Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 04, 2022 Updated 1 Days ago

ইমরান খানের সাম্প্রতিক মস্কো সফরের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হলেও তাতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

রাশিয়া-পাকিস্তান বিকাশমান বন্ধুত্ব: ভারতের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

Source Image: Getty

রাশিয়া-পাকিস্তান বিকাশমান বন্ধুত্ব: ভারতের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন ও আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মস্কোতে তাঁর দুই দিনের সরকারি সফর অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার মূল বিন্দুগুলি ছিল অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দীর্ঘ–বিলম্বিত উত্তর-দক্ষিণ গ্যাস পাইপলাইন, যা রুশ সংস্থাগুলির সহযোগিতায় নির্মিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী খান দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে রাশিয়া সফরে যাওয়া প্রথম পাকিস্তানি নেতা। ডোনেটস্ক ও লুহানস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বীকৃতি দেওয়ার পরে মস্কোতে যাওয়া প্রথম রাষ্ট্রপ্রধানও তিনি। দেশে ফেরার পর ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অনাস্থা প্রস্তাবের কারণে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁর ‘‌অসময়োচিত’‌ সফর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। পাকিস্তানের মূল অর্থনৈতিক স্বার্থ এখনও আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)–এর মতো পশ্চিমী প্রতিষ্ঠানের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য উন্মুখ ইসলামাবাদকে এই বৈঠকটির কারণে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়তে হতে পারে।

‘‌খারাপ কূটনীতি’ হিসেবে চিহ্নিত এই সফরের সময় নিয়ে পাকিস্তানে অনেকেই সতর্ক করেছিলেন। রাশিয়া গত এক বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে তার সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছিল, এবং সম্প্রতি আক্রমণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়া প্রচুর রিপোর্ট এসেছিল। তবুও ক্রমবর্ধমান আমেরিকা-বিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সম্ভবত তার বিদেশ নীতিকে বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যদি পাকিস্তানের খবর বিশ্বাস করা হয়, তা হলে বলতে হবে রুশিরা খানকে আমন্ত্রণ জানায়নি, বরং আমন্ত্রণ চেয়ে নেওয়া হয়েছিল।

পাকিস্তানের মূল অর্থনৈতিক স্বার্থ এখনও আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)–এর মতো পশ্চিমী প্রতিষ্ঠানের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য উন্মুখ ইসলামাবাদকে এই বৈঠকটির কারণে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়তে হতে পারে।

রুশ সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী খান বলেছেন তাঁর সফর মূলত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির প্রয়াসী, এবং পাকিস্তান কোনও ব্লকের অংশ হতে চায় না,‌ বরং জনগণকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনতে সমস্ত দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায়। পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক দিগন্ত প্রসারিত করার লক্ষ্যে তাঁর এই সফরকে ‘‌কাজের-সফর’ হিসেবে তুলে ধরার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘‌‌এটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক কিছু নয়। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা সত্যিই তা শক্তিশালী করতে চাই।’‌’‌ তিনি আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপরেও জোর দিয়েছিলেন।

রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে ‘‌শক্তিশালী’‌ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা না–গেলেও তা শীতল-যুদ্ধের যুগ থেকে বিকশিত হয়েছে, যখন পাকিস্তানের মিত্র ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একটি উন্নত সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে দুই দেশ ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়ারও আয়োজন করছে। উপরন্তু, আফগানিস্তান থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় উভয় দেশের অভিন্ন নিরাপত্তা উদ্বেগও রয়েছে। এখন সাবেক শীতল-যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাদের অংশীদারি প্রসারিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চায় বলে মনে হচ্ছে, কারণ পাকিস্তানের প্রয়োজন নিজের শক্তি ও অর্থনৈতিক সংযুক্তি বাড়ানো। মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে গত দশকে একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা গিয়েছে (চিত্র ১), এবং তারা শক্তি ও পণ্য পরিবহণ, পরামর্শ, এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করছে।

চিত্র ১ – পাকিস্তান ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিক্স

২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের গ্যাস পাইপলাইনের প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে বলা যায়, এক্ষেত্রে ২০১৪-র পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তখন ক্রিমিয়া দখল করার জন্য রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল, এবং তার ফলে প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। মস্কো তার সামরিক অভিযানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রচণ্ড শাস্তির মুখে পড়েছে, এবং খানকে সম্ভবত এবারও আগের জায়গাতেই ফিরে যেতে হবে। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী খানের প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কারণ তা পুতিনের পদক্ষেপ সমর্থন করার ইঙ্গিতবাহী।

আফগানিস্তান থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় উভয় দেশের অভিন্ন নিরাপত্তা উদ্বেগও রয়েছে।

