তিয়েন হম্পট, ‘ইস্টার্ন ওপেনিং’ মিটস ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ – স্টেট-ব্যাকড ন্যারেটিভস অব গ্লোবাল অর্ডার ইন চায়না-হাঙ্গেরি রিলেশনস’, সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ, অগস্ট ৮, ২০২৩, https://ceias.eu/eastern-opening-meets-belt-and-road-state-backed-narratives-of-global-order-in-china-hungary-relations/.

৭৪) ‘হাঙ্গেরি সিজ হাওয়াই অ্যাজ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ডেসপাইট সিকিউরিটি কনসার্নস,’ রয়টার্স, এপ্রিল ৯, ২০১৯,

https://www.reuters.com/article/hungary-huawei/hungary-sees-huawei-as-strategic-partner-despite-security-concerns-idUSL8N21R430/

৭৫) গ্যাব্রিয়েলা গ্রিলিঙ্গার, ‘চায়না’জ গ্রোয়িং ফুটহোল্ড ইন হাঙ্গেরি,’ দ্য ডিপ্লোম্যাট, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩,

https://thediplomat.com/2023/02/chinas-growing-foothold-in-hungary/

৭৬) গ্যাব্রিয়েলা গ্রিলিঙ্গার, ‘চায়না’জ গ্রোয়িং ফুটহোল্ড ইন হাঙ্গেরি,’

৭৭) আরেন্দসে হাল্ড, ‘ইইউ-চায়না রিলেশনস – ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড রিসেন্ট ডেভেলপমেন্টস’, চায়না ব্রিফিং, এপ্রিল ৪, ২০২৩, https://www.china-briefing.com/news/eu-china-relations-trade-investment-and-recent-developments/

৭৯) ‘ইইউ-চায়না ট্রেড রিলেশনস’, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট, প্লেনারি, অক্টোবর ২০২৩,

https://www.europarl.europa.eu/RegData/etudes/ATAG/2023/753952/EPRS_ATA(2023)753952_EN.pdf

৮০) টবি স্টারলিং, ‘ডাচ কার্ব চিপ ইক্যুইপমেন্ট এক্সপোর্টস, ড্রয়িং চাইনিজ আয়ার’, রয়টার্স, জুন ৩০, ২০২৩, https://www.reuters.com/technology/amid-us-pressure-dutch-announce-new-chip-equipment-export-rules-2023-06-30/

৮১) ‘এমইপিস রিফিউস এনি এগ্রিমেন্ট উইথ চায়না হোয়াইলস্ট স্যাংশনস আর ইন প্লেস’, প্রেস রিলিজ, ইইউ পার্লামেন্ট, মে ২০, ২০২১, https://www.europarl.europa.eu/news/en/press-room/20210517IPR04123/meps-refuse-any-agreement-with-china-whilst-sanctions-are-in-place

৮২) ‘দ্য চোজেন ফিউ – আ ফ্রেশ লুক অ্যাট ইউরোপিয়ান এফডিআই ইন চায়না’

৮৩) আগাথা ক্রাৎস, ম্যাক্স জে জেংগ্লেইন, গ্রেগর সেবাস্তিয়ান এবং মার্ক উইৎস্ক, ‘ইভি ব্যাটারি ইনভেস্টমেন্টস কুশন ড্রপ টু ডেকেড লো – চাইনিজ এফডিআই ইন ইউরোপ – ২০২২ আপডেট’, রোডিয়াম গ্রুপ অ্যান্ড দ্য মের্কাটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ (মেরিকস), মে ২০২৩, https://merics.org/sites/default/files/2023-05/merics-rhodium-group-chinese-fdi-in-europe-2022%20%281%29.pdf

৮৪) ‘ইভি ব্যাটারি ইনভেস্টমেন্টস কুশন ড্রপ টু ডেকেড লো – চাইনিজ এফডিআই ইন ইউরোপ – ২০২২ আপডেট’, মে ২০২৩

৮৫) ‘ইভি ব্যাটারি ইনভেস্টমেন্টস কুশন ড্রপ টু ডেকেড লো – চাইনিজ এফডিআই ইন ইউরোপ – ২০২২ আপডেট’, মে ২০২৩

৮৬) চার্লস জুমস্কি এবং ক্লারা বোয়ার-বাবেফ, ‘ফ্রান্স সাইনস ইকোনমিক ডিলস উইথ চায়না’ ইউর‍্যাক্টিভ, এপ্রিল ৭, ২০২৩, https://www.euractiv.com/section/politics/news/france-signs-economic-deals-with-china/

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra is Associate Fellow, Europe with ORF’s Strategic Studies Programme. Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on EU-India relations, ...

Read More +
Ankita Dutta

Ankita Dutta

Ankita Dutta was a Fellow with ORFs Strategic Studies Programme. Her research interests include European affairs and politics European Union and affairs Indian foreign policy ...

Read More +