Published on Aug 17, 2024 Updated 0 Hours ago

মোদী সরকার তার তৃতীয় মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বস্ত রয়েছে

প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৪: একটি কঠিন ভারসাম্যমূলক কাজ

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরে প্রথম পূর্ণ বাজেট পেশ করেছেন। মোদী ৩.০ থেকে আশা করা হয়েছিল যে প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ থাকবে। যদিও বাজেট এই ক্ষেত্রে পুরোপুরি হতাশ করেনি, তবে ২০২৪-২৫ সালের প্রতিরক্ষা বাজেটের অধীনে বরাদ্দের বণ্টন এখনও রাজস্ব ব্যয়ের দিকে ঝুঁকে আছে। তাছাড়া, আর্থিক বছর (‌এফওয়াই) ২০২৪-২৫-‌এর অধীনে সামগ্রিক ব্যয় পূর্ববর্তী অর্থবছর ২০২৩-২৪ থেকে মাত্র ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ দেখায় যে এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য মোট বাজেটের মাত্র ১২.৯ শতাংশ, এবং দেশটির মুখোমুখি হুমকির পরিমাণ বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন মেটাতে অপ্রতুল। এটি আসলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিরক্ষা বাজেটের চেয়ে কম, যা ছিল মোট জাতীয় বাজেটের ১৩.১৮ শতাংশ



প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ দেখায় যে এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য মোট বাজেটের মাত্র ১২.৯ শতাংশ, এবং দেশটির মুখোমুখি হুমকির পরিমাণ বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অপ্রতুল।



এই পতনটি, আংশিকভাবে, জোট সরকার চালানোর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-‌এর মতো সরকারের প্রধান মিত্রদের আরও ছাড় দিতে অর্থমন্ত্রীর বাধ্যবাধকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সেইসঙ্গে সামগ্রিক সরকারি ব্যয়ের প্রেক্ষিতে আর্থিক ব্যালান্স শিট অক্ষত রাখার প্রয়াসও আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে কেন মোদী সরকার প্রতিরক্ষা ব্যয়বৃদ্ধিকে খুব সীমিত রেখেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে, সরকার প্রতিরক্ষায় উদ্ভাবনের জন্য ব্যয় বাড়িয়েছে, এবং এসিং ডেভলপমেন্ট অফ ইনোভেটিভ টেকনোলজিস উইথ আইডেক্স (অদিতি) প্রকল্পে
অতিরিক্ত ৪০০ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করেছে


যদি আমরা প্রতিরক্ষা পেনশন বিবেচনা করি, তা বহু বছর ধরে প্রতিরক্ষা বাজেটের অধীনে ব্যয়ের অগ্রাধিকারগুলিকে ব্যাহত করেছে, এবং মূলধন অধিগ্রহণ বা প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) থেকে বরাদ্দ সরিয়ে নিয়েছে। মোদী সরকার এর জন্য
২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১.১৭ লাখ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করেছিল, যা বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১,৪১ লাখ কোটি ভারতীয় রুপি হয়েছে, এবং এটি ব্যয়ের ২০.৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। যাই হোক, এই শতাংশটি আরও বেশি হবে যদি এক্স-‌সার্ভিসমেন কন্ট্রিবিউটরি হেলথ স্কিম (ইসিএইচএস)‌) বিবেচনায় আনা হয়, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬,৯৬৮ কোটি ভারতীয় রুপিতে দাঁড়িয়েছে। এটি পেনশন খরচের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রায় ২৬.৫ শতাংশে পৌঁছয়। একত্রে, বেতন ও ভাতার  ৩০.৬৮ শতাংশ ও পেনশনের ২২.৭২ শতাংশ মিলিতভাবে বর্তমান বাজেটে মোট প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ৫৩.৩৮ শতাংশের জন্য দায়ী, যা প্রতিরক্ষা বাজেটে এবং আরও সাধারণভাবে ভারতে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা  পরিকল্পনায় সৃষ্ট বিকৃতি ব্যাখ্যা করে।


