Author : Hari Bansh Jha

Published on Nov 30, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের অংশীদারিত্ব নিয়ে নেপালের জনগণের মনে যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী দহলের চিন সফর তাঁর ক্ষমতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলবে।

চিন-নেপাল সম্পর্কে আস্থার অভাব মোকাবিলা

নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের ২৩ সেপ্টেম্বর এমন এক সময়ে চিন সফরে যাওয়ার কথা ছিল, যখন নেপালের মানুষজন কাঠমান্ডুর রাস্তায় নতুন মানচিত্রের জন্য চিনের বিরোধিতা করছিলেন। কারণ চিন নেপালের অংশ হিসাবে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরার মতো অঞ্চলগুলিকে মানচিত্রে চিহ্নিত করেনি। নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেপাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এ  প্রতিবাদে কাঠমান্ডুতে চিনের দূতাবাসের বাইরে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে। চিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাঠমান্ডু পৌরসভার মেয়র বলেন শাহ চিনে নিজের সফর বাতিল করেন।

 

বেশ কিছু দিন ধরে নেপাল ও চিনের মধ্যকার সম্পর্ক আগের মতো উষ্ণ নেই, যেমনটা ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৩ মে পর্যন্ত কেপি শর্মা অলি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে ছিল। ২০২০ সালে হুমলা জেলায় চিন দ্বারা নেপালি ভূখণ্ডের সম্ভাব্য দখল সম্পর্কে নেপালি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর পর পরই কাঠমান্ডুতে চিনা দূতাবাস এই ধরনের কোনও দখলের কথা অস্বীকার করে। চিনের বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে নেপাল সরকারও বলেছে যে, দুই দেশের মধ্যে কোনও আঞ্চলিক বিরোধ নেই। ২০২১ সালের মে মাসে নেপালি কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দেউবার অধীনে গঠিত নতুন সরকার বিষয়টি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব জয়রাজ আচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি হুমলা জেলায় একটি মাঠ পরিদর্শনের পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়সেই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নেপাল-চিন সীমান্তের বিষয়ে কিছু প্রকৃত সমস্যা বিদ্যমান এবং দুই দেশের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের একটি যৌথ দল গঠনের পরেই সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে।

 

এর পর পরই কাঠমান্ডুতে চিনা দূতাবাস এই ধরনের কোনও দখলের কথা অস্বীকার করে।

 

এই ঘটনার পরে নেপালের জনগণ চিনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও সন্দেহ প্রকাশ করে, যখন এই বছরের ১ জানুয়ারি পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধনের একদিন আগে কাঠমান্ডুতে চিনা দূতাবাস টুইটারের মাধ্যমে জানায় যে, সেটি আদতে চিন-নেপাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সহযোগিতামূলক ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প এর পরই নেপাল সরকার এই চিনা দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

 

নেপাল যখন বিআরআই সংক্রান্ত চিনের সঙ্গে কোনও চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল না, তখন ২০১৬ সালে পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য চিনের এক্সিম ব্যাঙ্ক থেকে ২১৫.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সফট লোন (যে ঋণ অন্য ঋণের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়) পেয়েছিল এর এক বছর পরে ২০১৭ সালে নেপাল আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনের সঙ্গে বিআরআই-তে স্বাক্ষর করে। প্রাথমিক ভাবে, দেশটি বিআরআই-এর অধীনে ৩৫টি প্রকল্প নির্বাচন করলেও পরে তা কমিয়ে নটি প্রকল্পে নিয়ে আসে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের ছবছর পার হলেও বিআরআই-এর আওতায় কোনও প্রকল্প চালু হয়নি।

বহু মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কারণে নেপাল একটি বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। উদ্বোধনের আট মাস পরও এই বিমানবন্দরে কোনও নিয়মিত আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচল করে না। তাই ঋণ শোধ করার মতো অবস্থাও দেশটির নেই।

 

নেপালের জনগণের মধ্যে এই আতঙ্ক বিরাজ করছে যে, বিআরআই-এর অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের যে কোনও প্রচেষ্টা দেশটিকে ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিতে পারে, যেমনটা শ্রীলঙ্কায় ঘটেছে এবং এর ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হতে পারে। এ কথা নতুন করে বলার নয় যে, বিআরআই-এর অধীনে বেশির ভাগ চুক্তিতেই স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, যা প্রায়শই প্রাপক দেশের চেয়ে চিনের কৌশলগত স্বার্থের জন্য দায়বদ্ধ। শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী নেপালি কংগ্রেসের সরকার চিনের কাছে স্পষ্ট করে বলেছিল যে, তারা চিনের উচ্চাভিলাষী বিআরআই-এর অধীনে অবকাঠামো প্রকল্পগুলির উন্নয়নের জন্য চিনের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নয়, অনুদানের প্রত্যাশী।

