-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট জলবায়ু সক্রিয়তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, এবং এক স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করতে ব্যর্থ।
কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫ একটি দূরদর্শী রাজস্ব ব্লুপ্রিন্ট হয়ে উঠলেও জলবায়ু সক্রিয়তার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি প্রতীকী স্বীকৃতি প্রদান করেছে। যদিও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের (এমওইএফসিসি) বাজেট বরাদ্দ ২.৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু শিল্প ডিকার্বনাইজেশন, জলবায়ু অভিযোজন ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য তহবিল অপ্রতুল রয়ে গিয়েছে। সৌর শক্তি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনে বর্ধিত ব্যয় অবশ্যই পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে একটি জোরালো প্রয়াসের ইঙ্গিত দেয়, তবে বাজেট ভারতের জলবায়ু অ্যাজেন্ডায় সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, এবং তার লক্ষ্য ২০৭০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য নির্গমনে পৌঁছনো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা ৫০% হ্রাস করা। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য প্রয়াসের পাশাপাশি, বিকশিত ভারত-এর জন্য কাজ করার সময় স্থিতিস্থাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলগুলি ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। যদি জলবায়ু ঝুঁকি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু-প্ররোচিত ব্যাঘাতের কারণে ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে তার জিডিপির ২৪.৭% হারানোর সম্ভাবনার সম্মুখীন হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পর বিশ্ব ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে বৈশ্বিক জলবায়ু নেতা হিসাবে দেখছে। যাই হোক, জলবায়ু সক্রিয়তার বিষয়ে ভারতের বর্তমান আর্থিক অবস্থান প্রত্যাশার তুলনায় কম। এক্ষেত্রে নীতিগত হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, যা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও কাজকর্মের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করতে পারে।
ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, এবং তার লক্ষ্য ২০৭০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য নির্গমনে পৌঁছনো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা ৫০% হ্রাস করা।
গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু ক্ষেত্রগুলির জন্য ন্যূনতম বাজেট সহায়তাসহ ভারত কীভাবে তার জলবায়ু প্রচেষ্টাকে অর্থপূর্ণভাবে এগিয়ে নিতে পারে? সামনের দিকে তাকিয়ে, এর জলবায়ু প্রতিশ্রুতি কার্যকরভাবে পূরণ করতে কোন কোন কাঠামোগত ও কৌশলগত ধাঁচা বাস্তবায়িত করতে হবে?
প্রথমত, ভারতের নীতিনির্ধারণে একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তন প্রয়োজন, যাতে বৃদ্ধি কীভাবে পরিমাপ করা হবে তা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা যায়। ভারতের সামনে মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল জলবায়ু নীতি এবং অর্থনৈতিক কৌশলগুলির মধ্যে একীকরণের অভাব। বাজেট পরিকাঠামো সম্প্রসারণ ও শিল্প বিনিয়োগের দ্বারা চালিত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশগত স্থায়িত্বের একটি চলমান সংঘাতকে তুলে ধরেছে। জলবায়ু সক্রিয়তার বিষয়ে সরকারের ঘোষণাগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের থেকে পৃথক থাকে, যা উভয়ের মধ্যে একটি মিথ্যা দ্বিধাবিভক্তিকে স্থায়ী করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি পরিবর্তন প্রয়োজন: জলবায়ু সক্রিয়তাকে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা হিসাবে না-দেখে বরং একটি বৃদ্ধি গুণক হিসাবে দেখা উচিত, যা স্থিতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতির চালক হতে পারে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রাথমিক সূচক হিসাবে ভারতকে অবশ্যই জিডিপির উপর প্রচলিত নির্ভরতার বাইরে যেতে হবে। কার্বনের তীব্রতা, সম্পদের দক্ষতা ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার মতো স্থায়িত্বের পরামিতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে তৈরি একটি আরও বিস্তৃততর কাঠামো দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের একটি স্পষ্ট চিত্র প্রদান করবে। পরিবেশগত ও সামাজিক অবক্ষয়ের মূল্যে যাতে বৃদ্ধি না আসে, তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতকে অবশ্যই তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় স্থিতিশীলতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামো উন্নয়নে বাজেটের মনোযোগ এই বিচ্ছিন্ন পদ্ধতিকে আরও তুলে ধরে। মূলধন ব্যয়ের জন্য ১১.