-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে চিন তার জাহাজের এই সফরকে ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কায় চিনা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ক্ষেত্রে নজির হিসেবে ব্যবহার করবে।
চিনের ‘গুপ্তচর জাহাজ’ নয়াদিল্লিকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলেছে
শ্রীলঙ্কায় একটি চিনা গবেষণা জাহাজের উপস্থিতি নয়াদিল্লিতে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে, যখন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র চিনা মহাকাশ ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং জাহাজ ইউয়ান ওয়াং–৫–এর সফর ‘সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন, তখন নয়াদিল্লি মোটের উপর আশ্বস্ত ছিল এই ভেবে যে শ্রীলঙ্কা ভারতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর কোনও ঘটনা ঘটার অনুমতি দেবে না। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা ইউয়ান ওয়াং–৫–এর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের অনুমিত ক্ষমতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
নয়াদিল্লির সেই আস্থা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। নিরাপত্তা বিবেচনায় বেজিংকে হাম্বানটোটা বন্দরে তার গবেষণা জাহাজের সফর পিছিয়ে দিতে বলার কয়েকদিন পর কলম্বো তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। এর অন্তর্নিহিত কারণগুলি এখনও স্পষ্ট নয়, তবে মনে হয় শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা এই যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন যে সফরকারী চিনা জাহাজটিকে যুদ্ধজাহাজ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি, এবং তাই শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশে তার বাধা থাকার কথা নয়। একটি মহাকাশ এবং স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং জাহাজ হিসাবে ইউয়ান ওয়াং–৫ ভারতের ‘ঐক্য, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা’র জন্য কোনও সরাসরি বিপদ তৈরি করে না, অন্তত এমন কিছু করে না যা ১৯৮৭ সালের ইন্দো–শ্রীলঙ্কা চুক্তি লঙ্ঘন করে। ওই চুক্তি দুই দেশকে আহ্বান জানায় তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে অপরের জন্য বিপদস্বরূপ হতে পারে এমন বৈদেশিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করতে।
চিনা জাহাজটিকে নোঙরের অনুমতি দিতে শ্রীলঙ্কার প্রাথমিক প্রত্যাখ্যান বেজিংকে বিচলিত করেছিল, এবং চিনা কর্মকর্তারা যাকে একটি গবেষণা জাহাজের নিছক ‘পুনঃপূরণ’ হিসাবে দেখেছিলেন তা প্রতিরোধ করার জন্য কলম্বোর ‘সংবেদনহীন প্রচেষ্টা’র সমালোচনা করেছিলেন।
সম্ভবত শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ কলম্বোর প্রধান উন্নয়ন সহযোগী চিনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছে। চিনা জাহাজটিকে নোঙরের অনুমতি দিতে শ্রীলঙ্কার প্রাথমিক প্রত্যাখ্যান বেজিংকে বিচলিত করেছিল, এবং চিনা কর্মকর্তারা যাকে একটি গবেষণা জাহাজের নিছক ‘পুনঃপূরণ’ হিসাবে দেখেছিলেন তা প্রতিরোধ করার জন্য কলম্বোর ‘সংবেদনহীন প্রচেষ্টা’র সমালোচনা করেছিলেন। বেজিং চিনের সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা মিশনকে সঠিক প্রেক্ষাপটে দেখার জন্য এবং ‘স্বাভাবিক ও বৈধ সামুদ্রিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার’ জন্য ‘প্রাসঙ্গিক পক্ষগুলিকে’ (ভারতের প্রতি পরোক্ষ উল্লেখ) আহ্বান জানায়।
মনে হচ্ছে, ইউয়ান ওয়াং–৫–এর সফরকে দেখার দুটি উপায় আছে। একটি হল স্বীকার করা যে উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতার যুগে সমুদ্রে নজরদারি একটি বৈধ কার্যকলাপ। যেমন কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন যে বন্ধুত্বপূর্ণ অথবা প্রতিকূল বাহিনী এশীয় উপকূলে নিয়মিত তল্লাশি চালায়, এবং অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলি তাদের জলসীমায় বিদেশি নজরদারির উপর নজর রাখে। নয়াদিল্লির জন্য বাস্তবতা হল যে চিনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর রয়েছে, এবং তারা এটিকে অসামরিক কার্যকলাপের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করার অধিকারী।
কিন্তু ইউয়ান ওয়াং–৫–এর মোতায়েনকে কেউ চিনের ক্রমবিকশিত ভারত মহাসাগরীয় কৌশলের প্রেক্ষাপটেও দেখতে পারেন: এই অঞ্চলে প্রত্যক্ষ আধিপত্য বিস্তারের জন্য নয়, তার কৌশলগত মিশনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে। ভারত মহাসাগরে চিন খুব কমই নৌশক্তি প্রদর্শন করে; এর পদ্ধতির লক্ষ্য মূলত আধাসামরিক উপস্থিতির ধীরে ধীরে সম্প্রসারণের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে অংশীদারি সম্প্রসারণ করা। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে চিন তার উপস্থিতি চিহ্নিত করার উপায় হিসাবে যুদ্ধজাহাজ নয়, জরিপ ও গবেষণা জাহাজ পাঠাচ্ছে। বেজিংয়ের গেম প্ল্যান হল ভারত এবং অন্যান্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশকে দেখানো যে চিনা কার্যকলাপগুলি চিনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেশটি আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে যে অপারেশনাল প্রয়োজন ব্যতীত সে বিদেশের বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকবে।
