Published on Dec 17, 2024 Updated 0 Hours ago

কাজান শীর্ষবৈঠকে ভারতের অংশগ্রহণ এবং ব্রিকস ২০২৪–এর সম্প্রসারণ ও ডি-ডলারাইজেশন অ্যাজেন্ডায় দেশটির অবস্থান কি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রিগার পয়েন্ট?

চিনা কথনে ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বকে ব্রিকসের ডি-ডলারাইজেশন অ্যাজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে

যেহেতু ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ বেড়েছে, এবং উভয় পক্ষ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, তাই কেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই সময়ে 'খালিস্তান ইস্যু' তুলে ধরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটা কি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য?‌ নাকি তৃতীয় কোনও দেশের নির্দেশে অটোয়া নয়াদিল্লিকে লক্ষ্যবস্তু করছে? কানাডার জন্য ফাইভ আইস-এর সোচ্চার সমর্থন, তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের পান্নুন মামলায় র-এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তার 'আনুষ্ঠানিকভাবে নাম নেওয়া ও অভিযুক্ত করা' বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বেজিং ভারত ও ফাইভ আই ব্লকের মধ্যে উত্তপ্ত বিনিময় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই ইস্যুতে চিনা
বিতর্কগুলি এমন কিছু বিবেচনার পরামর্শ দেয় যা সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু চিনা পর্যবেক্ষক রাশিয়ার কাজানে ২২-২৪ অক্টোবর ২০২৪-এর ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনাটিকে দেখেছেন। গত জানুয়ারিতে বড় ধরনের সম্প্রসারণের পর এটিই ছিল প্রথম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। তারপর থেকে গোষ্ঠীটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ন্যাটো সদস্য তুর্কিয়ে-‌সহ ৩০টিরও বেশি দেশ ব্লকে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বেজিং ভারত ও ফাইভ আই ব্লকের মধ্যে উত্তপ্ত বিনিময় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।



চিনা মূল্যায়নে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি সম্ভাব্য
গেম চেঞ্জার হিসাবে দেখা হয়েছিল, কারণ ভাবা হয়েছিল এটি একটি নতুন রাউন্ডের সম্প্রসারণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করবে এবং সুইফটকে বাইপাস করে একটি নতুন বাণিজ্য নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় পৌঁছতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে৷ এই দুটি উন্নয়নই বাস্তবে রূপ নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী আধিপত্যকে একটি বড় ধাক্কা দিতে পারে।

বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতা সমতার ক্ষেত্রে ব্রিকস সংস্থার শক্তি ইতিমধ্যেই জি৭-কে
ছাড়িয়ে গিয়েছে। আরও সম্প্রসারণ বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমের পরিবর্তে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকের সঙ্গে যুক্ত করবে। তাছাড়া, যদি ন্যাটো সদস্য তুর্কিয়ে ভবিষ্যতে গ্রুপিংয়ে যোগদান করে একটি নজির স্থাপন করে, সেক্ষেত্রে চিনা পর্যবেক্ষকরা আশা করছেন আরও ন্যাটো এবং ইইউ সদস্য এগিয়ে আসবে, যা পশ্চিমের বিব্রত অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। ব্রিকস সেটেলমেন্ট সিস্টেম বা রিজার্ভ কারেন্সির কোনও অগ্রগতিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

আশ্চর্যের কিছু নেই, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র পশ্চিম বিশেষভাবে
সতর্ক ছিল। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট মনোনীত ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ডলার এড়িয়ে চলা দেশগুলির উপর ১০০-শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। চিনা রিপোর্ট অনুসারে, কাজান ফোরামে নাশকতা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্য ও গোপন সব উপায়ে চেষ্টা করেছিল। রাশিয়া ৩৮টি দেশকে ব্রিকস ২০২৪ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তবে আমন্ত্রিত দেশগুলি পশ্চিমীদের চাপের সম্মুখীন হয়। ফলস্বরূপ, এই দেশগুলির মধ্যে কিছু, যারা প্রকাশ্যে ব্রিকস-এ যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছিল এবং ছয় মাস আগে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, তারা অংশগ্রহণ থেকে সরে যায় বা নিম্ন-স্তরের প্রতিনিধি পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের ব্রিকস অভিষেক এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে চিনে উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতা সমতার ক্ষেত্রে ব্রিকস সংস্থার শক্তি ইতিমধ্যেই জি৭-কে ছাড়িয়ে গিয়েছে।



