Published on Nov 29, 2024 Updated 0 Hours ago

জাপানের আকাশসীমায় চিনের সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা যা এই অঞ্চলে আরও সংঘাতমূলক অবস্থানের ইঙ্গিতবাহী

জাপানের আকাশসীমায় চিনের অনুপ্রবেশ

ইন্দো-প্যাসিফিকে একটি নতুন সংঘাতকাল তৈরি হয়েছিল ২০২৪ সালের আগস্টের শেষের দিকে, যখন একটি চিনা ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স কালেকশন মিলিটারি এয়ারক্রাফ্ট পিএলএ ওয়াই-‌৯ডিজেড নাগাসাকি প্রিফেকচারের কাছে জাপানি আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল। জাপানের আশেপাশে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় চিনা বিমানগুলিকে প্রায়শই দেখা গেলেও, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই লঙ্ঘনকে জাপানের নিজস্ব আকাশসীমায় চিনের সামরিক বাহিনীর প্রথম জ্ঞাত অনুপ্রবেশ হিসাবে বর্ণনা করেছে।


গত দুই দশক ধরে জাপান ক্রমবর্ধমানভাবে তার আকাশের কাছাকাছি বিদেশি বিমানের অভিযানের সম্মুখীন হয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, ২০২৩ সালে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী
৬৬৯টি ক্ষেত্রে বিদেশি বিমান আটকানোর জন্য ফাইটার জেটগুলিকে আকাশে তুলেছিল, যার মধ্যে ৪৭৯টি ছিল চিনা বিমান দেখার প্রতিক্রিয়ায়। এই সাম্প্রতিক উদাহরণে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কর্তৃক প্রকাশিত একটি মানচিত্র দেখায় যে চিনা বিমানটি, একটি ওয়াই-৯ নজরদারি বিমান, ড্যানজো দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে আয়তক্ষেত্রাকার সার্কিট প্যাটার্নে উড়তে উড়তে অল্প সময়ের জন্য পশ্চিমে চলে যায় এবং আঞ্চলিক আকাশসীমায় ঢুকে, যা দ্বীপের উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল প্রসারিত, প্রায় দুই মিনিটের জন্য দ্বীপগুলির উপর দিয়ে উড়ে যায়।



জাপান সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে একটি চিনা সামুদ্রিক নজরদারি বিমান সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ বরাবর আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল;‌ এবং ২০১৭ সালে চিন কোস্ট গার্ড জাহাজ থেকে একটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছিল।



চিন ও জাপান ওকিনাওয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে জনবসতিহীন দ্বীপের শৃঙ্খল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে জড়িয়ে রয়েছে। পূর্ব চিন সাগরের এই দ্বীপগুলি, জাপানে সেনকাকু ও চিনে দিয়াওয়ু নামে পরিচিত,
১৮৯৫ সাল থেকে জাপানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবু চিনও মিং ও কিং রাজবংশের ঐতিহাসিক রেকর্ডের ভিত্তিতে দ্বীপগুলিকে দাবি করে। যদিও এবারের ঘটনাটি চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের বিমানের জাপানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার প্রথম ঘটনা ছিল, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে দুটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। জাপান সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে একটি চিনা সামুদ্রিক নজরদারি বিমান সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ বরাবর আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল;‌ এবং ২০১৭ সালে চিন কোস্ট গার্ড জাহাজ থেকে একটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছিল। ২০১২ সালে টোকিও এক বেসরকারি জাপানি মালিকের কাছ থেকে কিছু দ্বীপ কেনার পর উত্তেজনা বেড়ে যায়, যেটিকে বেজিং তার সার্বভৌমত্বের দাবির প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। জাপান সরকারের মতে, এই বছরে এর আগে চিন নিজের দাবি জাহির করতে প্রায়শই চিনা কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য সরকারি জাহাজকে দ্বীপগুলির চারপাশের জলে পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ছিল রেকর্ড ১৫৮ দিনের জন্য দ্বীপগুলির কাছাকাছি চিনা উপস্থিতি।


সামরিক বিশ্লেষকেরা লক্ষ্য করেছেন যে, সেনকাকু দ্বীপগুলির কাছে চিন ও জাপানের সঙ্গে জড়িত যে কোনও ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে একটি বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ ওয়াশিংটন একাধিকবার স্পষ্ট করেছে যে সেনকাকু দ্বীপগুলিকে তারা এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে। এ বারের আকাশপথে অনুপ্রবেশ অনিচ্ছাকৃত ছিল বলে বেজিংয়ের প্রতিবাদ ও অস্বীকার সত্ত্বেও এটি একটি কৌশলগতভাবে অঙ্ক কষা পদক্ষেপ হতে পারে,কারণ চিনা ক্রুরা ঘটনার সময় আর না-‌এগনোর জন্য জাপানি কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল। তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে জাপানের আকাশসীমার বাইরে টহল চালিয়েছিল।