বিষয়টি নেপালের জন্য একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প হয়ে উঠতে পারে, এ কথা জানা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পুষ্প কমল দহল কেন তাড়াহুড়ো করে একটি চিনা দলকে কাঠমান্ডু-কেরুং রেলপথের বিশদ অধ্যয়ন করার অনুমতি দিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। এই ট্রান্স-হিমালয়ান তিব্বত-নেপাল রেলওয়ে প্রকল্পটিতে রেলওয়ের নেপাল অংশের কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা নেপালের জিডিপি-র প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় হতে পারে। এই বহু বিলিয়ন ডলারসম্পন্ন রেলপথ - যা ভঙ্গুর হিমালয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে - তা আসলে চিনের কৌশলগত স্বার্থের অনুকূল হলেও নেপালের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক বলে প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে নেপাল এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কী হবে?

বর্তমানে চিনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ককে সঠিক পথে আনার প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী দহল তাঁর সফরে চিনের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করতে আগ্রহী ছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন সীমান্ত পয়েন্টের উন্মোচন। এই উপলক্ষে নেপাল চিনের সঙ্গে দুটি সীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব করতে পারে এবং সেগুলি হল রাসুওয়াগাধিতে নেপাল-চিন সীমান্ত থেকে ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত ২২০ কেভি চিলিমে-কেরুং ক্রস-বর্ডার ও কোশি প্রদেশের সাংখুয়াসভা জেলার কিমাথাঙ্কা সীমান্ত পয়েন্ট। এর আগে চিনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিনিময়ের জন্য নেপালের কোনও ট্রান্সমিশন লাইন ছিল না। এই প্রকল্পগুলি ছাড়াও নেপাল চিনা বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে নেপাল-চিন সীমান্তের কাছে তার কিছু সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুয়নের জন্য চিনের সহায়তা প্রত্যাশা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, দুই দেশ ৪৫৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন অরুণ কিমাথাঙ্কার মতো মেগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে যৌথ বিনিয়োগের কথাও বিবেচনা করছে। কাঠমান্ডু রিং রোডের পাশে একটি ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যও দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে, যেটি চিনের সহায়তায় তৈরি হবে।

 

সর্বোপরি, নেপাল ও চিন দ্বিপাক্ষিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পৃক্ততা পুনরায় শুরু করতে পারে। এই লক্ষ্যে নেপাল সেনাবাহিনী তার কিছু আধিকারিককে চিনে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স বা জাতীয় প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য পাঠাতে পারে। এ ছাড়াও নেপালের সেনাবাহিনী এবং চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি সগরমাতা ফ্রেন্ডশিপব্যানারের আওতায় যৌথ সামরিক মহড়া পুনরায় শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০১৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে।

 

এই লক্ষ্যে নেপাল সেনাবাহিনী তার কিছু আধিকারিককে চিনে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স বা জাতীয় প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য পাঠাতে পারে। এ ছাড়াও নেপালের সেনাবাহিনী এবং চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি সগরমাতা ফ্রেন্ডশিপব্যানারের আওতায় যৌথ সামরিক মহড়া পুনরায় শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০১৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী দহল নেপালি জনগণের মন থেকে চিনের প্রতি অবিশ্বাস দূরীকরণের জন্য কী ভাবে তাঁদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন, তা তাঁর কূটনৈতিক  দক্ষতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলবেভাল-মন্দ বিবেচনা না করে নতুন কোনও চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দহলের কোনও মতেই উচিত নয়। একই সময়ে নেপালের জন্য প্রতিকূল প্রমাণিত চিনের অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলির জন্য সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা বা ঋণ বাতিল করার বিষয়টি উত্থাপন করার ব্যাপারেও দহলের পিছপা হওয়া উচিত নয়। যদি আস্থার ঘাটতি থাকে, তা হলে তা দুই দেশের মধ্যে মিটিয়ে ফেলা যেতে পারে এবং দহলের প্রচেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে আরও সুসম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে

 


হরি বংশ ঝা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.