ইন্ডিয়া ফ্যাক্টর

ভারতের প্রধান আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ অনিবার্য ভাবে দেখা হয় ভারতের উপর তার কী প্রভাব পড়তে পারে সেই পরিপ্রেক্ষিতে। ইমরান খানের রাশিয়া সফরও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। পাক প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এমন এক সময়ে সংঘটিত হল যখন ভারত–রাশিয়া সম্পর্কের শৈত্য নিয়ে জল্পনা চলছে। এর কারণ পরিবর্তনশীল বিশ্ব–গতিশীলতা একদিকে যেমন নিজের প্রয়োজনেই ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রয়াসী করেছে, তেমনই অন্যদিকে রাশিয়া সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেছে ভারতের সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হিসেবে চিহ্নিত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চিনের সঙ্গে, কারণ ওই দুই দেশেরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতার ক্ষেত্র ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে।

উপমহাদেশে দীর্ঘতম সময়ের জন্য রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অংশীদার ছিল ভারত, কিন্তু উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর উপর এসে পড়ল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর, যার লক্ষ্য ছিল উভয় দেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো। এই বিকাশশীল গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা অনুমান করা স্বাভাবিক যে বিষয়টি ভারতের অস্বস্তির কারণ হবে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খুব শীঘ্রই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে ভাবাও খুব সরলীকরণ হয়ে যাবে।

যাই হোক, এটা বার বার স্পষ্ট করা হয়েছে যে ভারত-রুশ সম্পর্কের গতিশীলতার ভিত্তি বাস্তববাদের আদর্শ। অন্যান্য শক্তির সঙ্গে তাদের সমীকরণ যাই হোক না কেন, ভারত এবং রাশিয়া উভয়ই নিজেদের সম্পর্ককে তার থেকে বিযুক্ত করে স্বাধীন ভাবে দেখে। সুতরাং রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্ক কী অবস্থায় আছে, তার ভিত্তিতে এই মুহূর্তে ভারত বিপন্ন বা উদ্বিগ্ন বোধ করবে, এমন সম্ভাবনা কম।

এই বিকাশশীল গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা অনুমান করা স্বাভাবিক যে বিষয়টি ভারতের অস্বস্তির কারণ হবে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খুব শীঘ্রই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে ভাবাও খুব সরলীকরণ হয়ে যাবে।

তা ছাড়া মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের অভূতপূর্ব উথালপাতালের সময়ে ভারত যে ভাবে একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাগুলি অতিক্রম করার অত্যন্ত কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাশিয়ার অসম্মতি সত্ত্বেও ইন্দো-প্যাসিফিকের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ভারত কোয়াড-এর মধ্যে ও বাইরে মার্কিন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছে। একই সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তার কাছে কতটা দামি তা ভারত বোঝাতে পেরেছে বিভিন্ন কূটনৈতিক যোগাযোগ ও ২+২ মিনিস্টারিয়াল মেকানিজম তৈরি করে (‌যা তার আগে ভারত করেছিল শুধু তার কোয়াড অংশীদারদের সঙ্গে)‌ এবং তার মাধ্যমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়ঙ্কর হুমকি সত্ত্বেও আরও অস্ত্র সরবরাহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। নয়াদিল্লি ইউক্রেনের সংকটেও একটি কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটদানে বিরত থেকে এবং কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে। ভারতের পক্ষে যেটা কৃতিত্বের তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে যে ইউক্রেন-রাশিয়া বিরোধে ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তার নিজস্ব যোগ্যতার উপর দাঁড়িয়ে আছে।

ভারত কাউকে তার বিদেশ নীতির গতিপথ নির্দেশ করতে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়ে তার দুই শীর্ষস্থানীয় কৌশলগত অংশীদারের বিরাগভাজন হওয়ার বিশাল ঝুঁকি নিয়েছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। অতএব রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য পাকিস্তানের জোরদার প্রয়াস ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের পক্ষে অনুকূল না–হলেও, এখন তা ততটা মাথাব্যথার কারণ নয় যতটা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার সঙ্গে তার সমীকরণের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা। উপসংহারে বলা যায়, রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভারত-রুশ সমীকরণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ভেবে বিপদের ঘণ্টা বাজানোর সময় এখনও আসেনি, কারণ এই সমীকরণটি ইতিমধ্যেই আরও জটিল ভূ-রাজনৈতিক ধাঁধার সম্মুখীন হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Rhea Sinha

Rhea Sinha

Rhea Sinha was a Research Assistant with ORFs Strategic Studies Programme. Her research interests include international governance and security with a focus on Indian foreign ...

Read More +
Saaransh Mishra

Saaransh Mishra

Saaransh Mishra was a Research Assistant with the ORFs Strategic Studies Programme. His research focuses on Russia and Eurasia.

Read More +