সেপ্টেম্বর মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি পর্যবেক্ষণ করেন যে, জাপানের আশেপাশে চিনের সামরিক তৎপরতা আরও বেড়েছে। হায়াশি বলেছেন, আকাশসীমা লঙ্ঘন ‘‌শুধুমাত্র জাপানের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘনই নয়, এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ’‌। তিনি আরও বলেন যে, সরকার জাপানের কাছাকাছি চিনা সামরিক কার্যকলাপের উপর নজরদারি চালিয়ে যাবে এবং
পরবর্তী ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। অনুপ্রবেশ একটি কৌশলগতভাবে অঙ্ক কষা পদক্ষেপ হতে পারে, যার লক্ষ্য এই অঞ্চলে মার্কিন জোটকে দুর্বল করা এবং জাপানের সামরিক প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা পরীক্ষা করা। এটি সেই সময় আসন্ন নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে টোকিওকে প্রচ্ছন্ন হুমকি বা ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের বর্ধিত কার্যকলাপ হ্রাস করার জন্য একটি সতর্কবার্তাও হতে পারে। অতিরিক্তভাবে, বিমানটিকে কাছাকাছি সাসেবোতে বৃহৎ মার্কিন ও জাপানি নৌ-‌সুবিধাকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি নজরদারি মিশনের জন্য মোতায়েন করা হয়ে থাকতে পারে, যার লক্ষ্য ছিল জাপানের সনাক্তকরণ ক্ষমতার মূল্যায়ন এবং তার ফাইটার জেটের প্রতিক্রিয়ার সময় গণনা করা। এটি দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় জড়িত মার্কিন নৌ ও বিমান ইউনিটের গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করে থাকতে পারে। জাপানের বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাপানের উপ-‌বিদেশমন্ত্রী মাসাতাকা ওকানো ২৬ আগস্ট চিনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন, কর্মকর্তাদের কাছে ‘‌দৃঢ় প্রতিবাদ জানান’‌, এবং এটি আবার যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য চিনের প্রতি আহ্বান জানান। ৩১ আগস্ট চিনা নৌ-‌সমীক্ষা জাহাজগুলি জাপানের জলসীমায় প্রবেশ করার পরে জাপান আরও একটি আনুষ্ঠানিক আপত্তি জারি করে। এটি ছিল এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে চিনা সেনাবাহিনীর দ্বারা তার সীমানায় দ্বিতীয় অনুপ্রবেশ।



প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগামী আর্থিক বছরের জন্য ৮.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন (৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) চেয়েছে, যা এযাবত কালের সবচেয়ে বড় প্রাথমিক বাজেট অনুরোধ এবং ২০২৮-এর মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচ বছরের জন্য মোট ৪৩ ট্রিলিয়ন-ইয়েন প্রতিরক্ষা বিল্ড আপ পরিকল্পনার অংশ।



টোকিও দেশের নজরদারি এবং পুনরুদ্ধার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বিস্তৃত প্রতিরক্ষামূলক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরিতে
২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এই নেটওয়ার্কে উন্নত স্যাটেলাইটগুলির একটি মণ্ডল অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা উন্নত করার জন্য রিয়েল-টাইম ডেটা এবং চিত্র প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগামী আর্থিক বছরের জন্য ৮.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন (৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) চেয়েছে, যা এযাবত কালের সবচেয়ে বড় প্রাথমিক বাজেট অনুরোধ এবং ২০২৮-এর মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচ বছরের জন্য মোট ৪৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন ডিফেন্স বিল্ড আপ পরিকল্পনার অংশ। এই অনুরোধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকবিহীন যানবাহন দিয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার স্ট্যান্ড-অফ ক্ষমতার জন্য তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি গত বছরের মন্ত্রকের ৭.৭ ট্রিলিয়ন ইয়েনের প্রাথমিক অনুরোধের চেয়ে বেশি, তবে বর্তমান আর্থিক বছরের জন্য অনুমোদিত ৯.৪ ট্রিলিয়ন ইয়েনের প্রকৃত বাজেটের চেয়ে কম।


আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের ঘটনাটি অনস্বীকার্যভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, এবং তা এই অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি চিহ্নিত করে। এতদিন চিন মূলত জাপানের আকাশসীমায় সরাসরি প্রবেশ করা থেকে বিরত ছিল, এবং তাই এটি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা যা আরও দ্বন্দ্বমূলক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। অনুপ্রবেশের সময়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল, কারণ হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের ঠিক এক দিন পরে চিনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাইওয়ান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বেজিং সফর করার কথা ছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ওয়াশিংটন ও টোকিওর তাইওয়ান সঙ্কটের বিষয়ে ক্রমবর্ধমান সোচ্চার ও দৃঢ় অবস্থান নিয়ে চিনের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রেক্ষিতে, এই অনুপ্রবেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কাছে প্রেরিত একটি ইচ্ছাকৃত সংকেত হতে পারে।



প্রত্নশ্রী বসু অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো, ইন্দো-প্যাসিফিক


রাকা বর্মন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.