Author : Dev Jyoti

Published on Apr 18, 2024 Updated 0 Hours ago

মায়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া মায়ানমারের শান স্টেটে সংঘাতের তীব্রতা নিয়ে চিনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকেই প্রতিফলিত করে।

চিনের মায়ানমার সংক্রান্ত দ্বিধা: অপারেশন ১০২৭-এর দ্বৈত প্রভাব

২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), আরাকান আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সমন্বয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স (টিবিএ) ‘অপারেশন ১০২৭’ চালু করে। পূর্ব মায়ানমারের শান স্টেটের উত্তরে জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ত্রয়ীটি নিজেদের কাজ চালাচ্ছে। দুই মাসব্যাপী অভিযানের ফলে মায়ানমারের বৃহত্তম বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক অংশীদার গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সীমান্তবর্তী প্রদেশে ব্যাপক আঞ্চলিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর হুন্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর চিনশওয়েহাও-সহ শান স্টেটের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মায়ানমার সেনাবাহিনীর পরাজয় স্বীকার করে নেন।

 

দুই মাসব্যাপী অভিযানের ফলে মায়ানমারের বৃহত্তম বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক অংশীদার গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সীমান্তবর্তী প্রদেশে ব্যাপক আঞ্চলিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কট সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মায়ানমারে চিনের বাণিজ্যিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার প্রতিক্রিয়ায় ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর চিনা সামরিক বাহিনী মায়ানমার সীমান্তে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার কথা ঘোষণা করে। এই মহড়াটি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং সাদার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের দ্রুত চালচলন, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং ফায়ার স্ট্রাইক ক্ষমতার মতো বেশ কিছু বিষয় পরীক্ষা করা হয়। সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া মায়ানমারের শান স্টেটের সংঘাতের তীব্রতা নিয়ে চিনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে। তবে এই উদ্বেগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে বুঝতে গেলে চিনের উপর অপারেশন ১০২৭-এর দ্বৈত প্রভাব সম্পর্কেও অবগত হওয়া জরুরি।

 

অপারেশন ১০২৭-এর দ্বৈত প্রভাব

অপারেশন ১০২৭ শুরু করার পর থেকে ট্রিপল অ্যালায়েন্স বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী শহর দখল করেছে, যা মায়ানমার চিন উভয়ের বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক স্বার্থকে উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শান স্টেটটি চিন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর (সিএমইসি) নামে পরিচিত চিনের ভূ-অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলক প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বৃহত্তর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ। প্রকল্পটি রাখাইন স্টেটের কিউকপিউ সমুদ্র বন্দর শহর ইউনানকে সংযুক্তকারী তেল গ্যাস পাইপলাইন, সড়ক রেল সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়ে গঠিত। ফলে এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য হুন্তাসঙ্গে চিনের সহযোগিতার সূচনা হয়। কিন্তু জাতিগত সংখ্যালঘুরা নিজেদের ভূমি অধিকার লঙ্ঘনের কারণে অসন্তুষ্ট হয়। ২০২১ সালে হুন্তা ফিরে আসার পর থেকে চিন মায়ানমারে ১১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির সম্মুখীন

বিদ্রোহী জোট সীমান্ত শহরগুলি দখল করার পর থেকে রাখাইনের কিউকফির গভীর সমুদ্র বন্দরে শুরু হওয়া ৭৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল পাইপলাইন শৃঙ্খলের উপর - যা রাশিয়ার তেল চিনের ইউনান অবধি পৌঁছে দিত – বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালানো হয়েছে। অপারেশন ১০২৭-এর সাফল্যের ফলে চিন-মায়ানমার দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ সহজতর করে এমন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের অধিকার হারিয়েছে চিন। বিদ্রোহীদের দ্বারা চিনশওয়েহাও দখল করার পর ইউনান সামরিক মহড়া ঘোষণার উদ্দেশ্য শুধু মাত্র সীমান্তে ক্রমবর্ধমান বিদ্রোহ প্রতিরোধ করাই নয়, বরং তার নিজস্ব প্রস্তুতি পরীক্ষা করা এবং ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া একটি বৃহৎ আকারের মানবিক সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি রোধ করা, যখন মায়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তে বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে।