এখন, ব্রিকস-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে, ভারত শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। ব্রিকস সম্প্রসারণ এবং ডি-ডলারাইজেশনের মতো বিষয়গুলিতে
ভারতের অবস্থান অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্তের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে, যারা ফোরামের অধীনে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে আগ্রহী হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমী দেশগুলিকে আঘাত করার বিষয়েও উদ্বিগ্ন। কিছু চিনা বক্তব্য অনুসারে, ঠিক সেই সময়ে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার আক্রমণাত্মক আচরণ সম্ভবত ব্রিকস সম্মেলনের আগে ভারতের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করার জন্য পশ্চিমের অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ

এটি স্মরণযোগ্য যে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর কিছুদিন আগে একটি মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্কে ডি-ডলারাইজেশনের বিষয়ে
কথা বলেছিলেন, যেখানে তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন যে ‘‌ডলারের প্রতি ভারতের কোনও বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য নেই’‌। তাঁর বক্তব্য ছিল ‘‌মার্কিন ডলারকে লক্ষ্যবস্তু করা ভারতের অর্থনৈতিক নীতি নয়’‌ ...তবে এর উদ্বেগ রয়েছে... মার্কিন নীতিগুলি প্রায়শই নির্দিষ্ট কিছু দেশের সঙ্গে তার (ভারতের) বাণিজ্যকে জটিল করে তোলে এবং (অতএব) যে বাণিজ্য অংশীদারদের ডলারের অভাব রয়েছে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য দেশটি ‘‌পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায়’‌ খুঁজছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে একটি বহুমুখী বিশ্ব অবশেষে মুদ্রা ও অর্থনৈতিক লেনদেনে প্রতিফলিত হবে।

চিনা পর্যবেক্ষকরা, যাঁরা প্রায়শই ভারতকে তাঁদের পেট্রো-ইউয়ান স্বপ্নের বাধা বলে মনে করেন, জয়শঙ্করের বক্তব্যকে ‘‌সুবিধাবাদী’‌ বলে সমালোচনা করেছিলেন। তাঁরা
যুক্তি দিয়েছিলেন যে, একদিকে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য নতুন দর কষাকষির সুযোগ হিসাবে বিষয়টিকে ব্যবহার করছে — অর্থাৎ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে ভারত ব্রিকস-‌এর মধ্যে ‘‌ডি-ডলারাইজেশন’‌ পদক্ষেপগুলিকে ‘‌ব্যাহত’‌ করবে, তবে তার বিনিময়ে যথেষ্ট সুবিধা দিতে হবে — এবং অন্যদিকে চিন বা অন্য ব্রিকস সদস্যদের দোষারোপ করার পাশাপাশি ভারতই ব্রিকস ডি-ডলারাইজেশন অ্যাজেন্ডা সবচেয়ে বেশি করে তৈরি করছে এবং সদস্য দেশগুলিকে, বিশেষ করে চিনকে, চাপ দিচ্ছে ভারতীয় রুপির অন্তর্ভুক্তি এবং নতুন কোনও ব্রিকস সেটেলমেন্ট সিস্টেম-‌এর অ-বাধ্যতামূলক প্রকৃতি নিশ্চিত করার মতো ভারতের শর্তগুলিকে মেনে নিতে। চিনা পক্ষ সন্দেহ করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছিল, এবং সেই কারণে ব্রিকস সম্মেলনের আগে ভারতের উপর চাপ তৈরি করতে কানাডাকে ব্যবহার করেছিল।

চিনা পর্যবেক্ষকরা, যাঁরা প্রায়শই ভারতকে তাঁদের পেট্রো-ইউয়ান স্বপ্নের বাধা বলে মনে করেন, জয়শঙ্করের বক্তব্যকে ‘‌সুবিধাবাদী’‌ বলে সমালোচনা করেছিলেন।



ভারতের সঙ্গে বিশেষ করে কানাডার এবং সাধারণভাবে ফাইভ আইস ব্লকের মধ্যে টানা উত্তেজনার কারণ কী, তা নিয়ে ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কাজান শীর্ষবৈঠকে ভারতের অংশগ্রহণ এবং ব্রিকস ২০২৪-‌এর সম্প্রসারণ ও ডি-ডলারাইজেশন অ্যাজেন্ডায় ভারতের অবস্থান কি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রিগার পয়েন্ট ছিল? এটি নিঃসন্দেহে এমন একটি প্রশ্ন যা নিয়ে আরও তদন্ত প্রয়োজন।



অন্তরা ঘোষাল সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Antara Ghosal Singh

Antara Ghosal Singh

Antara Ghosal Singh is a Fellow at the Strategic Studies Programme at Observer Research Foundation, New Delhi. Her area of research includes China-India relations, China-India-US ...

Read More +