Author : Manoj Joshi

Published on Mar 09, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত ও চিনিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে গেলেও এলএসি বরাবর উত্তেজনা অব্যাহতই রয়েছে।

ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা: স্থিতিশীল হলেও যথেষ্ট সংবেদনশীল

২০২০ সাল থেকে চিন-ভারত স্থবিরতা কেবল তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপরেই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যকার ৪,০৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১৫ জানুয়ারি উদ্‌যাপিত হওয়া সেনাবাহিনী দিবসের প্রাক্কালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও যথেষ্ট সংবেদনশীল’ থাকার কথা বলেছিলেন।

অন্য দিকে, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি নাগপুরে একটি বৈঠকে বলেছিলেন যে, সীমান্তে যেখানে দুই বাহিনী ‘সম্মুখীন’ হয়েছিল, তার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, কারওই কোনও স্বাভাবিক অবস্থা অথবা ‘বাকি সম্পর্ক সহজ হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা উচিত নয়।’

২০২০ সালে এলএসি-তে চিনা পদক্ষেপের ফলে পূর্ব লাদাখ পরিস্থিতি সমাধানের জন্য ভারত ও চিন কূটনৈতিক সামরিক স্তরে বারবার আলোচনা করছে বলে যে আখ্যানটি সর্বত্র উঠে এসেছে, সত্যি কথা বলতে পরিস্থিতি তার চেয়েও অনেক বেশি জটিল। নানাবিধ প্রতিবেদন দুই পক্ষের তরফে আলোচনা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিলেও আসল সত্যি হল এই যে, এলএসি বরাবর উত্তেজনা অব্যাহতই রয়েছে। কারণ চিনারা বারবার সীমান্ত বরাবর নতুন অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ভারতীয় পক্ষ সক্রিয় ভাবে সে সব মোকাবিলা করে চলেছে

 

২০২০ সালে এলএসি-তে চিনা পদক্ষেপের ফলে পূর্ব লাদাখ পরিস্থিতি সমাধানের জন্য ভারত ও চিন কূটনৈতিক সামরিক স্তরে বারবার আলোচনা করছে বলে যে আখ্যানটি সর্বত্র উঠে এসেছে, সত্যি কথা বললে পরিস্থিতি তার চেয়েও অনেক বেশি জটিল।

 

এলএসি - যা কোন স্বীকৃত মানচিত্রে আঁকা একটি ধারণাগত রেখা নয় -গত ৩০ বছর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কারণে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল ছিলতবে ২০২০ সাল থেকে যখন গলওয়ানের সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ান এবং চার জন পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সেনার মৃত্যু হয়, তখন থেকে শুধু সীমান্ত ব্যবস্থাপনাই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েনি; বরং এ হেন পরিস্থিতিতে কোন ব্যবস্থা আসলে শান্তি বজায় রেখেছে এবং কোন ব্যবস্থা আদৌ আর স্থিতিশীল নয়, সেই ধারণাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সৌভাগ্যবশত একটি মূল চুক্তি – অর্থাৎ এলএসি-র দুকিলোমিটারের মধ্যে বন্দুক ব্যবহার না করা সংক্রান্ত চুক্তি, যা কিনা আজও বহাল আছে - তা না ঘটে থাকলে চিন-ভারত পরিস্থিতি আজ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারত।

সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ইউটিউব থেকে পশ্চিমী এবং কেন্দ্রীয় সেনা কম্যান্ডারদের সম্মান অনুষ্ঠানের ভিডিয়োগুলি মুছে দিয়েছে। কারণ কয়েকজন পুরস্কারপ্রাপক সেখানে বলেছিলেন যে, ২০২০ সাল থেকে এলএসি কতটা লাইভ’ অর্থাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যকার সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে সব সৈন্য বীরত্বের পুরস্কার পেয়েছিলেন, তাঁদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের ভিডিয়োগুলি (যা কিনা এখন মুছে দেওয়া হয়েছে) থেকেই সীমান্ত সক্রিয় থাকার কথা স্পষ্ট। তাওয়াংয়ের উত্তর-পূর্ব দিকে ইয়াংটসেতে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩০০ জন চিনা সৈন্য ভারতীয় অবস্থান দখল করার চেষ্টা চালায়। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সৈন্যই পেরেক লাগানো মুগুর ব্যবহার করেছিলেন, যার ফলে কয়েক ডজন ভারতীয় সেনা এবং পিএলএ সেনা আহত হয়েছিলেন এই পুরো ঘটনাটি যাতে প্রকাশ্যে উঠে না আসে, তার জন্য সবরকম চেষ্টা চালানো হয়েছে।