 

অপারেশন ১০২৭-এর সাফল্যের ফলে চিন-মায়ানমার দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ সহজতর করে এমন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের অধিকার হারিয়েছে চিন

 

২০১৪ সালের অপারেশনের আওতায় মায়ানমারের বিমান বাহিনী (এমএএফ) কর্তৃক সীমান্তের চিনা অংশে কথিত বোমা হামলাও অন্তর্ভুক্ত, যা নির্ধারক প্রতিক্রিয়া’ সংক্রান্ত সতর্কতা-সহ চিনেতরফে কঠোর প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। বিদ্রোহীদের অভিযানের ফলে মায়ানমারের কোকাং অঞ্চলে বসবাসকারী কয়েক হাজার জাতিগত চিনাকে সমূলে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে অনুরূপ পরিস্থিতির উত্থান এড়াতে ইউনান মহড়া পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সাদার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের (এসটিসি) প্রস্তুতি পরীক্ষা করে এবং কিছু পরিমাণে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে এই অঞ্চলে চিনা স্বার্থের আরও ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত রাখে। যাই হোক, কথা বেশ স্পষ্ট যে, মহড়া শুরু হওয়ার তিন দিন পরে প্রতিরোধ ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি। কারণ টিবিএ কিইন সান কিয়াউত সীমান্ত গেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, যেটি কিনা আবার মায়ানমারের জন্য বৈদ্যুতিন, যন্ত্রপাতি, কৃষি সরঞ্জাম এবং ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য একটি প্রধান বাণিজ্যিক বিন্দু। এটি চিনে তার কৃষি পণ্য রফতানি করতে মায়ানমার দ্বারা ব্যবহৃত ১০৫ মাইল দীর্ঘ বৃহৎ বাণিজ্য অঞ্চলেরও অংশও বটে। কিইন সান কিয়াউত সীমান্ত গেট দখলের পর বিদ্রোহীরা চিন থেকে পণ্য নিয়ে আসা ২৫৮টি যানবাহনের কনভয়ের মধ্যে ১২০টি ট্রাক জ্বালিয়ে দেয়।

উপরের উদাহরণগুলি এমন একটি চিত্র তৈরি করতে পারে যে, অপারেশন ১০২৭ মায়ানমারে চিনা স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারকতবে এর আর কটি প্রেক্ষিতও রয়েছে। সীমান্তে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিপর চিন উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে বলে জানা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিদ্যমান সঙ্কটের প্রাথমিক পর্যায়ে চিন সেই প্রভাব বজায় রাখতে পারেনিকারণ চিহুন্তার বর্ডার গার্ড ফোর্সেস (বিজিএফ) এবং সীমান্তে কাজ করা অবৈধ টেলিকম প্রতারক জুয়া সংস্থাগুলিকে দমন করতে তার অক্ষমতা নিয়ে হতাশ ছিল। এই জুয়া সংস্থাগুলি হাজার হাজার চিনা নাগরিককে প্রতারণা করছে।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে চিহুন্তা নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট সঙ্কেত পাঠিয়েছিল যে, বিজিএফ মায়ানমারে জোরপূর্বক শ্রমিক কেলেঙ্কারির সিন্ডিকেটদের কৌশলগত সমর্থন করছে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত অবৈধ কার্যকলাপের দিকে তেমন নজর দিচ্ছে না… তা চিনের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়চিনের সতর্কবার্তায় কর্ণপাত না করে বিজিএফ কোকাং অঞ্চলের প্রতারকদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

 

চিহুন্তা নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট সঙ্কেত পাঠিয়েছিল যে, বিজিএফ মায়ানমারে জোরপূর্বক শ্রমিক কেলেঙ্কারির সিন্ডিকেটদের কৌশলগত সমর্থন করছে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত অবৈধ কার্যকলাপের দিকে তেমন নজর দিচ্ছে না… তা চিনের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়

 

