Author : Pulkit Mohan

Expert Speak Raisina Debates
Published on Aug 12, 2022 Updated 10 Days ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় এবং পরমাণু চুক্তির আলোচনা সফলভাবে শেষ করা যায়।

আমেরিকা–ইরান পরমাণু চুক্তি আলোচনা: অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ নেই
আমেরিকা–ইরান পরমাণু চুক্তি আলোচনা: অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ নেই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি আলোচনা ২০২২ সালের জুনে  কোনও অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ)–এর সহায়তায় উভয়ের মধ্যে আলোচনা দুই দিন ধরে চলেছিল, যার লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জে সি পি ও এ) থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা প্রত্যাহারের ফলে উদ্ভূত উত্তেজনার একটি কূটনৈতিক সমাধান করা। এই প্রক্রিয়ায় ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, রাশিয়া ও চিন অন্তর্ভুক্ত  ছিল। চুক্তিটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমেরিকা ইরানের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অংশীদারদের উত্তেজনা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে। ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান ইউরেনিয়াম‌ সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা বা‌ড়ালেও এই অবস্থান বজায় রেখেছে যে তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছিল যে তারা ইরানকে একটি ‘‌ভাল’‌ পরমাণু চুক্তির আওতায় নিয়ে আসবে, কিন্তু ট্রাম্পের মেয়াদের মধ্যে তেমন কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

চুক্তিটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন দেশ ইরানের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অংশীদারদের উত্তেজনা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

জে সি পি ও এ মূলত ইরান ও পূর্বোক্ত পি৫ দেশগুলির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি, যা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর সেই সঙ্গেই ইরানকে তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলির ব্যাপক আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের অনুমতি দিতে এবং জে সি পি ও এ–র নির্দেশিত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে বাধ্য করে। চুক্তিটি বাতিল করার মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে আলোচনা স্থগিত হয়েছে, এবং কীভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষণ চালানো যাবে বা তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অনুপ্রেরণা রোধ করা যাবে তা নিয়ে জে সি পি ও এ–র  অন্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

মূল প্রতিবন্ধকতা

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিটি নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে ফের  আলোচনার সমন্বয়সাধন এবং তা চূড়ান্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা হয়েছে। তবে কোনও অগ্রগতি নেই বলে মনে হচ্ছে। চুক্তির অন্যান্য স্বাক্ষরকারী এবং ইরানের মধ্যে আলোচনা এপ্রিল ২০২১ থেকে এগিয়ে চলেছিল, কিন্তু তা ঐকমত্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ভিয়েনায় পূর্ববর্তী আলোচনায় এবং কাতারে সাম্প্রতিক পরোক্ষ আলোচনায় কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় সমাধানসূত্র বের হয়নি। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আই আর জি সি)–কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘‌বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’‌ হিসেবে  আখ্যা দেওয়া ইরানের জন্য একটি মূল আপত্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান এই সংগঠনটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে, তবে ওয়াশিংটন তা করতে রাজি নয়। চুক্তির আরেকটি প্রতিবন্ধকতা ইজরায়েল, যে দেশটি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির কট্টর প্রতিপক্ষ এবং ইরানের উপর আরও চাপ দেওয়ার পক্ষপাতী।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা ইরানের পারমাণবিক উদ্দেশ্য, এবং তেহরানের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে আই এ ই এ–তে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনায় সাফল্যের সম্ভাবনা উভয় পক্ষের মধ্যে বৈরিতার কারণে আরও ক্ষীণ হয়েছে। জুনের শুরুতে তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে নিন্দা করার জন্য একটি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আই এ ই এ)–র ইনস্টল করা বেশ কয়েকটি ক্যামেরা সরিয়ে নিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা ইরানের পারমাণবিক উদ্দেশ্য, এবং তেহরানের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে আই এ ই এ–তে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ইরানের পদক্ষেপ আই এ ই এ–এর জন্য ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় কার্যকলাপ ট্র্যাক করা কঠিন করে তুলেছে। যাই হোক, ইরান বলেছে যে তারা এমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি যা আই এ ই এ–কে তারা যে কথা দিয়েছে তার প্রয়োজন পূরণের বিরুদ্ধে যায় । সম্প্রতি, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে, বাইডেন প্রশাসন  একটি নতুন দফা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যার প্রভাব পড়েছে ‘‌‌পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন অনুমোদিত ইরানি পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত’‌ ইরান দেশ এবং তার ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির উপর। জে সি পি ও এ পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচারের একটি মূল বিষয়। যাই হোক, ইরানের কার্যকলাপ সাহায্য করেনি, এবং বাইডেন প্রশাসন ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর করেছে।