৪,০৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলএসি-তে কোথায় ঘটনাগুলি ঘটেছে অথবা নিরাপত্তার স্বার্থে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো হয়েছে… তা আদৌ পরিষ্কার নয় কোনও সৈনিক একটি বিশেষ সেক্টরে কোনও পুরস্কার পেতে পারেন, এ কথা ঠিক। তবে এ কথাও মনে রাখা জরুরি যে, তাঁকে সম্মান জানানোর ঘটনা সেই সেনা-কম্যান্ডেই ঘটে, যেখানে তিনি তখন কর্মরত। ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি হিমাচল-লাদাখ সীমান্তে শঙ্কর টেকরিতে বেশ কিছু পিএলএ সৈন্য একটি ভারতীয় পোস্ট দখল করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। সিপাহি রমন সিং এবং অষ্টম শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি (এলআই) সহকর্মীরা চিনাদের প্রত্যুত্তর দেয় এবং চিনা সেনাদের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁদের দূরে হঠতে বাধ্য করে।

 

তাওয়াংয়ের উত্তর-পূর্ব দিকে ইয়াংটসেতে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩০০ জন চিনা সৈন্য ভারতীয় অবস্থান দখল করার চেষ্টা চালায়। এই পুরো ঘটনাটি যাতে প্রকাশ্যে উঠে না আসে, তার জন্য সবরকম চেষ্টা চালানো হয়েছে।

 

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লাদাখে অবস্থিত ৩১ আর্মার্ড ডিভিশনের  লেফটেন্যান্ট কর্নেল যোগেশ কুমার সতী অপারেশন স্নো লেপার্ডের (২০২০ সালের গ্রীষ্মে চিনা পদক্ষেপের প্রত্যুত্তরে ভারতীয় সামরিক প্রতিক্রিয়ার নাম) অংশ হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা নেন। তিনি চিনাদের নজর এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন এবং মিশনটি সফল ভাবে সম্পন্ন করেন। অভিযানের বিস্তারিত তথ্য অবশ্য গোপন রাখা হয়েছে।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ৫০ জনেরও বেশি পিএলএ সেনা আটারি পোস্ট দখল করার চেষ্টা চালায় এবং নায়েব সুবেদার বলদেব সিং তাঁসহকর্মীদের নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিরোধ করায় ১৫ জনেরও বেশি চিনা সৈনিক আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় সুবেদার বলদেব সিং নিজেও আহত হয়েছিলেন।

তৃতীয় অপারেশনের তারিখটি প্রকাশ্যে না এলেও এ কথা স্পষ্ট যে, ১৯ জে অ্যান্ড কে রাইফেলসের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুষমিত সিংকে একটি টহল পরিচালনা করার জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেই টহল আসলে পিএলএ-সঙ্গে এক বৃহৎ সংঘর্ষ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত ও চিনা পক্ষের মধ্যে দুদিনের আলোচনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ল্লিখিত সর্বশেষ পুরস্কারটি পেয়েছেন ১৫তম কুমায়ুনের মেজর সৌরভ কুমার, যিনি চিনা-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একাধিক গোপন মিশন পরিচালনা করেছিলেন এবং শিলিগুড়ি করিডোরের প্রতিরক্ষার জন্য একটি গোপন নজরদারি পোস্ট স্থাপন করেছিলেন। এটি অপারেশন দর্জির অধীনে ছিল। নজরদারির উদ্দেশ্যে চিনা ভূখণ্ডে গোপন পোস্ট স্থাপনের জন্য হাবিলদার প্রদীপ কুমার সিংকে সেনা পদক (বীরত্ব) প্রদান করা হয়েছিল।

