Published on Mar 31, 2023 Updated 0 Hours ago

অপ্রচলিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করার জন্য জোট গঠন করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু বিশেষ করে ভারতের মতো দেশগুলির পক্ষে মূল বিষয় হিসেবে নিরাপত্তায় মনোনিবেশ করার জন্য একটি গোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন।

কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে প্রত্যক্ষ নিরাপত্তার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে

কোয়াড দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা – অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওং, ভারতের এস জয়শঙ্কর, জাপানের হায়াশি ইয়োশিমাসা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন – সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে বৈঠকে মিলিত হন। বিদেশমন্ত্রীরা তাঁদের যৌথ বিবৃতিতে জোর দিয়েছেন যে, ‘একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিককে সমর্থন জোগানোর জন্য তাঁদের অবিচল প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক।’ বিবৃতিতে ‘স্বাধীনতার নীতি, আইনের শাসন, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা, হুমকি বা শক্তির ব্যবহার, নৌচলাচল ও আকাশক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং সমীকরণের পরিবর্তন ঘটাতে চাওয়া কোনও একতরফা প্রচেষ্টার বিরোধিতা… সব কিছুই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং তার সীমার বাইরে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।’

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ অতিমারির বিধ্বংসী প্রভাবের পরে চারটি অংশীদার স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টিকা কূটনীতির মতো অ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপরে কোয়াডের মনোনিবেশকে প্রসারিত করেছিল। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, কোয়াড তার যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নিরাপত্তার মান পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং সাইবার নিরাপত্তা-সহ রাজনৈতিক এবং প্রত্যক্ষ নিরাপত্তা বিষয়গুলির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছে।

চার মন্ত্রী ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশ’-এর গুরুত্বকেও পুনরায় তুলে ধরেছেন, যা ‘সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সমস্ত রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতিগুলি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ-সহ আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে’ রচিত। যৌথ বিবৃতিতে ‘সামুদ্রিক পরিসরে শান্তি ও নিরাপত্তা’র ব্যাপকতার উপর ভিত্তি করে একটি সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের উন্নয়নের কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যা শুধুমাত্র ‘সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন করা সম্ভব, যেমনটা দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগর-সহ সামুদ্রিক নিয়মভিত্তিক আদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সিজ (আনক্লজ) আইনে প্রতিফলিত হয়েছে।’ বিবৃতিটি এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একতরফা পদক্ষেপ খারিজ করার পাশাপাশি উত্তেজনা জিইয়ে রাখা এবং সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের জন্য সামুদ্রিক সেনা এবং উপকূলরক্ষী জাহাজগুলির ‘বিপজ্জনক ব্যবহার’-এর প্রতিবাদ করেছে।

নাম উল্লেখ না করলেও, এগুলি স্পষ্টতই এই অঞ্চলে চিনের আচরণের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য কোয়াডের বিদেশমন্ত্রীরা বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত পদক্ষেপের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন, যা কোয়াড মেরিটাইম সিকিউরিটি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে গৃহীত হবে এবং যা পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডিসি-তে আয়োজিত হবে। বিবৃতিটিতে এ বিষয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস (আইপিএমডিএ) দ্বারা গৃহীত কাজের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

সম্ভবত ভারতীয় উদ্বেগের প্রতিফলনস্বরূপ সমন্বিত সন্ত্রাসদমন কার্যকলাপের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে অংশীদাররা মুম্বই এবং পাঠানকোট সন্ত্রাসবাদী হামলাকে চিহ্নিত করে সেগুলির প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। জাপানি উদ্বেগের প্রতিফলনস্বরূপ বিবৃতিতে বিশেষ করে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের অব্যাহত পরীক্ষা এবং জাপানি নাগরিকদের অপহরণ প্রসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। মায়ানমারের অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের প্রতি সমর্থন ও মায়ানমারে সঙ্কট দূরীকরণে আসিয়ানের বৃহত্তর প্রচেষ্টার দিকে মনোনিবেশ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কাছে আবেদন করার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে।

ইউক্রেন স্পষ্টতই একটি বেদনাদায়ক ক্ষেত্র, যেখানে ভারত রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে এখনও পর্যন্ত তার অংশীদারদের সঙ্গে সহমত হতে চায়নি। কিন্তু অংশীদাররা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকির বিরোধিতা করে এবং ‘ইউক্রেনে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ-সহ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে একটি ব্যাপক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি’র প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তাদের মতবিরোধ এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ রাশিয়ার নাম না করে বিবৃতিতে আরও জোর দেওয়া হয়েছে যে, ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশ অবশ্যই সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, স্বচ্ছতা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানকে সম্মান করবে।’ এটি সম্ভবত আদর্শ না হলেও ভারত অন্তত সার্বিক নীতির দিক থেকে সম্মত হয়েছে।

দিল্লিতে অবস্থিত একটি পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক (সম্পূর্ণ পরিচয়: প্রতিবেদক ওআরএফ-এ কর্মরত) অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সঙ্গে অংশীদারিত্বে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক কর্তৃক আয়োজিত একটি ফ্ল্যাগশিপ বার্ষিক আলাপ-আলোচনা রাইসিনা ডায়লগে কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতি ও মন্ত্রীদের প্রথম যৌথ প্রকাশ্য উপস্থিতি খুঁটিয়ে বিবেচনা করলে চারটি দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান স্বাচ্ছন্দ্য এবং আগ্রহ ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্রমবর্ধমান একাভিমুখিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোয়াডের কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার উপর জোর দিয়ে ভারতীয় মন্ত্রীর আলোচনায় উপসংহার টানা কোয়াডের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকেই প্রতিফলিত করে।

অপ্রচলিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করার জন্য জোট গঠন করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। কিন্তু বিশেষ করে ভারতের মতো দেশগুলির পক্ষে মূল বিষয় হিসেবে নিরাপত্তায় মনোনিবেশ করার জন্য একটি গোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। অন্য তিনটি কোয়াড অংশীদারের ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা চিনকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিকে এগিয়েনিয়ে যাবে।

এই ঐক্যবদ্ধ সংকল্পের বার্তাটি চিনে স্পষ্ট ভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যা প্রত্যাশিতভাবে ‘বিচ্ছিন্ন ব্লক’ সৃষ্টির পরিবর্তে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার উপর জোর দিয়েছে। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ রাইসিনা মঞ্চকে ব্যবহার করে কোয়াডের পাশাপাশি অউকাস এবং বৃহত্তর পশ্চিমী দেশগুলির সমালোচনা করে বলেছেন, পশ্চিমী দেশগুলি একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি চরিতার্থ করার জন্য একজনকে অপরের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে।

কোয়াড মন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়ার নাম স্পষ্টত উল্লেখ না করা হলেও বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিয়মভিত্তিক ক্রম, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং ‘ইউক্রেনে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি’র আবেদন জানানো হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য আসলে দায়ী কে। বিবৃতিটি যে ইউক্রেনকে নিজেদের সংযত করার আহ্বান জানায়নি, তা আবারও প্রমাণ করে যে অংশীদাররা কাকে এই সংঘাত এবং মানুষের দুর্ভোগের জন্য দায়ী বলে মনে করে। এটি ভারতের ঐতিহ্যগত অবস্থান থেকে সামান্য বলে মনে হলেও আদতে এক তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন, যা আগে উভয়পক্ষকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিল।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.