এখন মূলধন ব্যয়ের দিকে আসা যাক, যা হল
১.৭২ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপি:‌ মোটামুটি ২৭.৬৭ শতাংশ এবং মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের এক-‌তৃতীয়াংশেরও কম৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দটিই নতুন অস্ত্রব্যবস্থার, যেমন যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান ইত্যাদির, জন্য ব্যয় করা হবে। সরকার বলেছে যে আধুনিকীকরণের জন্য মূলধন ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ — যা সরকারের দেওয়া খতিয়ান ১,০৫,৫১৮ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাস্তবে ১.২৯ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপি — ব্যয় করা হবে গার্হস্থ্য শিল্প থেকে ক্রয়ের জন্য ৷ এখানে সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং, উৎপাদন ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য দেশীয় শিল্প থেকে সরবরাহ সুরক্ষিত করতে মূলধন বাজেটের বেশিরভাগ বরাদ্দ করে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এটি ২০২০ সালে সরকারের আত্মনির্ভর ভারত (এএনবি) উদ্যোগের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাকি ৪৩,০০০ কোটি ভারতীয় রুপি মূলধন অধিগ্রহণের জন্য আমদানিতে ব্যয় করা হবে।



সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং, উৎপাদন ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য দেশীয় শিল্প থেকে সরবরাহ সুরক্ষিত করতে মূলধন বাজেটের বেশিরভাগ বরাদ্দ করে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।



তবুও, ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের আগে
ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ (ভিসিএএস) এ পি সিং  উল্লেখ করেছিলেন, দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার মূল্যে এএনবি হতে পারে না। গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবস্থার বিকাশ, উৎপাদন ও স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় লিড টাইম যথেষ্ট বেশি। এদিকে ভারতের প্রতিপক্ষেরা দ্রুত সক্ষমতা তৈরি করছে, এবং তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য দেশীয় শিল্প এবং আরও সাধারণভাবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্রকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোত্তমভাবে সরবরাহ করতে হবে। তা সত্ত্বেও, দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে না আমদানিতে মূলধন ব্যয়ের সিংহভাগ যাবে, সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সরকার প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে। এএনবি-‌র উদ্যোগের অধীনে কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে তা শুধু সময়ই বলে দেবে। ভারতের মুখোমুখি হওয়া হুমকির মাত্রার কারণে সময়মতো সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আগাম সতর্কতা ছাড়াই যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সশস্ত্র বাহিনী অপ্রতুল বা নিম্নমানের সরঞ্জাম নিয়ে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

 

রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও পরিচালনা (এমআরও), পেনশন, বেতন ও ভাতার উচ্চ রাজস্ব ব্যয়ের কারণে বিকৃতিগুলির আশু প্রতিকারের সম্ভাবনা নেই। সাম্প্রতিক বাজেট সে কথাই বলছে। এই বিষয়টি এখনও সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষমতার গুরুতর ঘাটতির মুখে ফেলে। অগ্নিপথ প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলি, যদি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়, ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে সঞ্চয় করতে, এবং যদি পুরোপুরি না-‌ও হয় তবু সশস্ত্র পরিষেবাগুলি যে মূলধন অধিগ্রহণ করে তার কিছুটার খরচ জোগাতে, সময় লাগবে। তবে পরিকল্পনাটি চাপের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধীরা এটিকে আক্রমণ করতে থাকায়।


অগ্নিপথ প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলি, যদি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়, ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে সঞ্চয় করতে, এবং যদি পুরোপুরি না-‌ও হয় তবু সশস্ত্র পরিষেবাগুলি যে মূলধন অধিগ্রহণ করে তার কিছুটার খরচ জোগাতে, সময় লাগবে। 



মোদী সরকার তার তৃতীয় মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশের প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে, যা এর সম্পদ বরাদ্দে বড়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বাজেটের মূলধন ব্যয় প্রান্তিকভাবে বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অন্তর্নিহিত ঝুঁকি রয়েছে। সরকারের এই ভারসাম্য রক্ষার কাজটি তার প্রতিরক্ষা নীতির গতিপথকে সংজ্ঞায়িত করতে থাকবে।  




কার্তিক বোমাকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.