ইরান পরমাণু চুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জে সি পি ও এ হল একটি যুগান্তকারী চুক্তি যা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল এবং দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে আই এ ই এ–র ২৪ ঘণ্টা নজরদারির পথ তৈরি করেছিল। উপরন্তু, চুক্তিটি ইরানের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার সম্ভাবনা রাখে বলে দাবি করা হয়েছিল। চুক্তিটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো ভয়ঙ্কর আঘাতকারী ব্যবস্থা ব্যবহার না–করে ইরানকে উৎসাহিত করেছিল নিয়মনীতি মেনে চলতে এবং পারমাণবিক শক্তিগুলির মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়াতে। এখন আলোচনা সফল হলে রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে ইরানের তেলের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেবে।

২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমসাধ্য আলোচনা, আর তার পাশাপাশি চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে যাওয়ার পরে আলোচনা করে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর অক্ষমতা, এই দুটি ঘটনা পাশাপাশি দেখলে বর্তমান পরিস্থিতি সমস্ত অংশীদারের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে একটি বড় ব্যর্থতার ছবিই তুলে ধরে।

ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী?

কাতারের আলোচনা কোনও প্রস্তাব ছাড়াই শেষ হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। ই ইউ–এর ফরেন পলিসি চিফ জোসেপ বোরেলের তেহরান সফরের মাধ্যমে এটি সহজতর হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান সহ বেশ কয়েকটি মূল অংশীদারের তরফে এ কথাই পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে যে পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসাই আদর্শ পরিস্থিতি, এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সর্বোত্তম স্বার্থবাহী। যাই হোক, ২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমসাধ্য আলোচনা, আর তার পাশাপাশি চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে আসার পরে আলোচনা করে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর অক্ষমতা, এই দুটি ঘটনা পাশাপাশি দেখলে বর্তমান পরিস্থিতি সমস্ত অংশীদারের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে একটি বড় ব্যর্থতার ছবিই তুলে ধরে। নিষেধাজ্ঞার ইস্যুটি পরমাণু চুক্তির পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনায় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, এবং ভবিষ্যতেও করবে। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির দাবির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা কোনও কাজের কাজ করতে পারেনি। যদিও উভয় পক্ষের আলোচনা করার ইচ্ছা একটি ভাল লক্ষণ, কারণ তা বোঝায় চুক্তির পুনরুজ্জীবন সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব নয়। এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে কোনও অংশীদারের কোনও ‘‌লোভনীয় প্রস্তাব’‌ ছাড়া সাফল্যের সম্ভাবনা ন্যূনতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দিলে ইরানের জে সি পি ও এ–র নির্দেশিকা মেনে চলা থেকে দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কাজেই ইরান পরমাণু সমঝোতায় সকল পক্ষের ঐকমত্যে পৌঁছতে আলোচনায় মার্কিন অংশগ্রহণ এবং ইরানের সম্মতি উৎসাহিত করার জন্য একটি সাধারণ ভিত্তি তৈরি করতে হবে।

যে কোনও চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি পক্ষের প্রাথমিক লক্ষ্য হল নিজের নিহিত স্বার্থের সুরক্ষা এবং সিদ্ধি নিশ্চিত করা। যাই হোক, বৈশ্বিক পারমাণবিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হল পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য চাপ দেওয়া, এবং রাষ্ট্রগুলিকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ অনুসরণ থেকে বিরত রাখা। পরমাণু প্রশ্নে ক্রমশ বেশি করে আক্রমণাত্মক উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের মতো রাজনৈতিক আগ্রাসনের সময় বিশ্বব্যাপী নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজন আরও বেশি করে অনুভূত হয়েছে। ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি সমাধান ছাড়া যত দীর্ঘ সময় কেটে যেতে থাকবে, জে সি পি ও এ–র মৃত্যু বাস্তবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও তত নিকটতর হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.