৫ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ সহ সরকার ভারতের পরিকাঠামো আধুনিকীকরণে তার দায়বদ্ধতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। যাই হোক, এই ব্যয়ের একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক নীলনকশা নেই। আজ শুরু হওয়া পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি আগামী কয়েক দশক ধরে ভারতের উন্নয়নের গতিপথকে রূপ দেবে। এর অনেকগুলি ২০৫০-এর পরেও স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে, অর্থাৎ এমন একটি সময়ে যখন জলবায়ু ঝুঁকিগুলির তীব্রতর হওয়া প্রত্যাশিত। পরিকাঠামো পরিকল্পনার সঙ্গে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা একীভূত না হওয়ার ফলে এই প্রকল্পগুলি দুর্বলতাকে প্রশমিত করার পরিবর্তে আরও গভীর করে তুলতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে ভারতের পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ অবশ্যই দায়ী। বড় আকারের প্রকল্পগুলি প্রায়শই বাস্তুচ্যুতি, জমির ক্ষতি, ও জীবিকার চ্যালেঞ্জের দিকে চালিত করে, এবং বিশেষ করে প্রান্তিক জনসম্প্রদায়গুলিকে প্রভাবিত করে। তবুও, বাজেট এই প্রভাবগুলি প্রশমিত করার কৌশলগুলির রূপরেখা দেয় না। সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনায় জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়নের অনুপস্থিতি একটি উজ্জ্বল বিচ্যুতি হিসাবে থেকে গিয়েছে। যেহেতু ভারত তার ভবিষ্যৎ শহর, মহাসড়ক ও শক্তি গ্রিড তৈরি করছে, তাই এই প্রকল্পগুলিতে স্থিতিশীলতাকে মূলধারায় আনা জরুরি। নীতিগত ধাঁচাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে পরিকাঠামো শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়, পরিবেশগতভাবেও সুস্থ, এবং সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয়ত, বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক হল অভিযোজনকে অবহেলা করে প্রশমনের উপর এর অপ্রতিরোধ্য মনোযোগ। সৌর খাতে বিনিয়োগ ও বৈদ্যুতিক যান ভারতের কম-কার্বন স্থানান্তর লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সারিবদ্ধ হলেও, অভিযোজন ব্যবস্থাগুলি ন্যূনতম মনোযোগ পেয়েছে৷ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য অর্থায়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। হ্রাস পেয়েছে উপকূলীয় স্থিতিস্থাপকতার জন্য বরাদ্দ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভারতের দুর্বলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। অভিযোজন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য তৈরি করা ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন ফান্ড ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (এনএএফসিসি)-এ অর্থাযন কম হওয়ার ফলে দুর্বল জনসম্প্রদায়গুলিকে রক্ষা করার ক্ষমতা সীমিত থেকে গিয়েছে।
নীতিগত ধাঁচাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে পরিকাঠামো শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়, পরিবেশগতভাবেও সুস্থ, এবং সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্ত।
সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি হল ভারত। তার কৃষি, জল সুরক্ষা এবং শহুরে স্থিতিস্থাপকতা এখন গুরুতর বিপদের সম্মুখীন। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির কারণে ইতিমধ্যেই দেশটি ফসলের ফলন হ্রাস ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন, আর সেইসঙ্গে জলের ঘাটতি বেড়ে চলেছে। এই জলবায়ু প্রভাবের ক্ষতি আনুপাতিকভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীকে অনেক বেশি বহন করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র কৃষক, অভিবাসী শ্রমিক ও পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরা। যা প্রশমন ও অভিযোজনে সমান জোর দেয় তেমন একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি জীবিকা রক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।
চতুর্থত, বর্তমান জলবায়ু আর্থিক কাঠামোর একটি বড় দুর্বলতা হল অস্থির বেসরকারি বিনিয়োগের উপর এর অতিরিক্ত নির্ভরতা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট তেমন কিছু করেনি। জলবায়ু অর্থায়নকে আয়তনগতভাবে গতিশীল করতে ভারতকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাস্তবায়িত করতে হবে, যা জলবায়ু কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলিতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পুঁজিকে আকৃষ্ট করবে। কঠোর তথ্যপ্রকাশের নিয়ম ও সেইসঙ্গে একটি টেকসই আর্থিক শ্রেণিবদ্ধকরণ বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা প্রদান করবে, এবং এও নিশ্চিত করবে যে বাস্তব পরিবেশগত সুবিধাযুক্ত প্রকল্পগুলির দিকে মূলধন প্রবাহিত হবে।
এছাড়াও, জলবায়ু বিনিয়োগের কার্যকারিতা পরিমাপ করার জন্য একটি স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ক্লাইমেট ফাইন্যান্স ট্র্যাকিং সিস্টেমে অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলির আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ফলাফল সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্যের অভাব রয়েছে। একটি সু-সংজ্ঞায়িত প্রভাব মূল্যায়ন কাঠামো শুধুমাত্র জবাবদিহিতা উন্নত করবে না, বরং জলবায়ু অর্থায়নকে পরিমাপযোগ্য অগ্রগতিতে পরিণত করতে নীতিগুলিকে পরিমার্জন করতেও সাহায্য করবে।
ভারতের জলবায়ু দায়বদ্ধতার জন্য প্রতীকী বাজেট বরাদ্দের চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও স্থিতিশীল বৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত নীতির পরিবর্তন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু কাজকর্মের একীকরণ, এবং প্রশমন, অভিযোজন ও অর্থের মধ্যে একটি সুসমন্বিত ভারসাম্য। এই পদক্ষেপগুলি ব্যতিরেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করা একটি কঠিন লড়াই হয়ে থাকবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম ইটিভি ভারত -এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aparna Roy is a Fellow and Lead Climate Change and Energy at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED). Aparna's primary research focus is on ...
Read More +