ভারত ও চিন এ পর্যন্ত পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি সমাধানের জন্য কর্পোরাল-কম্যান্ডার স্তরে বৈঠক করেছে এবং সর্বশেআলোচনাটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হয়েছিল। ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময়ে সেনাবাহিনী এবং সরকার দাবি করেছে যে, চিনারা তিনটি জায়গায় অবরোধ স্থাপন করেছে — কুগরাং নালা, গোগরা পোস্ট এবং প্যাংগং সোর উত্তর তীরে। তাঁরা অবশ্য ডেপসাং বালজ এবং চার্ডিং নালায় অন্যান্য গুরুতর অবস্থানকে স্বীকার করেনি।

 

ভারত একটি পাল্টা প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং স্পাংগুর সো-তে চিনা অবস্থানগুলিকে উপেক্ষা করে কৈলা রেঞ্জের উপরে নিজের বাহিনী মোতায়েন করে।

 

পিএলএ বিদ্যমান চুক্তি লঙ্ঘন করে এলএসি-র কাছে সৈন্য জড়ো করেছে। ভারত একটি পাল্টা প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং স্পাংগুর সো-তে চিনা অবস্থানগুলিকে উপেক্ষা করে কৈলা রেঞ্জের উপরে নিজের বাহিনী মোতায়েন করে।

সামরিক পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে তিনটি স্থানে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে এবং বিতর্কিত এলাকাটিকে নো প্যাট্রল জোন’ (টহলবিহীন অঞ্চল) হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনও বাকি রয়েছে - ডেপসাং বালজ এবং ডেমচোকের কাছে চার্ডিং নালা।

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে শিথিলতার ফলে চিনের তরফে ২০২০ সালের পদক্ষেপের দরুন ভারত লাদাখে ৬৫টি টহল পয়েন্টের মধ্যে ৩০টির অধিকার হারায়। এখন দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে এগুলির বেশ কয়েকটিকে নো প্যাট্রল জোনে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে। যাই হোক, ২০২০ সালের অবরোধের ফলে উদ্ভূত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল ডেপসাং বালজ, যেখানে কোনও পক্ষই চুক্তিতে আসতে সহমত পোষণ করছে না বলে মনে হচ্ছে।

সেনাপ্রধান যেমনটা উল্লেখ করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি  শুধু সংবেদনশীল নয়, অস্থিতিশীলও বটে। উভয় পক্ষই এলএসি-কে সামরিক সুবিধা পাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে দেখতে আগ্রহী নয়। বন্দুক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে হলেও কেউই জানে না যে, চিন অন্য আস্থা-নির্মাণের ব্যবস্থাগুলিকে কোন আলোকে দেখে। এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, সৈন্যরা সশস্ত্র এবং কোন পরিস্থিতিতে তাঁদের ব্যবহার আরও বেশি হতাহতের ঘটনা এবং গভীর সঙ্কটের জন্ম দেবে, তা কেউই জানে না।

 

বন্দুক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে হলেও কেউই জানে না যে, চিন অন্য আস্থা-নির্মাণের ব্যবস্থাগুলিকে কোন আলোকে দেখে।

 

চিনারা পূর্ব লাদাখে প্রথম প্রসারিত সুবিধা অর্জন করলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী বর্তমানে এ কথা সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর, যাতে এ হেন শিথিলতার ঘটনা আর দ্বিতীয় বার না ঘটে। এবং নানাবিধ গবেষণা ইঙ্গিত করছে, ভারতীয় সেনা চিনাদের বিরুদ্ধে একটি সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে।

এলএসি-র দুপাশে দুই প্রতিপক্ষ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এ সব ঘটছে। ভারতীয় পক্ষ তার সংযোগ ব্যবস্থায় মনোনিবেশ করছে, অন্য দিকে চিনারা স্থায়ী বিলেট, গোলাবারুদ ডাম্প এবং হেলিপ্যাড নির্মাণ করেছে। এ হেন পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা বা শান্তির জন্য মোটেও অনুকূল নয়। সম্পূর্ণ আস্থা-নির্মাণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও তা পুনঃনির্মাণের জন্য আস্থার প্রয়োজন হবে। এবং এমনটা করার জন্য ভারতীয় পক্ষ যে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে, তা হল পূর্ব লাদাখে স্থিতাবস্থায় ফিরে আসতে হবে এবং তার পরে সম্পূর্ণ নতুন কূটনৈতিক আলোচনায় বসতে হবে।


মনোজ জোশী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.