হুন্তার অবস্থানে হতাশ হয়ে চিমায়ানমারের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ওয়া এবং মং লা উত্তর শানে একতরফা ভাবে কাজ শুরু করে। চিনেআগ্রাসী শক্তির কারণে ওয়া অঞ্চল থেকে স্ক্যামিং কার্যকলাপে জড়িত ১২০৭ ব্যক্তিকে চিনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওয়া অঞ্চলে কর্মকর্তারা ৪০টিরও বেশি জালিয়াতি সংক্রান্ত কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। বেজিং হুন্তার উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুধু মাত্র তার সামরিক শক্তিই ব্যবহার করেনি, বরং তার কূটনৈতিক শক্তির সম্পদকেও কাজে লাগিয়েছে। চিনা কর্মকর্তারা হুন্তার মানহানি করার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নো মোর বিটস এবং লস্ট ইন দ্য স্টারস’-এর মতো চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এমন চিত্র নির্মাণে উত্সাহিত করেছে, যা সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য হুমকি হিসাবে মায়ানমারের স্ক্যামার গ্যাংকে প্রদর্শন করে।

অধিকন্তু, অপারেশন ১০২৭-এর শুরুতে টিবিএ তাদের আক্রমণকে এই বলেই ন্যায্যতা দিয়েছিল যে, তাদের অভিযানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল সীমান্ত অঞ্চলে বিজিএফ সমর্থিত স্ক্যামারদের বিতাড়িত করা, যেটিকে তারা মিন অং লাইং-এর ড্রাগ আর্মি বলে অভিহিত করেছে। এই ঘটনাগুলি হুন্তা অনুগতদের মধ্যে এই ধারণারই জন্ম দেয় যে, চিন উত্তরে বিদ্রোহকে স্পষ্ট ভাবে সমর্থন জুগিয়েছে, যার ফলে ইয়াঙ্গন এবং নেপিডোতে ব্যাপক চিন বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

 

নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় তৎপর চি

অপারেশন ১০২৭-এর প্রাথমিক পর্যায়ে বিজিএফ এবং লাইং-এর অনুগতরা বিজিএফ সদস্যদের দ্বারা সমর্থিত স্ক্যামার গ্যাংগুলিকে সরিয়ে দিয়ে চিনের স্বার্থ পূরণ করলেও নভেম্বরের শেষার্ধে সংঘাতের তীব্রতা এই অঞ্চলে চিনের লাভজনক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে উল্লেখযোগ্য ভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। সর্বোপরি বিদ্রোহের চক্র এবং বিদ্রোহ-বিরোধী অভিযানের ফলে একটি ব্যাপক মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এবং উদ্বাস্তুরা পালিয়ে গিয়ে চিন-মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে চিবিদ্যমান সঙ্কট সমাধানে যুদ্ধরত পক্ষগুলির মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করে ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বেজিংয়ে মায়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী থান সোয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, মায়ানমার সরকার দুই দেশের মধ্যকার সম্পৃক্ততাকে উন্নীত করতে এবং বিদ্যমান সঙ্কট সমাধানে অবিচল ভাবে কাজ করবে। এই বৈঠকের পরে চিহুন্তা এবং যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা চালায় এবং একটি দ্রুত সমাধানের আশা প্রকাশ করেছে।

 বিদ্রোহের চক্র এবং বিদ্রোহ-বিরোধী অভিযানের ফলে একটি ব্যাপক মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এবং উদ্বাস্তুরা পালিয়ে গিয়ে চিন-মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

যাই হোক, চিনের তরফে আশা প্রকাশের পরে আবার টিবিএ তাদের নিজস্ব বিবৃতি প্রদান করে। সেখানে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অপারেশন ১০২৭-এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল হুন্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং তারা নিজেদের লক্ষ্যের সঙ্গে কোনও মতেই আপস করবে না। তাদের বিবৃতিতে শান্তি আলোচনার কোন উল্লেখ ছিল না। তাই হুন্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পর চিনের দ্বৈত প্রভাব আসলেই সঙ্কট সমাধানে কাজ করবে কি না বা সঙ্কট নির্মূলে অবিচল ভাবে কাজ না করে চিন আসলে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

 


দেব জ্যোতি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.