বেজিংয়ের গেম প্ল্যান হল ভারত এবং অন্যান্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশকে দেখানো যে চিনা কার্যকলাপগুলি চিনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবুও চিন সব সময় সম্ভাবনার দিগন্ত প্রসারিত করার চেষ্টা করছে—পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর দুই জায়গাতেই। দক্ষিণ চিন সাগরে চিন তার সার্বভৌম স্বার্থের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বলে বিবেচিত যে কোনও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মিলিশিয়া ব্যবহার করে। ভারত মহাসাগরে চিনের নীতি হল ক্রমিক এবং নিরলস দখল, যা চিনের কৌশলগত স্থান প্রসারিত করে এবং বেজিংয়ের প্রাকৃতিক প্রভাব বলয়ের বাইরের স্থানগুলিতে বেজিংয়ের অধিকার ও স্বার্থকে জোরদার করে। পদ্ধতিটি আবশ্যিকভাবে আঞ্চলিক শক্তিগুলির জন্য বিপদস্বরূপ নয়, তবে এটি ইচ্ছাকৃতভাবে চিনের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা হ্রাস করে। এমনকি সহজাতভাবে দুরভিসন্ধিমূলক না হলেও, চিনের কৌশল অন্যান্য দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হিসাবে প্রকাশিত হয়।
শ্রীলঙ্কায় চিনের কার্যক্রম বৈধ কি না তার মাপকাঠি হল চিনের কর্মকাণ্ড শ্রীলঙ্কার কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গি হল চিনের মোতায়েন বিতর্কিত। শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের লক্ষ্য কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের জন্য লঙ্কার ঋণগ্রস্ততাকে কাজে লাগানো। তাঁরা দাবি করেন যে চিন ‘হাম্বানটোটা বন্দরকে বাণিজ্যিক এবং সামরিক দ্বৈত উপায়ে ব্যবহার করছে, যাতে করে এই দ্বীপরাষ্ট্রে চিনা কৌশলগত কার্যকলাপের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি হয়।
নয়াদিল্লির উদ্বেগ শুধু এই নয় যে ইউয়ান ওয়াং–৫ একটি গুপ্তচর জাহাজ হতে পারে। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে চিন তার জাহাজের এই সফরকে ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কায় চিনা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ক্ষেত্রে নজির হিসেবে ব্যবহার করবে। ইতিমধ্যে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি সক্রিয়ভাবে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে লজিস্টিক্যাল ঘাঁটি খুঁজছে। পাকিস্তানের গওয়াদরে একটি ‘দ্বৈত–ব্যবহার’ সুবিধা–স্থাপনা তৈরি করার পরে বেজিং কেনিয়া, কম্বোডিয়া, সেশেলস এবং মরিশাসে অনুরূপ সুবিধা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ এই স্থাপনাগুলি ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদানকারী হিসেবে চিনের পরিচয় প্রতিষ্ঠার একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
ভারত মহাসাগরে চিনের নীতি হল ক্রমিক এবং নিরলস দখল, যা চিনের কৌশলগত স্থান প্রসারিত করে এবং বেজিংয়ের প্রাকৃতিক প্রভাব বলয়ের বাইরের স্থানগুলিতে বেজিংয়ের অধিকার ও স্বার্থকে জোরদার করে।
ইউয়ান ওয়াং–৫–এর পরিদর্শন নয়াদিল্লির জন্য একটি বৃহত্তর নৈতিক দ্বিধা তৈরি করেছে: তার কি উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতদৃষ্টিতে সন্দেহজনক বিদেশি কার্যকলাপের অনুমতি শুধু এই কারণে দেওয়া উচিত যে চিন একটি নৈতিক বিষয় (বৈজ্ঞানিক গবেষণা) এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করছে? চিনকে কি যাচাই না–করে আন্তর্জাতিক নিয়মের এমন একটি অংশ কাজে লাগানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে যা ব্যবহারকারী রাষ্ট্রের অধিকারকে সমুদ্রের উপকূলবর্তী দেশগুলির নিরাপত্তার উদ্বেগের উপর স্থান দেয়? সংক্ষেপে, ভারতকে অবশ্যই আইনগতভাবে (এবং যথাযথতা বজায় রেখে) যা প্রয়োজন তা করা, অথবা তার কাছাকাছি সমুদ্রে বিশেষ অধিকার দাবি করা, এই দুই বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে, বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে যখন আন্তর্জাতিক আইনের যুক্তি দিয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে এমন বিদেশি কার্যকলাপের বিষয়টি পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। এটি একটি জটিল সমস্যা যার সহজ উত্তর নেই, তবে ভারতকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে সময় হল চাবিকাঠি।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
A former naval officer Abhijit Singh Visiting Fellow at ORF. A maritime professional with specialist and command experience in front-line Indian naval ships he has been ...
Read More +