-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ট্রাম্পের নীতিগুলি অভ্যন্তরীণ হলেও তা বিশ্বের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন কাউকে কাউকে অবাক করলেও ২০ জানুয়ারি তাঁর ক্ষমতায় আসার পরবর্তী সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রায় কেউই অবাক হননি। ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর নিয়োগকারীদের জন্য সেনেট নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে এবং আমেরিকার ক্ষমতা ও প্রভাব পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে অভিবাসন, শুল্ক, শক্তি নীতি ও অন্যান্য মূল বিষয় সংক্রান্ত প্রচারাভিযানের প্রতিশ্রুতি প্রদানের ব্যাপারে ক্ষমাহীন ভাবে সংকল্পবদ্ধ। ট্রাম্প রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন আইনি অগ্রাধিকার প্রয়োগ করতে এবং বাইডেন-যুগের অনেক নীতির একেবারে উলটোপথে হাঁটতে প্রায় ৫০টি কার্যনির্বাহী আদেশ বা এক্সিকিউটিভ অর্ডার (ইও) স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রধান ভাবনাই হল জাতীয় পুনর্নবীকরণকেন্দ্রিক অর্থাৎ একটি ত্রিমুখী কর্মসূচি, যা বেআইনি অভিবাসন মোকাবিলা, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলা এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে দেশের অবস্থান পুনরুদ্ধার করার জন্য পরিকল্পিত হয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প বেশ কয়েকটি ইও-র কথা বলেন, যার অন্যতম ছিল অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা। আদেশটি এমন মানুষদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ স্থগিত করেছে, যাঁদের ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের দোহাই দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে ‘আক্রমণ’ চালাতে সক্ষম বলে বর্ণনা করেছেন। এ হেন কার্যনির্বাহী আদেশ আসলে দেশের বাইরের ব্যক্তিদের সেই অভিবাসন নীতিগুলির সুবিধা নেওয়া থেকে বঞ্চিত করে, যা তাঁদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দিতে পারত।
ট্রাম্পের আমেরিকাকে ফের মহান করে তোলার বক্তব্য আসলে দ্বিমুখী তরবারিসম। কারণ এই নীতি বাইডেন প্রশাসনকে দুরমুশ করার জন্য একটি কার্যকর প্রচারাভিযানের কৌশল প্রমাণ করেছে এবং বর্তমানে সেই নীতিই আবার নতুন রিপাবলিকান পার্টির রাজনৈতিক বিশ্বাসের পাশাপাশি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি গ্রহণের এক অনন্য উপায়। জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির নাম পরিবর্তন করা এবং মূল বোর্ডের সদস্যপদ পর্যালোচনা করা আসলে জাতীয় ভাবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত করার জন্য ট্রাম্পের কৌশলের অংশবিশেষ। ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত একটি ইও-তে ভৌগোলিক নাম সংক্রান্ত মার্কিন বোর্ডের নিয়োগের বিষয়টি পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে এবং প্রয়াত প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির সম্মানে উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ শিখরের নাম ‘মাউন্ট ম্যাককিনলে’তে পরিবর্তন সংক্রান্ত ওবামার আদেশ বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। সর্বোপরি, ইও মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখতে চায়।
ট্রাম্প মার্কিন জনসাধারণের কাছে যে কথা প্রচার করেছেন এবং যে প্রচার আখেরেই তাঁর বিজয়কে সুনিশ্চিত করেছে তা হল, বাইডেন প্রশাসন একটি ‘উন্মুক্ত সীমান্ত’ নীতির অনুশীলন করেছিল, যার ফলস্বরূপ অবাঞ্ছিত ‘এলিয়েন’রা (ভিনগ্রহী) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ঢুকে দেশটিকে অসুরক্ষিত করে তুলেছে। একটি ইও-র মাধ্যমে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক কার্টেল ও সংস্থার সদস্যদের ফরেন টেররিস্ট অর্গানাইজেশন বা বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংস্থা (এফটিও) এবং স্পেশ্যালি ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট বা বিশেষ ভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী (এসডিজিটি) হিসাবে উল্লেখ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি, ইনক্লুশন বা ডিইআই) ‘কর্মসূচি’কে নস্যাৎ করে দেওয়া হল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম লক্ষ্য। ‘এন্ডিং র্যাডিক্যাল অ্যান্ড ওয়েস্টফুল গভর্নমেন্ট ডিইআই প্রোগ্রামস অ্যান্ড প্রেফারেন্সিং’ শীর্ষক ইও-র প্রধান লক্ষ্যই হল সমস্ত ডিইআই উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট পদগুলি বন্ধ করা এবং এ বিষয়ের উপর জোর দেওয়া যে, নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতার উপরই মনোযোগ দেওয়া উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় মার্কিনদের সংখ্যা ও তাঁদের পরিবার ভারতে ফিরে আসার কারণে ভিসা ও জন্মগত সমস্যা সংক্রান্ত নাগরিকত্ব অন্য যে কোনও দেশের মতোই ভারতের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত হল এইচ১-বি ভিসার বৃহত্তম প্রাপক। ভারতও শুল্ক প্রসঙ্গে ট্রাম্পের কোপের মুখে পড়তে পারে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত বাণিজ্য সংক্রান্ত উদ্বৃত্ত ভোগ করে আসছে।
বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন শুল্ক ক্ষেত্রে ‘ক্যারট অ্যান্ড স্টিক’ (প্রণোদনা অথবা শাস্তি) কৌশল বজায় রেখেছে। বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই ট্রাম্প মার্কিন শুল্ক এড়ানোর একমাত্র উপায় হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ আনার পূর্বশর্তটি রেখেছেন। অন্য দেশের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী যেমন কানাডা এবং মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প শুল্কের হুমকি দিয়েছেন এবং সেই দেশের ক্ষেত্রে অন্য কোনও দ্বিতীয় বিকল্পের পথ রাখেননি। আবার ভৌগোলিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সমন্বিত হওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য ট্রাম্প ধারাবাহিক ভাবে কানাডার উপর চাপের কৌশল ব্যবহার করেছেন। নীতিগত ভাবে ‘৫১তম রাষ্ট্র’ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সমন্বিতকরণের ধারণা বিশ বাঁও জলে রয়েছে বলে মনে হলেও এটি আসলে কানাডার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক অনিচ্ছাকেই দর্শায় এবং অটোয়ার উপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাকে তীব্রতর করে। প্রতিশ্রুত ২৫ শতাংশ শুল্ক যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কানাডিয়ান রফতানির ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়, তা হলে তা কানাডাকে মন্দার দিকে চালিত করতে পারে। মেক্সিকোও আগামী মাসগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র চাপানউতোরের সম্মুখীন হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর উত্তর সীমান্তে জরুরি অবস্থা, শুল্কের উচ্চ সম্ভাবনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূল শর্তে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি… সবই এ বার ব্যাপক আকার ধারণ করছে।
ট্রাম্পের বিদেশনীতির মূল নীতিগুলি গভীর ভাবে অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই নিহিত। যাই হোক, মার্কিন অর্থনীতির আকার ও এর বৈশ্বিক আন্তঃসম্পর্ক এ কথা সুনিশ্চিত করে যে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী বৈশ্বিক পরিণতি রয়েছে। ট্রাম্পের যে নীতির ফলে দেশগুলি প্রভাবিত হচ্ছে এবং তাদের উপর চাপ অব্যাহতই থাকবে, তার মধ্যে অন্যতম হল আমেরিকার অভিবাসন পদ্ধতি। এর প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে এবং নির্বাসন ও মানুষদের ফেরত পাঠানোর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই প্রবল প্রভাব অনুরণিত হয়েছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে অবৈধ অভিবাসীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।
আগামী বছরগুলিতে ওয়াশিংটন ও অন্যান্য দেশের জনগণের মধ্যে কী ভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তার জন্য ভিসা ও নাগরিকত্বের বিষয়ে ট্রাম্পের নীতিগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারতকে একটি প্রত্যাশিত অবস্থানেই রেখেছে। কিন্তু কী ভাবে ট্রাম্পের নীতি এইচ১-বি বা দক্ষ বাহিনী ভিসা এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়টি উদ্ঘাটন করতে পারে… তা জানার জন্য অন্যান্য দেশ মুখিয়ে রয়েছে। ইও-র মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন ট্রাম্প।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় মার্কিনদের সংখ্যা ও তাঁদের পরিবার ভারতে ফিরে আসার কারণে ভিসা ও জন্মগত সমস্যা সংক্রান্ত নাগরিকত্ব অন্য যে কোনও দেশের মতোই ভারতের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত হল এইচ১-বি ভিসার বৃহত্তম প্রাপক। ভারতও শুল্ক প্রসঙ্গে ট্রাম্পের কোপের মুখে পড়তে পারে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত বাণিজ্য সংক্রান্ত উদ্বৃত্ত ভোগ করে আসছে।
বিদেশনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে জ্বালানি নিরাপত্তার উপর উল্লেখযোগ্য জোর দেওয়া হয়েছে। সমুদ্র উপকূলীয় ও উপকূল শক্তির নতুন উত্স প্রকাশের মাধ্যমে ট্রাম্প মার্কিন শক্তিকৌশলকে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করেছেন। একটি ইও-তে পূর্ববর্তী প্রশাসনের বিধিনিষেধমূলক নীতিগুলির উলটোপথে হেঁটে আলাস্কার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ করায়ত্ত করার জন্য বিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বোপরি, ট্রাম্প প্রশাসন বায়ু ও সৌরশক্তির তুলনায় থেকে কার্বনভিত্তিক শক্তির উত্সকে অগ্রাধিকার দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্যারিস চুক্তি এবং ডব্লিউএইচও থেকে ট্রাম্পের প্রত্যাহার, বিদেশি সহায়তামূলক কার্যক্রম বন্ধ করা এবং নির্দিষ্ট কিছু দেশ ও ভৌগোলিক পরিসর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা… সবই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত বাহ্যিক অভিযোজনকে জোরদার করার জন্য নীতি পরিবর্তনকে দর্শায়, যা দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তীব্রতর হবে।
আর একটি কার্যনির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রতিটি নীতিগত সিদ্ধান্তের মূলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ কৌশলকে স্থাপনের জন্য বিদেশমন্ত্রীকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছেন। এই নীতির সম্পূর্ণ প্রভাব কী হবে তা সময় বললেও, নীতিগুলির বিস্তৃত রূপ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতার মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করার বিষয়ে সংস্থাগুলিকে বাধ্য করার উপর প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ মনোভাব শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট বাহ্যিকতাগুলি মোকাবিলায় ব্যর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চিনে ব্যয়-কার্যকর এআই সহকারী ডিপসিক-এর সূচনা হওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বাজারের ধাক্কা দর্শায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, তা হলে সে নিজেও বহিরাগত শক্তির প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারবে না।
ট্রাম্প যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় শক্তি ও প্রভাবের চাপকে প্রসারিত করার লক্ষ্য বজায় রাখেন, তা হলে সেই চাপ অনিবার্য ভাবে চিনের সঙ্গে সমাপতিত হবে। কারণ এ কথা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই যে, প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ট্রাম্পের আগামী চার বছরে নীতি মনোযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +